১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

চীনকে ঠেকাতে মার্কিন-ভারত নতুন সামরিক চুক্তি

পম্পেও-এসপার দিল্লি সফরে
-

চীনকে আটকাতে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে নতুন সামরিক চুক্তি করেছে ভারত। গতকাল মঙ্গলবার ভারত সফররত মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সাথে ভারতীয় মন্ত্রীদের উপস্থিতিতে এ চুক্তি সই হয়েছে। নতুন সামরিক চুক্তির আওতায় এখন থেকে দেশ দু’টি একে অপরের স্যাটেলাইট ও মানচিত্রের স্পর্শকাতর তথ্য শেয়ার করবে।
ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুব্রাহ্মনিয়াম জয়শঙ্কর ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সাথে বৈঠক শেষে পম্পেও সাংবাদিকদের বলেছেন, অনেক বড় কিছু ঘটছে। আমাদের দুই দেশের, প্রকৃতপক্ষে মুক্ত বিশ্বের সব নাগরিকের আরো ভালো সুরক্ষার জন্য গণতন্ত্রগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের নেতা ও জনগণ পরিষ্কার দেখছে যে, চীনা কমিউনিস্ট পার্টি গণতন্ত্র, আইনের শাসন, স্বচ্ছতা বা নেভিগেশন স্বাধীনতার বন্ধু নয়।
মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপার নতুন চুক্তিকে দুই দেশের জন্য একটি বিশাল মাইলফলক বলে মন্তব্য করেছেন। এটি যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে সামরিক সহায়তা আরো বেগবান করবে বলে জানিয়েছে তিনি। এসপার বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ভারতের কাছে আরো বেশি যুদ্ধবিমান ও ড্রোন বিক্রির পরিকল্পনা করছে।
সামরিক এ চুক্তির ফলে এখন থেকে ভারত টোপোগ্রাফিক্যাল, ন্যটিক্যাল ও অ্যারোন্যটিক্যাল ডেটার অ্যাকসেস পাবে, যা মিসাইল ও ড্রোনের মাধ্যমে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে হামলার ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া ভারত যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে যেসব উড়োযান কিনেছে, সেগুলোকেও অত্যাধুনিক নেভিগেশন ও অ্যাভিওনিকস সহায়তা দেয়ার কথা রয়েছে এ চুক্তিতে।
চুক্তির আগেই মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বলেন, দুই দেশের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সম্ভাব্য চীনা হুমকির বিরুদ্ধে দিল্লি-ওয়াশিংটন এক হয়ে লড়াই করবে। ভারতীয় নেতাদের সাথে বৈঠকের প্রস্তুতি নেয়ার সময় এমন মন্তব্য করেন তিনি। সোমবার যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক এসপারকে সাথে নিয়ে ভারতে পৌঁছান পম্পেও। বার্ষিক কৌশলগত সংলাপের অংশ হিসেবেই তাদের পাঁচ দিনের এই এশিয়া সফর। এই সফরের মূল উদ্দেশ্যই চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবেলায় কৌশলগত সম্পর্ক জোরালো করা।
ভারতীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের সাথে বৈঠকের আগে পম্পেও বলেন, ‘দুই মহান গণতান্ত্রিক দেশের জন্য পরস্পরের আরো ঘনিষ্ঠ হওয়ার নতুন সুযোগ এসেছে’। পম্পেও আরো বলেন, ‘নিশ্চিতভাবে আরো অনেক কাজ করার আছে। আমাদের আজ আলোচনা করার মতো অনেক কিছুই রয়েছে : উহান থেকে উদ্ভূত ভাইরাস মোকাবেলা কিংবা পুরো অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতার সুরক্ষা এবং স্বাধীনতার জন্য চীনা কমিউনিস্ট পার্টির হুমকির মোকাবেলা।’
বিশ্লেষকরা বলছেন, চীনের প্রভাব মোকাবেলায় এশিয়াজুড়ে রাজনৈতিক ও সামরিক সম্পর্ক জোরদার করাই এ সফরের লক্ষ্য। এর আগে গত সপ্তাহে মার্কিন উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টিফেন বেইগান দিল্লি সফর করেছেন। তিনি চীনকে ঘরে থাকা হাতি বলে উল্লেখ করেছেন। ভারত সফর শেষে পম্পেও শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ যাবেন। ভারত মহাসাগরীয় দেশ দু’টিতে চীন অবকাঠামো খাতে ব্যাপক বিনিয়োগ করছে; যা ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। পম্পেওর এশিয়া সফর শেষ হবে ইন্দোনেশিয়া গমনের মধ্য দিয়ে।
গত কয়েক বছরে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে প্রতিরক্ষাবিষয়ক সম্পর্ক বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০১৬ সালের জুনে ভারতকে একটি ‘মেজর ডিফেন্স পার্টনার’ হিসেবে অভিহিত করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর উদ্দেশ্য প্রতিরক্ষা ও প্রযুক্তিবিষয়ক বাণিজ্য বৃদ্ধি। ২০১৬ সালে এই দু’টি দেশ লজিস্টিকস এক্সচেঞ্জ মেমোরেন্ডাম অব এগ্রিমেন্ট স্বাক্ষর করে। এর মধ্য দিয়ে দুই দেশ একে অন্যের সামরিক মেরামত ও সরবরাহে সহায়তা করে থাকে। এ ছাড়া গভীর সহযোগিতা করা হয়। এ ছাড়া ২০১৮ সালে দুই দেশ আরো একটি চুক্তি কমিউনিকেশন্স কম্প্যাটিবিলিটি অ্যান্ড সিকিউরিটি এগ্রিমেন্ট স্বাক্ষর করে। মার্কিন সরকারের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে ভারতের হাতে আছে সর্ববৃহৎ সি-১৭ এবং পি-৮ যুদ্ধবিমান। এ ছাড়া ২০২০ সালে ভারতের কাছে ২০০০ কোটি ডলারেরও বেশি মূল্যের প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

 


আরো সংবাদ



premium cement