১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
সংসদের ১১তম অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ

সরকার ও বিরোধী দলকে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালন করতে হবে

-

জাতীয় সংসদের একাদশ অধিবেশনের শুরুতে দেয়া ভাষণে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ জাতীয় সংসদকে জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার কেন্দ্রবিন্দু উল্লেখ করে বলেছেন, সরকারি ও বিরোধী দল নির্বিশেষে সকলকে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে হবে। গণতন্ত্রের ধারাবাহিকতা রক্ষা, আইনের শাসন ও আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য সবাইকে ঐক্যবদ্ধ ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান তিনি। রাষ্ট্রপতি বলেন, গণতন্ত্রায়ন, সুশাসন ও নিরবচ্ছিন্ন আর্থসামাজিক উন্নয়নে সব রাজনৈতিক দল, শ্রেণী-পেশা নির্বিশেষে ঐকমত্য গড়ে তোলার সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য আমি উদাত্ত আহ্বান জানাই। স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা, পরমতসহিষ্ণুতা, মানবাধিকার ও আইনের শাসন সুসংহতকরণ এবং জাতির অগ্রযাত্রায় সরকারি দলের পাশাপাশি বিরোধী দলকেও গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে হবে।
জাতীয় সংসদের বর্ষশুরু তথা শীতকালীন এই অধিবেশন শুরু হয় গতকাল বিকেল সাড়ে ৪টায় স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে। সংবিধান অনুযায়ী বছরের প্রথম অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি ভাষণ দেন। বরাবরের মতো রাষ্ট্রপতি বর্তমান সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরেন। রাষ্ট্রপতি বলেন, দেশ ও জাতির অগ্রযাত্রা বেগবান করতে শত প্রতিকূলতার মধ্যেও সুশাসন সুসংহতকরণ, গণতন্ত্র চর্চা ও উন্নয়ন কর্মসূচিতে সর্বস্তরের জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সরকারের নিরলস প্রয়াস অব্যাহত রয়েছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তুলতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রেখে দেশ থেকে দুর্নীতি, মাদক, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূলের লক্ষ্যে আমাদের আরো ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। আসুন, দল-মত-পথের পার্থক্য ভুলে ধর্ম-বর্ণ-গোত্র নির্বিশেষে শোষণমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার মধ্য দিয়ে আমরা লাখো শহীদের রক্তের ঋণ পরিশোধ করি।
তিনি আরো বলেন, আমরা আজ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দ্বারপ্রান্তে। শান্তি, গণতন্ত্র, উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির যে পথে আমরা হাঁটছি, সে পথেই আমাদের আরো এগিয়ে যেতে হবে। এ বছর মধ্যম-আয়ের দেশ হিসেবে আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করব। আমাদের লক্ষ্যÑ ২০৪১ সালে বিশ্বসভায় একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশের মর্যাদায় অভিষিক্ত হওয়া। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জনগণের সর্বাত্মক অংশগ্রহণের মাধ্যমে আমরা একটি কল্যাণমূলক, উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে সক্ষম হবো।
রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ বলেন, দেশের স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও অখণ্ডতা রক্ষায় ফোর্সেস গোল-২০৩০ এর আলোকে ২০১৯-২০ অর্থবছরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন কোরের ১৭টি ইউনিট গঠন করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য উল্লেখযোগ্যসংখ্যক যানবাহন ও আধুনিক সরঞ্জাম সংযোজিত হয়েছে। দু’টি সাবমেরিন সংযোজনের মাধ্যমে নৌবাহিনী আজ ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে বিশ্বে আত্মপ্রকাশ করেছে। ২০০৯ সাল থেকে অদ্যাবধি নৌবাহিনীতে ৩১টি জাহাজ, দু’টি মেরিটাইম হেলিকপ্টার এবং দু’টি মেরিটাইম পেট্রল এয়ারক্রাফট সংযোজিত হয়েছে। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে আধুনিক উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন বিমান, হেলিকপ্টার, রাডার, অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র এবং যন্ত্রপাতি সংযোজন করা হয়েছে। বাংলাদেশ জাতিসঙ্ঘের শান্তিরক্ষী প্রেরণকারী দেশ হিসেবে গত বছরের ৩১ আগস্ট প্রথম স্থান পুনরুদ্ধার করেছে। বর্তমানে সাতটি দেশের সাতটি মিশনে বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনী এবং পুলিশের মোট ৬ হাজার ৮৬৫ জন শান্তিরক্ষী শান্তিরক্ষা মিশনে নিয়োজিত থেকে বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। তিনি বলেন, দুর্নীতি, মাদক ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সরকার জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছে। এ লক্ষ্যে ১৮টি সংশ্লিষ্ট আইন প্রণয়ন ও সময়োপযোগী করা হয়েছে। পুলিশ, অ্যাম্বুলেন্স ও ফায়ার সার্ভিসের সহায়তা পাওয়ার জন্য জাতীয় জরুরি সেবাসহ (৯৯৯) অনলাইন জিডি, নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের জন্য সব থানায় পৃথক ব্যবস্থা এবং বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে পুলিশের সেবা দেয়ার মানোন্নয়ন করা হয়েছে।
আবদুল হামিদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা বহুমুখী সেতুর দুই প্রান্তের মাওয়া ও জাজিরা সংযোগকারী সর্বশেষ ৪১তম স্প্যান স্থাপন করার মাধ্যমে সেতুর ৬ দশমিক এক পাঁচ কিলোমিটার মূল অবকাঠামো দৃশ্যমান হয়েছে। পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ ২০২২ সালের জুলাই নাগাদ শেষ হবে। ফলে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সাথে অন্যান্য অঞ্চলের সমন্বিত যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠবে।
চলতি বছরের প্রথম এই অধিবেশন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদের ভাষণ শেষে মুলতবি করা হয়। এই অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর সাধারণ আলোচনা ছাড়াও বেশ কয়েকটি বিল পাসের সম্ভাবনা রয়েছে।
শোক প্রস্তাব ও সভাপতিমণ্ডলী মনোনয়ন : এ দিকে রাষ্ট্রপতির ভাষণ ও করোনা পরিস্থিতির কারণে সংসদ অধিবেশনে স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে অনুসরণ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। করোনা নেগেটিভ নিশ্চিত হয়েই সংসদ সদস্যসহ কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংসদ ভবনে প্রবেশ করতে দেয়া হয়। অধিবেশনের শুরুতে স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের অনুপস্থিতিতে সংসদ অধিবেশন পরিচালনার জন্য সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নির্বাচন করা হয়। নির্বাচিতরা হলেনÑ মো: নজরুল ইসলাম, আফতাব উদ্দিন সরকার, আব্দুস সালাম মুর্শেদী, ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও বেগম মমতাজ বেগম।
রাষ্ট্রপতির ভাষণের আগে সংসদ অধিবেশনে সাবেক একজন ডেপুটি স্পিকার, সাবেক একজন মন্ত্রী, সাবেক দুইজন প্রতিমন্ত্রী, সাবেক নয়জন সংসদ-সদস্যদের নামে শোক প্রস্তাব আনা হয়। এ ছাড়াও দশম অধিবেশনের পর মারা যাওয়া দেশের গণ্যমান্য বিভিন্ন ব্যক্তি এবং করোনা ও দুর্ঘটনায় মৃতদের নামে শোক প্রস্তাব গ্রহণ শেষে তাদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে এক মিনিট নীরবতা পালন ও মুনাজাত করা হয়। ডেপুটি স্পিকার অ্যাডভোকেট মো: ফজলে রাব্বী মিয়া মুনাজাত পরিচালনা করেন।
এর আগে শোক প্রস্তাব উত্থাপনকালে স্পিকার বলেন, দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থানে দুর্ঘটনায় হতাহতদের স্মরণে মহান জাতীয় সংসদ গভীর শোক প্রকাশ, সকল বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জ্ঞাপন করছে। শোক প্রস্তাবে যাদের নাম রয়েছে তারা হলেনÑ সাবেক ডেপুটি স্পিকার শওকত আলী, সাবেক মন্ত্রী চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ, সাবেক প্রতিমন্ত্রী আ খ ম জাহাঙ্গীর হোসাইন ও মো: খালেদুর রহমান টিটো এবং সাবেক সংসদ সদস্য শাহ-ই-জাহান চৌধুরী, মোহাম্মদ আলী, মোহাম্মদ আবু হেনা, এম এ হাসেম, অ্যাডভোকেট আনোয়ার হোসেন হাওলাদার, দেলোয়ার হোসেন খান, সামসুদ্দীন আহমেদ, নুরজাহান ইয়াসমিন ও অ্যাডভোকেট খালেদা পান্না।
এ ছাড়া সংসদ সচিবালয়ের কামরা পরিচালক মো: কোরবান আলী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট ভাই শেখ আবু নাসেরের সহধর্মিণী ও প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার চাচী, সংসদ-সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন ও সংসদ-সদস্য শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েলের মা এবং সংসদ-সদস্য শেখ তন্ময়ের দাদী শেখ রাজিয়া নাসের, প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার বড় জা রওশন আরা ওয়াহেদ রানী, ঢাকা-৭ আসনের সংসদ-সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিমের স্ত্রী গুলশান আরা, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আয়শা খানম, স্বাধীনতা ও একুশে পদকপ্রাপ্ত বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিক রাবেয়া খাতুন, বিশিষ্ট সমাজসেবক ও ভাষা সৈনিক মো: জাহিদ হোসেন মুসা মিয়া, সাবেক সচিব, বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক মনজুরে মওলা, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক আবদুল হান্নান খান, একুশে পদকপ্রাপ্ত অভিনেতা মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি আলী যাকের, উপমহাদেশের প্রখ্যাত শাস্ত্রীয় সঙ্গীতজ্ঞ ওস্তাদ শাহাদাৎ হোসেন খান, বীর উত্তম ক্যাপ্টেন আকরাম, বিশিষ্ট অভিনেতা আব্দুল কাদের, বিশিষ্ট সাংবাদিক মিজানুর রহমান খান এবং বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করা হয়।
সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানান, অন্যান্য বছর এই অধিবেশনটি দীর্ঘ হলেও করোনা পরিস্থিতির কারণে এবার অধিবেশন সংক্ষিপ্ত হবে। করোনা ঝুঁকির কারণে আগের অধিবেশনের মতো স্বাস্থ্যবিধি মেনেই পরিচালনা করা হবে। এর আগে মুজিববর্ষ উপলক্ষে আহূত সংসদের বিশেষ অধিবেশনসহ গত ৪টি অধিবেশন স্বাস্থ্যবিধি মেনে পরিচালনা করা হয়। প্রতি কার্যদিবসে ৭০ থেকে ৮০ জন সংসদ সদস্যের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়। করোনা ঝুঁকি এড়াতে দূরত্ব দিয়ে আসন বিন্যাস করা হয়। এর আগে গত ১৯ নভেম্বর সংসদের ১০ম অধিবেশন শেষ হয়। ‘মুজিববর্ষ’ উপলক্ষে গত ৮ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া অধিবেশন ছিল সংসদের বিশেষ অধিবেশন।

 


আরো সংবাদ



premium cement
সাদিক এগ্রোর ব্রাহামা জাতের গরু দেখলেন প্রধানমন্ত্রী ভারতে লোকসভা নির্বাচনে প্রথম ধাপে ভোট পড়েছে ৬০ শতাংশ সারা বিশ্ব আজ জুলুমবাজদের নির্যাতনের শিকার : ডা. শফিকুর রহমান মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশী : পররাষ্ট্রমন্ত্রী চন্দনাইশ, বাঁশখালী ও বোয়ালখালীতে ৩ জনের মৃত্যু গাজায় ইসরাইলি হামলায় নিহতের সংখ্যা ৩৪ হাজার ছাড়াল শ্যালকের অপকর্মে দুঃখ প্রকাশ করলেন প্রতিমন্ত্রী পলক রাজশাহীতে ট্রাকচাপায় ৩ মোটরসাইকেল আরোহী নিহত পাবনায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষে হতাহত ২২ বিল দখলের চেষ্টা, জেলা ছাত্রলীগ নেতাকে গণপিটুনি ‘শাহাদাতের তামান্নায় উজ্জীবিত হয়ে কাজ করলে বিজয় অনিবার্য’

সকল