২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথে জেসিসি বৈঠক আজ

ডিসেম্বরে হাসিনা-মোদি বৈঠক
-

বাংলাদেশ-ভারত পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের যৌথ পরামর্শক কমিশনের (জেসিসি) বৈঠক আজ মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে বাংলাদেশের অগ্রাধিকারে রয়েছে তিস্তাসহ অভিন্ন নদীর পানি বণ্টন, সীমান্ত হত্যা বন্ধ এবং পেঁয়াজসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের সুষ্ঠু সরবরাহ নিশ্চিত করা। অন্য দিকে লাইন অব ক্রেডিটের আওতায় বাংলাদেশে নেয়া প্রকল্পগুলোর দ্রুত বাস্তবায়ন, দুই দেশের মধ্যে কানেক্টিভিটি বৃদ্ধি এবং জ্বালানি সহযোগিতা ভারতের অগ্রাধিকারে রয়েছে।
ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠেয় এ বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন আর ভারতীয় প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেবেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। জেসিসি দ্বিপক্ষীয় ইস্যুতে নিয়মিত আলোচনার জন্য বাংলাদেশ ও ভারতের সর্বোচ্চ ফোরাম। ভারতের প্রয়াত পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের উদ্যোগে গঠিত এ ফোরামের প্রথম বৈঠক ২০১২ সালের মে মাসে অনুষ্ঠিত হয়। সর্বশেষ জেসিসি বৈঠক (পঞ্চম) গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশের অগ্রাধিকারে থাকা তিস্তার পানি বণ্টন ইস্যুটি দীর্ঘদিন ধরে অনিষ্পন্ন রয়ে গেছে। ভারতের শীর্ষ পর্যায় থেকে বারবার প্রতিশ্রুতি দেয়া সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির বিরোধিতার কারণে এই চুক্তি সই হচ্ছে না। গত বছর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লি সফরের সময় ধরলা, দুধকুমার, গোমতী, খোয়াই, মনু ও মুহুরী নদীর পানিবণ্টন চুক্তি দ্রুততার সাথে সই করার জন্য পানিপ্রবাহের তথ্য-উপাত্ত হালনাগাদ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আজকের জেসিসি বৈঠকে যৌথ নদী কমিশনের সভা শিগগিরই অনুষ্ঠানের ওপর জোর দিতে পারে বাংলাদেশ। চলতি বছর সীমান্ত হত্যা হঠাৎ বেড়ে গেছে। ভারতের পররাষ্ট্রসচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার সাম্প্রতিক ঢাকা সফরের সময় বাংলাদেশ এ ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করে। দুই দেশের সীমান্তরক্ষীদের মহাসচিব পর্যায়ের বৈঠকেও বিষয়টি আলোচনা হয়েছে। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি বারবার দিলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন ঘটছে না। জেসিসি বৈঠকে বাংলাদেশ এ ব্যাপারে বিএফএফের প্রতি ভারতের রাজনৈতিক দিকনির্দেশনা চাইতে পারে।
পূর্ব ঘোষণা দিয়ে বন্ধ করার জন্য বাংলাদেশের অনুরোধ সত্ত্বেও ভারত গত বছরের মতোই চলতি মাসে হঠাৎ করে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয়। এতে নিত্যপ্রয়োজনীয় এ পণ্যটির দাম বাজারে আকস্মিকভাবে বেড়ে যায়। চলতি বছরের জানুয়ারিতে দুই দেশের বাণিজ্যসচিব পর্যায়ের বৈঠকে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের ওপর পূর্ব ঘোষণা ছাড়া নিষেধাজ্ঞা না দেয়ার জন্য ভারতকে অনুরোধ করেছিল বাংলাদেশ। গত বছর দিল্লি সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও একই ধরনের অনুরোধ জানান। কিন্তু ভারতের বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয় গত ১৪ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ রফতানির ওপর হঠাৎ নিষেধাজ্ঞা দেয়। পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের আপত্তির মুখে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করে। এরপর দুই দেশের সীমান্তে পেঁয়াজ নিয়ে আটকে থাকা ভারতীয় ট্রাকগুলোকে বাংলাদেশে খালাস করার অনুমতি দেয়া হয়। কিন্তু কালক্ষেপণের কারণে এ সব পেঁয়াজের একটি বড় অংশ পচে যায়। জেসিসি বৈঠকে বাংলাদেশ আবার পূর্ব ঘোষণা ছাড়া নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য রফতানির ওপর নিষেধাজ্ঞা না দেয়ার বিষয়টি উত্থাপন করতে পারে।
লাইন অব ক্রেডিটের আওতায় ভারতের দেয়া ঋণের অর্থে বাংলাদেশের যোগাযোগ ও অবকাঠামো খাতে বেশকিছু প্রকল্প হাতে নেয়া হলেও তার বাস্তবায়ন গতি খুবই ধীর। এতে গতি আনতে হর্ষ বর্ধন শ্রিংলার সফরকালে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন নিয়ে আলোচনা হয়। জেসিসি বৈঠকে এক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত হতে পারে। কানেক্টিভিটির ক্ষেত্রে দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের মধ্যে বেশ অগ্রগতি হয়েছে। রেলওয়ে সংযোগের ক্ষেত্রে দুই দেশ ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধের আগের অবস্থায় ফিরে চায়। এ ছাড়া চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারের পাশাপাশি নদী পথে কলকাতা থেকে ত্রিপুরায় পণ্য পরিবহনের সফলতায় অন্যান্য পরিকল্পনা নিয়ে ভারত এগিয়ে যেতে চায়। জেসিসি বৈঠকে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, নিরাপত্তা সহযোগিতা, করোনা টিকা প্রাপ্তিসহ অন্যান্য দ্বিপক্ষীয় ইস্যুগুলো আলোচনায় আসতে পারে।
ডিসেম্বরে হাসিনা-মোদি বৈঠক : পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. আব্দুল মোমেন গতকাল সোমবার সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে আগামী ডিসেম্বরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠক হবে। করোনা মহামারী পরিস্থিতির উন্নতি না হলে ভার্চুয়ালি এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। আর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে এলে শীর্ষ পর্যায়ের এই বৈঠক সরাসরি অনুষ্ঠিত হতে পারে।
শীর্ষ পর্যায়ের বৈঠকের পর দ্বিপক্ষীয় চুক্তির সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তবে তিস্তা চুক্তি সই হবে কি না প্রশ্ন করা হলে তিনি বিস্তারিত কিছু জানাননি।
ড. মোমেন বলেন, ভারত আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র। আমাদের আলোচনায় অনেক কিছুই আছে। আজকের জেসিসি বৈঠকটি সংক্ষিপ্তভাবে অনুষ্ঠিত হবে। জেসিসি বৈঠকে পর কোনো চুক্তি সইয়ের পরিকল্পনা নেই বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী।


আরো সংবাদ



premium cement