২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৫
`

‘ওসি’ প্রদীপের সম্পত্তি ক্রোকের নির্দেশ

-

অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকের মামলায় টেকনাফ থানার বরখাস্ত সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশের জামিন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল রোববার চট্টগ্রাম মহানগর সিনিয়র স্পেশাল দায়রা জজ শেখ আশফাকুর রহমানের আদালত এ আদেশ দেন। একই সাথে দুদকের পক্ষ থেকে প্রদীপ কুমার দাশের সম্পত্তি ক্রোকের (অবরুদ্ধ) আবেদন মঞ্জুর করেছেন।
দুদকের কৌঁসুলি কাজী সানোয়ার আহমেদ লাভলু নয়া দিগন্তকে বলেন, আদালত প্রদীপের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন। স্বাস্থ্যপরীক্ষা এবং কারাগারে তার আইনজীবীদের সাক্ষাতের বিষয়ে কারাবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। একই সাথে অবৈধ সম্পদ ক্রোকের নির্দেশ দিয়েছেন।
অভিযুক্ত প্রদীপ কুমার দাশ চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার সারোয়াতলী ইউনিয়নের উত্তর সারোয়াতলী গ্রামের হরেন্দ্র লাল দাশের ছেলে। নগরীর কোতোয়ালি থানার পাথরঘাটা আর সি চার্চ রোডে তাদের নিজস্ব একটি আবাসিক ভবন আছে। সেই ভবনে তার স্ত্রী চুমকি কারণ সন্তানদের নিয়ে বসবাস করেন।
গত ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান। ওই ঘটনায় সিনহার বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস গত ৫ আগস্ট কক্সবাজারের একটি আদালতে হত্যা মামলা দায়ের করেন, সেখানে টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ ও বাহারছড়া তদন্তকেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকতসহ ৯ জনকে আসামি করা হয়। মামলাটি তদন্ত করছে র্যাব। ওই মামলায় আদালতে আত্মসমর্পণ করার পর প্রদীপকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। প্রদীপ এখন কারাগারে আছেন। গত ২৩ আগস্ট দুদক কর্মকর্তা রিয়াজ উদ্দিন বাদি হয়ে প্রদীপ ও তার স্ত্রী চুমকির বিরুদ্ধে চার কোটি ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৭৯ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের একটি মামলা দায়ের করেন। দুদকের অভিযোগে উল্লিখিত অর্থের মধ্যে ৩ কোটি ৯৫ লাখ ৫ হাজার ৬৩৫ টাকা ‘ওসি প্রদীপ’ ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জন করেছেন। আরো ১৩ লাখ ১৩ হাজার ১৭৫ টাকার অবৈধ সম্পদ তাদের মালিকানায় আছে যা তারা সম্পদের তথ্য বিবরণীতে গোপন করেছেন। আবেদনে প্রদীপ ও চুমকির হেফাজতে থাকা ৪০ লাখ ৫৩ হাজার ৬০৪ টাকার স্থাবর সম্পদের বিষয়ে উল্লেখ করা হয়েছে। একই আবেদনে তিন কোটি ৬৬ লাখ ২৪ হাজার ৪৭৫ টাকার অস্থাবর সম্পদের কথাও উল্লেখ আছে।
দুদকের আবেদনে বলা হয়েছে, উল্লিখিত স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ স্থানান্তর ও হস্তান্তর হয়ে গেলে রাষ্ট্রের ক্ষতির আশঙ্কা আছে। এ জন্য এসব স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অবরুদ্ধকরণপূর্বক দুদকের একজন রিসিভার নিয়োগ প্রয়োজন। এ জন্য এসব সম্পদ অবরুদ্ধকরণের জন্য চট্টগ্রাম সদরের সাব রেজিস্ট্রার, বেসিক ব্যাংকের আসাদগঞ্জ শাখার ব্যবস্থাপক এবং চট্টগ্রামের বিআরটিএর উপ-পরিচালকের প্রতি আদেশ জারি করার আবেদন করেছে দুদক।
প্রদীপ বাহিনীর বিচার চাইলেন সাংবাদিক ফরিদ : সিনহা হত্যার ঘটনায় বরখাস্ত ওসি প্রদীপ বাহিনীর বিচার চাইলেন মিথ্যা মামলায় ১১ মাস পর কারামুক্ত সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খান। সেই সাথে পেশাগত প্রয়োজনে দেশের সব স্তরের সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, টেকনাফের বরখাস্ত ওসি প্রদীপ কুমার দাশের অপকর্ম, মাদক নির্মূলের নামে মাদক সেবন ও ব্যবসার বিরুদ্ধে কলম ধরেছিলাম। বিবেকের দায়বোধ থেকে পেশাগত কারণে সংবাদগুলো করেছি। তার কারণে আমাকে একে একে ৬টি মামলার আসামি বানানো হয়েছে। দীর্ঘ ১১ মাস ৫ দিন কারাভোগ করেছি। আর কোনো বিভেদ নয়। এখন সময় ঐক্যবদ্ধ হওয়ার।
গতকাল রোববার দুপুরে কক্সবাজার জেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে ফরিদুল মোস্তফার চিকিৎসায় আর্থিক সহায়তা প্রদান উপলক্ষে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় তিনি কথাগুলো বলেছেন। এতে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম-বিএমএসএফের কক্সবাজার জেলা সভাপতি মিজান-উর রশিদ মিজান।
সভায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরাম বিএমএসএফের সাধারণ সাম্পাদক আহমদ আবু জাফর, সাংগঠনিক সম্পাদক ছৈয়দ খারুল আলম, কক্সবাজারের প্রবীণ সাংবাদিক ফজলুল কাদের চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল হক মুকুল, কক্সবাজার উন্নয়ন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি রুহুল আমিন সিকদার, বাংলাভিশনের স্টাফ রিপোর্টার মোর্শেদুর রহমান খোকন, নির্যাতিত সাংবাদিক ছালামত উল্লাহ, ছোটন কান্তি নাথ প্রমুখ। সভা সঞ্চালক ছিলেন বিএমএসএফ কক্সবাজার জেলা সাধারণ সম্পাদক জসিম উদ্দিন। সভার শেষান্তে সাংবাদিকেরা কারামুক্ত ফরিদকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়েছে।
মতবনিময় সভার পর নেতৃবৃন্দ জেলা প্রশাসক মো: কামাল হোসেনের সাথে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় নির্যাতিত সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা খান সুখ-দুখের বিষয়গুলো তুলে ধরেন। জেলা প্রশাসক তার ওপর ঘটে যাওয়া অমানবিক ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন। সেই সাথে ফরিদের জীবনের নিরাপত্তাসহ প্রয়োনীয় সব প্রকারের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। সাক্ষাৎকালে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) শাজাহান আলিসহ জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

 


আরো সংবাদ



premium cement