২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

১২ ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা

-

ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনা হলেও কিছু ব্যাংকের খেলাপি ঋণের বিপরীতে আমানতকারীদের আমনত সুরক্ষা করতে বিধিবদ্ধ সঞ্চিতি বা প্রভিশন সংরক্ষণ করতে পারছে না। এতে বেড়েই চলছে প্রভিশন ঘাটতি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, গত সেপ্টেম্বর শেষে সরকারি-বেসরকারিসহ ১২ ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় সাড়ে ৯ হাজার কোটি টাকা। এ বিশাল অঙ্কের প্রভিশন ঘাটতিতে ঝুঁকি বাড়ছে পুরো ব্যাংকিং খাতে। প্রভিশন ঘাটতি থাকা ব্যাংকগুলোর মধ্যে চারটি সরকারি ও আটটি বেসরকারি খাতের বাণিজ্যিক ব্যাংক।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের যে পরিমাণ ঋণ বিতরণ করে তার বেশির ভাগই আমানতকারীদের অর্থ। আমানতকারীদের অর্থ যেন কোনো প্রকার ঝুঁকির মুখে না পড়ে সে জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে নানা বিধিনিষেধ আরোপ করা আছে। এর অন্যতম হলো প্রভিশন সংরক্ষণ। কোনো ঋণ খেলাপি হয়ে গেলে ঋণের শ্রেণী ভেদে ২০ শতাংশ থেকে শতভাগ নিরাপত্তা সঞ্চিতি বা প্রভিশন সংরক্ষণ করতে হয়। এ প্রভিশন সংরক্ষণ করা হয় ব্যাংকের আয় থেকে অর্থ এনে। খেলাপি ঋণ বেড়ে গেলে আর সে অনুযায়ী ব্যাংকের আয় না হলে প্রভিশন ঘাটতি দেখা দেয়। অর্থাৎ ব্যাংকটি যে পরিমাণ আয় করে তা দিয়ে প্রয়োজনীয় প্রভিশন সংরক্ষণ করতে না পারায় ঘাটতি দেখা দেয়। প্রভিশন ঘাটতি হলে ওই ব্যাংকের রিটেইন আর্নিং কমে যায়। এভাবে পরে সমন্বয় করতে না পারলে মূলধন ঘাটতি দেখা দেয়। আর সেই সাথে ব্যাংকের শেয়ার প্রতি আয়ও (ইপিএস) কমে যায়। এতে সাধারণ শেয়ারহোল্ডাররা ক্ষতিগ্রস্ত হন।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সরকারি ব্যাংকগুলোতে দীর্ঘ দিন যাবৎ প্রভিশন ঘাটতি চলছিল। সাথে ছিল বেসরকারি খাতের দুইটি ব্যাংক। কিন্তু গত কয়েক মাস যাবৎ বেসরকারি খাতের দুইটি ব্যাংকের সাথে আরো কয়েকটি ব্যাংকের প্রভিশন ঘাটতি যুক্ত হয়েছে। যেমন, গত সেপ্টেম্বরে আরো ছয়টি বেসরকারি খাতের ব্যাংক যুক্ত হয়েছে প্রভিশন ঘাটতির তালিকায়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, প্রভিশন ঘাটতিতে থাকা ব্যাংগুলোর মধ্যে সবার ওপরে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বেসিক ব্যাংক। সেপ্টেম্বর শেষে ব্যাংকটির প্রভিশন ঘাটতি তিন হাজার ২৩৩ কোটি ২৩ লাখ টাকা। এই সময় পর্যন্ত ব্যাংকটির খেলাপিঋণ ৭ হাজার ৬০৭ কোটি টাকা; যা বিতরণ করা ঋণের ৫১ দশমিক ৭৩ শতাংশ। এ ছাড়া প্রভিশন ঘাটতির তালিকায় বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংক, এবি ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, ঢাকা, মিউচুয়াল ট্রাস্ট, সোস্যাল ইসলামী, ট্রাস্ট ও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে দেশের ৫৯টি ব্যাংক ১০ লাখ ৬৩ হাজার ৬২৬ কোটি টাকা ঋণ বিতরণ করেছে। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৯৪ হাজার ৪৪০ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ৮ দশমিক ৮৮ শতাংশ। তিন মাস আগে জুন শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৯৬ হাজার ১১৬ কোটি টাকা, যা ওই সময় পর্যন্ত বিতরণ করা ঋণের ৯ দশমিক ১৬ শতাংশ ছিল। ফলে গত তিন মাসে খেলাপি ঋণ কমেছে প্রায় এক হাজার ৬৭৬ কোটি টাকা। সেপ্টেম্বর শেষে ১০ শতাংশ বা তার চেয়ে বেশি খেলাপি ঋণ রয়েছে ১৫ ব্যাংকের।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত সেপ্টেম্বর শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা এক লাখ ৯০ হাজার ৭৫৪ কোটি টাকার মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৪২ হাজার ৮৩৪ কোটি ৮৩ লাখ টাকা বা ২০.৮১ শতাংশ। জুন শেষে যা ছিল ৪২ হাজার ৯৩৯ কোটি ৮৬ লাখ টাকা বা ২২.৭৩ শতাংশ। এ সময়ে বেসরকারি ৪১টি ব্যাংকের বিতরণ করা আট লাখ ৯ হাজার ৫৪৮ কোটি টাকার মধ্যে খেলাপি হয়েছে ৪৫ হাজার ৩৬ কোটি টাকা বা ৫.৩৬ শতাংশ। আগের প্রান্তিকে জুন শেষে এই ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৪৬ হাজার ৫৯২ কোটি টাকা বা ৫.৮৬ শতাংশ। গত সেপ্টেম্বর শেষে বিদেশী ৯ ব্যাংকের ৩৪ হাজার ৯৩১ কোটি টাকা বিতরণ করা ঋণের মধ্যে খেলাপির পরিমাণ দুই হাজার ৪৮ কোটি টাকা বা ৫.৮৬ শতাংশ। গত জুন শেষে এই ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল দুই হাজার ৬৩ কোটি টাকা বা ৫.৪৯ শতাংশ। অর্থাৎ বিদেশী ব্যাংকগুলোর পরিমাণের দিক থেকে খেলাপি ঋণ কমলেও শতকরা হিসাবে বেড়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, প্রভিশন ঘাটতি পরে সমন্বয় করতে না পারলে ব্যাংকগুলোর মূলধন ঘাটতি দেখা যায়। এর ফলে দেশের ব্যাংকিং খাত আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় সক্ষমতা অর্জনের জন্য যে হারে মূলধন সরংরক্ষণ করার কথা ছিল তা করতে পারছে না। ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে দেশের ব্যাংকিং খাতের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে পড়ে যাচ্ছে। লেনদেন সমন্বয় করতে বেড়ে যাচ্ছে ব্যয়।


আরো সংবাদ



premium cement