২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

করোনায় কমেছে বাণিজ্যঘাটতি : ঋণাত্মক আমদানি প্রবৃদ্ধি

-

করোনাভাইরাসের প্রভাবে সামগ্রিক আমদানি প্রবৃদ্ধি ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে। রফতানি আয়ও বাড়েনি। এরই প্রভাবে পণ্যবাণিজ্য ঘাটতি কমে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে পণ্যবাণিজ্য ঘাটতি হয়েছে ২০৪ কোটি মার্কিন ডলার, যা আগের বছরে ছিল ৩৮৪ কোটি ডলার। এ হিসাবে আগের বছরের তিন মাসের তুলনায় চলতি বছরের তিন মাসে পণ্যবাণিজ্য ঘাটতি কমেছে প্রায় ৪৭ শতাংশ।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড যখন বেড়ে যায় তখন পণ্য আমদানি স্বাভাবিকভাবেই বেড়ে যায়। আর শিল্পের মূলধনী যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল আমদানি বাড়লে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়ে। আর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়লে রফতানিতেও ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। গত মার্চ মাস থেকে বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে বাংলাদেশের তৈরী পোশাকের বাজার বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোতে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। রাতারাতি চলমান তৈরী পোশাকের কার্যাদেশ বন্ধ করে দেয়া হয়। অনেক কার্যাদেশ স্থগিত করে দেয়া হয়। এর প্রভাব স্থানীয় বাজারেও পড়ে। এক টানা লকডাউনের কারণে স্থানীয়ভাবেও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে স্থবিরতা নেমে আসে। বছরের মাঝামাঝিতে লকডাউন তুলে দেয়া হলেও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আর আগের মতো ফিরে আসেনি। ইতোমধ্যে বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। এর ফলে স্থানীয়ভাবে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবিরতা কাটছে না। এর সরাসরি প্রভাব পড়েছে পণ্য আমদানি ও রফতানিতে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, প্রায় সব ধরনের পণ্য আমদানিই কমে গেছে। এর মধ্যে চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে শিল্পের মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে প্রায় ৫৯ শতাংশ। শিল্পপণ্যের আমদানি কমেছে সাড়ে ২৫ শতাংশ। পেট্রোলিয়াম পণ্যের আমদানি কমেছে প্রায় ২৫ শতাংশ। শিল্পের কাঁচামাল আমদানি কমেছে প্রায় সাড়ে ৭ শতাংশ। সবমিলে আলোচ্য সময়ে পণ্য আমদানির জন্য আমদানি ঋণপত্র নিষ্পত্তি কমেছে পৌনে চৌদ্দ শতাংশ।
পণ্য আমদানি কমে যাওয়ায় রফতানি আয়ের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান মতে, গত অক্টোবরে রফতানি আয় কমেছে ৪ দশমিক শূন্য তিন শতাংশ। আর জুলাই অক্টোবরে রফতানি আয় বেড়েছে শূন্য দশিকি ৯৭ শতাংশ। অর্থাৎ ১ শতাংশেরও কম।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, আমদানি-রফতানি কমে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর আয়ের ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়েছে। ব্যাংকগুলোর শিল্পে মেয়াদি ঋণের বড় একটি অংশই আদায় হয় না। এর ফলে এ খাত থেকে আশানুরূপ আয় হয় না। কিন্তু ব্যাংকের বড় অঙ্কের আয় হয় যে কয়েকটি খাত থেকে তার মধ্যে পণ্য আমদানি রফতানিতে এলসি কমিশন অন্যতম। কিন্তু গত মার্চ মাসের পর থেকে রফতানি আয় কমে যাওয়ার পাশাপাশি পণ্য আমদানি কমে যাচ্ছে। এতে ব্যাংকগুলোর অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও কমে গেছে। এলসি কমিশনের বাইরে ব্যাংকের বেশি আয় হতো ভোক্তা ঋণ ও ক্রেডিট কার্ড থেকে। কিন্তু করোনার প্রভাবে এ দু’টি খাত থেকে আয় বড় ধরনের ধস নেমেছে।
ভোক্তা ঋণের বেশির ভাগ অংশই আদায় হচ্ছে না। সেই সাথে করোনাভাইরাসের প্রভাবে অনেকেই চাকরি হারিয়েছেন। অনেকেরই বেতনভাতা কমে গেছে। ফলে ক্রেডিট কার্ডের ঋণও অনেকেই শোধ করতে পারছেন না। সবমিলিয়ে সামগ্রিক অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব ব্যাংক খাতেও দেখা দিয়েছে। ব্যাংকগুলো এখন টিকে থাকার জন্য পরিচালনব্যয় কমিয়ে দিচ্ছে। ব্যাংকারদের বার্ষিক এককালীন সুযোগ-সুবিধা কমিয়ে দেয়া হচ্ছে। অনেক প্রতিষ্ঠান থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছাঁটাই করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্বিতীয় প্রজন্মের একটি ব্যাংকের এমডি গতকাল নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, বেশির ভাগ ব্যাংকই এখন টিকে থাকার জন্য কার্যকলাপ হাতে নিয়েছে। কারণ গ্রাহক ঋণ পরিশোধ করছেন না। কমে গেছে পণ্য আমদানি রফতানি। এতে প্রকৃত আয় কমে গেছে। কিন্তু ব্যয় থেমে থাকছে না। মানবিক কারণে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছাঁটাই করা হচ্ছে না। কিন্তু এভাবে বেশি দিন ধরেও রাখা সম্ভব হবে না। বিকল্প উপায় তাদের বের করতে হবে। অন্যথায় টিকে থাকাই কষ্টকর হয়ে পড়বে।

 


আরো সংবাদ



premium cement