২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ শাওয়াল ১৪৪৫
`

অপ্রাপ্তবয়স্ক ১১ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড, ৩ জন খালাস

রিফাত হত্যা
-

বরগুনার বহুল আলোচিত চাঞ্চল্যকর শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফ হত্যা মামলার দ্বিতীয় পর্বে থাকা চৌদ্দ শিশু আসামির ১১ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড ও তিনজনকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে। বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে রিফাত শরীফকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় শিশু আদালতের বিচারক মো: হাফিজুর রহমান গতকাল মঙ্গলবার এ রায় আদেশ দেন। রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী শিশু আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল।
রিফাত শরীফ হত্যা মামলার অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির মধ্যে ১০ বছরের সাজাপ্রাপ্তরা হলেনÑ রাশেদুল হাসান রিশান ফরাজি, রাকিবুল হাসান রিফাত হাওলাদার, আবু আব্দুল্লাহ রায়হান, অলিউল্লাহ অলি, তানভীর হোসেন ও মো: নাঈম। পাঁচ বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছেÑ জয় চন্দ্র সরকার চন্দন সরকার, নাজমুল হাসান, রাকিবুল হাসান নিয়ামত পাঁচ বছর এবং তিন বছর কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে প্রিন্স মোল্লাকে। অপ্রাপ্তবয়স্ক যে তিনজন খালাস পেয়েছেন তারা হলোÑ মারুফ মল্লিক, রাতুল সিকদার জয় ও আরিয়ান হোসেন শ্রাবণ। গতকাল বেলা ১টা ১০ মিনিটে এ রায় ঘোষণাকালে চৌদ্দ শিশুই আদালতে উপস্থিত ছিল।
রায়ের প্রতিক্রিয়া : নিহত শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ বলেন, আমি ও আমার পরিবারের সবাই এ রায়ে খুশি হয়েছি। আমি সঠিক বিচার পেয়েছি। সবাই এ মামলার বিচারকাজ আন্তরিকভাবে করেছেন। আল্লাহর কাছে শুকরিয়া; দ্রুত এ রায় ঘোষণা করা হয়েছে। এ সময় গণমাধ্যমকেও ধন্যবাদ দিয়ে তিনি বলেন, আমার ছেলে হত্যার ঘটনা থেকে বিচার পর্যন্ত সাংবাদিকদের অনেক ভূমিকা ছিল। এ বিষয়ে পিপি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল বলেন, এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ প্রমাণ করতে আমরা সক্ষম হয়েছি। তাই এমন রায় প্রমাণ করে অপরাধী যে-ই হোক কোনো ছাড় নেই। এ সময় তিনি আরো বলেন, মাত্র ৬৩ কার্যদিবসে এ মামলার বিচার কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে।
অন্য দিকে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা জানিয়েছেন, তারা রায়ে সন্তুষ্ট নন। আসামিপক্ষের আইনজীবী গোলাম মোস্তফা কাদের বলেন, আমার মক্কেল ন্যায়বিচার পাননি। তাই আমরা সাত কার্যদিবসের মধ্যেই হাইকোর্টে আপিল করব।
উল্লেখ্য, শাহনেওয়াজ রিফাত শরীফকে গত বছরের ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে পুলিশের ক্রসফায়ারে নিহত নয়ন বন্ড ও তার সহযোগী সন্ত্রাসীরা প্রকাশ্যে রামদা দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। পরে রিফাত শরীফ নিজে হেঁটে রিকশায় উঠে স্ত্রী মিন্নির সহযোগিতায় বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বরিশাল শের-ই-বাংলা (শেবাচিম) হাসপাতালে পাঠায়। ওই দিনই বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে রিফাত শরীফ মারা যায়। মোবাইল ফোনে ধারণকৃত রিফাত শরীফকে হত্যার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। ঘটনার পরদিন ১২ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো পাঁচ-ছয়জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন নিহত রিফাতের বাবা আবদুল হালিম দুলাল শরীফ। ওই বছরের ১ সেপ্টেম্বর প্রাপ্তবয়স্ক ও অপ্রাপ্তবয়স্ক এ দু’ভাগে বিভক্ত করে মোট ২৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ।
চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি চৌদ্দ শিশুর বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন শিশু আদালত। এতে ৭৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণের পরে উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক ও যুক্তি খণ্ডন শেষে এ মাসের গত ১৪ অক্টোবর রায়ের দিনতারিখ ধার্য করেন আদালত। নির্ধারিত তারিখানুযায়ী গতকাল মঙ্গলবার এ রায় ঘোষণা করা হয়। আপাতত এ রায়ের মাধ্যমে শেষ হলো রিফাত শরীফ হত্যা মামলা। তবে এর আগে একই মামলার প্রাপ্তবয়স্কদের প্রথম রায়ের ছয় দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি উচ্চ আদালতে আপিল করেছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement