১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

অর্থনৈতিক কূটনীতির প্রতি প্রধানমন্ত্রীর গুরুত্বারোপ

-

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য জোরদারে কূটনীতিকদের রাজনীতির পাশাপাশি অর্থনৈতিক কূটনীতি অনুসরণ করার নির্দেশ দিয়েছেন।
তিনি বলেন, আজকের বিশ্ব পরিবর্তিত হয়েছে। এখন রাজনীতির পাশাপাশি অর্থনৈতিক কূটনীতি সামনে উঠে এসেছে। আমাদের এমনভাবে কূটনীতি অবলম্বন করতে হবে, যাতে আমরা দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য জোরদার করতে পারি এবং বিশ্বের সবার সাথে একত্র হয়ে অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা অর্জন করতে পারি।’
একই সাথে তিনি বিশ্বে শান্তি বজায় রাখতে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রথম বাংলায় ভাষণদানের ৪৬তম বার্ষিকী উপলক্ষে স্মরণসভায় প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী গতকাল এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী একই সাথে ফরেন সার্ভিস একাডেমি ভবন এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রকাশিত ‘বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা এন্ড দ্য ইউনাইটেড ন্যাশনস : বাংলাদেশ এট দ্য ওয়ার্ল্ড স্টেজ’ এবং ‘বঙ্গবন্ধু, দ্য পিপলস হিরো’ এই দু’টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করেন।
প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে এই বৈঠকে যোগ দেন। অন্য দিকে এখানে সুগন্ধা চত্বরে ফরেন সার্ভিস একাডেমি থেকে কূটনৈতিক কোরের প্রধানসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরা যোগ দেন।
বিশ্বে সবাই একে অপরের ওপর নির্ভরশীল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সবার কাছ থেকে সহায়তা আশা করি। তেমনিভাবে কোনো দেশের যদি আমাদের সাহায্যের প্রয়োজন হয়, আমরা তা দিতে প্রস্তুত।’
কোভিড ১৯ মহামারী প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আশা করি, বিশ্ব করোনাভাইরাস মহামারী থেকে মুক্তি পাবে এবং অর্থনীতির চাকা আবার ঘুরতে শুরু করবে এবং এভাবে সবাই তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবে এবং এ জন্যই গোটা বিশ্বকে একত্রে কাজ করতে হবে।’
অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন মূল বক্তব্য পাঠ করেন। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো: শাহরিয়ার আলম, বাংলাদেশে জাতিসঙ্ঘের আবাসিক সমন্বয়ক মিয়া সেপ্পো এবং পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে ফরেন সার্ভিস একাডেমির রেক্টর রাষ্ট্রদূত সৈয়দ মাসুদ মাহমুদ খন্দকার নবনির্মিত ভবন সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন।
জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রথম বাংলায় ভাষণ এবং সুগন্ধায় বঙ্গবন্ধুর প্রথম কার্যালয়ের দু’টি অডিও-ভিজুয়াল প্রজেন্টেশন প্রদর্শিত হয়। এতে বাংলাদেশ সরকারের প্রথম দিকের চিত্র তুলে ধরা হয়।
বঙ্গবন্ধু হলেন প্রথম বাঙালি যিনি ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ইউএনজিএতে প্রথম বাংলায় ভাষণ দেন।
প্রধানমন্ত্রী বর্তমান বিশ্বকে একটি ‘গ্লোবাল ভিলেজ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন এবং বলেন, ‘উন্নয়নের জন্য সবার সহযোগিতা সমানভাবে দরকার’।
তিনি বলেন, ‘ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আমাদের বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন প্রতিনিয়ত মোকাবেলা করতে হয় তেমনি মাঝে মধ্যে মনুষ্য সৃষ্ট দুর্যোগও আসে।’
‘১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট যে ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছিল, তার দোসর যারা, তারা এ দেশে কোনো স্থিতিশীল সরকার থাকুক তা কখনোই চায়নি’ যোগ করেন তিনি।
তিনি আরো বলেন, ‘এ অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির প্রচেষ্টা যখন চালানো হয় তখন আমরা দেখেছি মানুষকে খুন করা বা পুড়িয়ে হত্যার মতো ঘটনা।’
আওয়ামী লীগ সরকার সব ধরনের ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে একাধিকবার দেশ পরিচালনায় দায়িত্ব পাওয়ার এবং দেশকে বর্তমান পর্যায়ে তুলে আনতে পারার কারণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমরা এটি পেরেছি একটাই কারণে যেহেতু জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস আমরা অর্জন করতে পেরেছি। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ওপর এ দেশের মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে বলেই বারবার আমাদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করায় আমরা সরকার গঠন করে তাদের সেবা করতে পেরেছি। আজকে উন্নয়নগুলোও যেমন দৃশ্যমান হচ্ছে এবং এর সুফলও ভোগ করছে দেশের জনগণ।’
প্রধানমন্ত্রী এ সময় করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে সম্ভাব্য খাদ্য সঙ্কটের বিষয়ে তার সরকারের আগাম সতর্কতার বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে বলেন, ‘করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বে হয়তো দুর্ভিক্ষ দেখা দিতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশে যেন কোনোমতে সেই দুর্ভিক্ষের ছোঁয়া না লাগে। তাই আমরা যতটুকু পারি খাদ্য উৎপাদন করা, খাদ্য বিতরণ করা, দরিদ্র মানুষকে বিনা পয়সায় খাদ্য দেয়া এবং খাদ্য নিশ্চয়তা দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’
দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ৩১ দফা নির্দেশনার মাধ্যমে সীমিত আকারে অব্যাহত রাখার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোভিডের কারণে আমাদের জিডিপির যেটা টার্গেট ছিল সেটি আমাদের পক্ষে অর্জন সম্ভব হয়নি। এবার ৫ দশমিক ২৪ শতাংশের মতো জিডিপি অর্জন করতে পেরেছি। কিন্তু আমরা আশা করি আগামীতে আমাদের প্রবৃদ্ধি আমরা আরো বেশি অর্জন করতে সক্ষম হব এবং সে দিকে লক্ষ রেখেই কাজ করে যাচ্ছি।’
তিনি বলেন, ‘প্রায় ৪০ শতাংশ থেকে দারিদ্র্যের হার কমিয়ে ২০ দশমিক ৫ শতাংশে এনেছি। আমরা এটা আরো কমাতে চাই। বাংলাদেশের প্রতিটি মানুষকে একটা সুন্দর জীবন আমরা উপহার দিতে চাই।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, প্রতিটি মানুষকে, যারা গৃহহীন, তাদের গৃহ নির্মাণ করে দেবো। যারা ভূমিহীন, তাদের ভূমির ব্যবস্থা করে দেবো। মুজিববর্ষে কেউ গৃহহীন থাকবে না।
তিনি বলেন, আমরা খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পেরেছি। পুষ্টির নিশ্চয়তার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছি। করোনাভাইরাস মোকাবেলা করার জন্য আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়েছি। পাশাপাশি বিশেষ প্রণোদনা দিয়েছি। সব মানুষ যাতে এই প্রণোদনার সহযোগিতা পায়, সে ব্যবস্থাও আমরা করে দিয়েছি।
তিনি বলেন, ‘আমি ১৬ বার জাতিসঙ্ঘে গিয়ে ভাষণ দিয়েছি কিন্তু ১৭তম ভাষণ দেয়ার সময় যেতে পারছি না, যেটি খুব দুঃখের। কারণ সেখানে বিশ্বের সব দেশের নেতৃবৃন্দের সাথে সাক্ষাৎ এবং মতবিনিময়ের সুযোগ হয়। একে অপরের অভিজ্ঞতা জানা এবং বিনিময়ের যে সুযোগ সেটি এবার করোনাভাইরাসের কারণে হলো না।’
প্রধানমন্ত্রী আজ জাতিসঙ্ঘে ভাষণ দেবেন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ নিউ ইয়র্কে জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের (ইউএনজিএ)৭৫তম অধিবেশনে ভার্চুয়াল ভাষণ দেবেন।
প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম গতকাল বাসসকে জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় এবং স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় (নিউ ইয়র্ক সময়) জাতিসঙ্ঘ সদর দফতরে সাধারণ পরিষদে তার পূর্বনির্ধারিত রেকর্ডকৃত ভাষণ দেবেন।
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে প্রতি বছরের মতো এ বছরও বাংলায় এ ভাষণ দেবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন ২১ সেপ্টেম্বর এক ভার্চুয়াল প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ভাষণে কোভিড-১৯ সংক্রমণ, রোহিঙ্গা সঙ্কট এবং জলবায়ুসহ একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরবেন।
তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে কোভিড ১৯ সংক্রমণ পরিস্থিতি, ভ্যাকসিনের সমবণ্টন এবং প্রবাসী শ্রমিক ও রেমিট্যান্সের ওপর এর প্রভাব তুলে ধরবেন। এ ছাড়া তিনি জলবায়ু ভালনারেবল ফোরামের সভাপতি হিসেবে জলবায়ু ইস্যুটিও তুলে ধরবেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী ভাষণে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে পাশে থাকতে এবং এই সমস্যা সমাধানে তার দেয়া চার দফা প্রস্তাবের ভিত্তিতে সঙ্কট নিরসনে সবার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি তিনি আহ্বান জানাবেন। প্রধানমন্ত্রী এর আগে জাতিসঙ্ঘ সাধারণ পরিষদের ৭৪তম অধিবেশনে এই চার দফা প্রস্তাব পেশ করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরো জানান, পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী কোভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাংলাদেশের সফলতা, এসডিজি বাস্তবায়ন, নারীর ক্ষমতায়ন ও অধিকার প্রতিষ্ঠা, দারিদ্র্য বিমোচন, সন্ত্রাস দমন, মাদক চোরাচালান বন্ধ, অর্থনৈতিক অগ্রগতি, টেকসই গণতন্ত্র, সুশাসন এবং বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের ভূমিকা তার ভাষণে তুলে ধরবেন।


আরো সংবাদ



premium cement