২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

সঞ্চয়পত্রের দিকে ঝুঁকছেন গ্রাহক

ব্যাংকে আমানতের মুনাফা ঋণাত্মক
-

গত জুলাই মাসে পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমিক ১৯ শতাংশ। আর ব্যাংকে আমানতের গড় মুনাফার হার ছিল ৫ দশমিক শূন্য ২ শতাংশ। মূল্যস্ফীতির হিসাবে ব্যাংকে আমানতের মুনাফার হার ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে। বিনিয়োগকারীরা তাই আবারো ঝুঁকে পড়ছেন সঞ্চয়পত্রে। বিদায়ী বছরে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি ছিল যেখানে ঋণাত্মক ৭১ শতাংশ, সেখান থেকে জুলাইয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে সাড়ে ৬৭ শতাংশ। সঞ্চয়পত্রে এ অস্বাভাবিক বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধিকে ব্যাংকে আমানতের মুনাফা তলানিতে নেমে যাওয়ার অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। এতে ব্যাংকে আমানতের প্রবৃদ্ধি আরো কমে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন ব্যাংকাররা। এর প্রভাবে বেসরকারি বিনিয়োগ প্রবৃদ্ধিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে বলে তারা মনে করছেন।
ব্যাংকাররা জানান, বিদায়ী বছরে সরকার সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে গ্রাহককে নিরুৎসাহিত করতে কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণ করে। এর অন্যতম ছিল সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে টিআইএন বাধ্যতামূলক করা। অর্থাৎ কেউ সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করতে চাইলে তাকে আয়কর সনদ প্রদর্শন করতে হবে। সরকারের এ সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ অস্বাভাবিকভাবে কমে যায়। প্রতি মাসেই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমতে থাকে। এভাবে বছর শেষে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ নেমে আসে ১৪ হাজার ৪২৮ কোটি টাকায়। অর্থাৎ গেল বছরে সঞ্চয়পত্রে নিট বিনিয়োগ হয় ১৪ হাজার ৪২৮ কোটি টাকা। যেখানে আগের অর্থবছরে বিনিয়োগ হয়েছিল ৪৯ হাজার ৯৩৯ কোটি টাকা। এ হিসেবে বিদায়ী অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি হয় ঋণাত্মক ৭১ দশমিক ১১ শতাংশ।
এ দিকে গত এপ্রিল থেকে বাধ্যতামূলকভাবে ব্যাংক ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ কার্যকর করা হয়। এর পর থেকেই আমানতের সুদহার ধারাবাহিক হারে কমতে থাকে। ব্যাংকগুলো ঋণের সুদহার ৯ শতাংশ কার্যকর করতে গিয়ে আমানতের সুদহার কমাতে থাকে। সবশেষ গত জুলাইয়ে ব্যাংক আমানতের গড় সুদহার কমে নেমে আসে ৫ দশমিক শূন্য ২ শতাংশে। অথচ গত জুলাইয়ে মূল্যস্ফীতি পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে কমে নামে ৫ দশমিক ৪৯ শতাংশে। যদিও গত এপ্রিল থেকে সবধরনের পণ্যের দাম অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাচ্ছে। পণ্যমূল্য বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা আজও বিদ্যমান। পণ্যমূল্য বেড়ে গেলেও ব্যাংকের মুনাফার হার অস্বাভাবিক হারে কমে যাওয়ায় আমানতকারীরা অনেকটা দিশেহারা হয়ে পড়েন। এক দিকে করোনার প্রাদুর্ভাবে মানুষের আয় কমে গেছে। অনেকেই চাকরি হারিয়েছেন। অনেকের বেতন কমে গেছে। কারও বা চাকরি থাকলেও বেতন বকেয়া পড়েছে। এভাবে এক দিকে পণ্যমূল্য বৃদ্ধি, অপর দিকে আয় কমে যাওয়ার পাশাপাশি ব্যাংকের আমানতের মুনাফার হার কমে যাওয়ায় মানুষ অনেকটা অসহায় হয়ে পড়েছে। অনেকেই রাজধানীতে টিকতে না পেরে শহর ছেড়ে গ্রামে চলে যাচ্ছে। কেউবা জমানো শেষ সঞ্চয়টুকু ভেঙে খাচ্ছে। এরই প্রভাবে ব্যাংকে আমানত কমতে থাকে। এরওপর সুদহার কমে যাওয়ায় গ্রাহক এখন ব্যাংক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। অনেকেই সরকারের আয়করের জালে আটকে পড়ে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করছেন। কেননা পারিবারিক সঞ্চয়পত্রে মুনাফার হার এখন ১১ শতাংশের কাছাকাছি। এরই প্রভাবে অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাচ্ছে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, বিদায়ী অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ যেখানে ৭১ শতাংশ কমে গিয়েছিল, সেখানে জুলাই মাসে বিনিয়োগের প্রবৃদ্ধি হয়েছে সাড়ে ৬৭ শতাংশ। গত বছরের জুলাইয়ে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ হয়েছিল ২ হাজার ২১২ কোটি টাকা। গত জুলাইয়ে তা বেড়ে হয়েছে ৩ হাজার ৭০৫ কোটি টাকা।
ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, সঞ্চয়পত্রে যে হারে বিনিয়োগ বাড়ছে, তাতে আমানতের প্রবৃদ্ধি আরো কমে যাবে। আর আমানতের প্রবৃদ্ধি আরো কমে গেলে কাক্সিক্ষত হারে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ হবে না। অর্থাৎ বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে। এতে বর্ধিত হারে কর্মসংস্থান হবে না। আর কর্মসংস্থান না হলে বেকারত্বের হার বেড়ে যাবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক অবস্থায় আনতে ঋণে সুদহারের সর্বোচ্চসীমা প্রত্যাহার করা প্রয়োজন বলে তারা মনে করেন।


আরো সংবাদ



premium cement