২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনকে বৈশ্বিক সম্পদ বিবেচনার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

-

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন সময়োপযোগী ও সমান প্রাপ্তি নিশ্চিতের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। সম্ভাব্য ভ্যাকসিন প্রাপ্তিতে উন্নত দেশগুলোর ‘ভ্যাকসিন জাতীয়তাবাদ’-এর একটি দৃশ্যমান প্রবণতা দেখা দেয়ার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদে ভাষণে এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আশা করা হচ্ছে বিশ্ব শিগগিরই কোভিড-১৯-এর ভ্যাকসিন পাবে। এই ভ্যাকসিনকে বৈশ্বিক সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা প্রয়োজন।’ শেখ হাসিনা বলেন, ‘কোভিড-১৯ প্রমাণ করেছে, আমাদের সকলের ভাগ্য একই সূত্রে গাঁথা। কাজেই সকল দেশ যাতে এই ভ্যাকসিন সময় মতো এবং একই সঙ্গে পায় তা নিশ্চিত করতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল নিউ ইয়র্কে জাতিসঙ্ঘ সদর দফতরে সাধারণ পরিষদের ৭৫তম অধিবেশনে দেশের পক্ষে ভার্চুয়াল ভাষণে এ আহ্বান জানান।
আগে ধারণকৃত এই ভাষণে শেখ হাসিনা দেশের ওষুধ শিল্পের অবকাঠামোগত সক্ষমতার বিষয়টির উল্লেখ করে বলেন, ‘কারিগরি জ্ঞান ও মেধাস্বত্ব প্রদান করা হলে, এই ভ্যাকসিন বিপুল পরিমাণে উৎপাদনের সক্ষমতা বাংলাদেশের রয়েছে।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রকদের মতে গবেষকরা মানবদেহে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালগুলোতে ৪২টি ভ্যাকসিন পরীক্ষা করছেন এবং কমপক্ষে ৯৩ টি প্রাক্কলিত ভ্যাকসিন প্রাণীতে সক্রিয় তদন্তাধীন রয়েছে। তবে উন্নত দেশগুলো টিকা গ্রহণকারীদের দ্রুত ইনোকুলেটগুলোর সহজলভ্যতার জন্য আদেশ দিচ্ছিল, যার ফলে মহামারীটি দীর্ঘায়িত হতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মহামারী নিরসনে আমাদের উদ্যোগ এবং এজেন্ডা-২০৩০ অর্জনে আমাদের প্রচেষ্টা সমানতালে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের দ্বিতীয় ভলান্টারি ন্যাশনাল রিভিউ রিপোর্ট উপস্থাপন প্রমাণ করে যে, টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট অর্জনে আমরা যথাযথভাবে এগিয়ে চলেছি।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে প্রতি বছরের মতো এবারও বাংলায় ভাষণ দেন। কোভিড-১৯-এর কারণে জাতিসঙ্ঘের ইতিহাসে এই প্রথম নিউ ইয়র্কের সদর দফতরে সদস্য দেশগুলোর রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের অনুপস্থিতিতে ডিজিটাল পদ্ধতিতে সাধারণ সভা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
শেখ হাসিনা মহামারী কার্যকরভাবে মোকাবেলায় সঠিক নেতৃত্বের নির্দেশনায় ‘সম্মিলিত ব্যবস্থা’ নেয়ারও আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ যেমন জাতিসঙ্ঘ সৃষ্টির মাধ্যমে বিশ্বের সকল দেশের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের উপর গুরুত্বারোপের সুযোগ সৃষ্টি করেছিল, তেমনি এই মহামারী আমাদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে সঠিক নেতৃত্ব প্রদানের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি সামনে নিয়ে এসেছে।’
রোহিঙ্গা সমস্যা, জলবায়ু সঙ্কট, কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে অভিবাসী শ্রমিকদের দুর্দশা, সন্ত্রাসবাদ এবং চরমপন্থার বিরুদ্ধে তার সরকারের গৃহীত জিরো টলারেন্স পলিসি, এসডিজি অর্জনের পদক্ষেপগুলো, দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের চিত্র, নারীর ক্ষমতায়ন, বহুপাক্ষিকতা এবং বিশ^শান্তি প্রচেষ্টার নানা দিক তার ১৭ মিনিটের ভাষণে তুলে আনেন প্রধানমন্ত্রী।
দীর্ঘায়িত রোহিঙ্গা সঙ্কট নিরসনে আরো কার্যকর ভূমিকা নিতে শেখ হাসিনা বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি তার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘এই সমস্যা মিয়ানমারের সৃষ্টি এবং এর সমাধান মিয়ানমারকেই করতে হবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ ১১ লাখেরও বেশি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিককে আশ্রয় দিয়েছে। তিন বছরের বেশি সময় অতিক্রান্ত হলেও এখন পর্যন্ত মিয়ানমার একজন রোহিঙ্গাকেও ফেরত নেয়নি।’ তিনি বলেন, ‘আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে এ ব্যাপারে আরো কার্যকর ভূমিকা গ্রহণের অনুরোধ জানাচ্ছি।’
সরকারপ্রধান হিসেবে জাতিসঙ্ঘ সাধারণ অধিবেশনে এ নিয়ে ১৭তম বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে অভিবাসী শ্রমিকদের দুর্দশা প্রসঙ্গে বলেন, ‘এই মহামারীর কারণে অনেক শ্রমিক কাজ হারিয়েছেন। অনেককে নিজ দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা দেশে ফিরে আসা অভিবাসী শ্রমিকদের প্রণোদনা বাবদ ৩৬১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ দিয়েছি। তবে কোভিড-পরবর্তী সময়ে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’
আর্থিক খাতের আশু সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তার সরকার ২১টি প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘রফতানিমুখী শিল্প, শ্রমিকদের সুরক্ষা, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পকে ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল প্রদান, রফতানি বৃদ্ধিতে ঋণ প্রদান, কৃষি ও কৃষকদের সহায়তা, কর্মসৃজনের জন্য ঋণ প্রদান, ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সুদ মওকুফ, পুনঃঅর্থায়ন স্কিম এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য বীমা চালুকরণ খাত প্রণোদনার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এ পর্যন্ত আমরা মোট ১৩ দশমিক ২৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছি, যা আমাদের মোট জিডিপির ৪ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ।
জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রী, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর বিদ্যমান সমস্যাসমূহ প্রতিনিয়ত প্রকট হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, কোভিড-১৯-এর এই সঙ্কটকালেও আমাদেরকে বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় আমফানের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলা করতে হচ্ছে। সিভিএফ ও ভি- টোয়েন্টি গ্রুপ অব মিনিস্টার্স অব ফিন্যান্স-এর সভাপতি হিসেবে বাংলাদেশ জলবায়ু সমস্যা উত্তরণে একটি টেকসই পরিকল্পনা প্রণয়নে নেতৃত্ব প্রদান করবে।


আরো সংবাদ



premium cement