২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদে রোহিঙ্গা নিয়ে উত্তপ্ত বিতর্ক

সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দেয়ার অভিযোগ মিয়ানমারের; ভিত্তিহীন বলে প্রত্যাখ্যান বাংলাদেশের
-

রোহিঙ্গা ইস্যু ও রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদে (ইউএনজিএ) বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে উত্তপ্ত বিতর্ক হয়েছে। মিয়ানমার দাবি করেছে, কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে বাংলাদেশ সন্ত্রাসীদের প্রশ্রয় দিচ্ছে। এই দাবিকে ‘ভিত্তিহীন’ বলে প্রত্যাখ্যান করে বাংলাদেশ বলেছে, মিয়ানমার সরকারকে মিথ্যাচার ও প্রোপাগান্ডার নীতি থেকে বের হয়ে এসে তাদের দেশের অধিবাসীদের নিরাপত্তা ও মর্যাদার সাথে প্রত্যাবাসনের প্রকৃত রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রমাণ রাখতে হবে।
বাংলাদেশ জোরালোভাবে বলেছে, নিজ দেশের মানুষের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করে নিপীড়ন করা মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় নীতি। এই নীতির কারণেই দেশটির অভ্যন্তরে বিচ্ছিন্নতাবাদের সৃষ্টি হয়েছে, যা মিয়ানমারকে সঙ্ঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের চারণভূমিতে পরিণত করেছে। বাংলাদেশ নিজ ভূখণ্ড কোনো সন্ত্রাসবাদী কর্মকাণ্ডের জন্য ব্যবহৃত হতে দেয় না।
গত মঙ্গলবার ইউএনজিএতে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দেয়ার অভিযোগ এনে মিয়ানমারের মন্ত্রী কিউ টিন্ট সোয়ে বলেন, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে শুধু দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতার ভিত্তিতেই প্রত্যাবাসন ইস্যুর কার্যকর নিরসন সম্ভব।
এর সাথে দ্বিমত পোষণ করে জাতিসঙ্ঘে বাংলাদেশের প্রতিনিধি বলেছেন, রোহিঙ্গা দ্বিপক্ষীয় কোনো ইস্যু নয়। এটা মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যা। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমার বিভ্রান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছে।
মিয়ানমারকে আয়নায় নিজ চেহারা দেখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, রোহিঙ্গাসহ জাতিগত সংখ্যালঘুদের প্রতি অমানবিক আচরণের ইতিহাস মিয়ানমারের রয়েছে। এটা দেশটির জন্য নতুন কিছু নয়। জাতিসঙ্ঘের যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে গণহত্যার লক্ষ্যকে সামনে রেখে নিজ দেশের মানুষের ওপর রাখাইন রাজ্যে মিয়ানমার প্রাণঘাতী সঙ্ঘাত চালাচ্ছে।
বাংলাদেশের প্রতিনিধি বলেন, রাখাইনের পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে, একজন রোহিঙ্গাও বাংলাদেশ থেকে ফিরতে চায় না। প্রত্যাবাসন প্রচেষ্টা এই পর্যন্ত দুই দফা ব্যর্থ হয়েছে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের দায় এড়াতে মিয়ানমার এখন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলছে। প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশের সাথে দুই দফা চুক্তি করলেও তা বাস্তবায়নে মিয়ানমারের কোনো সদিচ্ছা নেই।
বাংলাদেশের সাথে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি অনুযায়ী, প্রত্যাবাসন শুরু না করার বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে মিয়ানমার বলেছে, কক্সবাজারের বিভিন্ন ক্যাম্প থেকে ৩৫০ জন রোহিঙ্গা রাখাইনে ফিরে গেছে।
মিয়ানমারের এই দাবির ব্যাপারে প্রশ্ন তুলে বাংলাদেশ জানতে চেয়েছে, ফিরে যাওয়া রোহিঙ্গাদের নাম-পরিচয় ও অবস্থান পরিষ্কার করে জানাতে হবে। বিভ্রান্তি ছড়িয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা না করে প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় মিয়ানমারকে দৃশ্যমান অগ্রগতি অর্জন করতে হবে।
বাংলাদেশের প্রতিনিধি বলেন, রোহিঙ্গারা রাখাইনে ফিরতে চায় না। কেননা তারা মিয়ানমার সরকারকে বিশ্বাস করে না। এ সঙ্কট নিরসনে মিয়ানমারকে রাজনৈতিক সদিচ্ছার প্রমাণ রাখতে হবে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের ওপর চালানো নৃশংস বর্বরতা সম্পর্কে পুরো বিশ্ব সচেতন রয়েছে। আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) গণহত্যার অভিযোগে মিয়ানমারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে। রোহিঙ্গাদের জীবন বাঁচাতে মানবিক দিক বিবেচনায় বাংলাদেশ সীমান্ত খুলে দিয়েছিল।
পরিস্থিতি সরেজমিন পর্যবেক্ষণে জাতিসঙ্ঘ, আন্তর্জাতিক সংস্থা ও গণমাধ্যমের জন্য রাখাইনকে উন্মুক্ত করে দেয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সঙ্কটের সৃষ্টি হয়েছে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে। তাই এ সমাধানও সেখানেই রয়েছে। এই সঙ্কট নিরসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরো কার্যকর ভূমিকা রাখতে হবে।

 


আরো সংবাদ



premium cement