ত্যাগীদের বাদ দিয়ে বিতর্কিতদের পদোন্নতি
- মনিরুল ইসলাম রোহান
- ২১ সেপ্টেম্বর ২০২০, ০০:০০
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ ৭৫ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের জন্য প্রস্তাবিত তালিকা কেন্দ্রীয় দফতরে জমা দিয়েছে। প্রস্তাবিত কমিটিতে ত্যাগী, যোগ্য ও সক্রিয় নেতাদের কোণঠাসা করা হয়েছে। ঢাকার স্থানীয় নেতারাও প্রাধান্য পায়নি। গত কমিটিতে থাকা দলীয় পদবি ব্যবহার করে অবৈধ সম্পদ অর্জন, থানা-ওয়ার্ড কমিটি গঠনে বাণিজ্য, ভর্তি ও নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের সাথে জড়িত ছিলেনÑ এমন নেতাদের পদোন্নতি দেয়া হয়েছে। আবার নগর আওয়ামী লীগের রাজনীতির কোনো অভিজ্ঞতা না থাকলেও হুট করে বড় পদ পাচ্ছেন কেউ কেউ। মহানগর আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত একাধিক নেতার সাথে আলাপকালে এসব তথ্য জানা গেছে।
গত বছরের ৩০ নভেম্বর ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। ওই সম্মেলনে দুই সিনিয়র সহসভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী ও মো: হুমায়ুন কবির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হন। এরপর থেকে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করার লক্ষ্যে কার্যক্রম শুরু হয়। সম্প্রতি কেন্দ্র থেকে সময়সীমা বেঁধে দেয়ার পরই গত ১৪ সেপ্টেম্বর রাতে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক প্রস্তাবিত পূর্ণাঙ্গ কমিটি আওয়ামী লীগের দফতরে জমা দেন।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, গত সম্মেলনে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কমিটি ছিল ৭১ সদস্যবিশিষ্ট। ওই সংখ্যা এখন ৭৫ সদস্যে উন্নীত করা হয়েছে। আগের কমিটির ৫ জন সদস্য মৃত্যুবরণ করায় এবং ২৩ জনকে বাদ দেয়ায় ২৮টি পদ শূন্য হয়ে যায়। নতুন চারটি পদ সৃষ্টি করা হয়েছে। ফাঁকা ছিল দু’টি পদ। সব মিলিয়ে ৩৪ টি শূন্য পদে পদায়ন ও নতুন মুখ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রস্তাবিত কমিটির ১১টি সহসভাপতি পদের মধ্যে একজন এমপিকে রাখা হয়েছে। তবে বাদ পড়েছেন কাউন্সিলররা। সূত্রাপুর থানার বিতর্কিত এক নেতাকে সহসভাপতির নাম প্রস্তাব করা হয়েছে। তিনটি যুগ্ম সম্পাদক পদের মধ্যে আগের কমিটির সক্রিয় নেতা কামাল চৌধুরী বাদ পড়েছেন। আবদুল হক সবুজকে করা হয়েছে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং ডা: দিলীপ কুমার রায় পদোন্নতি পেয়ে সহসভাপতি হচ্ছেন। এ তিনটি পদে যাদের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে তাদের দু’জনই ব্রাহ্মণবাড়ীয়ার একই উপজেলায় বাড়ি। তিনটি সাংগঠনিক সম্পাদক পদের মধ্যে আগের কমিটির একজনকে ১ নম্বর সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে নাম প্রস্তাব করা নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে তুমুল সমালোচনা চলছে। ওই নেতার নামে অতীতে ভর্তি ও নিয়োগবাণিজ্যেসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, তিনটি সাংগঠনিক সম্পাদক পদের মধ্যে ৩ নম্বর হিসেবে যার নাম প্রস্তাব করা হয়েছে তিনি মহানগর আওয়ামী লীগের কোনো পদে ছিলেন না। ওই নেতার নাম প্রস্তাব করা নিয়েও ব্যাপক সমালোচনা চলছে।
আগের কমিটির দফতর এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদককে কার্যনির্বাহী সদস্য পদে রাখা হয়েছে। ওই দু’টি পদে ছাত্রলীগের সাবেক একজন সহসভাপতি এবং জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক এক সভাপতিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আগের কমিটির বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক সম্পাদক ড. ওমর বিন আজিজকে পদোন্নতি না দিয়ে কোণঠাসা করা নিয়েও চলছে ব্যাপক সমালোচনা। শুধু মহানগর নয়, আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে পুরান ঢাকার হোসনী দালানের মরহুম এম এ আজিজ পরিবারের অবদানের কথা তুলে ধরছেন কেউ কেউ। এ ছাড়া এর আগে আর্থিক লেনদেনের বিনিময়ে শ্যামপুর থানা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ পদ বাগিয়ে নেয়ার অভিযোগ থাকার পরও ওই নেতাকে সরাসরি নগরের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক পদে প্রস্তাব করা নিয়েও তীব্র সমালোচনা চলছে। প্রচার সম্পাদক হিসেবে জায়গা করে নিয়েছেন অপরিচিত মুখ সাইফুন্নবী সাগর। উপপ্রচার সম্পাদক হিসেবে যার নাম প্রস্তাব করা হয়েছে তিনি একেবারেই জুনিয়র। এরকম বেশ কিছু অনভিজ্ঞ, বিতর্কিত নেতারা কমিটিতে স্থান পাওয়া নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে। মহানগরের সাবেক একাধিক নেতার অভিযোগ, ওয়ারী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি চৌধুরী আশিকুর রহমানের মতো দক্ষ সংগঠকদের জায়গা না দিয়ে থানা আওয়ামী লীগ থেকে বিতর্কিত নেতাদের তুলে আনা হয়েছে। অনেকেই মনে করছেন, কমিটি গঠনে বড় ধরনের লেনদেন হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো: হুমায়ুন কবির নয়া দিগন্তকে বলেন, ৭৫ সদস্যবিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের জন্য নাম প্রস্তাব করে নেত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে। নেত্রীর সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগের কমিটির নিষ্ক্রিয় ও বিতর্কিতরা বাদ পড়েছেন। ওই জায়গায় ছাত্রলীগের সাবেক সক্রিয় নেতাদের অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে। কিছু পদে যুবলীগের সাবেক নেতাদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি বলেছেন, যেসব কমিটি এরই মধ্যে জমা দেয়া হয়েছে সেগুলো এখনই ঘোষণা করা হবে না। যাচাই-বাছাই করে পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের নাম তালিকায় আছে কি নাÑ তা দেখা হবে। তিনি বলেন, স্বজনপ্রীতি ও নিজেদের লোক দিয়ে কমিটি দেয়া হয়েছে কি নাÑ তা খতিয়ে দেখা হবে। দীর্ঘ দিনের পরীক্ষিত নেতাকর্মীদের অবশ্যই মূল্যায়ন করতে হবে। বিতর্কিতদের বাদ দিতে হবে।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা