২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ব্রহ্মপুত্রে বাঁধ দিচ্ছে চীন

বাংলাদেশ-ভারতে পানি সঙ্কটের আশঙ্কা
ইয়ারলাং জ্যাংবো নামে পরিচিত এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ নদ ব্রহ্মপুত্রের চীনা অংশ -

চীন স্থানীয়ভাবে ইয়ারলাং জ্যাংবো নামে পরিচিত এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ নদ ব্রহ্মপুত্রে বাঁধ নির্মাণ করে বিশাল পানিবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে। এতে তীব্র পানিসঙ্কটের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে উত্তর-পূর্ব ভারত ও বাংলাদেশে।
দেশটির সরকারি মুখপত্র দৈনিক গ্লোবাল টাইমস এ খবর জানিয়ে বলেছে, চীনের ১৪তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় আগামী বছর থেকে তিব্বতে ব্রহ্মপুত্র নদের উপর বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে এ পানিবিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ শুরু হতে পারে।
ইয়ারলাং জ্যাংবো নদী উত্তর-পূর্ব ভারতে প্রবেশ করে বাংলাদেশের উপর দিয়ে যমুনা নদী নামে পদ্মার সাথে মিলিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। বাংলাদেশে শুকনো মৌসুমে যে পানি পাওয়া যায় তার ৬০ শতাংশের মতো আসে ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে। পানিবিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য জ্যাংবো নদীর পানি প্রত্যাহার করা হলে ভারতের পাশাপাশি বাংলাদেশেও তীব্র পানিসঙ্কট সৃষ্টি হতে পারে।
চীনের পক্ষ থেকে এটি পানিবিদ্যুৎ প্রকল্প বলা হলেও বহুমুখী উদ্দেশ্যে এই বাঁধ প্রকল্পটি নেয়ার কথা বলা হচ্ছে। বিশেষত এই বাঁধ থেকে একটি বড় আকারের সেচ প্রকল্প বাস্তবায়নের কথাও জানা যাচ্ছে। এতে স্বাভাবিকভাবে উদ্বিগ্ন ভারত ও বাংলাদেশ। কারণ ব্রহ্মপুত্র নদের অববাহিকার বড় একটি অংশ ভারত ও বাংলাদেশের উপর দিয়ে বয়ে চলেছে। ফলে বাঁধ দেয়া হলে ব্রহ্মপুত্রনির্ভর মানুষজনকে নানা সমস্যায় পড়তে হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
তিব্বতের পশ্চিমাঞ্চলে হিমালয় পর্বতমালার কৈলাস শৃঙ্গের কাছে জিমা ইয়ংজং হিমবাহে ব্রহ্মপুত্রের উৎপত্তি। এর পর ভারতের অরুণাচল ও আসাম হয়ে ব্রহ্মপুত্র সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে।
ভারতে প্রবেশের মুখে অরুণাচল সীমান্তের কাছে তিব্বতের মেডগ কাউন্টিতে ব্রহ্মপুত্র নদের উপর এই বাঁধ নির্মাণ করা হবে বলে চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত দৈনিক গ্লোবাল টাইমসের অনলাইন প্রতিবেদনে জানানো হয়।
গত রোববার চীনের পাওয়ার কনস্ট্রাকশন করপোরেশনের চেয়ারম্যান ইয়ান ঝিইয়ং জানান, ইতিহাসে এর সমকক্ষ কোনো প্রকল্প নেই, এটি চীনের পানিবিদ্যুৎ প্রকল্পের ইতিহাসে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। তিনি আরো বলেন, ‘দেশের একাধিক অংশের পানি সরবাহের উৎস ছাড়াও এ বাঁধ বিদ্যুৎ সরবরাহে ব্যাপক সাহায্য করবে। এ প্রকল্পের মাধ্যমে পানিবণ্টন ব্যবস্থা ও জাতীয় সুরক্ষা বজায় রাখা যাবে।’ তিনি জানান, বাঁধটি থেকে বছরে ছয় কোটি কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে এবং বছরে ৩০০ কোটি ডলার আয় হবে।
আগামী বছরের শুরুর দিকে জাতীয় পিপলস কংগ্রেস (এনপিসি) দ্বারা আনুষ্ঠানিক অনুমোদনের পরে এই পরিকল্পনার বিবরণ প্রকাশ করা হবে বলে আশা করা হয়েছিল।
ব্রহ্মপুত্রের বাঁধের প্রস্তাব ভারত এবং বাংলাদেশে নদী অববাহিকায় উদ্বেগ সৃষ্টি করে। চীন তাদের স্বার্থকে মাথায় রাখবে বলে আশ্বাস দিলেও এ ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট কোনো চুক্তি বা বোঝাপড়া হয়নি।
তিব্বতের প্রায় ২০০ মিলিয়ন কিলোওয়াট পানিসম্পদ রয়েছে, যা চীনের মোট পানিসম্পদের ৩০ শতাংশ। এর আগে চীনের তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের গাইকা শহরের থেকে ৯ কিমি (৫.৬ মাইল) উত্তর-পশ্চিমে ইয়ারলাং জ্যাংবো/ ব্রহ্মপুত্র নদের উপর একটি বাঁধ নির্মাণের খবর প্রকাশ হয়। এই বাঁধ ভুটান-ভারত সীমান্ত থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে নির্মিত হয়। নদীপ্রযুক্তি চালানোর মাধ্যমে বাঁধের উদ্দেশ্য হলো পানিবিদ্যুৎ উৎপাদন। এটি জাঙ্গমু জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের অংশ এবং একটি ৫১০ মেগাওয়াট পাওয়ার স্টেশন সমর্থন করে। নির্মাণ ২০০৯ সালে শুরু হয় এবং প্রথম জেনারেটরটি নভেম্বর ২০১৪ সালে চালু হয়। শেষ ১৩ অক্টোবর ২০১৫ সালে চালু হয়েছিল। এটি ব্রহ্মপুত্র/ইয়ারলাং জ্যাংবো নদীর প্রথম বাঁধ এবং এটি চীন ও ভারতের মধ্যে বিতর্ক সৃষ্টি করে।
১৯৭২ সালে চীনের একাডেমি অব সায়েন্সেসের মাধ্যমে কুংহাই-তিব্বত প্লেট-এ যৌথ বৈজ্ঞানিক অভিযান করা হয়েছিল সাংগোপো-ব্রহ্মপুত্র নদী অববাহিকার অংশে। গবেষণায় প্রমাণিত হয় যে, সর্বাধিক ১,১৪,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত হতে পারে নদী অববাহিকায় এবং শুধু প্রধান নদীপ্রবাহ থেকে ৭৯,০০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা সম্ভব। ১৯৮০-এর দশকে আরো গভীরভাবে জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের জন্য পরিদর্শন শুরু হয়, যা নদী বাঁধের জন্য ১২টি স্থান চিহ্নিত করা হয়। এটা ধারণা করা হয়েছিল যে, বাঁধগুলো বিদ্যুৎ ঘাটতি মেটাতে পারবে তিব্বতের রাজধানী শহর লাসায়। ১৯৮০ ও ১৯৯০-এর দশকে, নদী অববাহিকায় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কাজ শুরু করতে ব্যর্থ হয়েছিল প্রশাসন। বর্তমানে, অববাহিকায় ২৮টি প্রস্তাবিত বাঁধ রয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement