২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
স্কুলছাত্রী হত্যা মামলা

মৃত্যুদণ্ড থেকে আপিল বিভাগে খালাস

-

আট বছর বয়সী এক স্কুলছাত্রী হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডাদেশ থেকে খালাস পেয়েছেন কুমিল্লা জেলার লাকসাম পৌরসভার বাসিন্দা হুমায়ুন কবির। গতকাল প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ শুনানি শেষে হুমায়ুন কবিরের জেল আপিল মঞ্জুর করে রায় দেন ।
আপিল বিভাগে হুমায়ুন কবির খালাস পাওয়ায় আর কোনো মামলা না থাকলে তার এখন মুক্তি পেতে বাধা নেই। তারপক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী এ বি এম বায়েজিদ বলছেন, আদালতে জেল আপিলের পক্ষে শুনানি করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী এ বি এম বায়েজিদ। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ।
মৃত্যুদণ্ড থেকে আপিল বিভাগে খালাস পাওয়ার বিষয়ে আইনজীবী এ বি এম বায়েজিদ বলেন, এ মামলায় ক্রেডিবল সাক্ষী ছিল না। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, শিশুটির লাশ উদ্ধারের সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সেখানে ছিলেন। অথচ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিচারের সময় জেরা করা হয়নি। এ ছাড়া হুমায়ুন কবির তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে বলেছেন, শিশুটি তার খালাতো বোনের মেয়ে। শিশুটির বাবা তার কাছে ১৬০০ টাকা পেতেন। কিন্তু শিশুটির বাবা সাক্ষ্যে বলেছেন তিনি হুমায়ুনকে চেনেন না। আবার শিশুটির মাকেও এ মামলায় সাক্ষী করা হয়নি। শিশুটির মাকে সাক্ষী করা হলে জানা যেত হুমায়ুন কবির আদৌ পরিচিত কেউ কি না। ফলে এখানে সন্দেহ রয়ে গেছে।
আইনজীবীরা জানান, ২০০৪ সালের ৩০ জুন লাকসামের কনকশ্রী গ্রামের সাকেরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণীর ছাত্রী সকাল সোয়া ১০টার দিকে স্কুলে যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হয়। বিকেলে স্কুল ছুটি হলে মেয়েটি বাড়ি না ফেরায় তার অভিভাবকরা খোঁজাখুঁজি করেন। পরে তারা স্কুলে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন শিশুটি স্কুলে যায়নি। এরপর আত্মীয়-স্বজনদের বাড়ি ও বিভিন্ন এলাকায় খুঁজে না পেয়ে ওই দিনই থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন শিশুটির চাচা মো: জসীম উদ্দিন।
ওই স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণীর প্রত্যক্ষদর্শী দুই শিক্ষার্থী স্কুলে যাওয়ার পথে মাথাব্যথায় শিশুটিকে সাকেরা গ্রামের মাস্টার বাড়ির পাশে কালভার্টের উপর শুয়ে পড়তে দেখেন। এ সময় আরো পাঁচ-ছয়জন লোক ছিল সেখানে। ওই সময় হুমায়ুন কবির এসে সবাইকে তাড়িয়ে দেন। প্রত্যক্ষদর্শী দুই শিক্ষার্থী যাওয়ার সময় শিশুটিকে বাড়ি যেতে বললে হুমায়ুন কবির শিশুটির মামা পরিচয় দিয়ে বলেন, তিনি শিশুটিকে বাড়ি পৌঁছে দেবেন; কিন্তু হুমায়ুন কবির বাড়ি পৌঁছে দেননি। পরে ওই বছরের ৪ জুলাই ট্রাকচালক হুমায়ুন কবিরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই দিনই কালভার্টের পাশে জঙ্গলের ভেতর থেকে শিশুটির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় করা মামলায় ২০০৬ সালের ৫ এপ্রিল বিচারিক আদালত হুমায়ুন কবিরকে মৃত্যুদণ্ড দেন। নিয়ম অনুসারে ডেথ রেফারেন্স হাইকোর্টে আসে এবং হুমায়ুন জেল আপিল করেন। ২০১২ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখেন। এ রায়ের বিরুদ্ধে জেল আপিল করেন হুমায়ুন। এই আপিলের শুনানি শেষে মঙ্গলবার তার আপিল মঞ্জুর করেন প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ।

 


আরো সংবাদ



premium cement