২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ডিজাইনেই সময় শেষ আকাশচুম্বী খরচ বৃদ্ধি

পল্লী সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ
-

খসড়া ডিজাইন দিয়ে প্রকল্প অনুমোদন। প্রকল্পের নির্মাণ কাজের ডিজাইন চূড়ান্ত করতেই সাড়ে চার বছর মেয়াদের চার বছরই শেষ। ফলে পল্লী গুরুত্বপূর্ণ সড়কে সেতুনির্মাণ প্রকল্পে খরচ বেড়ে গেছে আকাশছোঁয়া। সেতুগুলোর চূড়ান্ত ডিজাইনের পর ব্যয় বাড়ছে ২ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা, যা প্রকল্প খরচের ৬৪.৪৪ শতাংশ বেশি। আর চার বছরে কাজ হয়েছে ঢিমেতালে, মাত্র ১৭ শতাংশ। এ অবস্থায় ব্যয় বাড়িয়ে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকায় এবং মেয়াদ আরো তিন বছর বাড়িয়ে সাড়ে সাত বছরে প্রস্তাব করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ। প্রকল্পে প্রতি কিলোমিটারে সেতু নির্মাণ ও সংযোগ সড়ক নির্মাণ এবং ভূমি অধিগ্রহণে ব্যয় বেড়েছে বলে পরিকল্পনা কমিশনের পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
পল্লী সড়কে গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মাণ প্রকল্পে স্থানীয় সরকার বিভাগের সংশোধিত প্রস্তাবনা থেকে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ১০ জানুয়ারিতে প্রকল্পটি ৩ হাজার ৯২৬ কোটি ৭৬ লাখ টাকায় অনুমোদন দেয়া হয়। প্রকল্প অনুযায়ী ২০২১ সালের জুনের মধ্যে ১৩০টি সেতুর নির্মাণকাজ সমাপ্ত করার কথা। কিন্তু প্রকল্পের অগ্রগতি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সাড়ে তিন বছরে প্রকল্পে অর্থ ব্যয় হয়েছে ৫১৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকা, যা মোট প্রকল্প খরচের ১৩.০৭ শতাংশ। আর ওই পরিমাণ অর্থ খরচ করে বাস্তব অর্জন মাত্র ১৭ শতাংশ। সংশোধিত প্রস্তাবনায় ১৩০টি সেতুর মধ্যে ১০৪টির তথ্য রয়েছে। যার মধ্যে সমাপ্ত হয়েছে ৯টি। নির্মাণাধীন আছে ৭৭টি। দরপত্র আহ্বান ১৩টির এবং ৫টির ডিজাইন সম্পন্ন হয়েছে।
প্রকল্পের মূল কাজ হলো, সারা দেশের ৪০টি জেলার ৯৪ উপজেলার পল্লী সড়কে ১৩০টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সেতু নির্মাণের মাধ্যমে গ্রামীন সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন। মূল ডিপিপিতে কাজগুলো ছিল ২৬.৭৪০ কিলোমিটার ব্রিজ নির্মাণ, ১৫.৬৫০ কিলোমিটার নদী শাসন, সংযোগ সড়ক নির্মাণ ৫৮.৫১ কিলোমিটার এবং ভূমি অধিগ্রহণ ১৫০ হেক্টর। প্রকল্পের মেয়াদের শেষ প্রান্তে এসে সেই সব কাজের পরিধি বাড়ানো হয়েছে।
ব্যয় পর্যালোচনা থেকে দেখা গেছে, মূল ডিপিপিতে ১৩০টি ব্রিজের দৈর্ঘ্য ছিল ২৬.৭৪০ কিলোমিটার। যার জন্য খরচ প্রাক্কলন করা হয় ৩ হাজার ৩৬১ কোটি ২৩ লাখ টাকা। ফলে এখানে প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় পড়ছে ১২৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা। সংশোধিত প্রস্তাবনায় ১৩২টি সেতুর দৈর্ঘ্য ধরা হয়েছে ৪১.০৪৩ কিলোমিটার। যার জন্য খরচ হবে ৫ হাজার ৫৩১ কোটি ৬ লাখ টাকা। এখানে কিলোমিটারে খরচ পড়বে ১৩৪ কোটি ৭৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা। ফলে কিলোমিটারে খরচ বাড়ছে ৯ কোটি ৬ লাখ টাকা।
৫৮.৫১ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক স্থাপনের জন্য মূল ডিপিপিতে খরচ প্রাক্কলন করা হয় ১৪৬ কোটি ২৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা। কিলোমিটারে খরচ ধরা হয় আড়াই কোটি টাকা। কিন্তু এখন কাজের পরিমাণ বাড়িয়ে ৬৭.২৩৪ কিলোমিটার ধরা হয়েছে। ফলে এখানে খরচ প্রাক্কলিত হয়েছে ৩১২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় হবে ৪ কোটি ৬৫ লাখ ১৯ হাজার টাকা। প্রতি কিলোমিটারে খরচ বাড়ছে ২ কোটি ১৫ লাখ টাকা।
অন্য দিকে ১৫.৬৫০ কিলোমিটার নদীর শাসনের জন্য খরচ ধরা হয়েছিল ১৩৯ কোটি ২৮ লাখ ৫০ হাজার টাকা। প্রতি কিলোমিটারে ব্যয় ৮ কোটি ৯০ লখ টাকা। সংশোধিত প্রস্তাবনায় নদী শাসনের পরিমাণ কমিয়ে ৬.৭২১ কিলোমিটারে আনা হয়। ব্যয় প্রস্তাব করা হয় ১২৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা। ফলে প্রতি কিলোমিটার নদী শাসনে খরচ পড়ছে ১৯ কোটি ২৯ লাখ টাকা। যা দ্বিগুণের চেয়েও বেশি। ভূমি অধিগ্রহণ প্রথমে ছিল ১০০ কোটি টাকায় ১৫০ হেক্টর। যেখানে হেক্টরে দর পড়ছে ৬৬ লাখ টাকা। কিন্তু পরে এখানে পরিমাণ বাড়িয়ে ১৭০ হেক্টর করা হয়। ব্যয় প্রাক্কলন করা হয় ৩২৫ কোটি টাকা। প্রতি হেক্টরে দর পড়ছে ১ কোটি ৯১ লাখ ১৭ হাজার টাকা। এখানে হেক্টরপ্রতি দরের ব্যবধান সোয়া কোটি টাকা।
কাজের পরিমাণ ও ব্যয় বৃদ্ধির ব্যাপারে স্থানীয় সরকার বিভাগ বলছে, সরেজমিনে সেতুর স্থান পরিদর্শন করে ডিজাইন চূড়ান্ত করা হয়। সে ডিজাইন অনুযায়ী সেতুর দৈর্ঘ্য মূল ডিপিপির প্রস্তাবিত দৈর্ঘ্যরে চেয়ে বেশি হওয়াতে ব্যয় বেড়েছে। বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃক নির্ধারিত দ্বিতীয় শ্রেণীর নদীর ওপর লংস্প্যান সেতু নির্মাণের নির্দেশনা থাকায় বুয়েটের প্রস্তাবনা অনুযায়ী ডিজাইন বাবদ ব্যয় যুক্ত করায় খরচ বেড়েছে। আধুনিক নির্মাণ কৌশলে লংস্প্যান সেতু নির্মাণখরচ বেশি বলে প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি পেয়েছে। আর বর্তমানে ২০১৯-১০ অর্থবছরের রেট শিডিউল অনুযায়ী নতুন করে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে। পাশাপাশি জমি অধিগ্রহণের পরিমাণ ও ক্ষতিপূরণের পরিমাণও বৃদ্ধি পেয়েছে। ১০০ মিটার দৈর্ঘ্যরে বেশি দীর্ঘ এই বৃহৎ ব্রিজের ক্ষেত্রে যোগ্য দরদাতার স্বল্পতা থাকায় একাধিকবার দরপত্র আহ্বান করতে হচ্ছে। এসব কারণেই মেয়াদ তিন বছর বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে বলে স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে বলা হযেছে। বাস্তবায়নকারী সংস্থা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের ওয়েব তথ্যানুযায়ী, গত আগস্ট পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় অনেক পিছিয়ে। সম্প্রতি সমীক্ষা নিয়ে কার্যক্রম বিভাগ বলছে, প্রকল্পের সমীক্ষা দায়সারা গোছের করার কারণেই প্রকল্পগুলো সঠিকভাবে সময়মতো বাস্তবায়ন হচ্ছে না। উল্টো প্রকল্প বাস্তবায়ন খরচও বেড়েই চলছে। এ ব্যাপারে পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) মো: জাকির হোসেন আকন্দের সাথে মুঠোফোনে কয়েক দফা যোগাযোগ করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেনের মতে, উন্নয়ন প্রকল্পগুলো সঠিকভাবে সমীক্ষা না করে করার কারণেই মাঝপথে এসে ব্যয় বাড়ছে। নতুন নতুন খাত যুক্ত করা হচ্ছে। প্রকল্পের মেয়াদও বাড়ছে। ফলে প্রকল্প বাস্তবায়নেও অর্থের অপচয় হচ্ছে। প্রকল্প থেকে দেশের মানুষ সুফল পাচ্ছে না।

 


আরো সংবাদ



premium cement
তামাক পণ্যে সুনির্দিষ্ট করারোপের দাবিতে এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে ২৫ সংসদ সদস্যের চিঠি প্রাণিসম্পদ প্রদর্শনীতে মহিষের আক্রমণে বাবা-ছেলেসহ আহত ৪ গফরগাঁওয়ে গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার তীব্র মাত্রায় হিংস্র হয়ে উঠেছে সরকার : মির্জা ফখরুল মিরসরাইয়ে মৃত্যুর ১৫ দিন পর ব্যাংক কর্মকর্তার কবর থেকে লাশ উত্তোলন দেশে দেড় হাজার মেগাওয়াট লোডশেডিং, দুর্ভোগে মানুষ রংপুরে মহানবী সা:-কে নিয়ে কটূক্তি করায় ছাত্রলীগ কর্মী গ্রেফতার বাড়ছে না শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি, অনলাইনে ক্লাস চালুর চিন্তা বিশ্বের অন্যতম স্মার্ট হজ ব্যবস্থাপনা হবে বাংলাদেশে : ধর্মমন্ত্রী সিলেটে ৪৪ লাখ টাকার ভারতীয় চিনিসহ গ্রেফতার ৪ অবৈধ সম্পদ : এস কে সিনহার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন ২৬ জুন

সকল