২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পেঁয়াজ আমদানি নিয়ে তদন্ত জোরদার

-

পেঁয়াজের আমদানির তথ্য নিয়ে তদারকি জোরদার করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত কয়েক মাসে কী পরিমাণ আমদানির জন্য ঋণপত্র স্থাপন (এলসি ওপেন) করা হয়েছে, কী পরিমাণ আমদানি করা হয়েছে, কারা আমদানি করেছেন, এমনকি প্রতি কেজি পেঁয়াজের দেশে আসা পর্যন্ত কত টাকা ব্যয় হয়েছে তার সামগ্রিক তথ্য ব্যাংকগুলো থেকে নেয়া হচ্ছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন ব্যাংককে তথ্য পাঠাতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কয়েকটি বিভাগ থেকে একত্রে এ তদারকির কাজ করছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, দেশে প্রতি বছর যে পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি হয় তার ৮০ থেকে ৯০ শতাংশই আসে ভারত থেকে। বাকি ১০ থেকে ২০ শতাংশ পেঁয়াজ আসে মিয়ানমার, তুরস্ক ও চীন থেকে। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে আগস্ট পর্যন্ত পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে ২ কোটি ৯০ লাখ ডলারের। গত অর্থবছরের একই সময়ে আমদানি করা হয়েছিল ৩ কোটি ৬০ লাখ ডলারের। গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের একই সময়ে পেঁয়াজের আমদানি কমেছে প্রায় ১৮ শতাংশ। এ দিকে ১ থেকে ১০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে ৪৮ লাখ ডলারের। এর মধ্যে আমদানির অপেক্ষায় আছে ৫৮ লাখ ৬০ হাজার ডলারের পেঁয়াজ। ইতোমধ্যে টিসিবি টার্কি (তুরস্ক) থেকে পেঁয়াজ আমদানির জন্য এলসি খুলেছে। আগামী ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টিসিবির মাধ্যমে এক লাখ টন পেঁয়াজ আমদানি হবে বলে ওই সূত্র জানিয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রাথমিক তথ্য মতে প্রতিবেশী দেশ থেকে আমদানিকৃত পেঁয়াজের প্রতি কেজির মূল্য ১৯ থেকে ২০ টাকার বেশি হওয়ার কথা নয়। কিন্তু জুলাই মাসে পেঁয়াজ আমদানির জন্য যে পরিমাণ আমদানি ঋণপত্র স্থাপন করা হয়েছিল ওই পেঁয়াজই বর্তমানে বাজারে রয়েছে। সুতরাং ২০ টাকার আমদানিকৃত পেঁয়াজের মূল্য অতিমূল্যায়িত করার সুযোগ নেই। কিন্তু ভারত থেকে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করার ঘোষণার পরপরই পেঁয়াজের দাম হু হু করে বাড়তে থাকে। একশ্রেণীর অতি মুনাফালোভী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে রাতারাতি পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দেয়, যা বাড়তে বাড়তে ১২০ টাকা পর্যন্ত উঠে যায়। বাজার তথ্য অনুযায়ী, ৩০ আগস্ট থেকে দেশে পেঁয়াজের দাম বাড়তে থাকে। ওই দিন প্রতি কেজি দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪০ টাকা। এর আগে জুলাইয়ের শুরুর দিকে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ছিল ৩০-৩৫ টাকা। ৩১ আগস্ট দাম বেড়ে দাঁড়ায় ৫২ টাকা। ৩ সেপ্টেম্বর আরো বেড়ে ৫৫ টাকা। ৫ সেপ্টেম্বর হয় ৭০ টাকা। ১৪ সেপ্টেম্বর ভারত রফতানি বন্ধ করলে দাম আরো বেড়ে ৮৫ টাকা ছাড়িয়ে যায়। পরদিন অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে ১২০ টাকা কেজি পর্যন্ত বিক্রি হয়। এরপর পেঁয়াজের দাম কমতে থাকে। কিন্তু এর পরেও ৭০ থেকে ৮০ টাকার নিচে পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বিভিন্ন ব্যাংক থেকে তথ্য নেয়া হচ্ছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, বিভিন্ন ব্যাংক থেকে তথ্য পেতে ইতোমধ্যে ব্যাংকগুলোকে চিঠি দেয়া হয়েছে। যেসব ব্যবসায়ী পেঁয়াজ আমদানির জন্য এলসি খুলেছিলেন, তারা কী পরিমাণ পেঁয়াজ দেশে এনেছেন এবং কী পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানির অপেক্ষায় রয়েছেন এসবের হালনাগাদ তথ্য নেয়া হচ্ছে। একই সাথে, ইতোমধ্যে যে পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে ওই সব পেঁয়াজের আমদানি দেশে আনা পর্যন্ত কেজিতে কত ব্যয় হয়েছে তার তথ্যও সংগ্রহ করা হচ্ছে। এ জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একাধিক বিভাগের একাধিক টিম কাজ করছে। এ বিষয়ে শিগগিরই একটি হালনাগাদ প্রতিবেদন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে উপস্থাপন করা হবে বলে ওই সূত্র জানিয়েছে।
এ দিকে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদারকি কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বর্তমানে যারা বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানির জন্য এলসি খুলছেন ওই সব দেশে পণ্যটির বাজার মূল্য কত তা সংগ্রহ করছেন। একই সাথে দেশে আনা পর্যন্ত কেজিতে কত ব্যয় হবে তার তথ্যও সংগ্রহ করা হচ্ছে। মূলত বাজার মনিটরিংয়ের অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে তথ্য সরবরাহের জন্য এ তদারকি করা হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা কাটাতে গেলো সপ্তাহে পেঁয়াজ আমদানির জন্য বিদ্যমান বৈদেশিক মুদ্রা নীতিমালায় শিথিলতা আনা হয়েছে। আগে যেখানে ১০০ টাকার পেঁয়াজ আমদানির জন্য ২০ টাকা থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত এলসি মার্জিন দেয়া হতো, এখন তা ব্যাংক গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ গ্রাহক কোনো অর্থ আগাম পরিশোধ না করেই ব্যাংকের সাথে সম্পর্কের ভিত্তিতে পেঁয়াজ আমদানির জন্য এলসি খুলতে পারবেন। পাশাপাশি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড থেকেও পেঁয়াজ আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহার করেছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement