২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

জলবায়ু পরিবর্তন ও করোনা মোকাবেলায় কর্মপরিকল্পনার আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর

জাতীয় সংসদ ভবনের উন্নয়ন সম্পর্কিত উপস্থাপনা দেখছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা : বাসস -

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জলবায়ু পরিবর্তন ও কোভিড-১৯ মহামারী থেকে উদ্ভূত সঙ্কট কার্যকরভাবে মোকাবেলায় সম্মিলিত বৈশ্বিক কর্মপরিকল্পনা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও কোভিড-১৯ বর্তমানে বৈশ্বিক হুমকি। এই উভয় ঝুঁকি প্রশমনে আমরা আরো অনেক কিছু করতে পারতাম, পারা উচিত ছিল। কিন্তু এখন যেহেতু এ দুটোই আমাদের ওপর এসে পড়েছে, সেহেতু তা মোকাবেলার সর্বোত্তম উপায় হচ্ছে সম্মিলিত আন্তর্জাতিক পদক্ষেপ।
ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম (সিভিএফ) সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাজ্যের নেতৃস্থানীয় দৈনিক গার্ডিয়ান পত্রিকায় গতকাল প্রকাশিত এক নিবন্ধে এ কথা বলেন। নিবন্ধে তিনি বলেন, গত মাসে আমার দেশের এক-তৃতীয়াংশ এলাকা পানিতে তলিয়ে যায়। গত এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভারী বৃষ্টিপাত শুরু হয় এবং এখনো তা অব্যাহত রয়েছে। প্রায় দেড় কোটি বাংলাদেশী এতে বাস্তুচ্যুত হয়েছে। লাখ লাখ হেক্টর জমির ধান বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। ফলে, এ বছর লাখ লাখ মানুষের জন্য খাদ্যসহায়তার প্রয়োজন হবে।
কোভিডের কারণে অর্থনৈতিক লকডাউন আমাদের বস্ত্র শিল্প ও রফতানি খাতকে আঘাত করেছে। বিপুলসংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশী দেশে ফিরতে বাধ্য হয়েছে, যাদের বেশির ভাগই বর্তমানে বেকার।
বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত অনেক দেশের মতো বাংলাদেশও লাখ লাখ মানুষের জীবন, স্বাস্থ্য ও অর্থনীতিকে নিরাপদ করার চেষ্টা করছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও মহামারী সম্মিলিতভাবে মোকাবেলার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে তিনি বলেন, বিশ্বের সর্ববৃহৎ কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলো নিঃসরণ না কমালে অন্য দেশগুলোর কার্বন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ প্রচেষ্টা অর্থহীন হয়ে পড়বে।
বৈশ্বিক মোট নিঃসরণের ৮০ শতাংশের জন্য জি-২০ দেশগুলো দায়ী উল্লেখ করে তিনি বলেন, প্রত্যেকের গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছাড়া বিশ্ব সাফল্যজনকভাবে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি সামাল দিতে পারবে না। তিনি বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণায়ন নিয়ন্ত্রণ এবং এর বিরূপ প্রভাব সীমিত করতে ২০১৫ সালের প্যারিস চুক্তি এখনো আমাদের জন্য সেরা সুযোগ। এ পর্যন্ত ১৮৯টি দেশ এই চুক্তিটি অনুমোদন করেছে। এতে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি বন্ধে নিঃসরণ কমাতে সম্মিলিত পদক্ষেপের অঙ্গীকার রয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গরিব দেশগুলোর তুলনায় ধনীদেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় পদক্ষেপের লক্ষ্য অর্জনে তেমন কিছু করেনি উল্লেখ করে বলেন, জলবায়ু অভিযোজনে আন্তর্জাতিক তহবিল সংস্থান এখনো প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। শেখ হাসিনা বৈশি^ক উষ্ণায়নের মারাত্মক বিরূপ প্রভাব সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়ে অধিকতর শক্তিশালী ও দক্ষ অর্থনীতি গড়ে তুলতে স্বল্প কার্বন সমাধান ও জলবায়ু ঝুঁকি হ্রাসকে সর্বোত্তম উপায় বলে উল্লেখ করেন। প্রধানমন্ত্রী জলবায়ু সঙ্কট এবং কোভিড-১৯ ও এর অর্থনৈতিক প্রভাব আন্তর্জাতিক নেতৃত্ব ও সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তা প্রকট করে তুলেছে উল্লেখ করে নিবন্ধে বলেন, কোনো দেশই এখন বাকি বিশ^ থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকতে পারে না।
জাতীয় সংসদ ভবনের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের প্রেজেন্টেশন প্রত্যক্ষ করলেন প্রধানমন্ত্রী : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল জাতীয় সংসদ ভবনের উন্নয়নকার্যক্রম সম্পর্কিত একটি উপস্থাপনা প্রত্যক্ষ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব ইহসানুল করিম বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে জাতীয় সংসদ ভবনের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সম্পর্কিত পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনাটি প্রত্যক্ষ করেন।
জাতীয় সংসদ ভবন সূত্র জানায়, বর্তমানে সংসদ সচিবালয়ে ১৩২১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী কর্মরত রয়েছেন। কিন্তু বর্তমান ভবন কাঠামোতে তারা স্থান সঙ্কুলানের সমস্যায় রয়েছেন। প্রেসসচিব বলেন, এমতাবস্থায় জাতীয় সংসদ ভবনের উত্তর প্লাজার ৫২ হাজার ৯৭ স্কয়ার ফিট জায়গাকে কাজে লাগানোর জন্য এই পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনা উপস্থাপন করা হয়।
পাশাপাশি সংসদ ভবনের স্থপতি লুই কানের মূল নকশায় থাকা অন্যান্য অনির্মিত স্থাপনাগুলো সম্পর্কেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করেন।
ইহসানুল করিম বলেন, সংসদের মূল ভবন, এমপি হোস্টেল এবং পাঁচটি ন্যাম ভবনের সংস্কারের বিষয়েও প্রেজেন্টেশন উপস্থাপন করা হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী সংসদ ভবনের উন্নয়নকার্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিভিন্ন প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করেন।
জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, চিফ হুইপ নূর-ই-আলম লিটন চৌধুরী, আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ এমপি, স্থাপত্যকলা বিভাগের প্রধান স্থপতি এ এস এম আমিনুর রহমান এ সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।
ফেনী জেনারেল হাসপাতালে হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা দিলেন প্রধানমন্ত্রী
ফেনী অফিস জানায়, সঙ্কটাপন্ন করোনা রোগীর চিকিৎসায় ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট ফেনী জেনারেল হাসপাতালকে প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা তহবিল হতে দু’টি হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা প্রদান করা হয়েছে। গতকাল দুপুরে ফেনী জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের হাতে তা তুলে দেন জেলা প্রশাসক মো: ওয়াহিদুজ্জামান। এ সময় সিভিল সার্জন ডা: মীর মোবারক হোসাইন দিগন্ত, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোছা: সুমনী আক্তার, ফেনী জেনারেল হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়ক ডা: আবুল খায়ের মিয়াজী, জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর সজল কুমার দাশ, সহকারী কমিশনার এন এম আবদুল্লাহ আল মামুন, রজত বিশ্বাস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জেলা প্রশাসক মো: ওয়াহিদুজ্জামান জানান, বৈশ্বিক মহামারীতে ফেনীর মানুষের পাশে থাকতে এবং ফেনীবাসীর স্বাস্থ্যসেবায় প্রধানমন্ত্রী এ উপহার প্রদান করেছেন।
সিভিল সার্জন ডা: মীর মোবারক হোসাইন দিগন্ত জানান, ফেনী একমাত্র জেলা যেখানে প্রত্যেক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সিস্টেম চালু রয়েছে। ফলে করোনা রোগীর শ্বাসকষ্টে উন্নত চিকিৎসা উপজেলাতেই সম্ভব হচ্ছে।
ফেনী জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা: আবুল খায়ের মিয়াজী জানান, হাসপাতালে মোট পাঁচটি হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা সংযোজিত হচ্ছে। করোনায় সঙ্কটাপন্ন রোগীর চিকিৎসায় অপরিহার্য প্রযুক্তিটি যুক্ত হলেও এগুলো পূর্ণ ব্যবহারে লিকুইড অক্সিজেন ট্যাংক বিকল্পহীন। প্রয়োজনীয় অক্সিজেন না হলে রোগী সেবা প্রাপ্তি হতে বঞ্চিত হবেন। এর আগে ফেনী ইউনিভার্সিটি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম পরিচালিত সালেহ উদ্দিন-হোসনে আরা চৌধুরী ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে দু’টি হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা ফেনী জেনারেল হাসপাতালকে প্রদান করা হয়েছে। এ ছাড়া বেসরকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ইস্পাহানী গ্রুপ একটি হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা উপহার প্রদান করেছে।


আরো সংবাদ



premium cement