২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

১৫ বাংলাদেশী বহিষ্কার একজনকে গ্রেফতার করেছে সিঙ্গাপুর

উসকানিমূলক পোস্টের অভিযোগ
-

মহানবী সা:-এর ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফ্রান্সবিরোধী পোস্ট দেয়ায় ১৫ জন প্রবাসী বাংলাদেশীকে বহিষ্কার করেছে সিঙ্গাপুর। এ ছাড়া সিরিয়াভিত্তিক উগ্রবাদী সংগঠনের সাথে সম্পৃক্ততার অভিযোগে একজন বাংলাদেশীকে গ্রেফতার করেছে দেশটির আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। সিঙ্গাপুর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে এসব কথা জানানো হয়েছে।
গত মঙ্গলবার মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়, ১ সেপ্টেম্বর ফরাসি ম্যাগাজিন শার্লে এবদোতে ইসলামের নবীর ব্যঙ্গচিত্র পুনঃপ্রকাশিত হওয়ার পর ফ্রান্সজুড়ে সন্ত্রাসী আক্রমণ বেড়ে যায়। প্যারিসের শহরতলিতে ফরাসি একজন স্কুলশিক্ষককে গলা কেটে হত্যা করা হয়। এ ছাড়া সৌদি আরবের জেদ্দা ও অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় ফ্রান্স বা পশ্চিমাদের স্বার্থের ওপর আক্রমণ করা হয়। বেশ কিছু দেশে ফ্রান্সবিরোধী পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। সেখানে ফ্রান্সের বিরুদ্ধে বড় ধরনের প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়, ফরাসি পণ্য বর্জনের ডাক দেয়া হয়। ক্রমাবনতিশীল পরিস্থিতিতে সেপ্টেম্বর থেকে সিঙ্গাপুরের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো সতর্ক হয়ে ওঠে এবং সিঙ্গাপুরে যেকোনো ধরনের আক্রমণের বিরুদ্ধে আগে থেকেই পদক্ষেপ নিতে থাকে।
এতে বলা হয়, ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত সিঙ্গাপুরের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিভাগ (আইএসডি) ৩৭ ব্যক্তির বিরুদ্ধে তদন্ত করেছে। তাদের মধ্যে ১৪ জন সিঙ্গাপুরের এবং ২৩ জন বিদেশী নাগরিক। সিঙ্গাপুরের নাগরিকদের মধ্যে ১০ জন পুরুষ এবং চারজন মহিলা। তাদের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সহিংসতা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের জন্য উসকানিমূলক পোস্ট দেয়ার অভিযোগ নিয়ে তদন্ত চলছে। ২৩ জন বিদেশী নাগরিকদের মধ্যে ১৬ জনকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। তাদের মধ্যে একজন মালয়েশিয়া এবং ১৫ জন বাংলাদেশী নাগরিক। বাংলাদেশী নাগরিকদের মধ্যে অধিকাংশই নির্মাণ শিল্পে কাজ করতেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, আহমেদ ফায়সাল নামে ২৬ বছরের এক বাংলাদেশী নাগরিককে সন্ত্রাসে জড়িত থাকার অভিযোগে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা আইনের অধীনে ২ নভেম্বর গ্রেফতার করা হয়েছে। আইএসডির প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, ফায়সাল চরমপন্থায় দীক্ষিত হয়ে নিজ ধর্মের সমর্থনে সশস্ত্র সহিংসতা চালানোর ইচ্ছা পোষণ করছে। ২০১৭ সাল থেকে ফায়সাল সিঙ্গাপুরে নির্মাণশ্রমিক হিসেবে কাজ করছিলেন। ২০১৮ সালে আইএসের অনলাইন প্রোপাগান্ডায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি চরমপস্থা অনুসরণ শুরু করেন। আইএসের খেলাফত প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তিনি সিরিয়া সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সেখানে যেতে চেয়েছিলেন। এ লড়াইয়ে মারা গেলে তিনি শহীদের মর্যাদা পাবেন বলে বিশ্বাস করতেন। ২০১৯ সালের মাঝামাঝি ফায়সাল সিরিয়াভিত্তিক অপর উগ্রবাদী সংগঠন হায়াত তাহরির আল-শামসের তহবিলে অর্থ পাঠিয়েছেন। এ ছাড়া তিনি ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়তে ভারতের কাশ্মির যেতে চেয়েছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, সিরিয়া ও ইরাকে খেলাফত প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে আইএস সামরিকভাবে পর্যুদস্ত হলেও ইউরোপ ও সিঙ্গাপুরের সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ থেকে বোঝা যাচ্ছে, সন্ত্রাসবাদের ঝুঁকি এখনো আছে। এ জন্য সিঙ্গাপুরের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো সতর্ক। সহিংসতার পক্ষাবলম্বন করলে যে কারো বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রসঙ্গত, গত ৬ নভেম্বর সিঙ্গাপুরে অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশন দেশটির প্রশাসনের বরাত দিয়ে ফ্রান্সবিরোধী ইস্যুতে অভিবাসী শ্রমিকদের জড়িয়ে পড়ার ব্যাপারে সাবধান করে দিয়ে বলেছিল, অন্যথায় সিঙ্গাপুর সরকার কঠোর পদক্ষেপ নেবে।


আরো সংবাদ



premium cement