২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ধর্ষণের অভিযোগে মামলা ঢাবি ছাত্রীর

আসামি ছয়জন : ভিপি নূর গ্রেফতার পরে মুক্তি
-

বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণের অভিযোগ কোটা সংস্কার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গড়ে ওঠা বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুনকে প্রধান আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের এক ছাত্রী। গতকাল সোমবার রাজধানীর লালবাগ থানায় এ মামলা দায়ের করা হয় বলে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম আশরাফ উদ্দিন নিশ্চত করেন। এদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে সমাবেশ করে মিছিল নিয়ে যাওয়ার সময় মৎস্য ভবন এলাকায় পুলিশের সাথে গোলযোগের অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়েছে ডাকসুর ভিপি নুরুল হক নুরকে। এ সময় তার সাত সহযোগীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে নূরকে পরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
ধর্ষণের অভিযোগে এক মামলা হওয়ার পর তার প্রতিবাদে গতকাল সোমবার রাতে বিক্ষোভ করেছিলেন নুরের সংগঠন সাধারণ শিক্ষার্থী অধিকার পরিষদ। তখন পুলিশের সাথে তর্কাতর্কির পর নুরসহ সাতজনকে গ্রেফতার করা হয়।
ডিএমপির উপকমিশনার ওয়ালিদ হোসেন এ ব্যাপারে বলেন, পুলিশের কাজে বাধা দেয়া এবং পুলিশকে মারধর করার অভিযোগে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
ধর্ষণ মামলার নথি থেকে জানা যায়, ছয় আসামির মধ্যে বাকি পাঁচজন হলেনÑ ডাকসু ভিপি নুরুল হক নূর, নাজমুল হাসান সোহাগ, মো: সাইফুল ইসলাম, নাজমুল হুদা ও আবদুল্লাহ-হিল-বাকি। এতে নুরুল হক নূরকে তিন নম্বর আসামি করা হয়েছে।
এদের মধ্যে হাসান আল মামুনের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ এবং বাকিদের বিরুদ্ধে সহায়তা ও হুমকি প্রদানের অভিযোগ আনা হয়। মামলাকারী ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে পড়ুয়া এবং বিশ^বিদ্যালয়ের বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের ছাত্রী।
মামলার অভিযোগে ওই ছাত্রী উল্লেখ করেছেন, ‘হাসান আল মামুন আমার ডিপার্টমেন্টের বড় ভাই। বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের সুবাদে তার সাথে আমার পরিচয় হয় ২০১৮ সালের ২৯ জুলাই। নিজ বিভাগের সিনিয়র হওয়ায় ব্যক্তিগত সম্পর্কের একপর্যায়ে তার সাথে আমার প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরই ধারাবাহিকতায় আমার সাথে তার বিভিন্ন সময়ে ম্যাসেঞ্জার, ইমো ও হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে কথোপকথন হয়। সেখানে আমাকে শারীরিক সম্পর্কের ইঙ্গিত দেয়া হয়। গত ৩ জানুয়ারি দুপুরে হাসান আল মামুন আমাকে তার রাজধানীর নবাবগঞ্জ, মসজিদ রোড, ১০৪ নম্বর বাসায় যেতে বলে। সেখানে আমাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করে সে। ঘটনার পর ৪ জানুয়ারি আমি অসুস্থ হয়ে পড়ি। ১২ জানুয়ারি আমাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় মামুনের বন্ধু সোহাগের মাধ্যমে। হাসপাতালে ভর্তি থাকা অবস্থায় আমি ক্যাম্পাস রিপোর্টারদের সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে মামুন ও সোহাগ তা করতে দেয়নি। এর আগে মামুনকে বিয়ের জন্য চাপ দিলে সে রাজি হয়, কিন্তু আমি অসুস্থ হওয়ার পর সে নানা টালবাহানা শুরু করে।
অভিযোগে ওই ছাত্রী বলেন, ‘উপায়ন্তর না দেখে ২০ জুন বিষয়টি ভিপি নূরকে মৌখিকভাবে জানাই। তিনি বলেন, মামুন আমার পরিষদের, আমার সহযোদ্ধা। তার সাথে বসে একটা সুব্যবস্থা করে দেবো। এরপর ২৪ জুন মীমাংসার আশ্বাস দিয়ে তিনি আমার সাথে নীলক্ষেতে দেখা করতে আসেন। কিন্তু মীমাংসার বিষয়টি এড়িয়ে আমাকে এ বিষয়ে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেন। আমি যদি বাড়াবাড়ি করি তাহলে তার ভক্তদের দিয়ে ফেসবুকে আমার নামে উল্টাপাল্টা পোস্ট করাবে এবং আমাকে পতিতা বলে প্রচার করবে বলে হুমকি দেন। তাদের ছাত্র অধিকার পরিষদের ১.১ মিলিয়ন সদস্যের গ্রুপে এ প্রচারণার হুমকি দেয়া হয়। নূর আরো জানান, তার একটি লাইভে আমার সব সম্মান চলে যাবে। ইতোমধ্যে মামলার চার নম্বর আসামি সাইফুল ইসলাম আমার নামে কুৎসা রটিয়েছে এবং ৫ ও ৬ নম্বর আসামিকে লাগিয়ে দেয় কুৎসা রটাতে।
অভিযোগে ওই ছাত্রী আরো বলেন, ‘ছাত্র অধিকার পরিষদের নেতা পর্যায়ের কয়েকজন বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধানের লক্ষ্যে কাজ করতে চাইলেও আসামিরা তাদের ষড়যন্ত্রকারী বলে অ্যাখ্যা দেয়। এরপর আমি শারীরিক-মানসিকভাবে অসুস্থ থাকায় এবং আত্মীয়-স্বজনদের সাথে কথা বলে মামলা করায়; মামলা করতে বিলম্ব হয়েছে।’
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে হাসান আল মামুন গণামধ্যমকে বলেন, মামলার বিষয়ে আমরা কিছু জানি না। যে অভিযোগের কথা বললেন, এমন কোনো কিছু আমাদের দ্বারা হয়নি। এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হতে পারে, বিষয়টি সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে আমরা প্রতিবাদ জানাব।
এ বিষয়ে নুরুল হক নূর বলেন, ওই মেয়েকে চিনি না। তাকে আমি কোনোদিন দেখিনি। দুই মাস আগে সে আমাকে ফোন দিয়ে সহযোগিতা চেয়েছে যে কোনো এক ছেলের সাথে তার রিলেশন ছিল, যেটি নিয়ে সমস্যা হচ্ছে। সে জন্য আমাকে ভূমিকা রাখতে বলা হয়। এরপর ফোন দেবে বলে সে আর কোনো যোগাযোগ রাখেনি। তিনি বলেন, এক সময়ে সে ছেলেটির পরিচয় দেয় আমাকে এবং বলে আমরা যেন ছেলেটিকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করি। কিন্তু আমি খোঁজ নিয়ে জানি ছেলেটির নাম নাজমুল, সে আমাদের সংগঠনের কোনো দায়িত্বে নেই। তবে সে আমাদের বিভিন্ন কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকত। তাই আমি মেয়েটিকে বলেছি, সেতো আমাদের সংগঠনের কেউ না, পদেও নেই। এরপর মেয়েটি বলে, নজমুলসহ আরো একজনকে বহিষ্কার করতে হবে, যে হচ্ছে আমাদের আহ্বায়ক হাসান আল মামুন। কিন্তু আমি তাকে বলি সে তো আমাদের আহ্বায়ক। আমি আহ্বায়ককে কিভাবে বহিষ্কার করব। তোমার সমস্যা মনে হলে আমি আইনগত সহযোগিতা করব। কিন্তু শেষে সে আর যোগাযোগ রাখেনি।
মামলাটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে করা বলে অভিযোগ করেন নূর। তিনি বলেন, মেয়েটির বাড়ি ময়মনসিংহ। আমি যতটুকু জানতে পেরেছি, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সনজিত চন্দ্র দাস মেয়েটিকে টাকা-পয়সা দিয়ে মামলা করিয়েছে। আমরা সরকারের স্বৈ^রশাসন, দুঃশাসন ও ভারতের দালালির বিরুদ্ধে কথা বলায় আমাদের আটকের রাস্তা বের করছে সরকার।
এ বিষয়ে লালবাগ থানার ওসি কে এম আশরাফ উদ্দিন জানান, হাসান আল মামুন বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ওই ছাত্রীকে ধর্ষণ করেছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। আর ভিপি নূরসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে এ কাজে সহযোগিতার অভিযোগ আনা হয়েছে। বাকি চার আসামি হলেনÑ নাজমুল হাসান সোহাগ, মো: সাইফুল ইসলাম, নাজমুল হুদা ও আবদুল্লাহ-হিল-বাকি। মামলার ঘটনাস্থল হিসেবে লালবাগের নবাবগঞ্জকে উল্লেখ করা হয়েছে।

 


আরো সংবাদ



premium cement
অবৈধ সম্পদ : এস কে সিনহার বিরুদ্ধে প্রতিবেদন ২৬ জুন টি-টোয়েন্টি র‌্যাংকিংয়ে চাপম্যান-আফ্রিদির উন্নতি থানচিতে ট্রাকে দুর্বৃত্তদের গুলি চীনের আনহুই প্রদেশের সাথে ডিএনসিসি’র সমঝোতা স্মারক সই আ’লীগের ২ গ্রুপের সংঘর্ষ : ২ শতাধিক ককটেল বিষ্ফোরণ, আহত ৫ রাঙ্গামাটিতে ডাম্প ট্রাক খাদে পড়ে নিহত ৬, আহত ৮ প্রতিবাদ সমাবেশকারীদের গ্রেফতারের নিন্দা জামায়াতের ‘সংসদ সদস্যরা নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিতে পারবেন না’ ফরিদপুরে বেইলি ব্রিজ অপসারণ করে স্থায়ী ব্রিজ নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন ঈশ্বরদীতে তাপমাত্রা ৪১.২ ডিগ্রি বাংলাদেশকে এভিয়েশন হাব হিসেবে গড়তে সহযোগিতা করতে চায় যুক্তরাজ্য

সকল