২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`
সংসদীয় কমিটির উষ্মা

আবারো পেঁয়াজ আটকে দিলো ভারত

-

ওপারে আটকে পড়া পেঁয়াজ রফতানি আবারো বন্ধ করে দিয়েছে ভারত। গতকাল রোববার দুপুর ১২টা পর্যন্ত হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে কোনো পেঁয়াজবাহী ট্রাক দেশে প্রবেশ করেনি। নতুন করে নির্দেশনা না আসা পর্যন্ত বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ রফতানির সম্ভাবনা নেই বলেও জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। হিলি স্থলবন্দর আমদানি রফতানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশীদ বলেন, ভারত সরকার গত সোমবার হঠাৎ করে কোনো কিছু না জানিয়ে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয়। পরে শুক্রবার একটি নোটিফিকেশন জারি করে যে, গত রোববার টেন্ডার হওয়া পেঁয়াজগুলো তারা রফতানি করবে। সেই মোতাবেক অনুমতি দেয়ায় গত শনিবার হিলি স্থলবন্দর দিয়ে মাত্র ১১টি ট্রাকে ২৪৬ টন পেঁয়াজ দেশে প্রবেশ করে। যে ১১ ট্রাক পেঁয়াজ রফতানি করেছে তার অধিকাংশ পেঁয়াজই ইতোমধ্যে পচে নষ্ট হয়ে পানি ঝরছে। এ কারণে আমদানিকারকরা এসব পেঁয়াজ নিয়ে এসেও ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। তিনি আরো বলেন, এখনো ২০০’র বেশি পেঁয়াজবাহী ট্রাক দেশে প্রবেশের অপেক্ষায় ভারতের অভ্যন্তরে বিভিন্ন সড়কে দাঁড়িয়ে রয়েছে। এ ছাড়া যে ১০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির জন্য আমাদের এলসি দেয়া রয়েছে তার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানা যায়নি। এগুলোর বিষয়ে তারা কী সিদ্ধান্ত নিয়েছে বা কী করবে তা নিয়ে আমরা শঙ্কিত। তিনি বলেন, রোববার বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ প্রবেশ করবে কি না সে বিষয়টি আমাদের জানা নেই। কারণ শুধু গত রোববারের টেন্ডার হওয়া পেঁয়াজ রফতানির জন্য অনুমতি পেয়েছে। কিন্তু নতুন করে কোনো নির্দেশনা না দেয়া পর্যন্ত ভারতীয় কাস্টম বন্দর দিয়ে কোনো পেঁয়াজ রফতানি করতে দেবে না। এ দিকে আমদানি হওয়ায় ভালোমানের কিছু পেঁয়াজ কেজিতে ১০ টাকা কমে ৪০-৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। হিলি স্থলবন্দরে পেঁয়াজ কিনতে আসা লুৎফর রহমান ও সিদ্দিক হোসেন বলেন, ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে দেয়ায় কয়েক দিন ধরেই পেঁয়াজের বাজার বেশ চড়া। পেঁয়াজ আমদানির খবরে কিছুটা কমলেও আমদানি না হওয়ায় দাম আবারো বেড়ে যায়। শনিবার বন্দর দিয়ে পেঁয়াজ আমদানি হওয়ার কারণে বন্দরের আড়তগুলোতে পেঁয়াজের দাম গতকালের চেয়ে কেজি প্রতি ১০ টাকা কমেছে।
ভোমরা বন্দর দিয়ে আসছে না পেঁয়াজ : ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে ৩১ ট্রাক ভারতীয় পেঁয়াজ বাংলাদেশে পৌঁছানোর পর গতকাল রোববার থেকে অন্য কোনো ট্রাক প্রবেশ করেনি। ভোমরা বন্দরের ওপারে ভারতের ঘোজাডাঙা বন্দরে এখনো পেঁয়াজবোঝাই দেড় শতাধিক ট্রাক দাঁড়িয়ে রয়েছে। ১৩ দিন আগে লোড দেয়া এসব পেঁয়াজে পচন ধরায় তা রাস্তার ধারে ঢেলে ফেলা হয়েছে।
সাতক্ষীরার পেঁয়াজ আমদানি কারকরা বলছেন, পচা পেঁয়াজ বাংলাদেশে নিয়ে এসে আরো এক ঝামেলায় পড়তে হবে। এ কারণে পেঁয়াজ আমদানিকারকরা ঘোজাডাঙা থেকে ট্রাকগুলো ভারতের অভ্যন্তরে আবার ফেরত পাঠিয়ে দিচ্ছেন।
এ দিকে বন্দর সংশ্লিষ্টরা জানান, গত ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পেঁয়াজবোঝাই যেসব গাড়ির কাগজপত্র আগেই জমা দেয়া ছিল কেবলমাত্র সেগুলো ছাড় পেয়েছে। শনিবার সন্ধ্যা নাগাদ মোট ৩১টি গাড়িতে ৭২০ টন পেঁয়াজ ভোমরা বন্দরে এসেছে। রোববার থেকে আর কোনো গাড়ি ভোমরা বন্দরে আসেনি।
হঠাৎ ভারতের পেঁয়াজ রফতানি বন্ধে সংসদীয় কমিটির উষ্মা : পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই ভারত হঠাৎ করে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করায় উষ্মা প্রকাশ করেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। এ ছাড়া কমিটি ভারতীয় সীমান্তে বাংলাদেশী হত্যা নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এ জন্য জনমনে বিরূপ প্রভাব পড়েছে বলেও জানিয়েছেন সংসদীয় কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খান। শীর্ষ নিউজ।
গতকাল রোববার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে আলোচনা হয়। চলতি মাসের শেষ নাগাদ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে মন্ত্রী পর্যায়ের জয়েন্ট কনসালটেটিভ কমিশনের (জেসিসি) বৈঠকে এ দু’টি বিষয় জোরালোভাবে উপস্থাপনের জন্য সুপারিশ করে কমিটি।
বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, ‘আগামী ২৯ নভেম্বর জেসিসির মিটিং। ভারত আমাদের বন্ধুরাষ্ট্র। কিন্তু কিছু কর্মকাণ্ডের জন্য সম্পর্ক নষ্ট হচ্ছে। এত কষ্ট করে সম্পর্ক উন্নয়ন করি, আর ছোট্ট পেঁয়াজের জন্য সম্পর্ক নষ্ট হয়। এর কারণে জনমনে বিরূপ প্রভাব পড়ে।’ তিনি বলেন, ‘হঠাৎ বন্ধ করে দিয়ে পরে দুঃখ প্রকাশ, এসব কোন ধরনের আচরণ।’
এ দিকে জেসিসির বৈঠকে সীমান্ত হত্যা বন্ধে বাংলাদেশকে জোরালো পদক্ষেপ নিতে পরামর্শ দিয়েছে সংসদীয় কমিটি।
বৈঠক শেষে ফারুক খান দু’দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর সম্মেলনের কথা তুলে ধরে বলেন, ‘গত দুদিন ভালো মিটিং হয়েছে। এরকম ভালো মিটিং ১০টা দেখেছি। ১০টা মিটিংয়ে বলা হয়েছে সীমান্তে হত্যা বন্ধ হবে। কিন্তু হয়নি। জোর দিয়ে এগুলো বলতে হবে। আমরা এগুলো বন্ধ চাই। জোরেশোরে এটা বলতে হবে।’ বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশী নিহতের ঘটনা বরাবরই আলোচনায় থাকে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমালোচনায় ভারত প্রতিশ্রুতি দেয়ার পর সীমান্তে হত্যাকাণ্ড কয়েক বছর আগে কমে এলেও সম্প্রতি তা আবার বাড়ছে।
বগুড়া অফিস জানায়, বগুড়ায় পেঁয়াজের দাম স্বাভাবিক হচ্ছে না। ফলে পেঁয়াজ কিনতে গিয়ে সাধারণ মানুষ চরম অস্বস্তিতে পড়েছেন। সেই সাথে ভারত থেকে যে পেঁয়াজ আসছে সেগুলো নষ্ট হতে শুরু করেছে।
গত সোমবার হঠাৎ করে ভারত সরকার পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করে পেঁয়াজবোঝাই বাংলাদেশমুখী সব ট্রাক রাস্তায় আটকে দেয়। এরপর ভারত সরকারের সাথে দেনদরবার করার পর ট্রাক ছাড়ার সিদ্ধান্ত হয়। সে সিদ্ধান্ত মোতাবেক শনিবার হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ১১টি ট্রাকে ২৪৬ মেট্রিক টন পেঁয়াজ দেশে আসার পর আবারো পেঁয়াজবোঝাই ট্রাক বন্ধ করেছে ভারত। এ ছাড়া এলসি করা সব পেঁয়াজ দেয়ার আইনি বাধ্যবাধকতা থাকলেও ভারত কোনো কিছুই মানছে না।
এ ছাড়া এক সপ্তাহ আগে ভারতে ট্রাকে লোড করা পেঁয়াজে পচন ধরেছে। এসব ট্রাক ২-১ দিনের মধ্যে ভারত না ছাড়লে ওইসব পেঁয়াজ খাওয়ার অযোগ্য হয়ে পড়বে বলে জানিয়েছেন আমদানিকারকরা।


আরো সংবাদ



premium cement