২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

আবারো অভিশংসিত ট্রাম্প

এখনই ক্ষমতা ছাড়তে হচ্ছে না ট্রাম্পকে; অভিশংসনের পক্ষে ১০ জন রিপাবলিকানের ভোট; দোষী সাব্যস্ত হলে ট্রাম্প আর প্রেসিডেন্ট হতে পারবেন না
-

যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটল হিলে সন্ত্রাসী হামলার পর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে দ্বিতীয় দফা অভিশংসন করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এই প্রথমবার কোনো প্রেসিডেন্টকে দ্বিতীয়বারের মতো অভিশংসন করল মার্কিন কংগ্রেস। গত বুধবার প্রতিনিধি পরিষদে ২৩২-১৯৭ ভোটে অভিশংসন প্রস্তাব গৃহীত হয়। এতে করে কংগ্রেস ভবনে কলঙ্কজনক হামলার পর প্রেসিডেন্ট পদ থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অসম্মানজনকভাবে বিদায় করতে আরেক ধাপ এগিয়ে গেলেন যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতারা। খবর এপি, নিউ ইয়র্ক টাইমস, বিবিসি ও রয়টার্সের।
ট্রাম্পের নিজের দল রিপাবলিকানের ১০ জন সদস্য ট্রাম্পের বিপক্ষে গিয়ে ভোট দেন। তিনি এখন সিনেটে বিচারের সম্মুখীন হবেন। দোষী সাব্যস্ত হলে তিনি আবারো ক্ষমতায় আসার সুযোগ চিরতরে হারাতে পারেন। তবে তার মেয়াদ আরো এক সপ্তাহ বাকি থাকলেও তাকে এখনই হোয়াইট হাউজ ছাড়তে হচ্ছে না। কারণ এই সময়ের মধ্যে সিনেট আবার গঠন করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে বিবিসি। গত নভেম্বরে জো বাইডেনের কাছে নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর আগামী ২০ জানুয়ারি ক্ষমতা ছাড়তে হবে তাকে।
গত বুধবার অভিশংসনের ভোট হওয়ার আগে বেশ কয়েক ঘণ্টা ধরে বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয় ডেমোক্র্যাট নিয়ন্ত্রিত হাউজ অব রেপ্রেজেন্টেটিভসে। সে সময় ক্যাপিটলের ভেতরে এবং বাইরে ন্যাশনাল গার্ডের সশস্ত্র সেনারা পাহারা দিয়েছেন। আগামী সপ্তাহে জো বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠানকে সামনে রেখে ওয়াশিংটন ডিসি এবং ৫০টি অঙ্গরাজ্যের সবকটিতে সশস্ত্র বিক্ষোভের পরিকল্পনা রয়েছে বলে ফেডারেল তদন্ত সংস্থা এফবিআই সতর্ক করেছে। কংগ্রেসে ভোটের পর প্রকাশিত এক ভিডিওতে ট্রাম্প তার অনুসারীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু তিনি যে অভিশংসিত হয়েছেন সেই বিষয়টি উল্লেখ করেননি।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ : অভিশংসনের অভিযোগ মূলত রাজনৈতিক, অপরাধমূলক নয়। প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে কংগ্রেসের অভিযোগে বলা হয়েছে যে, ৬ জানুয়ারি হোয়াইট হাউসের বাইরে তিনি তার ভাষণের মাধ্যমে ক্যাপিটলে হঠাৎ হামলার মাধ্যমে দখলে নেয়ার ঘটনায় উসকানি দিয়েছেন। তিনি তার সমর্থকদেরকে ‘শান্তিপূর্ণভাবে এবং দেশপ্রেমের সাথে’ নিজেদের আওয়াজ তোলার আহ্বান জানিয়েছিলেন। সেই সাথে যে নির্বাচন তার ভাষায় ‘কারচুপির শিকার হয়েছে’ তার বিরুদ্ধে ‘ভয়ঙ্কর লড়াইয়ের’ও আহ্বান জানিয়েছিলেন।
ট্রাম্পের এমন বক্তব্যের জের ধরে তার সমর্থকরা ক্যাপিটলে জোর করে ঢুকে পড়ে, আইনপ্রণেতাদের অধিবেশন ও নির্বাচনের ফলাফলের আনুষ্ঠানিক অনুমোদন দেয়ার প্রক্রিয়া স্থগিত করে তাদেরকে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে বাধ্য করে। পুরো ভবনে লকডাউন দেয়া হয় এবং এ ঘটনায় পাঁচজন মারা যায়। অভিশংসনের বিবৃতিতে বলা হয়েছে যে, ‘ট্রাম্প বারবার মিথ্যা বক্তব্য দিয়ে এটা প্রতীয়মান করার চেষ্টা করেছেন যে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফলে কারচুপি হয়েছে এবং তা গ্রহণযোগ্য নয়।’
এতে বলা হয়, এরপর তিনি বারবার একই দাবি তুলেছেন এবং ‘ইচ্ছাকৃতভাবে জনগণের সামনে বলে তাদেরকে উৎসাহিত করেছেন এবং এর কারণেই ক্যাপিটলে অরাজক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে’ যা সহিংসতা এবং প্রাণহানিতে রূপ নিয়েছে। ‘প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চরমভাবে যুক্তরাষ্ট্র এবং এর সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর নিরাপত্তাকে বিপন্ন করেছেন, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অখণ্ডতাকে হুমকির মুখে ফেলেছেন, ক্ষমতার শান্তিপূর্ণ হস্তান্তরকে বাধাগ্রস্ত করেছেন এবং সরকারের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখাকে ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছেন।’ গত সপ্তাহে ২০২০ সালের নির্বাচনের ফল এবং ট্রাম্পের হারকে মেনে নেয়ার বিপক্ষে ১৩৯ জন রিপাবলিকান ভোট দিয়েছেন।
বিতর্কে আইনপ্রণেতারা কী বলেছেন : আইনপ্রণেতারা সেই একই চেম্বারে বসে ভোটের পক্ষে-বিপক্ষে বিতর্ক করেছেন যেখানে গত সপ্তাহে দাঙ্গাকারীদের প্রবেশের মুখে গ্যাস মাস্ক পরে তারা চেয়ারের নিচে আশ্রয় নিয়েছিলেন। হাউস স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি হাউজ ফ্লোরে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এই সহিংস উত্থানকে উসকে দিয়েছেন, আমাদের দেশের বিরুদ্ধে এই সশস্ত্র বিদ্রোহকে উৎসাহ দিয়েছেন। তিনি অবশ্যই যাবেন। আমাদের ভালোবাসার দেশের প্রতি তিনি স্পষ্ট এবং চলমান হুমকি।’
ডেমোক্র্যাটিক কংগ্রেসম্যান জুলিয়ান ক্যাস্ট্রো ট্রাম্পকে ‘ওভাল অফিসের দায়িত্ব নেয়া সবচেয়ে বিপজ্জনক ব্যক্তি হিসেবে’ উল্লেখ করেছেন। বেশির ভাগ রিপাবলিকানই ট্রাম্পের বক্তব্যের পক্ষে কোনো সাফাই দেননি। এর পরিবর্তে তারা বলেছেন যে, অভিশংসনের প্রস্তাব প্রথাগত শুনানি ছাড়াই উত্থাপিত হয়েছে এবং জাতীয় ঐক্যের জন্য এটিকে বাদ দিতে ডেমোক্র্যাটদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তারা।
‘এত কম সময়ের মধ্যে প্রেসিডেন্টকে অভিশংসিত করাটা ভুল সিদ্ধান্ত হবে,’ বলেন হাউসের শীর্ষ রিপাবলিকান নেতা কেভিন ম্যাককার্থি। ‘তার মানে এই নয় যে প্রেসিডেন্টের কোনো দোষ নেই। বুধবার কংগ্রেসের ওপর দাঙ্গাকারীদের হামলার দায় প্রেসিডেন্টকে বহন করতে হবে।’
ওহাইয়ো রাজ্যের রিপাবলিকান জিম জর্ডান ডেমোক্রেটদের বিরুদ্ধে দেশকে বেপরোয়াভাবে রাজনৈতিক বিভাজনের দিকে ঠেলে দেয়ার অভিযোগ তোলেন। তিনি বলেন, ‘যাই হোক না কেন সব সময়ই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে নামাতে হবে, প্রেসিডেন্টকে সরাতে হবে। এটা একটা ঘোর হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
প্রেসিডেন্টের দলের মধ্য থেকে যারা তার বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন থার্ড-র্যাংকিং হাউজ রিপাবলিকান লিজ চেনি। ওয়াইওমিংয়ের এই রিপ্রেজেন্টেটিভ সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ডিক চেনির মেয়ে। তিনি ক্যাপিটলের দাঙ্গার কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘এর আগে কোনো প্রেসিডেন্ট এত বড় বেঈমানি করেননি।’
পরবর্তী পদক্ষেপ : অভিশংসনের আর্টিকেলটি সিনেটে যাবে যেখানে প্রেসিডেন্ট দোষী কি না তার বিচার অনুষ্ঠিত হবে। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণের জন্য দুই-তৃতীয়াংশ ভোট দরকার হবে। তার মানে হচ্ছে ১০০ আসনের উচ্চ কক্ষে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অন্তত ১৭ জন রিপাবলিকানকে ডেমোক্র্যাটদের পক্ষে ভোট দিতে হবে। মঙ্গলবার নিউ ইয়র্ক টাইমস এক প্রতিবেদনে বলেছে যে, কম করে হলেও ২০ জন রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টের বিচার চায়। ট্রাম্প যদি সিনেটে দোষী সাব্যস্ত হন তাহলে আইনপ্রণেতারা চাইলে আরেকটি ভোট অনুষ্ঠিত করতে পারেন যা তাকে ২০২৪ সালে আবারো প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেয়ার পথকে বন্ধ করে দেবে। তবে এই বিচারকাজ ট্রাম্প ক্ষমতায় থাকার সময় অর্থাৎ আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে না।
এক বিবৃতিতে রিপাবলিকান সিনেট নেতা ম্যাককনেল বলেন, ‘সব নিয়ম, প্রক্রিয়া এবং সিনেট যেখানে প্রেসিডেন্টের বিচার অনুষ্ঠিত হবে তার নজির অনুযায়ী, আগামী সপ্তাহে প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট বাইডেন শপথ নেয়ার আগে একটি নিরপেক্ষ বা গুরুতর বিচার কোনোভাবেই অনুষ্ঠিত করা সম্ভব হবে না।’
ম্যাককনেল তার সহকর্মীদের এক নোটের মাধ্যমে জানিয়েছেন যে তিনি কিভাবে ভোট দেবেন সেটি এখনো ঠিক হয়নি। এখন পর্যন্ত কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট অভিশংসনের মাধ্যমে ক্ষমতা থেকে অপসারিত হননি। ২০১৯ সালে হাউজে অভিশংসিত হয়েছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু সিনেটে পার পেয়ে যান তিনি। একই ধরনের ঘটনা ১৯৯৮ সালে বিল ক্লিনটনের সাথে এবং ১৮৬৮ সালে অ্যান্ড্রু জনসনের সাথে ঘটেছিল।
কত দিন ধরে ট্রয়াল চলবে : মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট জানায়, অভিশংসন পরিচালনা করার জন্য সিনেটের নিজস্ব বিধি আছে। তবে কার্যকর বর্তমান বিধিগুলোর অধীনে একটি ট্রায়ালের জন্য কয়েক দিন সময় লাগতে পারে।
অনুসারীদের শান্ত থাকার আহ্বান ট্রাম্পের : এ দিকে কংগ্রেসে ভোটের পর প্রকাশিত এক ভিডিওতে ট্রাম্প তার অনুসারীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু তিনি যে অভিশংসিত হয়েছেন সেই বিষয়টি উল্লেখ করেননি। ভিডিওতে তিনি বলেন, ‘আমরা গত সপ্তাহে যে সহিংসতা দেখেছি আমি স্পষ্টভাবে সেটির নিন্দা জানাই। খানিকটা মলিন এবং শান্তকণ্ঠে তিনি বলেন, ‘আমার কোনো সত্যিকারের সমর্থক কখনো রাজনৈতিক সহিংসতার পক্ষে থাকতে পারে না। আমার কোনো সত্যিকারের সমর্থক কখনো আইন প্রয়োগকারী সংস্থা বা আমাদের মহান পতাকাকে অসম্মান জানাতে পারে না। আমার কোনো সত্যিকারের সমর্থক কখনো আরেকজন আমেরিকানকে হুমকি বা হেনস্তা করতে পারে না। আপনি যদি এ রকম কিছু করেন তবে আপনি আমাদের আন্দোলনকে সমর্থন করছেন না।
উচ্চকক্ষেও অভিশংসন করার আহ্বান বাইডেনের : বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অভিশংসন বিচার শুরু করতে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলোর পাশাপাশি এ প্রক্রিয়াটিরও সুরাহার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন তিনি।
আইনের ঊর্ধ্বে কেউ নেইÑ পেলোসি : মার্কিন হাউজ স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি বলেছেন, আইনের ঊর্ধ্বে নয় কেউ। বেপরোয়া এ রিপাবলিকান (ট্রাম্প) প্রেসিডেন্ট বিগত ১৩ মাসের মধ্যে দ্বিতীয় দফা অভিশংসিত হওয়ার পর গত বুধবার তিনি এ কথা বলেন। এক অনুষ্ঠানে কংগ্রেসের এই শীর্ষ ডেমোক্র্যাট আরো বলেন, দ্বিদলীয় এ হাউজে আজ দেখা যায় যে কেউ আইনের উর্ধ্বে নয়, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টও।


আরো সংবাদ



premium cement
বদরের শিক্ষায় ন্যায়-ইনসাফের সমাজ প্রতিষ্ঠায় ঐক্যবদ্ধ হতে হবে : সেলিম উদ্দিন ইসলামের বিজয়ই বদরের মূল চেতনা : ছাত্রশিবির পরিবেশ দূষণে বাংলাদেশে বছরে ২ লাখ ৭২ হাজার মানুষের মৃত্যু : বিশ্বব্যাংক নোয়াখালীতে ল’ইয়ার্স কাউন্সিলের ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত ‘আইনের শাসন ও মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ল’ ইয়ার্স কাউন্সিল কাজ করে যাচ্ছে’ পুকুরে পাওয়া গেল ১০০ ইলিশ অবন্তিকার আত্মহত্যা : জবির সহকারী প্রক্টর দ্বীন ইসলামের জামিন আবারো নামঞ্জুর পাথরঘাটায় বদর দিবস পালনে দেড় হাজার মানুষের ইফতারি আদমদীঘিতে ৭২ হাজার টাকার জাল নোটসহ যুবক গ্রেফতার সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান মির্জা ফখরুলের জলবায়ু সহনশীল মৎস্যচাষ প্রযুক্তি উদ্ভাবনে পদক্ষেপ নেয়া হবে : মন্ত্রী

সকল