২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সৌদিতে নেতানিয়াহু যুবরাজ গোপন বৈঠক

-

সৌদি আরব সফর করেছেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু। গোপন এ সফরে রোববার সৌদি যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সালমানের সাথে বৈঠকে মিলিত হন তিনি। এ ছাড়া সৌদি সফররত যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর সাথে সাক্ষাৎ করেন ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী। ইসরাইলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের প্রধান ইয়োসি কোহেন এসব বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। গতকাল সোমবার ইসরাইলের একাধিক সংবাদমাধ্যমে এ সফরের খবর প্রকাশিত হয়েছে। তা ছাড়া এ খবর নিশ্চিত করেছেন নেতানিয়াহুর মন্ত্রিসভা এবং লিকুদ পার্টির এক সদস্য। আলজাজিরা, রয়টার্স ও মিডলইস্ট আই।
যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল কিংবা সৌদি আরব এ সফর নিয়ে কিছু না জানালেও রোববারের এ সফর সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে ইসরাইলি আর্মি রেডিওতে শিক্ষামন্ত্রী ইউভ গ্যালান্ট বলেন, ‘আসলে বৈঠক হয়েছে এবং তা প্রকাশ্যেও এসেছে, যদিও এ মুহূর্তে তা পুরোপুরি সরকারিভাবে ঘোষিত বৈঠক নয়। তারপরও এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার। এক অভাবনীয় অগ্রগতি।’ ইসরাইলি এই মন্ত্রী যখন এ বিষয়ে কথা বলছিলেন তখন তাকে বেশ উল্লøসিত মনে হচ্ছিল। একটি টুইট বার্তায় নেতানিয়াহুর এক উপদেষ্টাও সৌদিতে এই বৈঠক হয়েছে বলে আভাস দিয়েছেন।
ইসরাইলের কান পাবলিক রেডিও এবং আর্মি রেডিও জানিয়েছে, সৌদি আরবের লোহিত সাগর উপকূলের বহুল আলোচিত নিওম সিটিতে এসব বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর দফতর এবং ইসরাইলে নিযুক্ত মার্কিন দূতাবাসের পক্ষ থেকে এ সফরের ব্যাপারে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সৌদি সরকারের পক্ষ থেকেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম নেতানিয়াহুর সফরের কথা উল্লেখ করেনি। সৌদি আরবের সরকারি গণমাধ্যমও তাৎক্ষণিকভাবে এ সম্পর্কে রয়টার্স বার্তা সংস্থার কোনো প্রশ্নের জবাব দেয়নি।
তবে ইসরাইলের প্রভাবশালী দৈনিক হারেৎজ জানিয়েছে, অ্যাভিয়েশন ট্র্যাকিং ডাটায় দেখা গেছে, একটি ব্যক্তিগত জেট বিমান নিয়ে ইসরাইলের তেল আবিব থেকে সৌদি আরবের নিওম শহরে পৌঁছান নেতানিয়াহু। রোববার সেখানেই যুবরাজ এমবিএস এবং মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাতের কর্মসূচি নির্ধারিত ছিল। ইসরাইলি সরকারের বিভিন্ন সূত্রকে উদ্ধৃতি দিয়ে হারেৎজ আরো জানিয়েছে, এই সফরের ব্যাপারে ইসরাইলের বিকল্প প্রধানমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রীও অন্ধকারে ছিলেন।
পত্রিকাটি জানায়, ফ্লাইট ট্র্যাকিং ওয়েবসাইটগুলো বলছে, নেতানিয়াহুকে বহনকারী বিমানটি দুই ঘণ্টার মতো নিওমে অবস্থান করে। এর আগেও রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সাথে বৈঠকের জন্য একাধিকবার এই জেট বিমানটি ব্যবহার করেন নেতানিয়াহু। এমন একসময়ে নেতানিয়াহু সৌদি সফরে গেলেন যখন জো বাইডেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ায় এমনিতেই চাপের মুখে রয়েছে রিয়াদ। ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, এই খবর সত্যি হলে এটি হবে ঐতিহাসিকভাবে বৈরী দেশ দু’টির মধ্যে প্রথম কোনো বৈঠক যার খবর প্রকাশ্যে এলো। একই সাথে প্রথম কোনো ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রীর সৌদি আরব সফরও বটে।
এ দিকে মহানবী সা:-এর পবিত্র জন্মস্থান সৌদি আরবে দখলদার ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে সফরের অনুমতি দেয়ার ব্যাখ্যা চেয়েছে ফিলিস্তিনের ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস। গতকাল সোমবার হামাসের প্রভাবশালী নেতা সামি আবুজুুহরি বলেছেন, সৌদি আরবে দখলদার ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর গোপন সফর গোটা মুসলিম উম্মাহর প্রতি অবমাননা। এর মাধ্যমে গোটা মুসলিম বিশ্বকে অপমান করা হয়েছে। একই সাথে এর মাধ্যমে ফিলিস্তিনি জাতির সব অধিকারকে পুরোপুরি উপেক্ষা করা হয়েছে। এ বিষয়ে সৌদি আরবকে অবশ্যই ব্যাখ্যা দিতে হবে। তিনি আরো বলেন, নেতানিয়াহুর এই সফরের ঘটনা অত্যন্ত বিপজ্জনক।
যুক্তরাষ্ট্রের চাপে ইসরাইলের সাথে আরব রাষ্ট্রগুলোর সম্পর্ক স্বাভাবিক করার মধ্যেই নেতানিয়াহুর এ গোপন রিয়াদ সফর অনুষ্ঠিত হয়েছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আগেই জানিয়েছেন, সৌদি আরবসহ আরো বেশ কয়েকটি আরব দেশ ইসরাইলকে স্বীকৃতি দেবে। তবে ট্রাম্প দ্বিতীয় দফায় যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে না পারায় এ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল। এর মধ্যেই সৌদি সফরে গিয়ে যুবরাজের সাথে বৈঠকে মিলিত হন নেতানিয়াহু।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার সময়েও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও ইসরাইলের সাথে আরব দেশগুলোর মৈত্রী স্থাপনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। অনেক দিন ধরে ট্রাম্প প্রশাসন ইসরাইলের সাথে সৌদি আরবের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের চেষ্টায় গত আগস্টে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও বাহরাইন ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ঘোষণা দেয়। সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং বাহরাইন ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চুক্তি করার পর এবার অন্য আরব দেশগুলোকেও এ পথে আনার চেষ্টা চলছে। সৌদি আরব এ পর্যন্ত ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে এসেছে; কিন্তু গত আগস্ট থেকে সৌদি আরব উপসাগরীয় দেশগুলোতে ইসরাইলি বিমান চলাচলের জন্য তাদের আকাশসীমা খুলে দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এর আগে বলেছেন, সৌদি আরব ইসরাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করুক সেটিই তিনি আশা করেন। তবে সৌদি আরব এ ব্যাপারে মন বদলেছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে শনিবার সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, সৌদি আরব সম্পর্ক পুরোপুরি স্বাভাবিক করাকে সমর্থন করে। তবে তা হতে হবে ইসরাইল-ফিলিস্তিনের মধ্যে একটি স্থায়ী এবং পরিপূর্ণ শান্তিচুক্তির ভিত্তিতে স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার শর্তে।

 


আরো সংবাদ



premium cement