২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ম্যারাডোনা শোকে স্তব্ধ ফুটবল বিশ্ব

-

সবুজ গালিচায় আর দেখা যাবে না ফুটবলের রাজপুত্রকে। তবুও তার পায়ের তুলিতে আঁকা অসংখ্য মুহূর্ত ফুটবলপ্রেমীদের স্মৃতির পাতায় সাজানো থাকবে চিরকাল। ফুটবল রাজপুত্রের চির বিদায় পুরো বিশে^র পক্ষ-প্রতিপক্ষকে মিলিয়ে দিয়েছে এক কাতারে। বুধবার তিগ্রেতে নিজ বাসায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে না ফেরার দেশে চলে গেছেন আর্জেন্টাইন ফুটবল কিংবদন্তি দিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা। শোকের মাতম বইছে বিশ্বজুড়ে।
কিছুদিন আগে বুয়েন্স আয়ার্সের হাসপাতালে তার মস্তিষ্কে জরুরি অস্ত্রোপচার করা হয়। মস্তিষ্কে জমাট বেঁধে থাকা রক্ত (ক্লট) অপসারণ করা হয়েছিল। তখন মাদকাসক্তি নিয়ে ভীষণ সমস্যায় ভুগেছেন ম্যারাডোনা। পুনর্বাসনের জন্য তাকে নেয়া হয়েছিল তিগ্রের একটি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে। সেখান থেকে ফিরেছিলেন নিজ বাড়িতে। কে জানত, পৃথিবীতে তার জন্য অপেক্ষা করছিল আর কয়েকটা দিন। মাত্র ৬০ থবছর বয়সে কোটি ফুটবল ভক্তকে কাঁদিয়ে অন্য জগতের বাসিন্দা হলেন বাঁ পায়ের জাদুকর। তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালনের ঘোষণা দিয়েছে আর্জেন্টিনা সরকার। বিশে^র সব ক্রীড়াঙ্গন, অ্যাথলেট, তারকা থেকে সর্বস্তরের মধ্যে বিরাজ করছেন এই মহাতারকা। গত রাতে (আর্জেন্টিনার স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার) রাজধানী বুয়েন্স আয়ার্সের প্রেসিডেন্ট কার্যালয় কাসা রোসাদায় তাকে শেষ বিদায় জানানো হয়। করোনা মহামারীতে বিধিনিষেধ সত্ত্বেও জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকে অনুষ্ঠানটি।
আর্জেন্টিনা ফুটবল
অ্যাসোসিয়েশন (এএফএ) এক টুইট বার্তায় জানিয়েছে, ‘আমরা ভীষণ শোকার্ত আমাদের কিংবদন্তির মৃত্যুতে। আপনি সবসময় থাকবেন আমাদের হৃদয়ে।’ তবে ম্যারাডোনার মৃত্যুর তারিখটিও অনেক কৌতূহলের জন্ম দিয়েছে গণমানুষের কাছে। কারণ ২৫ নভেম্বর মারা গেছেন ম্যারাডোনা, ঠিক ২০১৬ সালের একই তারিখে (২৫ নভেম্বর) পরপারে পাড়ি দিয়েছেন তার বন্ধু কিউবার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ফিদেল ক্যাস্ত্রো।
অপর দিকে ম্যারাডোনা-পেলে সেরা কে? এই প্রশ্নের উত্তর নিয়ে বাগি¦তণ্ডা হয়তো আরো অনেক দিন পর্যন্ত চলতে থাকবে; কিন্তু বন্ধুর মৃত্যুতে শোকাহত ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি পেলে। ম্যারাডোনার মৃত্যুর খবর পেয়ে ইনস্টাগ্রামে লেখেন, ‘অত্যন্ত বেদনাদায়ক খবর। প্রিয় বন্ধুকে হারালাম। অনেক কিছু বলার রয়েছে। কিন্তু এই দুঃসময়ে ঈশ্বর ওর পরিবারকে শক্তি দিন। আশা করি, এক দিন স্বর্গে ফুটবল খেলব আমরা।’
আর্জেন্টিনার জেতা সবশেষ বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক ম্যারাডোনা। ১৯৮৬ সালে মেক্সিকোর আসরে বলতে গেলে প্রায় একাই চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন লাতিন আমেরিকার দেশটিকে। ওই বিশ্বকাপেই ফুটবল বিশ্ব দেখেছিল তার ‘হ্যান্ড অব গড’ গোলটি। ক্লাব ফুটবলে নাপোলিকে দিয়েছিলেন লিগ শিরোপার স্বাদ। ইতালিয়ান এই ক্লাবে যাওয়ার আগে খেলে গিয়েছিলেন বার্সেলোনার জার্সিতে। আর ক্যারিয়ারের শেষটা করেছিলেন বোকা জুনিয়র্সে।
১৯৬০ সালের ৩০ অক্টোবর বুয়েন্স আয়ার্সের এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয়া এই ফুটবল কিংবদন্তি আর্জেন্টিনার জার্সিতে ৯১ ম্যাচে করেছেন ৩৪ গোল। ১৯৯৭ সালে বোকা জুনিয়র্সের হয়ে ৩৭ বছর বয়সে ফুটবলকে বিদায় জানান ম্যারাডোনা। রেকর্ড বইয়ে তার নামের পাশে লেখা থাকল ৬৭৮ ম্যাচে ৩৪৫টা গোল। খেলোয়াড়ি জীবন শেষে আর্জেন্টিনার কোচের দায়িত্বও সামলেছেন তিনি। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আর্জেন্টাইন ক্লাব জিমনেসিয়ার কোচের দায়িত্বে ছিলেন তিনি।
ম্যারাডোনার মৃত্যুতে টুইট করে লিওনেল মেসি লিখেন, ‘আর্জেন্টিনার প্রতিটি মানুষ এবং ফুটবলের জন্য আজ অত্যন্ত দুঃখের দিন। দিয়েগো আমাদের ছেড়ে চলে গেছে; কিন্তু আমাদের ছেড়ে কখনো যাবে না দিয়েগো। কারণ ও চিরন্তন। দিয়েগোর সাথে যেসব সুন্দর মুহূর্ত কাটিয়েছি, তা আমার স্মৃতিতেই থাকবে। দিয়েগোর পরিবার ও বন্ধুদের সমবেদনা জানাই।’
এই প্রজন্মের আরেক গ্রেট ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো টুইট করে লিখেছেন, ‘আজ আমি এক বন্ধুকে বিদায় জানাচ্ছি আর সারা বিশ্ব বিদায় জানাচ্ছে এক চিরকালীন প্রতিভাকে। সর্বকালের সেরা একজনকে, এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী জাদুকরকে। বড় তাড়াতাড়ি তাকে চলে যেতে হলো, কিন্তু এক সীমানাহীন উত্তরাধিকারকে তিনি রেখে গেলেন।’
এ দিকে মার্শেই কোচ আন্দ্রে ভিয়াস-বোয়াস তো বললেন, ম্যারাডোনার পরা ১০ নম্বর জার্সি সব দলের জন্যই তুলে রাখা উচিত।
ফিফা প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফান্তিনো শোক প্রকাশ করে বলেছেন, ‘আজ আমাদের জন্য অবিশ্বাস্য এক দিন। আমাদের থেকে বিদায় নিয়েছে দিয়েগো। আমাদের হৃদয় থেকে তার জন্য অসংখ্য ভালোবাসা। এই মুহূর্তে আমাদের নীরবতা, আমাদের ব্যথা, আমাদের অশ্রু সব তুমি কেড়ে নিয়েছো। পরপারে ভালো থাকো দিয়েগো। আমরা তোমাকে ভালোবাসি।’
শোকাহত বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনও। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা লিখেছেন, থ‘শোকের পরে শোক চলছে। তোমার থেকে বড় সুপারস্টার আমার চোখে আর কেউ ছিল না, আর আসবেও না। ব্যক্তিজীবনে তুমি আমার একমাত্র সুপারস্টার ছিলে, যাকে আমি একবার হলেও সামনে থেকে দেখতে চেয়েছিলাম। তোমার বাঁ-পায়ের আঁকা নিখুঁত গোলের ছবিগুলো মনের ক্যানভাসে থেকে যাবে আজীবন। ভালো থেকো ওপারে জাদুকর। দি ড্রিবলিং মাস্টার দিয়েগো আরমান্দো ম্যারাডোনা।’
১৮ বছর বয়সে প্রথম ক্লদিয়া ভিল্লাফানেকে বিয়ে করেন তিনি। সেই সংসারে রয়েছে দুই কন্যা। অবশ্য ২০ বছরের দাম্পত্য ভেঙে গিয়েছিল ২০০৪ সালে। পরে একাধিক বন্ধবীর সাথে দেখা যায় তাকে। ধারণা করা হয়, ১০ জনের অধিক সন্তান রয়েছে তার। দারুণ ফুটবলে যেমন নন্দিত ছিলেন, তেমনটি নিন্দিতও ছিলেন বেপরোয়া জীবনযাপনের কারণে। বিশেষ করে, কোকেন সেবন কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল তার ফুটবল ক্যারিয়ারে। যে কারণে ১৯৯৪ বিশ্বকাপে দুই ম্যাচ পর নিষিদ্ধ হন কিংবদন্তি। ১৯৯১ সালে ড্রাগ পজিটিভ হয়ে ১৫ মাস নিষিদ্ধ ছিলেন তিনি। তবে ম্যারাডোনাকে বিশ্ব মনে রাখবে তার অসম্ভব সুন্দর ফুটবল কারুকাজের জন্য।

 


আরো সংবাদ



premium cement
কক্সবাজারে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যু, স্বজনদের হাসপাতাল ঘেরাও বঙ্গোপসাগরে ১২ নাবিকসহ কার্গো জাহাজডুবি ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বাংলাদেশকে ‘নেট সিকিউরিটি প্রোভাইডার’ হিসেবে দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্র রাজশাহীতে তাপমাত্রা ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি রাজশাহীতে টানা তাপদাহ থেকে বাঁচতে বৃষ্টির জন্য কাঁদলেন মুসল্লিরা শরীয়তপুরে তৃষ্ণার্ত মানুষের মাঝে পানি ও খাবার স্যালাইন বিতরণ জামায়াতের এক শ্রেণিতে ৫৫ জনের বেশি শিক্ষার্থী নয় : শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী নজিরবিহীন দুর্নীতির মহারাজার আত্মকথা ফতুল্লায় ১০ লাখ টাকা চাঁদার দাবিতে নির্মাণকাজ বন্ধ, মারধরে আহত ২, মামলা পার্বত্যাঞ্চলে সেনাবাহিনী: সাম্প্রতিক ভাবনা গফরগাঁওয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে টিকটক করতে গিয়ে স্কুলছাত্রের মৃত্যু

সকল