১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`
শীর্ষ ওলামায়ে কেরামের ফতোয়া

ইসলামে মূতি-ভাস্কর্য হারাম ভাঙার দায়িত্ব সরকারের

-

ভাস্কর্য ও মূর্তি নিয়ে বিতর্কের মধ্যে এ নিয়ে ফতোয়া দিয়েছেন দেশের শীর্ষ ওলামায়ে কেরাম। তারা বলেছেন, মানুষ বা অন্য যেকোনো প্রাণীর ভাস্কর্য আর মূর্তি দুটোই শরীয়তের দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ (হারাম)। এ ব্যাপারে কোনো পার্থক্য নেই। পূজার উদ্দেশ্যে না হলেও তা সন্দেহাতীতভাবে নাজায়েজ ও স্পষ্ট হারাম এবং কঠোরতর আজাবযোগ্য গুনাহ। তবে নিষ্প্রাণ জিনিসের ভাস্কর্য নির্মাণ করলে সমস্যা নেই। তারা আরো বলেন, ফতোয়া দেয়া মুফতিদের কাজ; তবে এটি ভাঙতে হবে কি না সে সিদ্ধান্ত নেয়ার দায়িত্ব সরকারের।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে গতকাল বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে ওলামায়ে কেরাম এই অভিমত দেন। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠন করেন, বেফাকের সহসভাপতি মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদী। তিনি বলেন, সম্প্রতি সরকারি উদ্যোগে ভাস্কর্য নির্মাণের পদক্ষেপ গ্রহণ করায় আলোচনা-সমালোচনা চলছে। ভাস্কর্যের পক্ষে-বিপক্ষে বিভিন্ন কথা হচ্ছে। ফলে জাতীয়ভাবে এ-সংক্রান্ত জিজ্ঞাসার সৃষ্টি হয়েছে। ভাস্কর্য ও মূর্তির বিধান নিয়ে তৈরি করা হচ্ছে বিভ্রান্তি। দুঃখজনক বিষয় হচ্ছে, মূর্তি ও ভাস্কর্য জায়েজ-নাজায়েজ, হালাল-হারামসংক্রান্ত ইসলামী শরিয়েতের বিধান বিষয়ে যে কেউ মন্তব্য ও বক্তব্য দিচ্ছেন। ইসলামী শরিয়তের বিধান বিষয়ে সম্যক অবগত না হয়ে এ জাতীয় বক্তব্য প্রদান দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় এবং একটি উদ্বেগজনক বিষয়। সেই তাগিদ থেকে শীর্ষ ওলামায়ে কেরাম ও মুফতিদের পক্ষ থেকে ভাস্কর্য ও মূর্তিসংক্রান্ত বিষয়ে একটি সম্মিলিত ফতোয়া প্রস্তুত করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে ফতোয়াটি উপস্থাপন করেন ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের প্রধান মুফতি এনামুল হক কাসেমী। লিখিতভাবে তিনি বলেন, মানুষ বা অন্য যেকোনো প্রাণীর ভাস্কর্য আর মূর্তির মধ্যে শরিয়তের দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ হওয়ার ব্যাপারে কোনো পার্থক্য নেই। পূজার উদ্দেশ্যে না হলেও তা সন্দেহাতীতভাবে নাজায়েজ ও স্পষ্ট হারাম এবং কঠোর আজাবযোগ্য গুনাহ। ইসলামের সুস্পষ্ট বিধানকে পাশ কাটিয়ে প্রাণীর ভাস্কর্য আর মূর্তির মধ্যে পার্থক্য করে প্রাণীর ভাস্কর্যকে বৈধ বলা সত্য গোপন করা এবং কুরআন ও সুন্নাহর বিধান অমান্য করার নামান্তর। তিনি আরো বলেন, উপরন্তু কুরআন ও সুন্নাহর সুস্পষ্ট বিধানের সামনে বিভিন্ন দেশের ভাস্কর্য ও মূর্তির উপমা টেনে আনা ইসলামের একটি অকাট্য বিধানকে অবজ্ঞা করার শামিল। অন্য কোনো মুসলিম দেশের শাসকদের শরিয়তবিরোধী কাজ মুসলমানদের জন্য অনুসরণযোগ্য নয়। তাদের জন্য একমাত্র অনুসরণীয় হচ্ছে কুরআন, সুন্নাহ এবং ইসলামী শরিয়ত। সংবাদ সম্মেলনে ভাস্কর্য ও মূর্তি হারাম হলে সারা দেশে যেসব ভাস্কর্য রয়েছে তা আপনারা ভেঙে ফেলতে বলবেন কি নাÑ এমন এক প্রশ্নের জবাবে নুরুল ইসলাম জিহাদী বলেন, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার দায়িত্ব সরকারের। আমরা শুধু ভাস্কর্য নির্মাণ হালাল না হারাম তা জাতিকে জানিয়ে দিতে পারি।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, পাঁচজন মুফতি ফতোয়াটি তৈরির পর তাতে দেশের বিভিন্ন মাদরাসার মুফতি ও ওলামায়ে কেরাম স্বাক্ষর করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেনÑ আল্লামা আতাউল্লাহ হাফেজ্জী, আল্লামা আব্দুল হামিদ (পীর সাহেব মধুপুর), আল্লামা আবুল কালাম, মুফতি মাহফুজুল হক, মাওলানা আব্দুর রব ইউসুফী, মাওলানা জুনাইদ আল-হাবীব, মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী, মুফতি মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী, মাওলানা ফজলুল করিম কাসেমীসহ দেশের শীর্ষস্থানীয় ওলামা-মাশায়েখ।
ফতোয়ায় কুরআনের একাধিক আয়াত এবং কয়েকটি হাদিস তুলে ধরে বলা হয়, সূরা হজের ৩০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছেÑ ‘তোমরা মূর্তিদের অপবিত্রতা থেকে বেঁচে থাকো এবং মিথ্যা কথা বলা থেকে দূরে থাকো’। এ আয়াতে পরিষ্কারভাবে সব ধরনের মূর্তি পরিত্যাগ করা এবং মূর্তিকেন্দ্রিক সব কর্মকাণ্ড বর্জন করার আদেশ দেয়া হয়েছে। হাদিস শরিফেও রাসূলে কারিম সা: মূর্তি-ভাস্কর্য সম্পর্কে পরিষ্কার বিধান দিয়েছেন : মুসলিম (রহ:) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমরা (একবার) মাসরুকের সাথে ইয়াসির ইবনু নুমাইরের ঘরে ছিলাম। মাসরুক ইয়াসিরের ঘরের আঙিনায় কতগুলো মূর্তি দেখতে পেয়ে বললেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনু মাসউদ (রা:) থেকে শুনেছি এবং তিনি নবী সা:কে বলতে শুনেছেন, (কিয়ামাতের দিন) মানুষের মধ্যে সব থেকে শক্ত শাস্তি হবে তাদের, যারা প্রতিকৃতি তৈরি করে। (মুসলিম ৩৭/২৬, হা: ২১০৯, আহমাদ ৩৫৫৮)।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এসব আয়াত ও হাদিস থেকে স্পষ্ট জানা যাচ্ছে, প্রাণীর ভাস্কর্য নির্মাণ অত্যন্ত কঠিন গুনাহ। যেকোনো মূর্তি ও প্রাণীর ভাস্কর্য ইসলামে পরিত্যাজ্য এবং তা নিশ্চিহ্ন করাই হলো ইসলামের বিধান। আর এগুলো নির্মাণ করা ইসলামী শরিয়ত অস্বীকারকারীদের বৈশিষ্ট্য।
ফতোয়ায় বলা হয়, কিছু কিছু লোক প্রাণীর ভাস্কর্য ও মূর্তির মধ্যে পার্থক্য করে প্রাণীর ভাস্কর্যকে বৈধ করার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, এই বলে যে ভাস্কর্য ও মূর্তি এক নয়। তাদের দাবি শরিয়াহ বিধানের দিক থেকে তো এক নয়-ই এমনকি আভিধানিকভাবেও ভুল। কারণ বাংলা একাডেমির ব্যবহারিক বাংলা অভিধান মতে ভাস্কর্য হলোÑ প্রস্তরাদি খোদাই করে বা তা দিয়ে মূর্তি নির্মাণের কাজ। ইংরেজি অভিধানেও স্কাল্পচার মানে ভাস্কর্য, প্রতিমা ও মূর্তি বলা হয়েছে। এ থেকে বোঝা যায়, আভিধানিকভাবেও প্রাণীর ভাস্কর্য আর মূর্তির মধ্যে কোনো বৈপরীত্য নেই। তারা বলেন, প্রাণীর ভাস্কর্যকে বৈধ করতে গিয়ে কিছু লোক যে আয়াতটি পেশ করে তা হলো, সূরা সাবার ১৩ নম্বর আয়াত। এতে বলা হয়েছে : তারা সোলায়মানের ইচ্ছানুযায়ী দুর্গ, ভাস্কর্য, হাউজসদৃশ বৃহদাকার পাত্র এবং চুল্লির উপর স্থাপিত বিশাল ডেগ নির্মাণ করত। (সূরা সাবা, আয়াত ১৩)। এই আয়াতে বর্ণিত ভাস্কর্য নির্মাণের কথাকে কেন্দ্র করে যারা প্রাণীর ভাস্কর্যকে বৈধ বলে দাবি করে করে তারা মূলত এ আয়াতের বিশুদ্ধ তাফসিরকে পাশ কাটিয়ে যায়। কারণ বিশুদ্ধ তাফসিরে ওই আয়াতে বর্ণিত ভাস্কর্য দ্বারা উদ্দেশ্য হলো নিষ্প্রাণ বস্তুর ভাস্কর্য। তবে অনেকে এটাকে প্রাণীর ভাস্কর্য বলে দাবি করেছেন। কিন্তু তারা এ কথাও স্পষ্ট করছেন যে, সোলায়মান আ:-এর যুগে তা বৈধ থাকলেও পরবর্তী সময়ে শেষ নবী সা:-এর শরিয়তে বিশুদ্ধ হাদিসে প্রাণীর ভাস্কর্যকে কঠোরভাবে নিষেধ করার মাধ্যমে ওই বৈধতা রহিত হয়ে গেছে। যেমন ভাইবোনের পরস্পরের বিয়ে হজরত আদম আ:-এর যুগে বৈধ ছিল, আমাদের শরিয়তে সেটি রহিত হয়ে গেছে। (তাফসিরে কুরতুবি ১৪/২৭২, আলবাহরুল মুহিত ৮/৫৫২, ফাতহুল বারী ৬/৪৬৭, ফাতহুল মুলহিম ৪/৩৫)।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ভাস্কর্যের পক্ষে আরেকটি দলিল এভাবে পেশ করা হয় যে, আলফ্রেড গিয়োম তার সিরাতে ইবনে হিশামের ইংরেজি অনুবাদে এভাবে উল্লেখ করেছেন যে, মক্কা বিজয়ের সময় মহানবী সা: ৩৬০টি মূর্তি ভাঙার অনুমতি দিলেও মাঝে থাকা মেরির ছবি দেখে তাতে হাত রেখে তিনি বলেন, এটা তোমরা ভেঙো না। এটি একটি অসত্য বর্ণনা। নবী সা:-এর পবিত্র সিরাত যাদের অধ্যয়নে এসেছে এবং প্রাণীর প্রতিকৃতি তৈরি ও তার বিধানের ব্যাপারে যারা অবগত আছেন তারা এই মিথ্যাচার সহজেই উপলব্ধি করতে সক্ষম। কেননা বিশুদ্ধ হাদিসগুলোর মাধ্যমে কাবা শরিফের সব মূর্তি অপসারণ ও প্রতিকৃতি মুছে ফেলার কঠোর নির্দেশ প্রমাণিত রয়েছে। ইবনু ‘আব্বাস (রা:) থেকে বর্ণিত : নবীহ্ন সা: যখন কাবাঘরে ছবিগুলো দেখতে পেলেন, তখন যে পর্যন্ত তার নির্দেশে তা মিটিয়ে ফেলা না হলো, সে পর্যন্ত তিনি তাতে প্রবেশ করলেন না। (সহিহ বুখারি, হাদিস নং-৩৩৫২)।


আরো সংবাদ



premium cement
ফরিদপুরের গণপিটুনিতে নিহত ২ নির্মাণশ্রমিক জাতিসঙ্ঘে ফিলিস্তিনি সদস্যপদ লাভের প্রস্তাবে যুক্তরাষ্ট্রের ভেটো তীব্র তাপপ্রবাহে বাড়ছে ডায়রিয়া হিটস্ট্রোক মাছ-ডাল-ভাতের অভাব নেই, মানুষের চাহিদা এখন মাংস : প্রধানমন্ত্রী মৌসুমের শুরুতেই আলু নিয়ে হুলস্থূল মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে মূল্যস্ফীতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না এত শক্তি প্রয়োগের বিষয়টি বুঝতে পারেনি ইসরাইল রাখাইনে তুমুল যুদ্ধ : মর্টার শেলে প্রকম্পিত সীমান্ত বিএনপির কৌশল বুঝতে চায় ব্রিটেন ভারতের ১৮তম লোকসভা নির্বাচনের প্রথম দফার ভোট আজ নিষেধাজ্ঞার কারণে মিয়ানমারের সাথে সম্পৃক্ততায় ঝুঁকি রয়েছে : সেনাপ্রধান

সকল