২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

এবার রংপুরে ডিবির এএসআইর নেতৃত্বে ছাত্রীকে গণধর্ষণ

অভিযুক্ত এএসআইসহ আটক ৩; মামলার তদন্ত পিবিআইয়ে
গণধর্ষণের শিকার ছাত্রীকে রংপুর মেডিক্যালে নেয়া হচ্ছে; ইনসেটে অভিযুক্ত ডিবি পুলিশের এএসআই রায়হানুল ইসলাম রাজু : নয়া দিগন্ত -

রংপুর মেট্রোপলিটন ডিবি পুলিশের এএসআই রায়হানুল হকের নেতৃত্বে নগরীর হারাগাছ থানার ক্যাদারের পুল এলাকায় একটি বাড়িতে নবম শ্রেণীর এক ছাত্রীকে ডেকে এনে গণধর্ষণের ঘটনায় তোলপাড় চলছে। এ ঘটনায় আরপিএমপি কমিশনার অভিযুক্ত এএসআইকে আটক করার পাশাপাশি সাময়িক বরখাস্ত করেছেন। এ ঘটনায় আরো দুই নারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ দিকে আরপিএমপি কমিশনারের নির্দেশে মামলার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য পিবিআইকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে । রায়হানুলের ডিএএনএ পরীক্ষা করার কথা জানিয়েছে পিবিআই। এ ঘটনার মামলায় ২ নম্বর আসামি রায়হানুল। এ দিকে ওই ছাত্রীকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তবে রায়হানকে মামলায় ২ নম্বর আসামি করায় ক্ষোভ জানিয়েছে সুশাসনের জন্য নাগরিক।
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আব্দুল আলীম মাহমুদ জানান, যেহেতু ঘটনাটিতে মেট্রো ডিবি পুলিশের একজন এ এসআই এজহারভুক্ত আসামি। সে কারণে নিরপেক্ষ এবং সুষ্ঠু তদন্তের জন্যই হারাগাছ থানা থেকে মামলাটি তদন্তের ভার আমরা পিবিআইকে দিয়েছি। এর মাধ্যমে আমরা স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে চাই। তিনি বলেন, এএসআই রায়হানুলকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তাকে আটক করে পুলিশ লাইনে ক্লোজড করে রাখা হয়েছে। সরকারি কর্মচারী হওয়ায় যেসব প্রসিডিউর করা প্রয়োজন তা করা হচ্ছে। পিবিআই চাওয়া মাত্রই আমরা রায়হানুলকে তাদের কাছে হস্তান্তর করব। তিনি আরো বলেন, অপরাধী অপরাধীই। তার কোনো পরিচয় নেই। ঘটনাটি জানা মাত্রই আমি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিযুক্ত করে নির্যাতিতা ও তার পরিবারের জবানবন্দী নিয়ে মামলা নিয়েছি। এখানে কেউই পার পাবে না।
পিবিআই রংপুর জেলার পুলিশ সুপার জাকির হোসেন জানান, দুপুরের পর আরপিএমপি থেকে আমরা মামলাটির তদন্তভার পাই। সাথে সাথে আমরা হাসপাতালের ওসিসিতে গিয়ে নির্যাতিতা ছাত্রীর জবানবন্দী রেকর্ড করি। এ ছাড়াও পুলিশের কাছ থেকে পাওয়া ঘটনার তথ্য-উপাত্ত ও নথিপত্র নিয়ে আমরা প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য তদন্ত কার্যক্রম শুরু করেছি। তিনি বলেন, হারাগাছ থানা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৫টায় আমাদের কাছে গ্রেফতার মামলার ১ নম্বর আসামি সুমাইয়া পারভীন মেঘলা(২২) ও অপর সহযোগী শম্পাকে আমাদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আমরা সেখান থেকে নিয়ে এসে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করেছি। তিনি বলেন, আমরা রায়হানের ডিএনএন পরীক্ষা করে তা ম্যাচিং করাব।
এ দিকে হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, ধর্ষণের শিকার মেয়েটিকে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে নেয়া হয়েছে। সেখানে তার প্রয়োজনীয় ডাক্তারি পরীক্ষার নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি (অপরাধ) আবু মারুফ হোসেন জানান, গণধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত মেট্রোপলিটন ডিবি পুলিশের এএসআই রায়হানুল ইসলাম ওরফে রাজু এখন আমাদের হেফাজতে আটক অবস্থায় আছে। বেশ কিছু বিষয় আছে যেগুলো মেইনটেইন করার পরই তাকে গ্রেফতার দেখানো হবে।
এ দিকে এ ঘটনার নিবিড় তদন্ত শুরু করেছে পিবিআই। তদন্ত সূত্রগুলো বলছে, ডিবিতে আসার আগে এএসআই রায়হান হারাগাছ থানায় কর্মরত ছিলেন। তদন্তে এএসআই রায়হানের বিরুদ্ধে নারীঘটিত বিভিন্ন অভিযোগ খতিয়ে দেখছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।
পিবিআই ও নির্যাতিতার পরিবার সূত্র জানায়, রংপুর মহানগরীর হারাগাছ থানার ময়নাকুঠি কচুটারি এলাকার নবম শ্রেণীর ওই ছাত্রীর সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন রায়হানুল ইসলাম। তিনি আগে হারাগাছ থানার এএসআই হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরিচয়ের সময় রায়হান তার ডাক নাম রাজু বলে জানায় ওই ছাত্রীকে। সম্পর্কের সূত্র ধরে রোববার সকালে ওই ছাত্রীকে রায়হান ডেকে নেয় নগরীর ক্যাদারের পুল এলাকার শহিদুল্লাহ মিয়ার ভাড়াটিয়া সুমাইয়া পারভীন ওরফে মেঘলা ওরফে আলেয়ার বাড়িতে। সেখানে প্রথমে রায়হান ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করে। পরে আরো কয়েকজন পরিচিত যুবককে অর্থের বিনিময়ে ইচ্ছার বিরুদ্ধে ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করায়। এ ঘটনায় ওই ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়লে সেখান থেকে বের হয়ে প্রথমে কোতোয়ালি থানায় গিয়ে পুলিশকে বিষয়টি জানায়। রাত সাড়ে ৮টার দিকে পুলিশ ওই ছাত্রীকে ঘটনাস্থলে নিয়ে যায়। সেখান থেকে সুমাইয়া পারভীন মেঘলা ও শম্পা বেগমসহ থানায় যায়। খবর দেয়া হয় পরিবারকে। এরই মধ্যে রায়হানুলকে বাঁচাতে টাকার দেনদরবার চলে থানা এলাকায়। বিষয়টি অবহিত হয়ে মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার সেখানে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা পাঠান। তার হস্তক্ষেপেই ছাত্রীর বাবা আয়নাল বাদি হয়ে পুলিশ সদস্য রায়হান ও মেঘলাসহ অন্যান্য অজ্ঞাত সহযোগীদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ মামলা (নং ৩১) করেন।
ধর্ষিতার মা জানান, মামলার আসামি ধরতে গিয়ে আমার মেয়ের সাথে পরিচয় এএসআই রায়হানুলের। তার পর থেকেই তাদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়। আমার মেয়ে তার সাথে কথাবার্তা বলত। কিন্তু সে যে আমার মেয়েকে নিয়ে এভাবে নির্যাতন করবে সেটা মেনে নিতে পারছি না। আমার মেয়ে ময়নাকুঠি উচ্চবিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর ছাত্রী। সে পড়াশুনায় খুব ভালো ছিল। এখন আমার মেয়ের জীবন ধ্বংসকারী রায়হানুল ও জড়িত অন্যদের গ্রেফতার এবং মৃত্যুদণ্ড চাই।
সচেতন নাগরিক কমিটি-সুজনের রংপুর মহানগর সভাপতি অধ্যক্ষ ফখরুল আনাম বেঞ্জু বলেন, পুলিশের যে এএসআই ঘটনার মূল হোতা। তাকে ২ নম্বর আসামি করার প্রমাণিত হয় থানা পুলিশ প্রথমে রায়হানুলকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিল। এজহারে সেভাবে উল্লেখও আছে। কোনোভাবেই যেন এই পুলিশ সদস্য পার পেয়ে না যায় সেটি নিশ্চিত করতে হবে পুলিশকে।
তিনি এ ঘটনার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে বিচার করে সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করার দাবি জানান।

 


আরো সংবাদ



premium cement