২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

অক্সফোর্ডের টিকা ৭০ শতাংশ কার্যকর

-

যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও সুইডিশ-ব্রিটিশ বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানি অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি নভেল করোনাভাইরাসের সম্ভাব্য টিকা ৭০ শতাংশ রোগীর শরীরে সংক্রমণ প্রতিরোধে সক্ষম হয়েছে বলে দাবি করেছেন গবেষকরা। বড় পরিসরে ট্রায়ালে এমন ফলাফল মিলেছে বলে গতকাল সোমবার জানানো হয়। পুরনো ও দীর্ঘ দিনের পরীক্ষিত পদ্ধতিতে ১০ মাস ধরে গবেষণা চালিয়ে এমন দাবির কথা জানালেন অক্সফোর্ডের গবেষকরা।
তবে ফাইজার-বায়োএনটেক ও মডার্নার তৈরি টিকাগুলো যেখানে ৯৫ শতাংশ সুরক্ষা দিতে পারছে, সেখানে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার এ সাফল্যকে বিশেষ কিছু বলার সুযোগ আছে কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা হয়েছে বিবিসির এক প্রতিবেদনে। অবশ্য এই টিকার দাম কম হবে এবং এর সংরক্ষণ পদ্ধতি সহজ হবে। চূড়ান্ত অনুমোদন পেলে এই দুই কারণে টিকাটির প্রতি নীতিনির্ধারকদের আগ্রহ থাকবে।
ব্রিটেন ও ব্রাজিলে ১০ হাজার করে মোট ২০ হাজার স্বেচ্ছাসেবীর শরীরে অক্সফোর্ডের এই টিকা প্রয়োগ করা হয়। তবে গবেষকরা জানিয়েছেন, টিকাটির পুরো একটি ডোজ প্রয়োগের পর কারো শরীরে আরো অর্ধেক ডোজ প্রয়োগ করা হলে সে ক্ষেত্রে ৯০ শতাংশ কার্যকর হচ্ছে। এমনটি কেন হচ্ছে, তা এখনো নিশ্চিত নয় বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
ব্রিটেনের অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার ৪০ লাখ ডোজ টিকা প্রস্তুত রয়েছে এবং ৯ কোটি ৬০ লাখ ডোজ উৎপাদনের পথে রয়েছে। তবে টিকাটি কতটা নিরাপদ, কার্যকর ও মান বজায় রেখে উৎপাদন হচ্ছে সেসব যাচাই-বাছাই শেষে চূড়ান্ত অনুমোদন মিললে তখনই এগুলোর ব্যবহার করা যাবে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এসব কার্যক্রম শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। খবর বিবিসি, জেএইচইউ, ডয়চে ভেলে, সিএনএন, গার্ডিয়ান, টেলিগ্রাফ ও এএনআই।
বিশ্বে ১৩ লাখ ৯৩ হাজার লোকের মৃত্যু : শীতের মৌসুম শুরু হওয়ার সাথে সাথে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শুরু হয়েছে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ। নতুন রোগী শনাক্তের পাশাপাশি সমান তালে বেড়ে চলেছে মৃত্যু। জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় (জেএইচইউ) থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, গতকাল সোমবার পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃতের সংখ্যা ১৩ লাখ ৯৩ হাজার ৫৩৭ জনে দাঁড়িয়েছে। এ ছাড়া করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে পৌঁছেছে পাঁচ কোটি ৮৯ লাখ ৮০ হাজার ৫৯ জনে। জেএইচইউর তথ্য অনুযায়ী, এ দিন সকাল পর্যন্ত সারা বিশ্বে প্রাণঘাতী এ ভাইরাস থেকে সুস্থ হয়েছেন চার কোটি সাত লাখ ৬৩ হাজার ৩৫০ জন।
চূড়ান্ত ধাপের ট্রায়ালে ১১ টিকা : বিশ্বের সব ক’টি দেশেই হানা দিয়েছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। একটি ভাইরাস একবিংশ শতাব্দীতে এসে সব কিছু এমন থমকে দেবে সেটি ছিল ধারণার বাইরে। জীবন বাঁচানোর পাশাপাশি অর্থনীতি সচল করতে তাই করোনার টিকা আনতে প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা। তাতে সফলতাও মিলেছে।
অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা যায় টিকা আসতে ১০-১৫ বছর বা তার বেশি লেগে যেত। কিন্তু করোনার বছর ঘোরার আগেই তৃতীয় দফার ট্রায়ালের একেবারে শেষ পর্যায়ে রয়েছে ১১টি টিকা। তিনটির ফলাফলও পাওয়া গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) নথি অনুযায়ী, ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে শুরুর পর্যায়ে রয়েছে আরো ৩৭টি টিকা। ১৬৪টি রয়েছে তার আগের স্তরে।
তৃতীয় ঢেউয়ের সতর্কতা ডব্লিউএইচওর : ইউরোপে আগামী বছরের শুরুর দিকে করোনার তৃতীয় ঢেউ আসতে পারে বলে সতর্কবার্তা দিয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। শীত শুরু হতেই ইউরোপের প্রায় প্রতিটি দেশে নতুন করে করোনার সংক্রমণ শুরু হয়েছে। জার্মানিসহ একাধিক দেশে সংক্রমণের মাত্রা প্রথমবারের চেয়ে অনেকটা বেশি। জার্মানিতে গত রোববার নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে প্রায় ১৪ হাজার মানুষ। এমন পরিস্থিতিতে ইউরোপে করোনার তৃতীয় ঢেউ আঘাত হানার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে ডব্লিউএইচও।
ডিসেম্বরেই টিকা দেবে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও ব্রিটেন : যুক্তরাষ্ট্রের আগেই ফাইজার ও বায়োএনটেকের টিকার অনুমোদন দিতে পারে ব্রিটেন। এ জন্য আগামী ১ ডিসেম্বরের মধ্যেই ন্যাশনাল হেলথ সার্ভিসকে (এনএইচএস) প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। সরকারের একাধিক সূত্রের বরাতে তাদের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ সপ্তাহেই টিকার অনুমোদন মিলে যেতে পারে। যুক্তরাজ্যের নিয়ন্ত্রকরা টিকার আনুষ্ঠানিক মূল্যায়ন শুরু করতে চলেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন গত শুক্রবার বলেছে, তারা আগামী ১০ ডিসেম্বর টিকার অনুমোদনসংক্রান্ত একটি বৈঠকে বসবে।
এ দিকে যুক্তরাষ্ট্রের টিকাদান কর্মসূচির প্রধান মনসেফ স্লাউয়ি টিকা দেয়ার সুনির্দিষ্ট তারিখের কথা বলে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকরা প্রথম ১১ ডিসেম্বর টিকা পেতে পারেন।
জার্মানিও আগামী মাসে কোভিড-১৯ টিকা দেয়া শুরু করতে পারে। দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী জেন্স স্প্যান সংবাদমাধ্যমকে এ তথ্য দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘এই বছর ইউরোপে একটি টিকার অনুমোদন হবে বলে আশাবাদী হওয়ার কারণ রয়েছে।’ তিনি জার্মান সরকারকে টিকা দেয়ার প্রস্তুতি হিসেবে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে টিকাদান কেন্দ্র প্রস্তুত রাখার কথা বলেছেন।
‘স্পুটনিক-৫’ টিকার দাম কম হবে : মার্কিন ওষুধ কোম্পানি ফাইজার ও মডার্নার চেয়ে রাশিয়ার ‘স্পুটনিক-৫’ করোনা টিকার প্রতি ডোজের দাম অনেক কম পড়বে। স্পুটনিক-৫ টিকার অফিসিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্টে গত রোববার এমনটিই বলা হয়েছে। স্পুটনিক-৫ টিকার অফিসিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্টে বলা হয়, ফাইজারের প্রতি ডোজ টিকার দাম ১৯ দশমিক ৫০ মার্কিন ডলার ঘোষণা করা হয়েছে। মডার্নার প্রতি ডোজ করোনা টিকার দাম ২৫ থেকে ৩৭ মার্কিন ডলার। ফাইজার ও মডার্না উভয় টিকার দু’টি করে ডোজ নিতে হবে। সে হিসেবে ফাইজারের টিকা নিতে খরচ হবে ৩৯ মার্কিন ডলার। মডার্নার টিকা নিতে খরচ হবে ২৫ থেকে ৭৪ মার্কিন ডলার। স্পুটনিক-৫ টিকারও দু’টি ডোজ নিতে হবে। কিন্তু ফাইজার ও মডার্নার চেয়ে স্পুটনিক-৫ টিকার দাম অনেক কম পড়বে।

 


আরো সংবাদ



premium cement