২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

রেল যোগাযোগ সম্প্রসারণের উদ্যোগ নিয়েছি : প্রধানমন্ত্রী

বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতুর ভিত্তি স্থাপন
-

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, স্বল্পমূল্যে পণ্য ও জনপরিবহন নিশ্চিত করতে শক্তিশালী যোগাযোগ নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠার অংশ হিসেবে সরকার দেশব্যাপী রেল যোগাযোগ আরো সম্প্রসারিত করার উদ্যোগ নিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘রেলকে আরো শক্তিশালী করার আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে। সারা দেশে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের জন্য রেল নেটওয়ার্ক আমরা সৃষ্টি করব। যাতে অল্প খরচে পণ্য পরিবহন এবং মানুষের যাতায়াতের অনেক সুবিধা হয়।’
প্রধানমন্ত্রী যমুনা নদীর ওপরে বঙ্গবন্ধু সেতুর উজানে ১৬ হাজার ৭৮১ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পৃথক ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকালে একথা বলেন। তিনি গতকাল সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু সেতুর পশ্চিমপাড় সিরাজগঞ্জের সয়দাবাদে আয়োজিত মূল অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি অংশগ্রহণ করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সারা দেশে আমরা রেলের নেটওয়ার্ক তৈরি করতে চাচ্ছি। একেবারে ঢাকা থেকে বরিশাল, পটুয়াখালী হয়ে পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেললাইন নিয়ে যাবো। তার সমীক্ষা শুরুর ব্যাপারে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, সেখান থেকে কক্সবাজার ও টেকনাফ পর্যন্ত যাবে রেললাইন।’ ‘তা ছাড়া ট্রান্সএশিয়ান রেলওয়ের সাথে যখন আমরা সংযুক্ত হয়ে যাবো, এটাও আমাদের জন্য বিরাট কাজ হবে,’ যোগ করেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতা বলেছিলেন, বাংলাদেশ হবে প্রাচ্যের সুইজারল্যান্ড। অর্থাৎ, বাংলাদেশ হবে প্রাচ্য ও প্রাশ্চাত্যের মধ্যে একটা সেতুবন্ধন। আর সেই সেতুবন্ধন করতে গেলে আমাদের ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের সাথে সংযোগ করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিস্তা নদীর ওপর যে রেল সেতু সেখানে গাড়ি চলার কোনো সেতু ছিল না। তিনি সরকারে আসার পর সেখানে পৃথক সড়ক সেতু করে দেন। নইলে আগে রেলসেতুর ওপর দিয়েই ঝুঁকিপূর্ণভাবে গাড়ি পারাপার চলত। তিনি বলেন, ভৈরবে রেললাইনের ওপর দিয়েই অপেক্ষমান থেকে একটা করে গাড়ি পার হতো। সেখানেও পৃথক সড়ক সেতু করেছেন। কালুরঘাটেও রেল সেতুর পাশাপাশি পৃথক সড়ক সেতু হয়েছে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রেলপথ মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন। জাপানের রাষ্ট্রদূত ইতো নাওকি অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব সেলিম রেজা স্বাগত বক্তৃতা করেন।
মুখ্য সচিব ড.আহমদ কায়কাউস গণভবন প্রান্ত থেকে অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন। গণভবন প্রান্তে এবং মূল অনুষ্ঠানস্থলে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশী, স্থানীয় সংসদ সদস্যবৃন্দ, উন্নয়ন সহযোগী জাপানের জাইকার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, রেলপথ মন্ত্রণালয় ও স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তাবৃন্দ, স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এবং সাধারণ জনগণ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতুর ওপর একটি ভিডিওচিত্র প্রদর্শিত হয়।
যমুনা নদীর ওপরে বঙ্গবন্ধু সেতুর ৩০০ মিটার উজানে নির্মিত হচ্ছে ডাবল লেনের ৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের বঙ্গবন্ধু রেলওয়ে সেতু। জাপান ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই রেল সেতুটি নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে জাইকা। ২০২৫ সাল নগাদ এর নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে আমি খুবই আনন্দিত, কেননা রেল সেতু করার ব্যাপার নিয়ে আমাকে অনেক তর্ক করতে হয়েছে, অনেক দেন দরবার করতে হয়েছে। আজকে একটা আলাদা সেতু হয়ে যাচ্ছে। যার ফলে আমি মনে করি দেশের অভ্যন্তরীণ আর্থসামাজিক উন্নয়ন তো হবেই তেমনি আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিকভাবেও আমরা আরো সমৃদ্ধ হবো, যা আমাদের দেশকে ভবিষ্যতে আরো উন্নত করবে।’
প্রধানমন্ত্রী এ সময় দাতাগোষ্ঠীর প্রেসক্রিপশনে বিএনপির রেলবন্ধ করে দেয়ার প্রচেষ্টার উল্লেখ করে বলেন, অথচ তিনি নিজের উদ্যোগে বঙ্গবন্ধু সেতুর সাথে রেলসংযোগ প্রদান করেন। আর এখন দাতাগোষ্ঠীরাই সেখানে পৃথক একটি রেলসেতু করারও প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন। একের পর এক রেলস্টেশন বন্ধ করে দিয়ে রেলকর্মচারীদের কর্মচ্যুতি ঘটানোর প্রসঙ্গ টেনে শেখ হাসিনা বলেন, রেলকে প্রায় গলাটিপে হত্যা করতে গিয়েছিল বিএনপি সরকার। আমরা ক্ষমতায় এসে তাকে জীবিত করেছি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাপান আমাদের সত্যিকার পরীক্ষিত বন্ধু এবং জাতির পিতা ১৯৭৩ সালে জাপান সফরের সময়ই যমুনা নদীর ওপর সেতুর জন্য জাপানকে অনুরোধ করেছিলেন।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৯৬ সালে জাপান যাওয়ার পর জাপানের প্রধানমন্ত্রীর জানতে চাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে খুলনা ও বাগেরহাটের মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী রুপসা সেতু এবং পদ্মা সেতু নির্মাণে জাপানের সহযোগিতা চান তিনি। তিনি বলেন, এ সময় জাপানের প্রধানমন্ত্রী রাজি হয়ে জানতে চান প্রথম কোনটা করা হবে। যেহেতু রুপসাটা তাড়াতাড়ি হবে, আর পদ্মা খরস্রোতা নদী, এটার সমীক্ষায় সময় লাগবে, ব্রিজ বানাতেও সময় লাগবে, তাই রুপসা সেতুর কথাই আগে বলেন বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর থেকে এ পর্যন্ত নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ আল্লাহর রহমতে প্রায় শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘আমি যখনই জাপান গিয়েছি তখন সবসময়ই জাপান সরকার আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। এ জন্য বিশেষভাবে আমি জাপান সরকারকে ধন্যবাদ জানাই।’ সর্বশেষ তিনি যখন জাপান সফর করেন তখন শিনজো আবে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। যিনি দুই হাত খুলেই বাংলাদেশকে সহযোগিতা করেছেন, উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, ‘তাঁকে এবং জাপানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকেও আমি ধন্যবাদ জানাই তাঁরা সবই বাংলাদেশের অকৃত্রিম বন্ধু।’
সিরাজগঞ্জ সংবাদদাতা জানান, জাপান ও বাংলাদেশ সরকারের যৌথ অর্থায়নে ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে ডাবল লেনের ৪.৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে রেল সেতুটি নির্মাণ করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে জাইকা। ২০২৪ সালের আগস্ট মাসের মধ্যে কাজ সমাপ্ত হবে। এই সেতু দিয়ে ১০০ কিলোমিটার বেগে একইসাথে দু’টি ট্রেন চলাচল করতে পারবে। পাশাপাশি সব ধরনের মালবাহী ট্রেন চলাচল করতে পারবে।
১৯৯৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতু চালুর মধ্য দিয়ে রাজধানী ঢাকার সাথে উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের রেল যোগাযোগ চালু হয়। প্রথমে ব্রডগেজ ও মিটারগেজের চারটি ট্রেন দৈনিক আটবার পারাপারের পরিকল্পনা থাকলেও যাত্রী চাহিদা বাড়তে থাকায় সেতুর ওপর দিয়ে চলাচলকারী ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হয়। ২০০৮ সালে বঙ্গবন্ধু সেতুতে ফাটল দেখা দেয়ায় কমিয়ে দেয়া হয় সেতুর ওপরে চলাচলকারী ট্রেনের গতিসীমা।
বর্তমানে ৩৮টি ট্রেন নিয়মিত স্বল্প গতিতে ঝুঁকি নিয়ে পারাপার হলেও সময় অপচয়ের পাশাপাশি ঘটছে শিডিউল বিপর্যয়, বাড়ছে যাত্রী ভোগান্তি।


আরো সংবাদ



premium cement

সকল