১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পেঁয়াজ তেলের পর এবার চালে মূল্য বৃদ্ধির খড়গ

-

চালের দামও বেড়েছে। বস্তায় এক শ’ থেকে দুই শ’ টাকা বেশিতে মানুষ এখন চাল কিনছেন। হঠাৎ চালের এই মূল্য বৃদ্ধিতে বেকায়দায় পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষ। দেশে এক দিকে চলছে পেঁয়াজের নিয়ে হুলস্থুল, তার সাথে এখন চালের দাম বৃদ্ধি। ভোক্তারা বলছেন, কিভাবে তারা চলবেন তাই ভেবে পাচ্ছেন না। এমনিতেই করোনার কারণে মানুষের আয় কমেছে। এমনও মানুষ আছেন যাদের আয়ের পুরো পথই বন্ধ হয়ে গেছে। ক্রেতারা বলেছেন, পাইকারি বাজারে ২ টাকা বাড়লেও খুচরা বাজারে বেড়েছে অন্তত ৩-৪ টাকা।
গতকাল রাজধানীর বাদামতলী চালের আড়তে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় সব ধরনের চালের দামই বেড়েছে। বস্তায় এক শ’ থেকে দুই শ’ টাকা বেড়েছে বলে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। জানা গেছে, ইরি ২৮ চাল কেজিতে ২ টাকা এবং বস্তায় এক শ’ থেকে দেড় শ’ টাকা, মিনিকেট বস্তায় দুই শ’ টাকা বেড়েছে। আগে মিনিকেট ছিল দুই হাজার ৫০০ টাকা। বর্তমানে দুই হাজার ৭০০ টাকা। পাইজাম কেজিতে বস্তায় দেড় শ’ টাকা। নাজিরশাইল ৫৬ টাকা কেজি বর্তমানে, বস্তা দুই হাজার ৮০০ টাকা। আগে বস্তা ছিল দুই হাজার ৬০০ টাকা। কাটারি বর্তমানে কেজি ৮০ টাকা এবং বস্তা চার হাজার টাকা। আগে ছিল তিন হাজার ৮০০ টাকা। চিনিগুঁড়া ৮৫ টাকা কেজি এবং বস্তা চার হাজার ২৫০ টাকা, বাসমতি ৬০ টাকা কেজি এবং বস্তায় তিন হাজার ৫০ টাকা।
বাবুবাজার কদমতলী চাল আড়তদার সমিতির সেক্রেটারি হাজী মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন নয়া দিগন্তকে বলেন, গত দুই সপ্তাহে কেজিতে ২ টাকা বেড়েছে চালের দাম। বস্তায় দেড় শ’ থেকে দুই শ’ টাকা। এটি নাগালের বাইরে নয়। অথচ পেঁয়াজ কেজিতে ৪০ থেকে ৫০ টাকার চেয়েও বেশি বেড়েছে। চালে কোনো সিন্ডিকেট নেই বলে জানান তিনি। বাদামতলীর সরকার, বিসমিল্লাহ, অন্তু ও সেন্টুসহ একাধিক চালের আড়তদার একই কথা জানান। তারা বলেছেন, মোকামে চালের দাম বেড়েছে; যে কারণে তাদেরকেও দাম বাড়াতে হয়েছে। তারা বলতে চাচ্ছেন প্রতি বছর এ সময়টা হলে চালের দাম দু-এক টাকা কেজিতে বাড়ে।
এ দিকে ভোক্তারা বলেছেন, খুচরা মার্কেটে চালের দাম আরো বাড়ানো হয়েছে। খুচরা মার্কেটে কেজিতে ৩-৪ টাকা বেড়েছে এমনও অভিযোগ করেন অনেকে। রাজধানীর গোপীবাগের তোফাজ্জল জানান, গত সপ্তাহে যে চাল কিনেছেন ৪২ টাকায়, এ সপ্তাহে সেই চাল কিনতে হয়েছে ৪৫ টাকা কেজি। ক্রেতারা বলেছেন, এমনিতেই পেঁয়াজের দাম নিয়ে তারা বিপাকে আছেন। এরপর চালের দাম এভাবে বেড়ে যাওয়ায় তারা আরো বিপাকে পড়লেন। তোফাজ্জল বলেন, প্রথম বাড়ল পেঁয়াজের দাম। এরপর তেলের। এখন বাড়ানো হলো চালের দামও। মানুষ বাঁচবে কেমনে।
রাজধানীর সেগুনবাগিচা এলাকার মিন্টু বলেন, মানুষের এমনিতেই ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। করোনার কারণে অনেকে চাকরি হারিয়েছেন, অনেকে অর্ধেক বেতন পাচ্ছেন, আবার অনেকের চাকরি আছে কিন্তু বেতন নেই। পরিবার পরিজন অনেকে গ্রামের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছেন। ঢাকায় বাসাবাড়ি ছেড়ে দিয়ে কোনোমতে মেসে ঠাঁই নিয়েছেন। এরপর একটির পর একটি নিত্যপণ্যের দাম এভাবে বাড়লে কিভাবে চলবেন। তাদের সামনে তো আর পথ থাকছে না!
সাতক্ষীরার ভোমরা বন্দর দিয়ে এলো আরো ৯২ টন পেঁয়াজ
সাতক্ষীরা সংবাদদাতা জানান, সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে আরো ৯২ মেট্রিক টন ভারতীয় পেঁয়াজ এসেছে বাংলাদেশে। চারটি ট্রাকে ভর্তি এসব পেঁয়াজ সোমবার বিকেলে ভোমরা বন্দরে প্রবেশ করে। এ নিয়ে তিন দিনে এই বন্দর দিয়ে মোট ৯২১ মেট্রিক টন ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে। এর আগে পাঁচ দিন বন্ধ থাকার পর শনিবার ভোমরা বন্দর দিয়ে ৩১টি ট্রাকে করে ৭২১ মেট্রিক টন ও রোববার সন্ধ্যায় পাঁচটি ট্রাকে ১০৮ মেট্রিক টন পেঁয়াজ আসে। তবে এখনো পেঁয়াজভর্তি ২৪৫টি ট্রাক ভোমরা বন্দরে প্রবেশের অপেক্ষায় ওপারে ভারতের ঘোজাডাঙ্গা এলাকায় দাঁড়িয়ে আছে বলে জানা গেছে।
ভোমরা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান নাসিম জানান, গত ১৪ সেপ্টেম্বর সোমবার পেঁয়াজের যেসব কাগজপত্র ছাড় করা ছিল সেই পেঁয়াজগুলো শনিবার, রোববার ও সোমবার প্রবেশ করেছে। গত তিন দিনে ৪০ ট্রাক পেঁয়াজ বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। আরো ছয় ট্রাক পেঁয়াজ ছাড় করানো আছে। পর্যায়ক্রমে বাকি ছয় ট্রাক পেঁয়াজ প্রবেশ করার কথা রয়েছে।
নাসিম আরো বলেন, ভারতীয় সীমান্তে অপেক্ষমাণ বাকি পেঁয়াজ রফতানির জন্য প্রস্তুতি থাকলেও তা প্রবেশের অনুমতি দিচ্ছে না দেশটির সরকার। প্রায় এক সপ্তাহ ধরে পেঁয়াজবোঝাই ট্রাকগুলো ভারত সীমান্তে আটকে থাকায় সেগুলোর বেশির ভাগই নষ্ট হয়ে গেছে। এর ফলে ব্যবসায়ীরা আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন।
ভারতের ঘোজাডাঙ্গা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের আমদানি করা ২৪৫টি পেঁয়াজের গাড়ি এখনো ঘোজাডাঙ্গা এলাকায় দাঁড়িয়ে রয়েছে। ভোমরা বন্দরে প্রবেশের অনুমতি পেলে এসব ট্রাক ঘোজাডাঙ্গা ছেড়ে যাবে। তবে কত দিন নাগাদ অনুমতি মিলতে পারে সে বিষয়ে তিনি কিছু বলতে পারেননি।
ভোমরা স্থলবন্দরের রাজস্ব কর্মকর্তা মহসিন হোসেন জানান, সোমবার বেলা ১টার দিকে এক গাড়ি ও বিকেল ৫টার পরে আরো তিন গাড়ি পেঁয়াজ ভোমরা বন্দরে প্রবেশ করে। এ নিয়ে গত তিন দিনে ৪০টি ট্রাকে মোট ৯২১ মেট্রিক টন পেঁয়াজ ভারতের ঘোজাডাঙ্গা দিয়ে ভোমরা স্থলবন্দরে প্রবেশ করেছে।
ভারত পচা পেঁয়াজের ট্রাকও আটকে রেখেছে : বগুড়ায় দাম বৃদ্ধি
আবুল কালাম আজাদ বগুড়া অফিস জানায়, ভারত পচা পেঁয়াজের ট্রাকও সীমান্তে আটকে রেখেছে। হঠাৎ রফতানি বন্ধের পর ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ ট্রাকে লোড করার ১১ দিন পরেও বাংলাদেশে আসতে পারেনি। ফলে ট্রাকেই সেই পেঁয়াজ পচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। গত সপ্তাহে পেঁয়াজবাহী ট্রাক ছেড়ে দিতে ভারত সরকার সম্মত হয়ে গত শনিবার কিছু ট্রাক ছেড়ে দিয়ে আবার বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে বগুড়ায় আবারো বেড়েছে পেঁয়াজের দাম।
বগুড়া শহরের বড় পাইকারি বাজার রাজাবাজারের পেঁয়াজ ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, পেঁয়াজবোঝাই ট্রাক ছেড়ে দেয়ার ব্যাপারে নতুন কোনো সিদ্ধান্ত তারা জানেন না। তবে এ নিয়ে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা সে দেশের সরকারের সাথে দেনদরবার করছেন বলে জানতে পেরেছেন। তারা আরো জানান, ট্রাকের পেঁয়াজ ইতোমধ্যে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ পচে নষ্ট হয়ে গেছে। আগামী দুই-এক দিন পর এ পেঁয়াজ খাওয়ার অযোগ্য হয়ে পড়বে। তখন এ পেঁয়াজ আসা-না-আসা সমান কথা ।
ভারতের পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের পরদিন বগুড়ার বাজারে দেশী ও ভারতীয় পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৪০-৫০ টাকা বেড়ে যায়। এরপর ট্রাক লোড করা পেঁয়াজ ছাড়তে চাইলে দাম কিছুটা কমে । কিন্তু রোববার থেকে আবার বন্ধ করলে দাম গতকাল আবার কেজিতে ১০-২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সরকার টিসিবির মাধ্যমে সামান্য পরিমাণে ৩০ টাকা কেজিতে বিক্রি করলেও তা বাজার নিয়ন্ত্রণে কোনো ভূমিকা রাখতে পারছে না।
বগুড়া রাজাবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও পেঁয়াজ আমদানিকারক পরিমল প্রসাদ রাজ জানান, আমার ২৫-৩০ ট্রাকভর্তি পেঁয়াজ সীমান্তে আটকে আছে। শুনেছি প্রায় ৫০ ভাগ পেঁয়াজ ইতোমধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে। এখনো ট্রাক না ছাড়লে ওই পেঁয়াজ দেশে এলেও বিক্রি করা যাবে না। এতে বিপুল ক্ষতির মুখে পড়েছি। তিনি আরো জানান, এই ক্ষতির ভাগ ভারতীয় ব্যবসায়ীরা কতটুকু নেবে তা এখনই বলা যাচ্ছে না।
হাকিমপুর (দিনাজপুর) সংবাদদাতা জানান, বাংলা হিলি আমদানি-রফতানি গ্রুপের সিনিয়র সহসভাপতি ও পেঁয়াজ আমদানিকারক শহিদুল ইসলাম জানিয়েছেন, গত শনিবার যে পেঁয়াজ ভারত থেকে এসেছে তার ৭০ ভাগই নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি এলসি করা সব পেঁয়াজ আমদানিতে সহায়তা চান সরকারের।
উল্লেখ্য, গত সোমবার হঠাৎ করে ভারত সরকার পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে পেঁয়াজবোঝাই বাংলাদেশমুখী সব ট্রাক রাস্তায় আটকে দেয়। এরপর ভারত সরকারের সাথে দেনদরবার করার পর ট্রাক ছাড়ার সিদ্ধান্ত হয়। সে সিদ্ধান্ত মোতাবেক শনিবার হিলি স্থলবন্দর পথে ১১টি ট্রাকে ২৪৬ মেট্রিক টন পেঁয়াজ দেশে আসার পর আবারো পেঁয়াজবোঝাই ট্রাক বন্ধ করেছে ভারত। এ ছাড়া এলসি করা সব পেঁয়াজ দেয়ার আইনি বাধ্যবাধকতা থাকলেও ভারত কোনো কিছুই মানছে না।

 


আরো সংবাদ



premium cement
রাজশাহীতে ট্রাকচাপায় ৩ মোটরসাইকেল আরোহী নিহত পাবনায় দুই গ্রুপের সংঘর্ষে হতাহত ২২ বিল দখলের চেষ্টা, জেলা ছাত্রলীগ নেতাকে গণপিটুনি ‘শাহাদাতের তামান্নায় উজ্জীবিত হয়ে কাজ করলে বিজয় অনিবার্য’ কারাগারে নারী হাজতিকে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন, প্রধান কারারক্ষীসহ ৩ জনের বদলি প্যারিসে ইরানি কনস্যুলেটে ঢুকে আত্মঘাতী হামলার হুমকিদাতা গ্রেফতার প্রেম যমুনার ঘাটে বেড়াতে যেয়ে গণধর্ষণের শিকার, গ্রেফতার ৫ ‘ব্যাংকিং খাতের লুটপাটের সাথে সরকারের এমপি-মন্ত্রী-সুবিধাবাদী আমলারা জড়িত’ ইরানের সাথে ‘উঁচু দরের জুয়া খেলছে’ ইসরাইল! অসুস্থ নেতাকর্মীদের পাশে সালাম-মজনু গলাচিপায় বিদ্যুৎস্পৃষ্টে শিশুর মৃত্যু

সকল