২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

হাইকোর্টের ক্ষোভের পর পি কে হালদারের নামে গ্রেফতারি পরোয়ানা

-

দুর্নীতিবাজ-অর্থপাচারকারীরা যত বড় রুই-কাতলাই হোক, তাদেরকে আইনের আওতায় আনতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি ইন্টারন্যাশনাল লিজিংসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে বিদেশে পাড়ি দেয়া প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারকে গ্রেফতারে ইন্টারপোলের জন্য আড়াই মাসেও পরোয়ানা জারি না হওয়ায় উষ্মা করেছেন হাইকোর্ট। গতকাল বুধবার বিচারপতি মো: নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি আহমেদ সোহেলের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পদক্ষেপের অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দেয়ার পর আদালত উষ্মা প্রকাশ করেন। এরপর ঢাকার মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ কে এম ইমরুল কায়েশ পি কে হালদারের বিরুদ্ধে মৌখিকভাবে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। পরে তা স্বাক্ষরের জন্য পাঠানো হয়। এর আগে আদালতে জমা দেয়া প্রতিবেদনে পি কে হালদারকে গ্রেফতারের জন্য ইন্টারপোলের সহায়তা নিতে আদালতের কাছে পরোয়ানা চাওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়।
আদালত পরবর্তী আদেশের জন্য ৯ ডিসেম্বর সময় রেখেছেন। এই সময়ের মধ্যে বিচারিক আদালতে পি কে হালদারের গ্রেফতারি পরোয়ানার বিষয়ে প্রতিবেদন, মামলার এফআইআর ও সম্পত্তি-অর্থ জব্দের আদেশ আদালতে দাখিল করতে দুদককে বলা হয়েছে।
শুনানিতে আদালত বলেন, যারা দুর্নীতিবাজ, যারা অর্থ পাচার করে তাদের ছাড় দিলে চলবে না।
এ সময় খুরশীদ আলম খান একমত পোষণ করলে আদালত বলেন, তারা যত বড় রুই-কাতলাই হোক না কেন তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে। আমাদের সবার উচিত হলো দেশের প্রোপার্টি রক্ষা করা। ২১ অনুচ্ছেদ অনুসারে এটা আমাদের সাংবিধানিক অধিকার। কাজেই শুধু কোর্ট করবে; অন্যরা করবে তা তো না, সবাইকে করতে হবে।
একপর্যায়ে আদালত বলেন, খুব আনফরচুনেট! আড়াই মাস হয়ে গেল। ওয়ারেন্ট অব অ্যারেস্টের একটা অর্ডার হলো না!
তখন খুরশীদ আলম খান বলেন, আমি যোগাযোগ করেছি, জানিয়েছি।
আদালত বলেন, আপনি বলবেন, এটা নিয়ে উচ্চ আদালত কনসার্ন।
জবাবে খুরশীদ আলম খান বলেন, জি এটা কনভে করব (জানিয়ে দেবো)।
প্রশান্ত কুমার হালদার বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বে থেকে অন্তত সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
আদালতে দুদকের পক্ষে ছিলেন মো: খুরশীদ আলম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক।
গত ১৮ নভেম্বর ‘পি কে হালদারকে ধরতে ইন্টারপোলের সহায়তা চাইবে দুদক’ শীর্ষক গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন নজরে নিয়ে গত ১৯ নভেম্বর তাকে বিদেশ থেকে ফেরাতে এবং গ্রেফতার করতে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে তা জানতে চেয়ে স্বপ্রণোদিত আদেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট।
পরে দুই বিনিয়োগকারীর করা আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ১৯ জানুয়ারি এক আদেশে প্রশান্ত কুমার হালদারসহ সংশ্লিষ্ট ২০ জনের ব্যাংক হিসাব ও পাসপোর্ট জব্দের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। এর মধ্যে দেশে ফিরতে প্রশান্ত কুমার হালদার এ বিষয়ে আদালতের কাছে আবেদন করতে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেডের কাছে একটি পত্র দেন। এরপর কোম্পানিটি আদালতে আবেদন করে। ৭ সেপ্টেম্বর আদালত বলেছেন তিনি কখন কিভাবে আসবেন তা জানাতে। পরে ২০ অক্টোবর একটি আবেদন করেছে কোম্পানিটি। যেখানে নির্বিঘেœ দেশে আসার কথা বলা হয়েছে এবং সেখানে ২৫ অক্টোবরের একটি টিকিটের কপিও সংযুক্ত করা হয়।
২১ অক্টোবর হাইকোর্ট এ বিষয়ে এই আদেশ দেন। আদেশে দেশে আসার সাথে সাথে তার গ্রেফতার নিশ্চিত করতে বলা হয়। পরে তার গ্রেফতারি পরোয়ানা বাস্তবায়ন করতে সংশ্লিষ্ট আদালতে পাঠাতে বলা হয়েছে।
পুলিশের মহাপরিদর্শক, ইমিগ্রেশন অথরিটি চিফ ও দুর্নীতি দমন কমিশনের প্রতি এ নির্দেশনা দেয়া হয়; কিন্তু ২৪ অক্টোবর ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেডের আইনজীবী দুর্নীতি দমন কমিশন এবং রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীকে জানান, পি কে হালদার ২৫ অক্টোবর দেশে ফিরছেন না।


আরো সংবাদ



premium cement