২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

নৌপথে পণ্য পরিবহন বন্ধ

শ্রমিক ধর্মঘট
নৌযান শ্রমিক ধর্মঘটে কর্ণফুলী নদীতে অলস অবস্থায় পণ্যবাহী লাইটার জাহাজ, অয়েল ট্যাংকারসহ নৌযান। ছবিটি গতকাল চট্টগ্রাম নগরীর সদরঘাট থেকে তোলা : আখতার হোসাইন -

নৌশ্রমিকদের অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটে সারা দেশে নৌপথে পণ্য পরিবহন বন্ধ রয়েছে। অচল হয়ে পড়েছে দেশের নৌ ও সমুদ্র বন্দরগুলো। পণ্যবাহী জাহাজ বন্দরে নোঙর করা থাকলেও বন্ধ রয়েছে পণ্য খালাস। সোমবার দিবাগত রাত ১২টা ১ মিনিট থেকে এই ধর্মঘট শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশন ১১ দফা দাবিতে সারা দেশে অনির্দিষ্টকালের এই কর্মবিরতির ডাক দিয়েছে।
১১ দফার দাবির মধ্যে প্রধান দাবিগুলো হচ্ছেÑ শ্রমিকদের নিয়োগপত্র, মাসিক খাদ্যভাতা ও কর্মক্ষেত্রে মৃত্যুর জন্য ক্ষতিপূরণ প্রদান, কল্যাণ তহবিল গঠন, নৌযানের মাস্টারশিপ ও ড্রাইভারশিপ (চালকদের যোগ্যতা নির্ধারণী) পরীক্ষায় অনিয়ম-দুর্নীতি ও নৌপরিবহন অধিদফতর কর্তৃক নৌশ্রমিকদের হয়রানি বন্ধ, নৌপথে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাস প্রতিরোধ এবং প্রয়োজনীয় ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নৌপথের নাব্য সংরক্ষণ।
অন্য দিকে, বাংলাদেশ লাইটারেজ শ্রমিক ইউনিয়ন, জাহাজি শ্রমিক ফেডারেশন ও বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক লীগসহ ছয়টি সংগঠনের জোট ‘নৌ-শ্রমিক অধিকার সংরক্ষণ ঐক্য পরিষদ’ ১৫ দফা দাবিতে গত সোমবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে অভিন্ন কর্মসূচির ডাক দেয়।
সোমবার বিকেল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত রাজধানীর মতিঝিল বিআইডব্লিউটিএ ভবনে সংস্থার চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেক ও নৌপরিবহন অধিদফতরের মহাপরিচালক কমোডর এ জেড এম জালালের উপস্থিতিতে নৌযান মালিকদের বিভিন্ন সংগঠনের সাথে বৈঠক করেন দু’টি সংগঠনের শ্রমিক নেতারা। বৈঠকে কোনো সমাধান না হওয়ায় পূর্বঘোষণা অনুযায়ী সব ধরনের পণ্যবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয় বলে বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মো: শাহ আলম গণমাধ্যমকে জানান।
তিনি বলেন, তাদের এই কর্মবিরতির আওতায় নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, খুলনা, মংলাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ২০ হাজার পণ্যবাহী নৌযান রয়েছে। তিনি বলেন, মালিকদের পক্ষ থেকে এখনো কোনো ধরনের আশ্বাস আমরা পাইনি। প্রায় দুই লাখ শ্রমিক আমাদের এ ধর্মঘটে রয়েছেন। সকাল থেকে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল ও স্লোগানে স্লোগানে তারা কর্মসূচি পালন করছেন।
অন্য দিকে গত ১৩ অক্টোবর রাজধানীর বিজয়নগর শ্রম ভবনের সামনে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন থেকে ১৫ দফা দাবিতে ১৯ অক্টোবর সন্ধ্যা ৬টা থেকে দেশব্যাপী লাগাতার কর্মবিরতি ঘোষণা করে নৌ-শ্রমিক অধিকার সংরক্ষণ ঐক্য পরিষদ।
শ্রমিক সংগঠনগুলোর দাবির মধ্যে রয়েছে, প্রত্যেক শ্রমিককে মালিক কর্তৃক নিয়োগপত্র, পরিচয়পত্র ও সার্ভিস বুক প্রদান, প্রত্যেক শ্রমিককে মালিক কর্তৃক মাসিক খাদ্যভাতা প্রদান, ২০১৬ সালে ঘোষিত গেজেট অনুযায়ী নৌযানের সর্বস্তরের শ্রমিকদের বেতন প্রদান, মাস্টারশিপ ও ড্রাইভারশিপ পরীক্ষা, সনদ বিতরণ ও নবায়নে অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ, নৌপরিবহন অধিদফতরে সব ধরনের অনিয়ম ও শ্রমিক হয়রানি বন্ধ, ভারতগামী শ্রমিকদের ল্যান্ডিং পাস প্রদান, শ্রমিকদের জন্য নাবিক কল্যাণ তহবিল গঠন, বাল্কহেডসহ সব নৌযান ও নৌপথে চাঁদাবাজি-ডাকাতি বন্ধ করা, কর্মস্থলে দুর্ঘটনায় নিহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ ১০ লাখ টাকা নির্ধারণ, নদীর নাব্য রক্ষা ও প্রয়োজনীয় মার্কা, বয়া ও বাতি স্থাপন এবং নৌযান শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।
ফেডারেশনের সভাপতি শাহ আলম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমরা মালিকদের সাথে দীর্ঘ সময় আলোচনায় আমাদের যৌক্তিক দাবি তুলে ধরেছি। কিন্তু মালিকরা আমাদের কোনো দাবি মেনে না নেয়ায় ধর্মঘটের সিদ্ধান্তে অনড় থাকতে হয়েছে।’ একই ধরনের দাবিতে গত বছরের নভেম্বরেও আন্দোলন করেছিলেন শ্রমিকরা। আশ্বাস পেয়ে তখন আন্দোলন স্থগিত করা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তী সময়ে দাবিগুলো আর পূরণ হয়নি বলে শ্রমিকরা জানান।
চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙর ও কর্ণফুলীর ১৬ ঘাটে পণ্য খালাস বন্ধ
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, বাংলাদেশ লাইটারেজ শ্রমিক ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের কর্মবিরতির কারণে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে এবং কর্ণফুলীর ১৬ ঘাটে নিত্যপণ্য খালাস এবং নদীপথে পণ্য পরিবহন বন্ধ রয়েছে। প্রায় ১৬ শ’ লাইটার জাহাজ কর্ণফুলী নদীতে অলস বসে আছে এবং এর মধ্যে দুইশতাধিক পণ্যবাহী বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে। সঙ্কট সমাধানে চট্টগ্রাম চেম্বারের পক্ষ থেকে শ্রমমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়েছে।
বিদেশ থেকে আমদানিকৃত গম, ভুট্টা, ডাল, সার, চিনি, সিমেন্ট ক্লিংকার, পাথর, কয়লা, ভোজ্যতেলসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্য বড় কার্গো জাহাজে আমদানি করা হয়। কর্ণফুলী নদীর গভীরতা কম থাকায় এসব পণ্যবাহী বড় জাহাজ বহির্নোঙরে (সাগরে) নোঙর করে লাইটার জাহাজে (ছোট জাহাজ) পণ্য খালাস করে নদীপথে বিভিন্ন নদীবন্দর ও শিল্পকারখানার ঘাটে নিয়ে যাওয়া হয়। সোমবার মধ্যরাত থেকে শ্রমিকদের কর্মবিরতি শুরু হওয়ায় এ সব পণ্য খালাস বন্ধ রয়েছে।
বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নবী আলম মাস্টার নয়া দিগন্তকে বলেন, মধ্যরাত থেকে আমাদের কর্মবিরতি শুরু হয়েছে। চট্টগ্রাম বন্দর বহির্নোঙর এবং কর্ণফুলী নদীর বাংলাবাজার হতে সদরঘাট পর্যন্ত ১৬টি ঘাটে পণ্য খালাস বন্ধ রয়েছে। নদীপথে পণ্যবাহী কোনো নৌযান চলাচল করছে না। কর্মবিরতি কত দিন চলবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান আজ বুধবার বুঝা যাবে।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো: ওমর ফারুক জানান, বহির্নোঙরে লাইটার জাহাজ চলাচল না করলেও বন্দরের মূল জেটিতে কনটেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিং স্বাভাবিক রয়েছে।
শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রীর প্রতি চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতির পত্র : এ দিকে চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘট প্রত্যাহারে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী বেগম মন্নুজান সুফিয়ানকে গতকাল মঙ্গলবার এক পত্রের মাধ্যমে আহ্বান জানিয়েছেন। পত্রে তিনি বলেন গত ১৯ অক্টোবর সন্ধ্যা থেকে নৌযান শ্রমিকরা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট পালন করছে। চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে শিল্পের কাঁচামাল ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য খালাস বন্ধ রয়েছে। লাইটারেজ জাহাজ চলাচল না করায় সারা দেশে এসব কাঁচামাল ও পণ্য পরিবহন ব্যাহত হওয়ার পাশাপাশি বন্দরে জাহাজজট এবং কন্টেইনারজট নতুনভাবে সঙ্কট তৈরি করছে। জাহাজের টার্ন এরাউন্ড টাইম বৃদ্ধি এবং ওভারস্টের কারণে ডেমারেজ চার্জসহ পণ্য আমদানি রফতানি ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন এবং সাধারণ ভোক্তাদের অতিরিক্ত মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী ক্রয় করতে হবে। বিশ্ব মহামারী করোনাভাইরাসের এই সময়ে আর্থিক সমস্যায় জর্জরিত সাধারণ মানুষ আরো চাপের মুখে পতিত হবে। অর্থনীতির গতিধারা পুনরুদ্ধারে কার্যক্রম পরিচালনাকারী ব্যবসায়ীরা নতুন করে অস্তিত্বের সঙ্কটে পড়ার আশঙ্কা দেখা দেবে বলে মনে করেন চেম্বার সভাপতি।
পত্রে তিনি উল্লেখ করেন, দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় এ ধরনের ধর্মঘট অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় অনেক বেশি ক্ষতিকারক। এতে করে শিল্পোৎপাদন ব্যাহত হবে এবং সারা দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে যাবে। ফলে বাজার অস্থিতিশীল হবে এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বেড়ে যাবে যা সামষ্টিক ও ব্যাস্টিক উভয় পরিসরে অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। করোনা মহামারীর আগ্রাসন থেকে ধীরে ধীরে অর্থনীতির চাকা পুনরুদ্ধারে চলমান আমদানি রফতানি বাণিজ্য নির্বিঘœ রাখা, বন্দরে জাহাজজট ও কন্টেইনারজট নিয়ন্ত্রণ রাখা, শিল্পের কাঁচামাল সরবরাহ অব্যাহত রাখা এবং আমদানিকৃত ভোগ্যপণ্য চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সারা দেশে পরিবহন স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে ব্যবসায়ী সমাজের পক্ষ থেকে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানান চেম্বার সভাপতি মাহবুবুল আলম।
মংলা : ধর্মঘটে বাগেরহাটের মংলা বন্দরেও পণ্যবাহী জাহাজে পণ্য ওঠানামার কাজ বন্ধ রয়েছে। নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের মংলা উপজেলা শাখার সহসাধারণ সম্পাদক আবুল হাসান বাবুল বলেন, এ বন্দরে সহস্রাধিক পণ্যবাহী নৌযানে ১৪ থেকে ১৫ হাজার শ্রমিক কাজ করেন। তারা সবাই কাজ বন্ধ রেখেছেন। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে।
মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার কমান্ডার মো: ফকরউদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, সার, কয়লা, পাথরবাহী ১৫টি দেশী বিদেশী জাহাজ বর্তমানে মংলা বন্দরে অবস্থান করছে। এর মধ্যে পাঁচটি জাহাজের পণ্য ওঠানামার কাজ শেষ হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার সেগুলোর বন্দর ত্যাগ করার কথা। নতুন করে আজ বুধবার আরো তিনটি জাহাজ বন্দরে ভেড়ার কথা। নৌযান শ্রমিকদের ধর্মঘট শুরু হওয়ায় এখন পণ্য ওঠানামার কাজ বন্ধ রয়েছে। ধর্মঘট দীর্ঘায়িত হলে বন্দরে জাহাজ জট বাড়বে, আমদানি রফতানিকারকরা আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ার আশঙ্কা তৈরি হবে।


আরো সংবাদ



premium cement
কৃষক যাতে ন্যায্যমূল্য পান, সেভাবেই ধানের দাম নির্ধারণ করা হবে : কৃষিমন্ত্রী চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে সিএনজি ও বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ২, আহত ৪ ভান্ডারিয়ায় ঐতিহ্যবাহী ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগিতা দেখতে দর্শনার্থীদের ঢল তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে ৭ দিন স্কুল বন্ধের দাবি চাটমোহরে ঐতিহ্যবাহী ঘোড়া দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত বিএনপি সাম্প্রদায়িক শক্তি, এদের রুখতে হবে : ওবায়দুল কাদের সাদিক এগ্রোর ব্রাহামা জাতের গরু দেখলেন প্রধানমন্ত্রী ভারতে লোকসভা নির্বাচনে প্রথম ধাপে ভোট পড়েছে ৬০ শতাংশ সারা বিশ্ব আজ জুলুমবাজদের নির্যাতনের শিকার : ডা. শফিকুর রহমান মিয়ানমারের ২৮৫ জন সেনা ফেরত যাবে, ফিরবে ১৫০ জন বাংলাদেশী : পররাষ্ট্রমন্ত্রী চন্দনাইশ, বাঁশখালী ও বোয়ালখালীতে ৩ জনের মৃত্যু

সকল