২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

করোনা সংক্রমণের হার বৃদ্ধিতে বাড়ছে শঙ্কা

২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুর তিন চতুর্থাংশই ষাটোর্ধ্ব
-

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ দিন দিন বাড়ছেই। বাড়ছে মৃত্যুও। ক্রমবর্ধমান এ হার জনমনে শঙ্কা বাড়াচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা শনাক্ত হয়েছেন আরো দুই হাজার ৪১৯ জন। ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের এ সংখ্যা গত ৮১ দিনের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর আগে গত ২ সেপ্টেম্বর শনাক্ত হয়েছিলেন দুই হাজার ৫৮২ জন। এখন পর্যন্ত চার লাখ ৪৯ হাজার ৭৬০ জন শনাক্ত হয়েছেন। করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় মারা গেছেন আরো ২৮ জন। এ নিয়ে গতকাল পর্যন্ত করোনায় ছয় হাজার ৪১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। আর ২৪ ঘণ্টায় দুই হাজার ১৮৩ জন এবং এখন পর্যন্ত তিন লাখ ৬৪ হাজার ৬১১ জন সুস্থ হয়েছেন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গতকাল সোমবার এ তথ্য জানানো হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে দেখা গেছে, গত ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ২৮ জনের মধ্যে ২১ জনই ষাটোর্ধ্ব বয়সী। অর্থাৎ মোট মৃত্যুর তিন-চতুর্থাংশই এ বয়সসীমার। অন্য দিকে ৫১-৬০ বছরের মধ্যে পাঁচজন এবং ৪১-৫০ বছরের মধ্যে দু’জন মারা গেছেন। আর গতকাল পর্যন্ত যারা মারা গেছেন তাদের মধ্যে তিন হাজার ৩৯৩ জনের বয়স ছিল ৬০ বছরের বেশি। এ ছাড়াও এক হাজার ৬৭৮ জনের বয়স ৫১-৬০ বছরের মধ্যে, ৭৭৯ জনের বয়স ৪১-৫০ বছরের মধ্যে, ৩৩৯ জনের বয়স ৩১-৪০ বছরের মধ্যে, ১৪৫ জনের বয়স ২১-৩০ বছরের মধ্যে, ৫১ জনের বয়স ১১-২০ বছরের মধ্যে এবং ৩১ জনের বয়স ছিল ১০ বছরের কম।
২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়াদের মধ্যে ২১ জন পুরুষ এবং সাতজন নারী। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত চার হাজার ৯৩০ জন পুরুষ এবং এক হাজার ৪৮৬ জন নারী মারা গেছেন। বিভাগ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, গতকাল মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ২১ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে চারজন, রাজশাহীতে দু’জন ও সিলেটে একজন রয়েছেন। আর গতকাল পর্যন্ত মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে তিন হাজার ৩৯৮ জন ঢাকা বিভাগের, এক হাজার ২৩৮ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, ৩৯১ জন রাজশাহী বিভাগের, ৪৮৮ জন খুলনা বিভাগের, ২১৫ জন বরিশাল বিভাগের, ২৬৩ জন সিলেট বিভাগের, ২৯১ জন রংপুর বিভাগের এবং ১৩২ জন ময়মনসিংহ বিভাগের বাসিন্দা ছিলেন।
বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়েছিল গত ৮ মার্চ, তা ২৬ অক্টোবর চার লাখ পেরিয়ে যায়। যেহারে বাংলাদেশে সংক্রমণ হচ্ছে তাতে আজ মঙ্গলবারই সংক্রমণ সংখ্যাটি সাড়ে চার লাখ অতিক্রম করবে। এর মধ্যে গত ২ জুলাই চার হাজার ১৯ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়, যা এক দিনের সর্বোচ্চ শনাক্ত।
অন্য দিকে প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। ৪ নভেম্বর তা ছয় হাজার ছাড়িয়ে যায়। এর মধ্যে ৩০ জুন এক দিনেই ৬৪ জনের মৃত্যুর খবর জানানো হয়, যা এক দিনের সর্বোচ্চ মৃত্যু।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ১১৭টি ল্যাবে ১৬ হাজার ৫৯টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ২৬ লাখ ৬৫ হাজার ১৩১টি নমুনা। ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ১৫ দশমিক ০৬ শতাংশ, এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮১ দশমিক ০৭ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ।
রাজশাহী বিভাগে আরো দু’জনের মৃত্যু : রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহী বিভাগে করোনাভাইরাসে আরো দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। গত রোববার বিভাগের বগুড়ায় মারা যান তারা। এ নিয়ে বিভাগে এখন পর্যন্ত মোট ৩৩৩ জনের মৃত্যু হলো করোনায়। গতকাল সোমবার বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা: গোপেন্দ্রনাথ আচার্য্য সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বিভাগে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ ২০২ জনের মৃত্যু হয়েছে বগুড়ায়। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে রাজশাহীতে। এর বাইরে চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১৪ জন, নওগাঁয় ২৪ জন, নাটোরে ১২ জন, জয়পুরহাটে সাতজন, সিরাজগঞ্জে ১৪ জন এবং পাবনায় ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। রোববার বিভাগে নতুন ৪৬ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ দিন বিভাগে সুস্থ হয়েছেন ৩৮ জন। বিভাগে এখন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা মোট ২২ হাজার ১৬৪ জন। এদের মধ্যে মোট ২০ হাজার ৪৪৭ জন সুস্থ হয়েছেন।
বগুড়ায় সংক্রমণ বৃদ্ধি : বগুড়া অফিস জানায়, বগুড়ায় করোনায় আবারো মৃতের সংখ্যা বাড়ছে। গত কয়েক দিন একটানা মৃত্যু হয়েছে। এ অবস্থায় করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে বগুড়া শহরের দোকানপাট সোমবার রাত ৮টা থেকে বন্ধ করেছে প্রশাসন। এ ছাড়া মাস্ক ব্যবহারে কড়াকড়ি আরোপ করে শহরে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা জোরদার করা হয়েছে। প্রতিদিনই ২০-২৫জন কে মাস্ক ব্যবহার না করায় জরিমানা ও কারাদণ্ড দেয়া হচ্ছে।
চট্টগ্রামে শীতের শুরুতেই করোনার সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, করোনা সংক্রমণ বাড়তে শুরু করেছে চট্টগ্রামে। শীতের শুরুর দিকে গত এক দিনে ২৪২ জনের দেহে করোনার জীবাণু পাওয়া গেছে। করোনার সম্ভাব্য দ্বিতীয় ঢেউ আসার পর সাম্প্রতিক সময়ের রেকর্ডসংখ্যক এ আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে। কয়েক দিন ধরে চট্টগ্রামে করোনার সূচক ঊর্ধ্বমখী রয়েছে। তবে চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা: শেখ ফজলে রাব্বি জানান, সচেতনতা না থাকলে সংক্রমণের হার আরো বাড়তে পারে।
চট্টগ্রামে গত এক দিনে এক হাজার ২৭০ জনের নমুনা পরীক্ষা করে করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছেন ২৪২ জন। এর মধ্যে ২০০ জন নগরের ও ৪২ জন উপজেলার বাসিন্দা। চট্টগ্রামে এ পর্যন্ত শনাক্ত ২৩ হাজার ৮৭০ জনের মধ্যে ১৭ হাজার ৮৫১ জন নগরীর ও ছয় হাজার ১৯ জন বিভিন্ন উপজেলা পর্যায়ের বাসিন্দা। এখন পর্যন্ত করোনায় মারা গেছেন মোট ৩১৩ জন। এর মধ্যে ২১৯ জন নগরীর ও ৯৪ জন উপজেলার বাসিন্দা।
সিভিল সার্জন জানান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫৮ জনের ও ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডিতে ১৪ জনের, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ ল্যাবে ৫৯ জনের ও সিভাসুতে নমুনা পরীক্ষায় ৯ জনের করোনা মিলেছে। ইম্পেরিয়াল হাসপাতালে ৪৬ জনের, শেভরনে ৫০ জনের, মা ও শিশু হাসপাতালে ছয়জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement