২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সীমান্তে হত্যা শূন্যে আনতে টহল বাড়াবে বিজিবি-বিএসএফ

ডিজি পর্যায়ের সম্মেলন শেষ
-

সীমান্তে যেকোনো ঘটনায় মানবাধিকারকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়ার পাশাপাশি সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনতে যৌথ টহলে একমত হয়েছে বিজিবি-বিএসফ। ঢাকার পিলখানায় বিজিবি সদর দফতরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের (বিএসএফ) মহাপরিচালক পর্যায়ের ৫০তম সীমান্ত সম্মেলনে আরো কিছু বিষয়ে তারা একমত হন।
চার দিনব্যাপী বিজিবি ও বিএসএফ ডিজি পর্যায়ের সম্মেলন শেষে গতকাল শনিবার পিলখানায় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে উভয় বাহিনীর প্রধান কথা বলেন। বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো: সাফিনুল ইসলাম উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও সহযোগিতায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। পাশাপাশি এই সুসম্পর্ক ও পারস্পরিক সহযোগিতা ভবিষ্যতে আরো বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন। বিএসএফ মহাপরিচালক রাকেশ আস্থানা বলেন, অপরাধীদের কোনো দেশ নেই, সীমান্তের দুই পাশেই তাদের অবস্থান। বৈঠকে সীমান্ত হত্যা বন্ধ, মাদকদ্রব্য, অবৈধ অস্ত্র, মানবপাচার রোধে একসাথে কাজ করতে সম্মত হয় দুই দেশ। সীমান্তে উভয় দেশের নিরস্ত্র নাগরিকদের হত্যা বা আহত অথবা মারধরের ঘটনা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার লক্ষ্যে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় যৌথ টহল বৃদ্ধি, জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি আরো বেগবান করা এবং প্রয়োজনমাফিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মসূচি গ্রহণসহ সীমান্তে অতিরিক্ত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণে উভয় বাহিনীর প্রধান সম্মত হয়েছেন। ঝুঁকিপূর্ণ সীমান্তে যৌথ টহল পরিচালনাসহ সমন্বিত কার্যক্রম গ্রহণ এবং সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী নাগরিকদের মাঝে আন্তর্জাতিক সীমানা আইনের বিধিবিধান সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে আক্রমণ অথবা হামলার ঘটনা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে উভয় পক্ষই সম্মত হয়েছে।
এ ছাড়া বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে মাদক ও অস্ত্র চোরাচালান এবং মানবপাচার বন্ধে একসাথে কাজ করতে উভয় বাহিনীর প্রধান আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এবারের সম্মেলনে নিরস্ত্র বাংলাদেশী নাগরিকদের গুলি, হত্যা ও আহত করা, সীমান্তের অপর প্রান্ত থেকে বাংলাদেশে ফেনসিডিল, গাঁজা, মদ, ইয়াবা, ভায়াগ্রা, সেনেগ্রা ট্যাবলেটসহ মাদক ও নেশাজাতীয় দ্রব্যের চোরাচালান, অস্ত্র, গোলা-বারুদ ও বিস্ফোরক দ্রব্য পাচার বন্ধের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
এ ছাড়া বাংলাদেশী নাগরিকদের ধরে নিয়ে যাওয়া, অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম অথবা বাংলাদেশে জোরপূর্বক অনুপ্রবেশ করানো, মানসিক ভারসাম্যহীন ভারতীয় নাগরিকদের বাংলাদেশে পুশ-ইন, সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে উন্নয়নমূলক নির্মাণকাজ, সীমান্ত নদীর তীর সংরক্ষণকাজ, বাংলাবান্ধা আইসিপিতে দর্শক গ্যালারি নির্মাণ, সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা বাস্তবায়নে যৌথ টহল পরিচালনা, রিজিয়ন ও ফ্রন্টিয়ার পর্যায়ের অফিসারদের নিয়মিত বৈঠক আয়োজন, পার্বত্য অঞ্চলে হিল ফ্লাইং প্রশিক্ষণ ও অপারেশন পরিচালনা এবং পারস্পরিক যোগাযোগ ও যৌথ টহল বাড়ানোর ব্যাপারে উভয় বাহিনীর প্রধান একমত পোষণ করেন। সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা-সিবিএমপির ওপর গুরুত্বারোপ করে বিভিন্ন ধরনের আন্তঃসীমান্ত অপরাধ দমনের লক্ষ্যে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে সিবিএমপি বাস্তবায়নে এবং উভয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী উপকৃত হবে এমন তাৎক্ষণিক ও দরকারি তথ্য বিশেষ করে অধিকতর তদন্তের জন্য আগ্নেয়াস্ত্র চোরাকারবারিদের ডিজিটাল ফটোগ্রাফ শেয়ার করতে উভয় পক্ষই সম্মত হয়েছে। উভয় পক্ষই সীমান্ত অপরাধ দমন এবং আন্তর্জাতিক সীমানার অলঙ্ঘনীয়তা বজায় রাখতে সীমান্তে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করার আশ্বাস দিয়েছেন। সম্মেলনে উভয় পক্ষই অবৈধভাবে সীমানা অতিক্রম অথবা সীমানা লঙ্ঘন করা থেকে সীমান্তবর্তী জনসাধারণকে বিরত রাখতে সম্মত হয়েছে।
সম্মেলনে উভয় পক্ষই পূর্ব অনুমোদন ছাড়া ১৫০ গজের মধ্যে কোনো ধরনের উন্নয়নমূলক কাজ না করার বিষয়ে একমত হয়েছে। উভয় পক্ষই বন্ধ থাকা অন্যান্য উন্নয়নমূলক কাজ যত দ্রুত সম্ভব সমাধানের ব্যাপারে সম্মত হয়েছে। যৌথ নদী কমিশনের অনুমোদন অনুযায়ী, সীমান্ত নদীর তীর সংরক্ষণে সহায়তা প্রদান এবং অননুমোদিতভাবে অভিন্ন সীমান্ত নদীর তীর সংরক্ষণ কাজ না করতে উভয় পক্ষই সম্মত হয়েছে। সম্মেলনে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো: সাফিনুল ইসলামের নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করে। বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলে বিজিবি’র অতিরিক্ত মহাপরিচালকবৃন্দ ও বিজিবি সদর দফতরের সংশ্লিষ্ট স্টাফ অফিসারবৃন্দ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, যৌথ নদী কমিশন এবং ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ছিলেন। বিএসএফ মহাপরিচালক রাকেশ আস্থানার নেতৃত্বে ছয় সদস্যের ভারতের প্রতিনিধিদল সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেছে। ভারতীয় প্রতিনিধিদলে বিএসএফ সদর দফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এবং ভারতের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।


আরো সংবাদ



premium cement