২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

বিনা টেন্ডারে ভ্যাকসিন ক্রয়

ভারত থেকে আমদানি হচ্ছে ৫০ হাজার টন চাল
-

রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে কোনো ধরনের টেন্ডার ছাড়াই সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন কেনার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি।
গতকাল বুধবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের অনুপস্থিতিতে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সভাপতিত্বে ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ২৪তম বৈঠকে প্রস্তাবটির নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়। এই বৈঠকের পর সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভার বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। এই বৈঠকে ভারত থেকে ৫০ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানিসহ মোট ১২টি ক্রয় প্রস্তাবের অনুমোদন দেয়া হয়। এতে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ১২৯ কোটি টাকা।
বৈঠক শেষে অনলাইনে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবু সালেহ্থমোস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেন, অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে একটি প্রস্তাবের অনুমোদন দেয়া হয়েছে। রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি অনুসরণ করে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন ক্রয়ের নিমিত্ত পিপিআর, ২০০৮-এর বিধি ৭৬ (২)-এ উল্লিখিত মূল্যসীমার ঊর্ধ্বে ক্রয়ের নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়েছে।
টেন্ডার ছাড়া কেন করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন কেনা হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, রাষ্ট্রীয় জরুরি প্রয়োজনে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে কেনার জন্য প্রস্তাবটি আনা হয়েছিল। প্রস্তাবটি স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ থেকে করা হয়েছে। অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত কমিটি সেটা সুপারিশ করেছে। আর টাকা-পয়সার বিষয়ে ক্রয়সংক্রান্ত কমিটিতে যখন আসবে তখন আলোচনা হবে। তবে এককালীন কিনতে হলে পাঁচ কোটি টাকার বেশি হলে ক্রয় কমিটিতে আসে। এককালীন কিনতে গেলে এর দাম পাঁচ কোটি টাকার বেশি হবে। এজন্য ক্রয় কমিটিতে আনতে হবে।
পাঁচ কোটি টাকার বেশি হবে দেখেই কি পিপিআর অব্যাহতি নেয়ার জন্য প্রস্তাবটি আনা হয়েছিলÑ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পিপিআর অব্যাহতি নিতে আসেনি। পিপিআরের মধ্যেই সব নিয়ম অনুসরণ করে পিপিআর, ২০০৮-এর বিধি ৭৬(২)-এ উল্লিখিত মূল্যসীমার পাঁচ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে হলেই এই কমিটি বিবেচনা করবে। পিপিআরের সেই ধারাটা ফলো করার জন্যই এই কমিটিতে আনা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ৩০ নভেম্বর সচিবালয়ে মন্ত্রিসভার ভার্চুয়াল এক বৈঠকে কোভিড-১৯ সেকেন্ড ওয়েভ মোকাবেলা ও ভ্যাকসিন সংগ্রহের সবশেষ অগ্রগতি সম্পর্কে মন্ত্রিসভাকে জানানো হয়, গত ১৪ অক্টোবর ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট উৎপাদিত অক্সফোর্ডের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন বাংলাদেশ সরকারের কাছে তিন কোটি ডোজ বিক্রির প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিয়েছেন। গত ৫ নভেম্বর স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সাথে সিরাম ইনস্টিটিউট ও বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালসের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় সমঝোতা স্মারক সই হয়।
এরপর ১৬ নভেম্বর অর্থ বিভাগ ভ্যাকসিন কেনার জন্য স্বাস্থ্যসেবা বিভাগকে ৭৩৫ কোটি ৭৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। ভ্যাকসিন কেনার জন্য অর্থনৈতিক ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে প্রস্তাব পাঠালে বুধবার সেই প্রস্তাবের অনুমোদন দেয়া হয়।
ওই দিন মন্ত্রী পরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাব বলেছিলেন, মানুষকে এই ভ্যাকসিন বিনা পয়সায় দেয়া হবে। টাকা সরকার পে করে দিচ্ছে। তিন কোটি ডোজ ভ্যাকসিন ফ্রি দেয়া হবে।
এ দিকে ক্রয়সংক্রান্ত বৈঠকে বিষয়ে অতিরিক্ত সচিব আবু সালেহ মুস্তফা কামাল এক ভার্চুয়াল ব্রিফিংয়ে সাংবাদিকদের জানান, খাদ্যবিভাগ কর্তৃক ভারত থেকে ৫০ হাজার টন ননবাসমতি সেদ্ধ চাল আমদানির একটি প্রস্তাব টেবিলে উপস্থাপন করা হয়। এটি অনুমোদন দেয়া হয়েছে। প্রতি কেজি চাল ৩৫.২৭ টাকা দরে এতে ব্যয় হবে ১৭৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। ভারতীয় কোম্পানি এমএসটিকে অ্যাগ্রিলিঙ্কে চাল সরবরাহ করবে। এটি ভারতের বীরভূম থেকে আমদানি করা হবে।
সচিব বলেন, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে সৌদি আরবের মা’এদেন ও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তির আওতায় ৬ লাখ টন ডিএপি সার আমদানির একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ২ হাজার ৯৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকা।
তিনি জানান, আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির আওতায় ‘কাতার কেমিক্যাল অ্যান্ড পেট্রোকেমিক্যাল মার্কেটিং অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি’ (মুনতাজাত) থেকে সপ্তম লটে ২৫ হাজার মেট্রিক টন বাল্ক প্রিল্ড (অপশনাল) ইউরিয়া সার আমদানির একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ৫৪ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।
অতিরিক্ত সচিব জানান, বৈঠকে ‘আনোয়ারা উপজেলা সংযোগ সড়কসহ কর্ণফুলী টানেল সংযোগ সড়ককে চার লেনে উন্নীতকরণ (শিকলবাহা-আনোয়ারা সড়ক)’ শীর্ষক প্রকল্পের প্যাকেজ নং-ডব্লিউপি-০১-এর কাজের একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ২৬৭ কোটি ১৪ লাখ টাকা।
তিনি জানান, ‘বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে বাংলাদেশ পুলিশের জন্য ৯টি আবাসিক টাওয়ার ভবন নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় কুমিল্লা পুলিশ লাইনে ১৭তলা ফাউন্ডেশন বিশিষ্ট ১৫তলা আবাসিক ভবন (দু’টি বেসমেন্ট, প্রতি তলায় ১ হাজার বর্গফুট আয়তনের আটটি ইউনিট) নির্মাণ কাজের একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ৬৪ কোটি ১২ লাখ টাকা।
অতিরিক্ত সচিব জানান, স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের আওতাধীন পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের প্যাকেজ নং- এফএসডি/জিডি-১২-এর আওতায় পাঁচটি লটে ৫ কোটি ৪৫ লাখ সাইকেল খাবার বড়ি (তৃতীয় প্রজন্ম) ক্রয়ের একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ২৭২ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
তিনি জানান, নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘রাবনাবাদ চ্যানেলের (ইনার ও আউটার চ্যানেল) জরুরি রক্ষণাবেক্ষণ ড্রেজিং’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলের (ইনার ও আউটার চ্যানেল) জরুরি রক্ষণাবেক্ষণ ড্রেজিং কাজের একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ৪০৮ কোটি ৮৭ লাখ টাকা।
অতিরিক্ত সচিব জানান, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক বাস্তবায়নাধীন ‘বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্প, ময়মনসিংহ জোন’ শীর্ষক প্রকল্পের প্যাকেজ জিডি-১-এর লট ৪-এর আওতায় টার্নকি-ভিত্তিতে তিনটি নতুন সাব-স্টেশন স্থাপন, ছয়টি সাব-স্টেশনের মানোন্নয়ন ও তিনটি বে সম্প্রসারণ কাজের একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ৭০ কোটি ৫২ লাখ টাকা।
তিনি জানান, বাস্তবায়নাধীন ‘ইনস্টলেশন অব সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং (এসপিএম) উইথ ডাবল পাইপলাইন’ শীর্ষক প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘আইএলএফ’ কর্তৃক ডিটেইল ডিজাইন রিভিউ কাজ, চুক্তি বহির্ভূত নতুন কাজ এবং অতিরিক্ত ১২ মাসের জন্য প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট ও কন্ট্রাক্ট ম্যানেজমেন্ট সার্ভিস ক্রয়ের একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ৭২ কোটি ২৪ লাখ টাকা।
অতিরিক্ত সচিব জানান, একই প্রকল্পের আওতায় কুতুবদিয়া ও মাতারবাড়ি অ্যাপ্রোচ চ্যানেল অংশে ‘ডিপ পোস্ট-ট্রেঞ্চিং’ পদ্ধতিতে পাইপলাইন স্থাপনের একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে ৪৭২ কোটি ৪২ লাখ টাকা।
তিনি জানান, কক্সবাজার জেলার মহেশখালির মাতারবাড়ীতে স্থলভিত্তিক এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণের লক্ষ্যে প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই থেকে টার্মিনাল ডেভেলপার সিলেকশনের আরএফপি মূল্যায়ন পর্যন্ত সব কার্যক্রম সম্পাদনের জন্য জাপানের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ‘টোকিও গ্যাস ইঞ্জিনিয়ারিং সলিউশনস করপোরেশন’ ও ‘নিপ্পন কোয়ি কোম্পানি লিমিটেড’ এর সাথে নেগোসিয়েটেড দরে চুক্তি সইয়ের একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ৪৩ কোটি টাকা। তিনি জানান, চলতি ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ের জন্য অতিরিক্ত মোগ্যাস (অকটেন) আমদানির একটি প্রস্তাব অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এতে ব্যয় হবে ১২৯ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।


আরো সংবাদ



premium cement