২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

করোনায় ৮ দিনের মাথায় আবারো ৩৯ জনের মৃত্যু

সারা দেশে চিকিৎসা নিচ্ছে ৯৭ হাজার
-

ঠিক আট দিনের মাথায় আবারো সারা দেশে করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৩৯ জনের। সারা দেশে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ও আইসোলেশনে আছে ৮৪ হাজার ৯৬৭ জন করোনা রোগী। সর্বশেষ গত ১৭ নভেম্বর ৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছিল। গতকাল ১৬ হাজার একটি নমুনা পরীক্ষা করে দুই হাজার ১৫৬ জন করোনা শনাক্ত হয়েছেন। দেশব্যাপী ঠাণ্ডা হওয়া শুরু হওয়ার পর থেকেই বেড়েছে করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যু। নভেম্বর মাসের তুলনায় অক্টোবরে মোটামুটি সহনীয় পর্যায়েই ছিল সংক্রমণ।
নভেম্বরের ১ থেকে ১৬ পর্যন্ত করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় কাছাকাছি ছিল। মাঝখানে ৮ ও ৯ তারিখ ছাড়া অবশিষ্ট দিনগুলোতে মৃত্যুর সংখ্যা ২১-এর ঘর অতিক্রম করেনি; কিন্তু ১৭ নভেম্বর থেকে কোনো কোনো দিন আগের দিনগুলোর চেয়ে দ্বিগুণ হয়ে গেছে। যেমন ১৭ নভেম্বর মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৩৯ জন। ২২ নভেম্বর মৃত্যু হয়েছে ৩৮ জনের, ২৩ নভেম্বর ২৮ জন, ১৯ নভেম্বর ৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং ২৪ নভেম্বর মৃত্যু হয়েছে ৩২ জনের। সামনের দিনগুলোতে শীতের মাত্রা বেড়ে গেলে সংক্রমণ ও মৃত্যু আরো বাড়তে পারে বলে মনে করেন জনস্বাস্থ্যবিদরা। গতকাল পর্যন্ত সারা দেশে ছয় হাজার ৪৮৭ জনের মৃত্যু হয়েছে করোনায়। চলতি বছরের ৮ মার্চ থেকে গতকাল পর্যন্ত সারা দেশে চার লাখ ৫৪ হাজার ১৪৬ জন করোনা শনাক্ত হয়েছে। ৮ মার্চ থেকে করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন তিন লাখ ৬৯ হাজার ১৭৯ জন।
নমুনা পরীক্ষার দিক থেকে গতকাল ১৩.৪৭ শতাংশ করোনা শনাক্ত হলেও এ পর্যন্ত করোনায় মোট শনাক্তের হার ১৬.৮৪ শতাংশ। দেশে প্রতি ১০ লাখে দুই হাজার ৬৬৬.৬৪ জন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে বলে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে জানানো হয়েছে। তবে সুস্থ হচ্ছে ৮১.২৯ শতাংশ। করোনায় আক্রান্তের দিক থেকে যেমন পুরুষের সংখ্যা বেশি তেমনি মৃত্যুর দিক থেকেও পুরুষের সংখ্যা বেশি। গতকাল যে ৩৯ জন করোনা শনাক্ত হয়েছেন এর ২৭ জনই ছিল পুরুষ। মৃত্যুর দিক থেকে ঢাকা বিভাগ বিশেষ করে রাজধানীতে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, মৃতদের মধ্যে ঢাকা বিভাগেরই ২৬ জন। মৃতদের সবাই হাসপাতালে মারা গেছেন।
এ বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা বলেন, এখন বাড়িতেই মানুষ বেশি চিকিৎসা নিচ্ছেন। অবস্থার অবনতি হলেই কেবল মানুষ হাসপাতালে আসছেন। তিনি জানান, যাদের বয়স বেশি তাদের উচিত আগে থেকেই হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নেয়া। গতকালও রাজধানীর শুধু করোনা আক্রান্ত রোগী চিকিৎসা করা হয় এমন ১৯ হাসপাতালে দুই হাজার ১৩৯ জন রোগী ভর্তি ছিলেন। আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন ২১৪ জন করোনা আক্রান্ত রোগী। চট্টগ্রাম মহানগরীর করোনা চিকিৎসা হয় এমন ১০ হাসপাতালে ২০৬ জন ভর্তি ছিলেন এবং আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন ১৭ জন। ঢাকা ও চট্টগ্রামে আইসিইউ’র বেড খালি ছিল যথাক্রমে ৯১ ও ২২টি।
রাজশাহী বিভাগে ৬১ জন আক্রান্ত
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, গত মঙ্গলবার বিভাগে নতুন ৬১ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ দিন বিভাগে সুস্থ হয়েছেন ৪৯ জন। বিভাগে এখন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা মোট ২২ হাজার ২৭৮ জন। তাদের মধ্যে মোট ২০ হাজার ৫২৭ জন সুস্থ হয়েছেন। গতকাল বুধবার বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা: গোপেন্দ্রনাথ আচার্য্য সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি জানান, বিভাগে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ ২০৪ জনের মৃত্যু হয়েছে বগুড়ায়। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫১ জনের মৃত্যু হয়েছে রাজশাহীতে। এর বাইরে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১৪ জন, নওগাঁয় ২৪ জন, নাটোরে ১২ জন, জয়পুরহাটে সাতজন, সিরাজগঞ্জে ১৪ জন এবং পাবনায় ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে।
বগুড়ায় আরো দুইজনের মৃত্যু
বগুড়া অফিস জানায়, বগুড়ায় গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আক্রান্ত হয়ে আরো দুইজন মারা গেছেন। তাদের একজন হলেন, বগুড়া সদরের ঠেঙ্গামারা এলাকার বাসিন্দা ব্যাংক কর্মকর্তা শামছুল হক (৬৩)। তিনি বুধবার বেলা ১টায় টিএমএসএস মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যান। এর আগে তিনি করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৮ নভেম্বর ভর্তি হন ওই হাসপাতালে। অপর দিকে মঙ্গলবার আবুল কাশেম (৬৫) নামের এক ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এ নিয়ে জেলায় সরকারি হিসাবে মৃতের সংখ্যা ২০৪ জনের দাঁড়াল। এ দিকে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় আরো ২৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এ সময়ে সুস্থ হয়েছেন ১৯ জন এবং বর্তমানে চিকিৎসাধীন ৫৩৭ জন। ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা: মোস্তাফিজুর রহমান তুহিন এসব তথ্য জানান।
চট্টগ্রামে দুই দিনে চারজনের মৃত্যু
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামে করোনায় মারা যাওয়ার তালিকায় আরো যোগ হয়েছেন দুইজন। পরপর দুই দিন দুইজন করে মারা গেছেন করোনায়। এ ছাড়া গত ২৪ ঘণ্টায় ৮৫৫টি নমুনা পরীক্ষায় আক্রান্ত হয়েছেন ১০৬ জন। সবমিলিয়ে আক্রান্তের সংখ্যা ২৪ হাজার ১৭৫ জন।
সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, কক্সবাজার মেডিক্যাল কলেজ ল্যাবসহ চট্টগ্রামে আটটি ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা হয়। এর মধ্যে বিআইটিআইডিতে নমুনা পরীক্ষায় চারজন, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ ল্যাবে তিনজন, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবে ৪০ জন, ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবে পাঁচজন, ইম্পেরিয়াল হাসপাতাল ল্যাবে ১১ জন, শেভরন ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরিতে ৩৪ জন এবং মা ও শিশু হাসপাতাল ল্যাবে নয়জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement