মাস্কের ব্যবহার নিশ্চিতে প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট
মন্ত্রিসভার বৈঠক- নিজস্ব প্রতিবেদক
- ২০ অক্টোবর ২০২০, ০০:০০
করোনাভাইরাস সংক্রমণের সম্ভাব্য সেকেন্ড ওয়েভ মোকাবেলায় ঘরের বাইরে বের হওয়া মানুষের মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করার নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রিসভা। একইসাথে মাস্ক পরিধানের বিষয়ে প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করার পক্ষেও মত দিয়েছে মন্ত্রিসভা। দেশের সব বিভাগীয় কমিশনারদের এ বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে ভার্চুয়াল মন্ত্রিসভা বৈঠকে এ নির্দেশনা দেয়া হয়। বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। গণভবন প্রান্ত থেকে প্রধানমন্ত্রী এবং সচিবালয়ের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বৈঠকে যোগ দেন।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘মানুষকে প্রথমে রিকোয়েস্ট, পরবর্তীতে মোটিভেট করে মাস্ক পরতে বাধ্য করতে হবে। তারপরও না হলে ফোর্স যদি করতে হয়, আইন প্রয়োগ যদি করতে হয় আইন প্রয়োগ করব।’
তিনি বলেন, মন্ত্রিসভা বৈঠকে কোভিড নিয়ে স্পেশাল আলোচনা হয়েছে। সব জায়গা থেকেই আমরা দেখছি, ইন্টারন্যাশনাল রিপোর্টিং থেকে দেখছি, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে আবার একটা প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে। এ জন্য প্রধানমন্ত্রী বেশ কয়েক দিন থেকে মিটিংয়ে কথাবার্তা বলছেন। সেখানে বিশেষভাবে নজর দিচ্ছেন যে, সবাই যাতে একটু কেয়ারফুল থাকি, পার্টিকুলারলি আমাদের দিক থেকে আমরা যেন সবাই মাস্ক ব্যবহার করি।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘বাকি কী হবে না হবে সেটা তো একটা আনসার্টেন বিষয়। মাস্ক যদি আমরা সবাই ব্যবহার করি, তাহলে অটোমেটিক আমাদের সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা অনেক কমে আসে। সে জন্য মানুষকে আরো বেশি করে সচেতন করতে হবে। অনেকের মধ্যে একটু রিল্যাক্স ভাব দেখা যাচ্ছে।’ ‘কোনোভাবেই পাবলিক প্লেস বা মসজিদ বা অন্য গ্যাদারিং, সামনে দুর্গাপূজা, যেসব অনুষ্ঠান হবে কোনো অবস্থায়ই কেউ যেন মাস্ক ছাড়া না আসে। এটা আরেকটু ইনফোর্স করা হবে। প্রধানমন্ত্রী ও মন্ত্রিসভা দৃঢ়ইচ্ছা ও আশা প্রকাশ করেছেন যে, সবাই যদি মাস্ক ব্যবহারে সচেতন হয়, তাহলে অটোমেটিক্যালি এটা থেকে রিলিভ পাবো।’ এ বিষয়ে মাঠ প্রশাসনকে কোনো নির্দেশনা দেয়া হবে কি না, জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘অলরেডি রোববার কমিশনার কনফারেন্স ছিল, সেখানে আমরা ক্লিয়ারকাট ইনস্ট্রাকশন দিয়েছি। ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে আমরা বলে দিয়েছি তারা যেন ইমামদের মাধ্যমে সব মসজিদ থেকে অন্তত জোহর ও মাগরিব নামাজের পর মাইক বা সামনাসামনি নামাজের সময় সচেতন করেন। প্রত্যেকটি মসজিদ, অন্যান্য বাজার বা গণজমায়েত হয়Ñ এমন স্থানে যাতে স্লোগানের মতো (লেখা) থাকে যে, অনুগ্রহ করে মাস্ক ছাড়া কেউ প্রবেশ করবেন না। এটা সবার কাছেই রিকোয়েস্ট থাকবে।
বাংলাদেশ-অস্ট্রিয়া সরাসরি ফ্লাইট চালুর চুক্তির অনুমোদন : গতকালের মন্ত্রিসভায় বাংলাদেশ ও অস্ট্রিয়ার মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট চলাচলে চুক্তির খসড়া অনুমোদন দেয়া হয়েছে। এয়ার সার্ভিস অ্যাগ্রিমেন্ট বিটুইন দ্য অস্ট্রিয়ান ফেডারেল গভর্নমেন্ট অ্যান্ড দ্য গভর্নমেন্ট অব দ্য পিপলস রিপাবলিক অব বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই চুক্তির খসড়া অনুমোদন দেয়া হয়েছে বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ২০১৮ সালের ১৬ মে ভিয়েনায় বাংলাদেশ ও অস্ট্রিয়ার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বিমান চলাচল চুক্তি অনুস্বাক্ষরিত হয়। প্রস্তাবিত চুক্তিটি স্বাক্ষর হলে বাংলাদেশ ও অস্ট্রিয়ার মধ্যে একটি সরাসরি ফ্লাইট পরিচালনার মূল ভিত্তি হিসেবে পরিগণিত হবে। দুই দেশের মধ্যে বিমান যোগাযোগ স্থাপিত হলে ব্যবসা-বাণিজ্য, শ্রমবাজার, শিল্প, স্বাস্থ্য খাত ও প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়বে। একই সাথে ইউরোপ ও অন্যান্য দেশের সাথে বিমান যোগাযোগ সহজ হবে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘ভিয়েনায় অনেকগুলো আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধান কার্যালয় রয়েছে। সে জন্য এটা আমাদের জন্য সেদিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। এটা সম্পূর্ণ ইন্টারন্যাশনাল সিভিল এভিয়েশন অর্গানাইজেশনের যে চুক্তি সে অনুসারে করা হয়েছে।
মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার কমেছে : এ দিকে, কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাসে মন্ত্রিসভায় নেয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার গত বছরের একই সময়ের থেকে ১২ শতাংশ কমেছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। গতকাল মন্ত্রিসভা বৈঠকে গৃহীত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিষয়ে ২০২০ সালের তৃতীয় ত্রৈমাসিক (জুলাই-সেপ্টেম্বর) প্রতিবেদন সূত্রে এ তথ্য জানান তিনি। বৈঠকে একইসাথে ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মন্ত্রিসভায় নেয়া সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হারের প্রতিবেদনও উপস্থাপন করা হয়।
গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে মন্ত্রিসভা বৈঠক ও গৃহীত সিদ্ধান্তের সংখ্যা ২০১৯ সাল থেকে ২০২০ সালে তুলনামূলক বেড়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের বিরূপ পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রিসভায় সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিদ্যমান অগ্রগতির হার ৪৬ শতাংশ, এর আগের বছর একই সময়ে এই হার ছিল ৫৮ শতাংশ।’ তিনি বলেন, ‘এই বছরের মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় কিছুটা ধীর হলেও মন্ত্রিসভা সন্তোষ প্রকাশ করেছে। বাস্তব অবস্থা তো সবাই বুঝতে পেরেছে। নির্দেশনা দেয়া হয়েছে, কোভিড-১৯ এর জন্য যে ব্যাকলক ছিল সেটা যেন খুব কুইকলি (দ্রুত) আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে রিকভার করতে পারি।’ বর্তমান সরকারের সময়ে গত বছরের জানুয়ারি থেকে গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৪২৭টি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়েছে ৩৫৪টি। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের হার ৮২ দশমিক ৯০ শতাংশ। সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নাধীন রয়েছে ৭৩টি।
‘২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৫টি মন্ত্রিসভা বৈঠক হয়েছে। আর গত জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ২৩টি মন্ত্রিসভা বৈঠক হয়েছে। ২০১৯ সালে মন্ত্রিসভা বৈঠকে ২৫৮টি সিদ্ধান্ত হয়েছে। এর মধ্যে ২৩৮টি বাস্তবায়ন হয়েছে, বাস্তবায়নের হার ৯২ দশমিক ২৫ শতাংশ।’ আর চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মন্ত্রিসভা বৈঠকে ১৬৯টি সিদ্ধান্ত হয়। এর মধ্যে ১১৬টির বাস্তবায়ন হয়েছে, বাস্তবায়নের হার ৬৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ২০১৯ সালের জানুয়ারি থেকে গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩৭টি আইন জারি করা হয়েছে। প্রক্রিয়াধীন আছে ৩৩টি। আর নীতি, কর্মকৌশল ও কর্মপরিকল্পনা অনুমোদন হয়েছে ১৭টি। এই সময়ে দ্বিপক্ষীয় ও আন্তর্জাতিক চুক্তি, প্রটোকল বা অনুসমর্থন অনুমোদন দেয়া হয়েছে ১৯টি। এ ছাড়া মন্ত্রিসভার জন্য ২৯৭টি সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করা হয়। মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের উদ্যোগে ২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি থেকে গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ১১৫টি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হয়েছে বলেও মন্ত্রিসভাকে অবহিত করা হয়েছে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা