২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

১৪০০ রোহিঙ্গা মাঝি নজরদারিতে!

-

মাদকসংক্রান্ত বিষয়ে প্রায় ১৪ শ’ রোহিঙ্গা মাঝি (নেতা) আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর নজরদারিতে রয়েছেন। তাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা মাদককারবারে জড়িত। ইতোমধ্যে অনেকে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর হাতে গ্রেফতারও হয়েছেন। তবুও তাদের মাদককারবার থামছে না। তাদের মধ্যে কেউ কেউ মানবপাচারের সাথেও জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।
প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার থেকে কোটি কোটি টাকার ইয়াবাসহ বিভিন্ন প্রকারের মাদক দেশে প্রবেশ করছে। সীমান্ত হয়ে টেকনাফ-উখিয়াসহ ওই অঞ্চল পার হয়ে তা পৌঁছে যাচ্ছে রাজধানীসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। সীমান্তে কড়া নজরদারির পরও ইয়াবা প্রবেশ ঠেকিয়ে রাখা যাচ্ছে না। প্রায়ই ইয়াবার চালান আটক হলেও থামছে না এর বিস্তার।
এই ইয়াবাকারবারের সাথেই জড়িয়ে পড়ছে প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার থেকে এ দেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের কেউ কেউ। তেমনি একজন মাদককারবারি, সন্ত্রাসী ও মানবপাচারকারী চক্রের হোতা হলেন রোহিঙ্গা নেতা ফয়জুল কবির।
জানা যায়, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ক্যাম্প নং ৮-ঊ, ব্লক-ই৮-এ অবস্থানকারী ফয়জুল কবির গড়ে তুলেছেন নিজের বিশাল অপরাধ সাম্রাজ্য, অনুসন্ধানে যার সহকারী হিসেবে আনাস নামে এক ব্যক্তির নাম উঠে আসে। জানা যায় , ফয়জুল কবিরের সাথে মিয়ানমারের বড় সব ইয়াবা সাপ্লাইয়ার, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের মাফিয়া ও বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা বিভিন্ন অপরাধী চক্রের সাথে বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে।
ফয়জুল কবির নামের এই ব্যক্তি মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু শহরের ‘ক্ষীপু মং’ নামের ইয়াবা সাপ্লাইয়ার থেকে ইয়াবা ক্রয় করে নাফ নদীতে অবস্থিত ফয়জুল কবির গ্যাংয়ের নিজস্ব ছোট নৌকায় করে বাংলাদেশে নিয়ে আসে, সেখান থেকে ঢাকা, চট্টগ্রামসহ বাংলাদেশের সব বিভাগীয় মেইন ডিলারদের সাপ্লাই দিয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সাধারণ রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে, জোর করে ইয়াবার ক্যারিয়ার (বহনকারী) হিসেবে ব্যবহার করে থাকে।
জানা গেছে, ফয়জুল কবির গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের অভ্যন্তরে সাধারণ রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে জোর করে চাঁদা আদায় ও নির্যাতনের অসংখ্য অভিযোগ ও প্রমাণ বিদ্যমান; কিন্তু তাদের অত্যাচারের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে চায় না। ফয়জুল কবির ও তার সহযোগীরা ক্যাম্পে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গার মানবপাচারকারীদের সাহায্যে সমুদ্রপথে থাইল্যান্ড ও মালোশিয়া নিয়ে যাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে মাঝ সমুদ্রে ও থাইল্যান্ডের বিভিন্ন দ্বীপে নিয়ে নির্যাতন করা ও পরিবার থেকে চাপ দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা আদায় ও টাকা দিতে ব্যার্থ হলে সমুদ্রে ফেলে হত্যা, নারীদের ধর্ষণের মতো বিভিন্ন জঘন্য অপরাধে লিপ্ত রয়েছে।
এ ছাড়াও রোহিঙ্গাদের ভাসানচরে পাঠানোর সরকারি কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করতে ও সাধারণ রোহিঙ্গাদের ভয়ভীতি দেখানোর একাধিক অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করা গেছে এবং ২০১৯ সালে আন্দামান নিকোভার দ্বীপের নিকটবর্তী জায়গা থেকে রোহিঙ্গা বোঝাই ডুবন্ত বোট উদ্ধার হয়েছিল, যা এ ফয়জুল কবির গ্যাংয়ের ছিল বলে প্রমাণ পাওয়া যায়।
জানা যায়, এই গ্রুপের কাছে হালকা ও ভারী অস্ত্র, দু’টি বোট (যা দিয়ে সমুদ্রে পথে মানবপাচার করা হয়), নাফ নদীতে ব্যবহারের জন্য ছোট নৌকা, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতর প্রায় ১০০ জনের গ্যাং রয়েছে।
স্থানীয় রোহিঙ্গারা জানান, ‘আমরা বিপদে পড়ে বাংলাদেশে এসেছি, বাংলাদেশের মুসলিম ভাইরা আমাদের ভাই মনে করে আশ্রয় দিয়েছে, ফয়জুল কবিরের মতো লোকদের কারণে দিন দিন আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ও বাংলাদেশীদের কাছে রোহিঙ্গাদের দুর্নাম হচ্ছে, বাংলাদেশের প্রশাসন এদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিলে আমরা এবং স্থানীয় রোহিঙ্গারা এদের অত্যাচার থেকে মুক্তি পাবে।’

 


আরো সংবাদ



premium cement