২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`
টিআইবির আলোচনায় বক্তারা

গণমাধ্যমের ওপর চাপ অশনি সঙ্কেত ও আত্মঘাতী

-

শত চাপ ও প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও সাংবাদিকরা যদি সততা ও সাহসের সাথে কাজ করেন তা হলে পরিবর্তনের ধারা সূচিত হবে। প্রকৃত অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার মাধ্যমেই জনগণের আস্থা ও বিশ^াস অর্জন করতে হবে এবং তাদের মাঝে আশার সঞ্চার করতে হবে। আন্তর্জাতিক তথ্য অধিকার দিবস ২০২০ উদযাপনের অংশ হিসেবে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) আয়োজিত ‘তথ্য অধিকার, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা : প্রেক্ষিত বাংলাদেশ’ শীর্ষক মুক্ত আলোচনা ও দুর্নীতিবিরোধী অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে এ মন্তব্য করেন আলোচকরা।
গতকাল সোমবার অনলাইন প্লাটফর্মে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ। এ সময় মুখ্য আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক, গবেষক ও গণমাধ্যম বিশ্লেষক অধ্যাপক আফসান চৌধুরী, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. গীতিআরা নাসরিন, বৈশাখী টেলিভিশনের প্ল্যানিং কনস্যালটেন্ট জুলফিকার আলী মানিক এবং টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক শেখ মন্জুর-ই-আলম।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন টিআইবির উপদেষ্টা নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের, এমআরডিআইয়ের নির্বাহী পরিচালক হাসিবুর রহমান, চ্যানেল টোয়েন্টি ফোরের নির্বাহী পরিচালক তালাত মামুন, এনটিভির বার্তা প্রধান জহিরুল আলম, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের পরিচালক রিজওয়ান-উল-আলম, সিনিয়র সাংবাদিক শরিফুজ্জামান পিন্টু, এমআরডিআইয়ের অনুসন্ধানী সাংবাদিকতাবিষয়ক হেল্প ডেস্কের পরিচালক ও সাবেক সাংবাদিক বদরুদ্দোজা বাবুসহ বিভিন্ন গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও সাংবাদিকরা।
বাংলাদেশের গণমাধ্যম অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা করতে পারছে না মন্তব্য করে অধ্যাপক আফসান চৌধুরী বলেন, ‘গণমাধ্যম এখন নিজেকে সংবাদমাধ্যম হিসেবে না ভেবে উপরাজনৈতিক শক্তি হিসেবে ভাবছে। তারা অনুসন্ধানী না হয়ে এখন হেডলাইন নির্ভর। গণমাধ্যমকর্মীদের সফল হওয়ার চেষ্টা নেই, তারা প্রস্তুত না, এমনকি মালিকপক্ষও গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেয় না। এ থেকে বের হতে না পারলে গণমাধ্যম মুক্ত হতে পারবে না, গণমাধ্যমকর্মীরাও তাদের দায়িত্বপালনে সফল হবে না।’
অধিকাংশ সংবাদমাধ্যমই গতানুগতিক উল্লেখ করে ড. গীতিআরা নাসরিন বলেন, গণমাধ্যম ওয়াচডগের ভূমিকা কতটা পালন করতে পারছে তা প্রশ্নসাপেক্ষ। সব মিডিয়া একই ধরনের তথ্য প্রদান করছে। একধরনের ‘সহমত ভাই’ সাংবাদিকতা শুরু হয়েছে। জনগণ ভাবতে পারছে না যে সাংবাদিকরা তাদের পাশে আছে। প্রচলিত কাঠামোকে চ্যালেঞ্জ করে এ ধারা থেকে বের হতে না পারলে গণমাধ্যমের ওপর সাধারণ মানুষের আস্থা, বিশ^াস অর্জন এবং আশা তৈরি সম্ভব হবে না।
সাংবাদিক জুলফিকার মানিক বলেন, সাংবাদিকতায় বিশেষ করে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় চাপ আছে, ছিল এবং চাপ থাকবেই। এর মধ্য দিয়েই সততা ও সাহসিকতার সাথে কাজ করে যেতে হবে।
আলোচনা অনুষ্ঠান শেষে পুরস্কার ঘোষণা ও সমাপনী বক্তব্যে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, তথ্য অধিকার আইন প্রণয়নের জন্য সরকারকে সাধুবাদ জানানো গেলেও এই আইনের বাস্তবায়নে সরকারের একাংশের মানসিকতা হলো ‘তথ্য হচ্ছে সরকারি সম্পত্তি’; এর নিয়ন্ত্রণ সরকারের হাতেই থাকবে এবং সরকার যেভাবে যতটুকু তথ্য প্রকাশ করতে চাইবে ততটুকুই প্রকাশিত হবে। পাশাপাশি অনেক ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতাবানদের একাংশের সমালোচনা সইবার সৎ সাহসের ঘাটতি থাকায় রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক উভয় বিবেচনায় তথ্য প্রকাশ একটি ঝুঁকিপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। তাই রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় তথ্য প্রকাশ ও অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ওপর প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ এক ধরনের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ লাভ করেছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের যথেচ্ছ ব্যবহার জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয়। গণমাধ্যমের ওপর এই চাপ গণতন্ত্রের জন্য অশনি সঙ্কেত; বিশেষ করে অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা, গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতা, শুদ্ধাচার প্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতি প্রতিরোধের ক্ষেত্রে অপ্রতিরোধ্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। যেটি আত্মঘাতীমূলক এবং বুমেরাং হতে বাধ্য।
টিআইবির দুর্নীতিবিরোধী অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার ২০২০ ঘোষণায় জানানো হয়, এ বছর অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কারের জন্য সর্বমোট ৪৯টি প্রতিবেদন জমা পড়েছে। বিচারকদের যাচাই বাছাই শেষে প্রিন্ট মিডিয়া- জাতীয় ও আঞ্চলিক ক্যাটাগরি এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়া- প্রতিবেদন ও প্রামাণ্য অনুষ্ঠান ক্যাটাগরিতে মোট চারজন সাংবাদিক এবং একটি প্রামাণ্য অনুষ্ঠানকে এ বছর পুরস্কৃত করা হয়।
প্রিন্ট মিডিয়া আঞ্চলিক ক্যাটাগরিতে যৌথভাবে টিআইবির অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার বিজয়ী হয়েছেন যশোরের ‘দৈনিক গ্রামের কাগজ’-এর সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার ফয়সাল ইসলাম এবং চট্টগ্রামের সাপ্তাহিক ‘চাটগাঁর বাণী’ পত্রিকার সম্পাদক মোহাম্মদ সেলিম। জাতীয় সংবাদপত্র বিভাগে টিআইবির অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার বিজয়ী হয়েছেন ‘দৈনিক কালের কণ্ঠ’ পত্রিকার সিনিয়র রিপোর্টার আরিফুর রহমান।
টেলিভিশন (প্রতিবেদন) বিভাগে বিজয়ী হয়েছেন এনটিভির সিনিয়র রিপোর্টার সফিক শাহিন। সাংবাদিক সফিক শাহিন ২০১৬ সালেও টিআইবির অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কার পেয়েছিলেন। টেলিভিশন (প্রামাণ্য অনুষ্ঠান) বিভাগে বিজয়ী হয়েছে চ্যানেল টোয়েন্টি ফোরের প্রামাণ্য অনুষ্ঠান ‘সার্চলাইট’।
উল্লেখ্য, আঞ্চলিক ও জাতীয় সংবাদপত্র বিভাগে বিজয়ীদের প্রত্যেককে সম্মাননাপত্র, ক্রেস্ট ও এক লাখ পঁচিশ হাজার টাকার চেক প্রদান করা হবে।
আর বিজয়ী প্রামাণ্য অনুষ্ঠানকে সম্মাননাপত্র, ক্রেস্ট ও এক লাখ পঞ্চাশ হাজার টাকার চেক প্রদান করা হবে।


আরো সংবাদ



premium cement
ইভ্যালির রাসেল-শামীমার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড্যানিয়েল কাহনেম্যান আর নেই বিএনপি নেতাকর্মীদের সম্পত্তি দখলের অভিযোগ খণ্ডালেন ওবায়দুল কাদের আটকের পর নাশকতা মামলায় গ্রেফতার দেখানো হলো ইউপি চেয়ারম্যানকে বদর যুদ্ধে যারা শহীদ হয়েছেন পণবন্দী জাহাজ ও ক্রুদের মুক্ত করার প্রচেষ্টায় অগ্রগতি হয়েছে : পররাষ্ট্রমন্ত্রী ঝালকাঠিতে নিখোঁজের ২ দিন পর নদীতে মিলল ভ্যানচালকের লাশ বাল্টিমোর সেতু ভেঙে নদীতে পড়া ট্রাক থেকে ২ জনের লাশ উদ্ধার যুক্তরাষ্ট্রে ছুরিকাঘাতে নিহত ৪ সুইডেনে বসবাসের অনুমতি বাতিল কুরআন পোড়ানো শরণার্থীর ভালো আছেন খালেদা জিয়া

সকল