২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

রোহিঙ্গা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের মন্তব্যে চীনের তীব্র প্রতিক্রিয়া

-

রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টিফেন বিগানের মন্তব্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে চীন। ঢাকা সফরের ওপর আলোকপাত করে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে চীনকে জড়িয়ে বিগানের মন্তব্যকে দেশটি ‘কূটনৈতিক শিষ্টাচারের গুরুতর লঙ্ঘন’ এবং ‘বাংলাদেশের প্রতি অবমাননাকর’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। চীনের মতে, বাংলাদেশের জন্য গভীর উদ্বেগের ইস্যু রোহিঙ্গা নিয়ে বিগানের মন্তব্য তার পক্ষপাতমূলক আচরণের ধারাবাহিকতার অংশ।
ঢাকায় চীনের দূতাবাস গত শুক্রবার রাতে ফেসবুকে তাদের ভ্যারিফাইড পেইজে দেয়া পোস্টে এই প্রতিক্রিয়া জানায়। পোস্টে বিগানের ছবি দিয়ে সংবাদ সম্মেলন সংক্রান্ত কয়েকটি খবর শেয়ার করা হয়।
গত ২০ অক্টোবর ওয়াশিংটন থেকে টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী স্টিফেন বিগান তার সাম্প্রতিক ভারত ও বাংলাদেশ সফরের ওপর আলোকপাত করেন। সংবাদ সম্মেলনে বিগান বলেছেন, দীর্ঘ মেয়াদে শরণার্থী সমস্যা জিইয়ে রাখা রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানের কোনো পন্থা হতে পারে না। শরণার্থীদের মানবিক সহায়তা দেয়ার পাশাপাশি সঙ্কটের টেকসই সমাধানের উপায় খুঁজে বের করাকে সমভাবে গুরুত্ব দিয়ে আমরা কাজ করে যাবো। এ জন্য অবশ্যই আমরা বাংলাদেশ সরকারের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করব। একই সাথে আঞ্চলিক সব দেশের সাথে জোরালোভাবে কাজ করা প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে ইন্দো-প্যাসিফিকের সব জাতি, বিশেষ করে চীনের কাছ থেকে মিয়ানমারের প্রতি একই ধরনের পরিষ্কার বার্তা দেয়া হবে বলে আমরা আশা করি। দুর্ভাগ্যজনকভাবে রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে চীন খুব কমই সহায়তা করেছে। মানবিক বিপর্যয়ের এত কাছের দেশ বিবেচনায় চীনের কাছ থেকে আরো বেশি কিছু আশা করা যায়।
ফেসবুকে দেয়া প্রতিক্রিয়ায় চীন নিয়ে বিগানের এই বক্তব্যেকে যথাযথ ও গঠনমূলক নয় বলে দাবি করেছে দেশটির দূতাবাস। পোস্টে বলা হয়, বিগানের সফরে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কের ওপর দৃষ্টি থাকবেÑ এটাই সবাই প্রত্যাশা করে। কিন্তু বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার আগেই গত ১৫ অক্টোবর তিনি চীনের বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ করা শুরু করেছেন। বিগান চীন-ভারত সীমান্ত সঙ্ঘাত, তাইওয়ান প্রণালী, দক্ষিণ চীন সাগর এবং হংকংয়ের জাতীয় নিরাপত্তা আইন নিয়ে কথা বলেছেন, যার সাথে বাংলাদেশের কোনো সম্পর্ক নেই। এটা কেবল কূটনৈতিক শিষ্টাচারের গুরুতর লঙ্ঘনই নয়, তা বাংলাদেশের প্রতিও অত্যন্ত অবমাননাকর। বাংলাদেশ একটি শান্তিপ্রিয় জাতি। ‘সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে বৈরিতা নয়’ - বাংলাদেশ এই পররাষ্ট্রনীতিতে বিশ্বাসী।
পোস্টে বলা হয়, সমস্যা নিরসনের জন্য চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের অনেক দ্বিপক্ষীয় চ্যানেল রয়েছে। পূর্ব সম্মতি ছাড়া তৃতীয় কোনো দেশকে টেনে আনা বিগানের উচিত না। বাংলাদেশের সাথে বন্ধুত্বের জন্যই আমরা উভয়ে এখানে এসেছি। আর এটা নিয়েই আমাদের ব্যস্ত থাকা উচিত, ঘৃণা ছড়ানো নয়।
এ ব্যাপারে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন গতকাল সাংবাদিকদের বলেন, আমরা নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় ব্যস্ত। অন্যরা কে কি বলল সেটা তাদের মাথাব্যথা। আমরা কারো দলে নেই, আমরা কারো শত্রুও না। নিজেদের দেশের স্বার্থে যা যা করা প্রয়োজন, সেটাই আমরা করে যাচ্ছি।
তবে রোহিঙ্গা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের মন্তব্যকে চীন যে খুব গুরুত্বের সাথে নিয়েছে, তার ইঙ্গিত গত বৃহস্পতিবার পাওয়া গেছে। এ দিন সন্ধ্যায় রোহিঙ্গাদের জন্য সহায়তার পরিমাণ বাড়াতে আন্তর্জাতিক দাতা সম্মেলন নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন স্টিফেন বিগান। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও জাতিসঙ্ঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর যৌথভাবে এই ভার্চুয়াল সম্মেলনের আয়োজন করে। আর একই সময়ে ড. মোমেনকে টেলিফোন করেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই। তিনি ড. মোমেনকে জানান, করোনা মহামারী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু করবে মিয়ানমার।
আগামী মাসে জাতীয় নির্বাচনের পর মিয়ানমার এ ব্যাপারে বাংলাদেশের সাথে আলোচনায় বসবে। এ ছাড়া রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে চীনের মধ্যস্থতায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের ত্রিপক্ষীয় বৈঠকের প্রস্তুতির জন্য শিগগিরই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। এসব ব্যাপারে চীনকে আশ্বস্ত করেছে মিয়ানমার।

 


আরো সংবাদ



premium cement