২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`
রংপুরে ছাত্রীকে গণধর্ষণ

গ্রেফতার দেখানো হয়নি এএসআই রাহেনুলকে

-

রংপুর মেট্রোপলিটন ডিবি পুলিশের এএসআই রাহেনুল ইসলামের নেতৃত্বে নগরীর হারাগাছ থানার ক্যাদারের পুল এলাকায় একটি বাড়িতে দশম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে ডেকে এনে গণধর্ষণের ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া দুই নারীকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠিয়েছে পিবিআই। এ ছাড়াও এ ঘটনায় আরো দুইজনকে লালমনিরহাট থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। অন্য দিকে ৪৮ ঘণ্টা পরও মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত মামলার প্রধান অভিযুক্ত মেট্রোপলিটন ডিবি পুলিশের এএসআই রাহেনুল ইসলামকে (৩৫) গ্রেফতার দেখানো হয়নি।
রংপুর আদালতের মেট্রোপলিটন কোর্ট ইন্সপেক্টর নাজমুল কাদের জানান, বেলা ১২টায় চাঞ্চল্যকর ছাত্রী গণধর্ষণের এই মামলার তদন্ত সংস্থা পিবিআই গ্রেফতার করা সুমাইয়া পারভীন মেঘলা (২২) ও সম্পা বেগমকে (৩০) আদালতে আনা হয়। বেলা ৪টায় তাদের অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক ইয়াসমিন আরা মুক্তার আদালতে তোলা হয়। বিচারক তাদেরকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। ওই দুই নারীর পক্ষে কেউ জামিনের আবেদন করেনি।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইর এসআই সাইফুল ইসলাম জানান, ঘটনায় জড়িত অন্যদের গ্রেফতার করতে অভিযানে থাকার কারণে বিকেলে তাদের রিমান্ড চাওয়া হয়নি। আমরা আবেদনে বলেছি রিমান্ড চাওয়া হবে। বুধবার তাদের জন্য সাত দিনের রিমান্ড চাইব আমরা। তিনি বলেন মেঘলা স্বামী পরিত্যক্তা। তার স্বামীর বাড়ি সাহেবগঞ্জ এবং বাবার বাড়ি গুড়াতিপাড়ায়। আর সম্পাও স্বামী পরিত্যক্তা। তার বাড়ি নগরীর কামারপাড়ায় থাকে। নগরীর বিভিন্ন প্রান্তে বাড়ি ভাড়া নিয়ে তারা সেখানে দেহ ব্যবসা করত।
এ দিকে আদালত থেকে নেমে যাওয়ার সময় গ্রেফতার মেঘলা জানায়, সে এই ঘটনার সাথে কোনোভাবেই সম্পৃক্ত নয়। সম্পা তাকে জোর করে ফাঁসিয়েছে।
অন্য দিকে যে বাসায় এই গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে সেই ভাড়াটিয়া সম্পা বেগম জানায়, ডিবি রাহেনুল ওই ছাত্রীর সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে এবং তার বাসায় নিয়ে এসে তাকে ধর্ষণ করে। পরে অন্যদের দিয়ে ধর্ষণ করায়।
তদন্ত সূত্রগুলো জানিয়েছে, রাহেনুলের ব্যাপারে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ তারা নিবিড়ভাবে খতিয়ে দেখছে। বিশেষ করে হারাগাছ থানায় থাকাকালীন থানার শীর্ষ কর্মকর্তার দাপট দেখিয়ে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের অভিযোগও খতিয়ে দেখছে তদন্ত সংস্থা।
এ দিকে এই মামলাটির তদন্তভার পাওয়া পিবিআইয়ের রংপুর জেলা পুলিশ সুপার জাকির হোসেন জানান, এ ঘটনায় সোমবার রাতভর অভিযান চালিয়ে লালমনিরহাটের সদরের মাজপাড়া থেকে বাবুল হোসেন (৪২) এবং আবুল কালাম আজাদকে (৪০) গ্রেফতার করেছি। এ নিয়ে চারজনকে গ্রেফতার করা হলো। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদে অনেক তথ্য পেয়েছি এবং সে আলোকে আরো অভিযুক্তদের ধরতে অভিযান চলছে।
পিবিআইর এসপি জাকির হোসেন জানান, এ মামলার এজাহারভুক্ত আসামি রাহেনুল পুলিশ লাইন্সে আটক অবস্থায় আছে। সে যেন পালিয়ে যেতে না পারে সে জন্য আমরা আরপিএমপিকে চিঠি দিয়েছি। আমরা যাচাই-বাছাই করছি রাহেনুল কিভাবে এ ঘটনার সাথে সম্পৃক্ত। তাকে যেকোনো মুহূর্তে গ্রেফতার দেখানো হবে।
তবে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরপিএমপি) অতিরিক্ত উপকমিশনার (অপরাধ) আবু মারুফ হোসেন গতকাল সকাল ১০টায় জানান, রাহেনুলকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে পুলিশে লাইনে ক্লোজড করে পুলিশের হেফাজতে রাখা হয়েছে। মামলাটি পিবিআই তদন্ত করছে। তারা চাওয়া মাত্রই আমরা রাহেনুলকে হস্তান্তর করব।
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আব্দুল আলীম মাহমুদ জানান, যেহেতু ঘটনাটিতে মেট্রো ডিবি পুলিশের একজন এএসআই এজহারভুক্ত আসামি সে কারণে নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠু তদন্তের জন্যই হারাগাছ থানা থেকে মামলাটি তদন্তের ভার পুলিশ মহাপরিদর্শকের নির্দেশনায় আমরা পিবিআইকে দিয়েছি। এর মাধ্যমে আমরা স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে চাই।

 


আরো সংবাদ



premium cement