২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

যমুনার ওপর বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রেল সেতু যেমন হবে

-

বাংলাদেশে তিন হাজারের বেশি রেল সেতু রয়েছে। যেগুলো সবই ছোট। এখনো পর্যন্ত দেশের সবচেয়ে বড় রেল সেতু হলো পাবনার পাকশীতে পদ্মা সেতুর ওপরে এক শ’ বছরের পুরনো হার্ডিঞ্জ ব্রিজ। কিন্তু যমুনা নদীর উপরে বঙ্গবন্ধু রেল সেতুটি নির্মাণ হলে সেটি হবে দেশের সবচেয়ে বড় রেল সেতু। এর বেশির ভাগ অর্থ আসছে জাপানি ঋণে। বিবিসি।
আন্তর্জাতিক সংযোগের পরিকল্পনা : গতকাল এক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেতুটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেসময় তিনি বলেছেন, ‘আজকে একটা আলাদা (রেল) সেতু হয়ে যাচ্ছে যাতে আমি মনে করি আমাদের দেশের অভ্যন্তরীণ আর্থসামাজিক উন্নতি তো হবেই এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিকভাবেও আমরা আরো সংযুক্ত হতে পারব।’
বাংলাদেশ ট্র্যান্স এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত হতে চায়। এই সেতুটি ভবিষ্যতে সেই সংযোগ তৈরি করতে সহায়তা করবে বলে আশা করা হচ্ছে। বক্তৃতায় সেই ধারণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে সবচেয়ে বড় প্রকল্পগুলোর অর্থায়ন, কারিগরি সহায়তা, স্থাপনাগুলোর কাঠামো ও নানা যন্ত্রাংশ দিচ্ছে যে দেশগুলো, জাপান তার মধ্যে একটি।
প্রধানমন্ত্রী একপর্যায়ে তার বক্তৃতায় বলেছেন, ‘জাপানের মতো বন্ধু যাদের সাথে আছে তাদের আর চিন্তার কিছু নেই।’
রেল সেতুটির বৈশিষ্ট্য : এই প্রকল্পের পরিচালক ও জেনারেল ম্যানেজার মো: কামরুল আহসান। তিনি জানিয়েছেন যমুনা নদীর উপরে যে বঙ্গবন্ধু সেতু রয়েছে, সেই সড়ক সেতুর ৩০০ মিটার উজানে এটি নির্মিত হচ্ছে, যার দৈর্ঘ্য ৪.৮ কিলোমিটার।
বঙ্গবন্ধু সড়ক সেতুতে যে রেললাইন রয়েছে তার ওপর দিয়ে বর্তমানে ৩৮টি ট্রেন চলাচল করে। রেল সেতুটি নির্মাণ হয়ে গেলে ৮৮টি ট্রেন চলাচল করতে পারবে। সে সময় নতুন রুট চালু করা হবে। বর্তমানে যে রেল সেতুগুলো রয়েছে তাতে একটি করে লাইন রয়েছে। এই সেতুটিতে দু’টি রেললাইন বসবে। যার ফলে কোনো ট্রেনকে সেতু পার হওয়ার জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। একসাথে দুটো ট্রেন দুই দিকে চলে যেতে পারবে।
যমুনা সেতু সত্ত্বেও যে কারণে এটি বানানো হচ্ছে : মি. আহসান জানিয়েছেন যমুনা নদীর উপরে বঙ্গবন্ধু সড়ক সেতুতে যে রেললাইন রয়েছে তা পার হতে দুইপাশে অপেক্ষা ছাড়াও সড়ক সেতু হওয়ায় ওজন ও গতির বিষয়েও সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
এখন বঙ্গবন্ধু সড়ক সেতুতে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৫ থেকে ২০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলাচল করতে পারে। অন্য রেল সেতুগুলোর ক্ষেত্রে গতি আরো কম। এই সেতুটিতে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১২০ কিলোমিটার বেগে ট্রেন চলতে পারবে। এটির ওপর দিয়ে যেকোনো ওজনের মালবাহী ও যাত্রীবাহী ট্রেন চলতে পারবে। এই ব্রিজটির ওপর দিয়ে একাধিক লোকোমোটিভ বা ইঞ্জিন দিয়ে ট্রেন চালানো যাবে। সাধারণত মালবাহী ট্রেনগুলোকে প্রায়ই দু’টি ইঞ্জিন দিয়ে টানতে হয়।
বর্তমান ব্রিজের ওপর দিয়ে সেটি সম্ভব হয় না। ইঞ্জিন মেরামত করার জন্য সেটিকে অন্য আরেকটি ইঞ্জিন দিয়ে টেনে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থাও বঙ্গবন্ধু সেতুতে নেই। যে কারণে পার্বতীপুরের কারখানায় মেরামতের জন্য ইঞ্জিন নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। এই সেতুতে সেটি সম্ভব হবে।
যেসব উপকরণ ব্যবহার হবে : সেতুটি সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়ে মিস্টার আহসান বলেছেন, এই সেতুটি তৈরিতে যেসব উপকরণ ও প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে সেটি এখনকার রেল সেতুগুলো থেকে আলাদা।
‘এটি ওয়েদারিং স্টিল দিয়ে তৈরি হবে। আমাদের এখনকার যে সেতুগুলো রয়েছে সেগুলো দুই তিন বছর পরপর রঙ করতে হয়। এটা আমাদের কখনোই রঙ করতে হবে না। এই সেতুটির রক্ষণাবেক্ষণ খরচ প্রায় শূন্য।’ এই সেতুটির ফাউন্ডেশনে জাপানের একটি প্রযুক্তি ব্যবহার হবে। যে প্রযুক্তি জাপানের বাইরে খুব কম ব্যবহৃত হয়। রেললাইনগুলো চাকার ঘর্ষণে ক্ষয়ে যাওয়া কমাতে বিশেষ উপকরণ ব্যবহার করা হবে। তাই লাইনগুলো কম পরিবর্তন হবে। বছর তিরিশও চলে যেতে পারে।
ব্রিজের সংযোগস্থলে যে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে তাতে ব্রিজটির নিজের ওজন কম হবে।
খরচ ও চালু হওয়ার সম্ভাব্য সময় : ব্রিজটি তৈরি করার জন্য জাপানের দু’টি কোম্পানির সাথে চুক্তি করা হয়েছে। যারা আগস্ট মাসেই প্রাথমিক কিছু কাজ শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন মি. আহসান। তিনি জানিয়েছেন ২০২৪ সালের আগস্ট মাসে এর কাজ সম্পন্ন করার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।
২০১৬ সালে প্রকল্পটি পাস হয়েছিল কিন্তু তার কাজ শুরু হতে চার বছরের মতো সময় লেগেছে।
প্রাথমিকভাবে যে খরচ ধরা হয়েছিল সেটিও বেড়েছে। এখন পর্যন্ত ব্রিজটির জন্য ১৬ হাজার ৭০০ কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। যার মধ্যে ১২ হাজার কোটি টাকার বেশি জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন বা জাইকার কাছ থেকে ঋণ হিসেবে পাবে বাংলাদেশ। বাকি অর্থ বাংলাদেশ দেবে।
ব্রিজটি নির্মাণে জাইকার সাথে দু’টি ঋণ চুক্তি হয়েছে। যার একটি ১ শতাংশ সুদে আর অন্যটি ০.৬ শতাংশ নেয়া হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement