এমসি কলেজে গণধর্ষণে আরো তিনজন রিমান্ডে
রবিউল ছিনতাই ও ছাত্রাবাসে অগ্নিসংযোগ মামলারও আসামি- সিলেট ব্যুরো
- ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০
সিলেট এমসি কলেজের ছাত্রাবাসে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে সঙ্ঘবদ্ধ ধর্ষণের মামলায় এজাহারভুক্ত আসামি মাহবুবুর রহমান রনি এবং সন্দেহভাজন আসামি রাজন ও আইনুলকে পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল মঙ্গলবার সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দ্বিতীয় আদালতের বিচারক সাইফুর রহমান এ আদেশ দেন। এ নিয়ে এই মামলায় ছয়জনকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। গ্রেফতার করা হয়েছে আটজনকে। তাদের মধ্যে ছয়জন হচ্ছে এজাহারভুক্ত আসামী। তারেকুল ইসলাম তারেক নামে এজাহারভুক্ত এক আসামিকে গতকাল সুনামগঞ্জের দিরাই থেকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। সে এজাহারভুক্ত দুই নম্বর আসামি। একই মামলায় সোমবার তিন আসামি সাইফুর রহমান, অর্জুন লস্কর ও রবিউল ইসলামকে পাঁচ দিন করে রিমান্ডে নেয় পুলিশ। মামলায় অভিযুক্ত সবাই নানা অপরাধকর্মের সাথে জড়িত দীর্ঘ দিন থেকে। এত দিন প্রাণের ভয়ে কেউই মুখ খুলতে সাহস পায়নি। গ্রেফতার হওয়ার পর তাদের অপকর্মের ফিরিস্তি এখন বেরিয়ে আসছে। মামলার ৫ নম্বর আসামি রবিউল ইসলাম এমসি কলেজ ছাত্রাবাস পুড়িয়ে দেয়ার ঘটনায়ও জড়িত ছিল। একটি ছিনতাই ও ছাত্রাবাস পুড়িয়ে দেয়ার মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে।
কুলাঙ্গারদের ফাঁসি চাই : কড়া পুলিশ প্রহরায় গতকাল বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটে প্রিজন ভ্যানে করে আদালতে নিয়ে আসা হয় আসামি শাহ মাহবুবুর রহমান রনি এবং সন্দেহভাজন আসামি রাজন মিয়া ও মো: আইনুদ্দিনকে। তারা সবাই এমসি কলেজে তরুণী ধর্ষণ মামলার আসামি। এর মধ্যে রনি মামলার এজাহারভুক্ত দ্বিতীয় আসামি। আদালতে হাজির করার আগেই আদালত চত্বরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। মোতায়েন করা হয় বিপুল পুলিশ। রনি, রাজন ও আইনুলকে আদালত চত্বরে হাজির করার পর পুলিশি নিরাপত্তার মধ্যেই বিক্ষোভ করেন উপস্থিত জনতা। এই তিন আসামিকে নিয়ে আসার পর আদালত চত্বরে শতাধিক জনতা জড়ো হন। লোকজন তাদের দেখা মাত্রই ‘ফাঁসি চাই, ফাঁসি চাই’ স্লোগান শুরু করেন। ‘কুলাঙ্গারদের ফাঁসি চাই’ স্লোগানও দিতে দেখা যায় অনেককে। তবে, পুলিশ তৎপর থাকায় কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। আসামিদের আদালতে হাজির করার পর তাদের সাত দিনের রিমান্ড চাওয়া হলে পাঁচ দিন মঞ্জুর করেন বিচারক।
আদালত থেকে বেরিয়ে সিলেট জেলা বারের সিনিয়র আইনজীবী হাবিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, রিমান্ড মঞ্জুরকালে জেলা বারের শতাধিক আইনজীবী বাদিপক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন। আসামিপক্ষে কোনো আইনজীবী দাঁড়াননি। তারা আদালতকে বলেন, ধর্ষণকারীরা এমসি কলেজের ১২৮ বছরের ইতিহাস কলঙ্কিত করেছে। তাদের সাত দিনের রিমান্ড দিলে নেপথ্যের প্রশ্রয়দাতাদের নাম বেরিয়ে আসবে। সে সময় আদালতের বিচারক দুই লাইনে আসামিদের বক্তব্য জানতে চাইলেও তারা কোনো কিছু বলতে পারেনি। এ সময় আরেক আইনজীবী বলেন, রিমান্ডপ্রাপ্ত আসামিরাই মেয়েটিকে ঘটনাস্থলে নিয়ে যায়। এটা আদালতকে জানানো হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত শুক্রবার বিকেলে এক তরুণী তার স্বামীকে নিয়ে নিজস্ব কারে সিলেট এমসি কলেজে ঘুরতে আসেন। এ সময় ছাত্রলীগের ছয় নেতা তাদের জিম্মি করে ছাত্রাবাসে নিয়ে যায়। সেখানে মারধরের পর স্বামীকে বেঁধে তরুণীকে ধর্ষণ করে। রাত সাড়ে ১০টার দিকে ওই দম্পতিকে ছাত্রাবাস থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। পরে ধর্ষণের শিকার তরুণীকে সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওসিসি সেন্টারে ভর্তি করা হয়। রাতেই এ ঘটনা জানাজানি হলে সর্বত্র ক্ষোভের সঞ্চার হয়। গণধর্ষণের ঘটনায় ছয়জনের নামে মামলা করা হয়েছে শাহপরান থানায়। একই মামলায় অজ্ঞাত আরো তিনজনকে আসামি করা হয়েছে। অভিযুক্ত সবাই ছাত্রলীগের নেতাকর্মী।
ছাত্রাবাসে আগুন দিয়েছিল রবিউল : এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে নববধূকে গণধর্ষণের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ৫ নম্বর আসামি সুনামগঞ্জ দিরাইয়ের রবিউল ইসলাম (২৫)। সে ছাত্রী ধর্ষণ ছাড়াও নানা অপরাধকর্মে জড়িত। ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকায় সে ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে কেউ প্রতিবাদ করতে সাহস পায়নি। ধর্ষক সাইফুল ও রনির নানা অপকর্মের ঘটনা ইতোমধ্যে সবাই জেনে গেছে। এবার জানা গেছে, রবিউলের কিছু দুর্বৃত্তপনা। গত রোববার রাতে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। গত সোমবার রবিউলকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ। এমসি কলেজ ছাত্রাবাসে আগুন দেয়ার মামলা এবং আরেকটি ছিনতাই মামলারও আসামি রবিউল ইসলাম। তার বিরুদ্ধে দু’টি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। দিরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম জানান, রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে সিলেট থেকে পাঠানো দু’টি মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমসি কলেজে অধ্যয়নরত দিরাইয়ের এক ছাত্র সংবাদমাধ্যমকে জানান, আদাব-সালাম না দিলে শিক্ষার্থীদের মারধর করে আহত করত রবিউল। শুধু তাই নয়, মোটরসাইকেল চালিয়ে যাওয়ার সময় রাস্তা ফাঁকা পেলেই নারী শিক্ষার্থীদের ওড়না ধরে টান মারা, মদ খাওয়া, জুয়া খেলা, ইয়াবা সেবন ও বিক্রি, বিনা কারণে শিক্ষার্থীদের লাঞ্ছনা, হোস্টেলে জোরপূর্বক বসবাস, বন্ধুবান্ধবসহ ফাও খাওয়া, হোস্টেলের সিট বিক্রিসহ নানা ধরনের অপরাধে জড়িত ছিল রবিউল।
জানা যায়, এমসি কলেজের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত রবিউলের বাড়ি সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলার জগদল গ্রামে। গ্রেফতার এড়াতে সে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার কাজীগঞ্জ বাজারের নিজআগনা গ্রামে এক আত্মীয়ের বাড়িতে আত্মগোপন করেছিল।
রবিউল ইসলামের বাবা দেলোয়ার হোসেন (৬৫) সংবাদমাধ্যমকে জানান, তার ছেলে দোষ করে থাকলে শাস্তি হোক, এটা তিনিও চান। তিনি কোনো অন্যায়ের সাথে নেই। তবে তিনি মনে করেন, তার ছেলে এমন জঘন্য কাজ করেনি।
দিরাই উপজেলার বড় নগদীপুর গ্রামের দু’জন বাসিন্দা জানিয়েছেন, সিলেটে এক আওয়ামী লীগ নেতার প্রশ্রয়ে ছিল রবিউল।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা