২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ব্রহ্মপুত্রে পাল্টা বাঁধ নির্মাণের ঘোষণা ভারতের

-

ব্রহ্মপুত্র নদের উজানে চীন বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা করছে; এমন খবর সামনে আসার পরপরই ভাটিতে নিজেদের বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে দিল্লি। ঊর্ধ্বতন ভারতীয় কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মূলত পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য অরুণাচলে চীনা স্থাপনার বিরূপ প্রভাব এড়াতে এমন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। লাদাখ সীমান্তে উত্তেজনা চলমান থাকা অবস্থাতেই এবার বাঁধ নির্মাণ নিয়ে দুই দেশের মধ্যে সঙ্ঘাতের প্রেক্ষাপট সৃষ্টি হচ্ছে। আলজাজিরা ও রয়টার্স।
৩০ নভেম্বর চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম গ্লোবাল টাইমস ব্রহ্মপুত্রের একটি অংশে ৬০ গিগাওয়াট জলবিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতাসম্পন্ন প্রকল্প নির্মাণের খবর দেয়। চীনের পাওয়ার কনস্ট্রাকশন করপোরেশনের চেয়ারম্যান ইয়ান ঝিয়ংকে উদ্ধৃত করে তারা জানায়, ইয়ারলাং জাংবো (ব্রহ্মপুত্র বা যমুনা নদীকে তিব্বতে এই নামেই ডাকা হয়) নদীর ওপর এই যে বাঁধ নির্মাণ প্রকল্পটি তৈরি হচ্ছে সব অর্থেই সেটি হতে যাচ্ছে একটি ‘সুপারড্যাম’।
ব্রহ্মপুত্র নদে চীনের বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনার খবর আসার পরই গত মঙ্গলবার ভারতের একজন কর্মকর্তা দেশটির পাল্টা পরিকল্পনার কথা জানান। তিনি জানান, অরুণাচলে ১০ গিগাওয়াটের জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরির পরিকল্পনা করছে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ। দিল্লির আশঙ্কা, ব্রহ্মপুত্রের উৎসের কাছে বড় আকারের চীনা বাঁধ ও জলবিদ্যুৎ প্রকল্প ভারতে বন্যা ও পানির অভাব তৈরি করতে পারে।
ভারতের কেন্দ্রীয় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা টিএস মেহরা। তিনি রয়টার্সকে বলেন, ‘চীনের বাঁধ প্রকল্পগুলোর বিরূপ প্রভাব হ্রাস করতে অরুণাচল প্রদেশে একটি বড় বাঁধ তৈরি হওয়া এখন সময়ের দাবি।’ তিনি বলেন, আমাদের প্রস্তাবটি সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে বিবেচনাধীন রয়েছে। ভারতের এই কর্মকর্তা জানান, তার দেশের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ব্যাপক আকারে পানি আটকে রাখার ব্যবস্থা করা হবে যাতে পানি প্রবাহের ওপর চীনা বাঁধগুলোর প্রভাব আটকে দেয়া যায়।
কয়েক মাস ধরেই পশ্চিম হিমালয় সীমান্তে মুখোমুখি অবস্থানে ছিল দুই দেশের সেনাবাহিনী। ভারতের অভিযোগ লাদাখে তাদের ভূখণ্ডে ঢুকে পড়েছে চীনা ফৌজ। এর মধ্যেই ব্রহ্মপুত্র নদে পাল্টাপাল্টি বাঁধ নির্মাণের পরিকল্পনা করছে দুই দেশ।
বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, এটি নতুন করে দুই দেশের মধ্যে আরো একটি সঙ্ঘাতের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। কেননা, বেইজিংয়ের বাঁধ তৈরির কার্যক্রম ভারতীয় সীমান্তের একদম কাছাকাছি পর্যন্ত চলে গেছে। ভারত-চীন সম্পর্কের একজন বিশেষজ্ঞ ব্রহ্ম চেলানী। টুইটারে দেয়া এক পোস্টে তিনি বলেন, ‘ভারত হিমালয় অঞ্চলে চীনা আগ্রাসনের মুখোমুখি হচ্ছে। নিজের পেছনের আঙ্গিনায় নদী তীরে অনধিকার প্রবেশের মুখে পড়ছে।’
‘ভারতে প্রতিকূল প্রভাব’ : চীনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন পাওয়ার কনস্ট্রাকশন করপোরেশনের চেয়ারম্যান ইয়ান ঝিয়ং। এক শিল্প সম্মেলনে দেয়া ভাষণে তিনি ব্রহ্মপুত্রে বাঁধ দেয়ার পরিকল্পনাকে একটি ঐতিহাসিক সুযোগ হিসেবে আখ্যায়িত করেন। ভারতের কেন্দ্রীয় পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা টিএস মেহরা বলেন, ‘আনুষ্ঠানিকভাবে আমরা চীনকে বলেছি, তাদের কোনো প্রকল্প যেন ভারতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব না ফেলে। তারা একটি আশ্বাস দিয়েছে; কিন্তু সেটি কত দিন স্থায়ী হবে তা আমরা জানি না।’
আলজাজিরার খবরে বলা হয়েছে, এশিয়ার বড় নদীগুলোতে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো সাম্প্রতিক বছরগুলোতে আঞ্চলিক উত্তেজনার ক্রমবর্ধমান উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চীনের বিরুদ্ধে মেকং নদীতে ধারাবাহিক কয়েকটি বাঁধ নির্মাণের অভিযোগ উঠেছিল। এটি নিম্ন প্রবাহের দেশগুলোর অবস্থা আরো খারাপের দিকে নিয়ে গেছে, খরার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বেইজিং অবশ্য সবসময়ই এসব ঘটনায় তার দায় অস্বীকার করেছে।
ব্রহ্মপুত্রে চীনের এই বাঁধকে ভারতের জন্য উদ্বেগজনক বলে মনে করেন দিল্লিভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের গবেষক সায়ানংশু মোদক। তিনি বলেন, এই অঞ্চলটি ভূতাত্ত্বিক দিক থেকেও অস্থিতিশীল। এটি সম্ভাব্য বাঁধ নির্মাণকেও চ্যালেঞ্জিং করে তুলেছে। বাংলাদেশের নদী বিষয়ক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘রিভারাইন পিপল’-এর মহাসচিব শেখ রোকন বলেছেন, চীন যেকোনো বাঁধ নির্মাণের আগে একটি বহুপক্ষীয় আলোচনা হওয়া উচিত। তিনি বলেন, ‘চীনের ডাউনস্ট্রিমের প্রতিবেশীদের উদ্বেগের বৈধ কারণ রয়েছে। কেননা পানি প্রবাহ ব্যাহত হবে।’


আরো সংবাদ



premium cement