২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

হেফাজত আমির আল্লামা শফীর ইন্তেকাল

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক
হেফাজত আমির আল্লামা শফী -

দেশের বরেণ্য আলেম, হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফী ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। তার বয়স হয়েছিল ১০৩ বছর। গতকাল শুক্রবার বিকেলে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ থেকে তাকে ঢাকার গেন্ডারিয়ার আজগর আলী হাসপাতালে আনা হয়েছিল। সেখানে ৬টা ২০ মিনিটে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। আজ শনিবার বাদ জোহর হাটহাজারী মাদরাসায় তার নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
এর আগে হাটহাজারী মাদরাসায় ছাত্রদের আন্দোলনের মুখে বৃহস্পতিবার রাতে তিনি মহাপরিচালকের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। পরে রাতেই তাকে চট্টগ্রাম মেডিক্যালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গতকাল বিকেল ৩টার দিকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাকে ঢাকায় আনা হয়। তার মৃত্যুতে কওমি অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। অনেকে আজগর আলী হাসপাতালে ছুটে যান। সেখানে সাম্প্রতিক আন্দোলনের কারণে আল্লামা শফীর মৃত্যু ত্বরান্বিত হয়েছে দাবি করে অনেকে বিক্ষোভও করেন।
আল্লামা শাহ আহমদ শফী হেফজাতে ইসলামের আমির ছাড়াও কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড বেফাক ও কওমি মাদরাসার সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা আল হাইয়াতুল উলইয়া লিল জামিয়াতিল কওমিয়া বাংলাদেশের চেয়ারম্যান ছিলেন। দেশের রাজনীতিতে ২০১১ সালে আলোচনায় আসেন আল্লামা শফী। ২০১৩ সালের ৫ মে রাজধানীর শাপলা চত্বরে ১৩ দফা দাবিতে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন তিনি। পরবর্তী সময়ে তার নেতৃত্বে দাওরায়ে হাদিসকে মাস্টার্সের সমমান দেয় সরকার।
আল্লামা আহমদ শফী ১৯২০ সালে চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া থানার পাখিয়াটিলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১০ বছর বয়সে হাটহাজারী মাদরাসায় ভর্তি হন তিনি। ১৯৪১ সালে তিনি ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদরাসায় ভর্তি হয়ে চার বছর হাদিস, তাফসির, ফিকাহশাস্ত্র অধ্যয়ন করে দাওরায়ে হাদিস শেষ করেন। ১৯৪৬ সালে দারুল উলুম হাটহাজারীতে শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হন তিনি। ১৯৮৬ সালে প্রতিষ্ঠানের মজলিসে শূরার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মহাপরিচালক পদে দায়িত্ব পান আল্লামা শফী। পরবর্তী সময়ে শায়খুল হাদিসের দায়িত্বও তিনি পালন করেন। ২০০৮ সালে তিনি কওমি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড-বেফাকের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ২০১০ সালের ১৯ জানুয়ারি দারুল উলুম হাটহাজারী মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত ওলামা সম্মেলনে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ গঠন করা হয়। তিনিই এর প্রতিষ্ঠাতা আমির মনোনীত হন। ব্যক্তিগত জীবনে তার স্ত্রী, দুই ছেলে, দুই মেয়ে, নাতি, নাতনি রয়েছে।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শোক
হেফাজতে ইসলামের আমির আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর আজগর আলী হাসপাতালে মারা যান আল্লামা শফী।
আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুতে এক শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি বলেন, আল্লামা শফী দেশে-বিদেশে ইসলামের প্রচার ও প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। তার মৃত্যুতে দেশ একজন বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদকে হারাল। রাষ্ট্রপতি আল্লামা শফীর রূহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
এ দিকে আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুতে অপর এক শোকবার্তায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তিনি ইসলামী শিক্ষার প্রচার ও প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গেছেন। পাশাপাশি কওমি মাদরাসা শিক্ষা ব্যবস্থার আধুনিকায়নেও ভূমিকা রেখেছেন। প্রধানমন্ত্রী মরহুমের রূহের মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
শীর্ষ আলেমদের শোক
শীর্ষ উলামায়ে কেরাম একযুক্ত শোকবাণীতে সর্বজন শ্রদ্ধেয় বিশিষ্ট আলেমে দ্বীন, হাটহাজারী মাদরাসার মুহতামিম, হেফাজতে ইসলামের আমির, বেফাকের সভাপতি শায়খুল হাদিস আল্লামা আহমদ শফীর ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। শোকবাণীতে শীর্ষ উলামা কেরাম বলেন, তার ইন্তেকালে বাংলাদেশের জনগণই নয় বরং গোটা মুসলিম উম্মাহ একজন সুযোগ্য নেতাকে হারাল। তার শূন্যস্থান পূরণ হওয়ার নয়। আল্লাহতায়ালা তাকে জান্নাতবাসী করুন, জান্নাতের সর্বোচ্চ মাকাম দান করুন।
শোকবাণীতে স্বাক্ষর করেনÑ হাফেজ মাওলানা আতাউল্লাহ ইবনে হাফেজ্জি হজুর, অধ্যক্ষ মাওলানা যাইনুল আবেদীন, ইসলামী কানুন বাস্তবায়ন পরিষদের আমির মাওলানা আবু তাহের জিহাদী, মাওলানা জাফরুল্লাহ খান, আইম্মাহ পরিষদ সভাপতি মাওলানা মহিউদ্দীন রব্বানী, ড. মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী, ফরায়েজী আন্দোলনের আমির মাওলানা আব্দুল্লাহ মো: হাসান, মাওলানা আজিজুল হক ইসলামাবাদী, হক্কানি পীর মাশায়েখ পরিষদের মহাসচিব মাওলানা শাহ আরিফ বিল্লাহ সিদ্দীকি, মীরের সরাইর পীর সাহেব মাওলানা আ: মোমেন নাছেরী, টেকের হাটের পীর সাহেব মাওলানা কামরুল ইসলাম সাঈদ আনসারী, মুফতি ফয়জুল হক জালালাবাদী, মুফতি মাওলনা আবদুর রহমান চৌধুরী, মাওলানা আজিজুর রহমান আজিজ, মুফতি মাওলানা নাসিরউদ্দীন খান, সম্মিলিত উলামা মাশায়েখ পরিষদের সিলেট বিভাগীয় সেক্রেটারি শায়খ ড. আব্দুস সালাম মাদানী, হক্কানি তরিকত মিশনের আমির শাইখ নুরুল হুদা ফয়েজী, হক্কানি তরিকত মিশনের জেনারেল সেক্রেটারি আল্লামা মুস্তাক ফয়েজী, ইসলামী ঐক্য মঞ্চ সভাপতি মাওলানা ইদ্রিস হোসাইন, সেক্রেটারি আবদুস সাত্তার, খাদেমুল ইসলাম জামাত আমির মাওলানা মুহিবুল্লাহ, সেক্রেটারি মাওলানা সারওয়ার হোসাইন, হুফফাজ পরিষদ সভাপতি হাফেজ লিয়াকত হোসাইন ও সেক্রেটারি মুফতি মাহবুবুর রহমান, ইসলামী অন লাইন অ্যাক্টিভিটস সভাপতি শায়খুল হাদিস মাওলানা আবদুস সামাদ ও মহাসচিব মুফতি আবু আনাস, সম্মিলিত ইসলামিক জোটের আমির মাওলানা আবদুল বাকি, সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা মনিরুজ্জামান, জাতীয় ইমাম সোসাইটির মহাসচিব মুফতি জোবায়ের আহমদ কাসেমী, প্রফেসর মাওলানা মুফতি ইসহাক মাদানী, হাফেজ মুফতি মাওলানা আব্দুর রহমান, মাওলানা মুহাম্মদ ইখলাস উদ্দিন, মাওলানা আবু হানিফ নেছারী, অধ্যক্ষ মাওলানা মশিউর রহমান, হাফেজ ফারুক হোসাইন, মাওলানা এহতেশামুল হক, নাস্তিক-মুরতাদ প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মাওলানা আব্দুল ক্দ্দুুস আল কাসেমী ও মহাসচিব শাইখ আব্দুল কাইয়ূম, জাতীয় তাফসির পরিষদ সভাপতি মাওলানা আব্দুল আখির ও মহাসচিব মাওলানা আবু দাউদ যাকারিয়া, ইসলাহুল মুসলিলিমিন সভাপতি মুফতি আবুল বাশার ও মহাসচিব মুহাদ্দিস হাসানুল ইমাম, জাতীয় মুফাসসিরিন পরিষদ সভাপতি মাওলানা বেলাল হোসাইন ও সেক্রেটারি মাওলানা নুরুল আমীন, জাতীয় ইমাম উলামা পরিষদের সভাপতি শায়খুল হাদিস মাওলানা ফজলুর রহমান ও মহাসচিব মাওলানা এ বি এম শফিকুল্লাহ, মাদরাসা মসজিদ ও খানকা ঐক্যপরিষদ সভাপতি মাওলানা রফিকুর রহমান ও সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা গোলাম কিবরিয়া, ইসলামী সমাজ সভাপতি মাওলানা রফিকুর রহমান আল কাশেমী ও সেক্রেটারি জেনারেল মুফতি জাকারিয়া, ইসলামের জনতা সভাপতি মুফতি আবদুল কুদ্দুস ও মহাসচিব হাফেজ আবুল কাসেম, ইসলামী সংগ্রাম পরিষদ সভাপতি শাইখ যাইনুল আবেদীন ও সেক্রেটারি মাওলানা আবদুর রহমান, তালিমুল কুরআন সোসাইটি মুফতি আবদুল হালিম, মহাসচিব মাওলানা সিরাজুল ইসলাম, আল কুরআন ফাউন্ডেশন সভাপতি মুফতি জামাল উদ্দীন ও সেক্রেটারি মুফতি ইসহাক, জমিয়তে উলামা দেওবন্দ পরিষদের সভাপতি হজরত মাওলানা মুহাদ্দেস আবদুল্লাহ কাসেমী ও সেক্রেটারি হজরত মাওলানা আবু বকর সিদ্দিক কাসেমী প্রমুখ।
বিএনপির শোক : হেফাজতের আমির ও সদ্য বিদায়ী হাটহাজারী মাদরাসার মুহতামিম আল্লামা আহমদ শফীর ইন্তেকালে গভীর শোক ও সমবেদনা জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
এক শোকবাণীতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মরহুম শাহ আহমদ শফীকে ইসলামী চিন্তা জগতের একজন বরেণ্য আলেম হিসেবে আখ্যায়িত করে তার মৃত্যুকে দেশবাসীর জন্য এক অপূরণীয় ক্ষতি বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘বিশিষ্ট ইসলামী চিন্তাবিদ ও দেশের প্রখ্যাত আলেম আল্লামা শাহ আহমদ শফীর পৃথিবী থেকে চিরবিদায়ে ইহকাল ও পরকালের সঠিক দিক নির্দেশনা পেতে বঞ্চিত হলো দেশবাসী। তিনি মানুষকে সুপথে চলার জন্য কুররান-হাদিস যেভাবে নির্দেশ দিয়েছে সেভাবে বক্তব্য রেখেছেন। নম্রতা, বিনয় ও সৌজন্যবোধ ছিল তার স্বভাবজাত। ইসলামী চিন্তাবিদ হিসেবে তিনি ছিলেন সর্বজন শ্রদ্ধেয়। দেশের স্বনামধন্য ইসলামী চিন্তাবিদ শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুতে দেশ একজন নিবেদিতপ্রাণ ও খ্যাতিমান আলেমকে হারালো, যেটি সহজে পূরণ হওয়ার নয়।’
শোকবার্তায় শাহ আহমদ শফীর রূহের মাগফিরাত কামনা করে মরহুমের শোকসন্তপ্ত পরিবারবর্গ, গুণগ্রাহী, ভক্ত ও শুভানুধ্যায়ীদের প্রতি গভীর সহমর্মিতা জানান বিএনপি মহাসচিব।
আল্লামা শফী ছিলেন রাহবার : ডা: শফিক
হাটহাজারী দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম মাদাসার মহাপরিচালক, হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির ও বেফাকুল মাদারিসিল আরাবিয়া বাংলাদেশের সভাপতি আল্লামা শাহ আহমদ শফীর ইন্তেকালে গভীর শোক প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটির আমির ডা: শফিকুর রহমান গতকাল এক শোকবাণীতে বলেন, শুক্রবার বিকেলে উন্নত চিকিৎসার জন্য হেফাজতে ইসলামের আমির খ্যাতিমান আলেমে দ্বীন আল্লামা শাহ আহমদ শফীকে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে ঢাকার একটি হাসপাতালে আনা হলে সেখানে তিনি ইন্তেকাল করেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। আমি তার ইন্তিকালে গভীর শোক প্রকাশ করছি। শোকবাণীতে তিনি আরো বলেন, আল্লামা শাহ আহমদ শফী ছিলেন আলেম-ওলামা ও তৌহিদি জনতার প্রিয় রাহবার। তার ইন্তেকালে দেশের ইসলামপ্রিয় জনতার মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তিনি সারা জীবন ইসলামের খেদমত করে গেছেন। তিনি দেশে ইসলামী শিক্ষার বিস্তার ও প্রসারে বিভিন্ন দাবি-দাওয়া আদায়ের ব্যাপারে মুখ্য ভূমিকা পালন করে গেছেন। তিনি বহু আলেমের ওস্তাদ। ইলমে দ্বীনের খেদমতের জন্য যুগ যুগ ধরে এ দেশের মানুষ তাকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে। তার ইন্তেকালে জাতি একজন খ্যাতিমান আলেমে দ্বীনকে হারাল। তার শূন্যতা সহজে পূরণ হওয়ার নয়। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তাকে জান্নাতে উচ্চ মাকাম দান করুন। আমি তার শোকাহত পরিবার-পরিজন ও প্রিয়জনদের প্রতি গভীর সমবেদনা জ্ঞাপন করছি।
বিভিন্ন সংগঠনের শোক : আল্লামা শফীর ইন্তেকাল বিভিন্ন সংগঠনের নেতারা শোক প্রকাশ করেছেন। বিবৃতিদাতাদের মধ্যে রয়েছেন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের আমির মুফতি মুহাম্মদ ওয়াক্কাস, মহাসচিব মুফতি শেখ মুজিবুর রহমান, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গোলাম মহিউদ্দিন ইকরাম, ইসলামী এক্য আন্দোলনের আমির ড. ইসা শাহেদী, সেক্রেটারি অধ্যাপক মোস্তফা তারেকুল হাসান, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট বদরুদ্দোজা সুজা, নির্বাহী সভাপতি আব্দুল আজিজ হাওলাদার, মহাসচিব কাজী আবুল খায়ের, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা ইসমাইল নূরপুরী ও মহাসচিব মাওলানা মাহফুজুল হক, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টির আমির সরওয়ার কামাল আজিজী, সিনিয়র নায়েবে আমির মাওলানা আব্দুল মাজেদ আতহারী, মহাসচিব মাওলানা মুসা বিন ইজহার ও ঢাকা মহানগর আমির মাওলানা হাফেজ আবু তাহের খান, রাবেতাতুল উম্মাহ বাংলাদেশের সভাপতি এনামুল হক মোস্তফা ও সাধারণ সম্পাদক মাওলানা আজিজুর রহমান হেলাল প্রমুখ।
হাটহাজারী মাদরাসা পরিস্থিতি : দুই দিনের টানা আন্দোলনের পর চট্টগ্রামের দারুল উলুম মুঈনুল ইসলাম হাটহাজারী মাদরাসার পরিবেশ শান্ত হয়েছে। সরকার বৃহস্পতিবার মাদরাসা বন্ধের প্রজ্ঞাপন জারি করলেও এখনো সেখানে ছাত্ররা অবস্থান করছে। আজ শনিবার থেকে ক্লাস এবং আগামীকাল রোববার থেকে দাওরায়ে হাদিস পরীক্ষা গ্রহণের ঘোষণা দেয়া হয়েছে।
ছয় দফা দাবিতে গত টানা দুই দিন ধরে চলা ছাত্র আন্দোলন বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণার মাধ্যমে শেষ হয়েছে। আন্দোলনের মুখে শেষ পর্যন্ত হাটহাজারী মাদরাসায় সহকারী শিক্ষাসচিব আনাস মাদানিকে স্থায়ী বহিষ্কার এবং আল্লামা আহমদ শফী স্বেচ্ছায় মহাপরিচালকের পদ ছেড়েছেন। এ ছাড়া দীর্ঘ দিন থেকে ছাত্রদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতনের সাথে জড়িত কয়েকজন শিক্ষককেও বহিষ্কার করা হয়েছে। তবে মজলিসে শূরার বৈঠকে আল্লামা শফীকে সদরে মুহতামিম বা উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল।
জানা গেছে, আন্দোলন শেষ হলেও গতকাল জুমার আগ পর্যন্ত মাদরাসার শাহী গেটে প্রবেশে কড়াকড়ি ছিল। ছাত্র ছাড়া কাউকে প্রবেশের অনুমতি দেয়া হয়নি। তবে জুমার নামাজের সময় শাহী গেটের পকেট গেট খুলে সবার জন্য প্রবেশ উন্মুক্ত করা হয়। এ দিকে হাটহাজারী মাদরাসা বন্ধের ব্যাপারে সরকারি প্রজ্ঞাপন জারি হলেও আজ শনিবার থেকে নিয়মিত ক্লাস শুরু ও আগামীকাল রোববার থেকে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে বলে গতকাল বাদ জুমা শেষে মাদরাসার সিনিয়র মুহাদ্দিস আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী জানিয়েছেন।
ছাত্রদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত দুই দিনের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন সফল হওয়ায় তাদের মাঝে আত্মিক প্রশান্তি বিরাজ করছে। সৃষ্ট পরিস্থিতিতে গত দুই দিন অজানা আতঙ্ক বিরাজ করলেও সেটি স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। ছাত্ররাও পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছে। দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসা পুঞ্জীভূত ক্ষোভ শূরার আনুষ্ঠানিক সিদ্ধান্তে অনেকাংশে প্রশমিত হয়েছে বলে দেখা গেছে। ছাত্রদের পাশাপাশি এলাকাবাসীর মধ্যেও খুশি ও স্বস্তি দেখা গেছে। কোনো রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ছাড়া সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করায় ছাত্রদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
গত বৃহস্পতিবার রাতে শেষবারের মতো ঘোষণায় ছাত্ররা জানায়, আমাদের সব দাবি মেনে নেয়া হয়েছে। আমাদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন সফল হয়েছে। এ জন্য শূরা সদস্য, ছাত্র-শিক্ষক, এলাকাবাসী ও প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
গত ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে আন্দোলন শুরু হলে যেকোনো ধরনের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মাদরাসার আশপাশে শান্তিপূর্ণভাবে মোতায়েন ছিল বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও র্যাব সদস্য। বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়মিত টহল বিদ্যমান রয়েছে।
মজলিসে শূরার বৈঠক : আমাদের হাটহাজারী (চট্টগ্রাম) সংবাদদাতা আবুল বাশার জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাতের শূরার বৈঠক থেকে আল্লামা শফীর বিষয়ে সিদ্ধান্ত ছাড়াও বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। শূরার অন্যতম সদস্য মাওলানা সালাউদ্দিন নানুপুরী বৈঠক শেষে জানান, এখন থেকে শূরা কমিটি মাদরাসা পরিচালনায় সিদ্ধান্ত নেবেন। মাদরাসার শিক্ষক মাওলানা নুরুল ইসলাম কক্সবাজারিকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া মাদরাসার সহকারী শিক্ষাসচিব ও হেফাজত আমিরপুত্র মাওলানা আনাস মাদানিকে অব্যাহতিসহ বুধবারের সব সিদ্ধান্ত বলবৎ রেখেছে শূরা কমিটি। পরের মুহতামিম নির্ধারণের দায়িত্ব শূরা কমিটির ও সম্প্রতি বহিষ্কার করা তিন শিক্ষককেও পুনর্বহাল করা হবে। এ ছাড়া আন্দোলনকারী ছাত্রদের কোনো ধরনের হয়রানি করা হবে না এবং ভর্তি নিয়ে যাদের হয়রানি করা হয়েছে তারা ভর্তির সুযোগ পাবে।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্যন্ত আল্লামা শাহ্ আহমদ শফীর সভাপতিত্বে চলা এ শূরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন শাহ্ মুহিবুল্লাহ্ বাবুনগরী, মাওলানা শেখ আহমাদ, মাওলানা নোমান ফয়েজি, মাওলানা সালাউদ্দিন নানুপুরী, মাওলানা ওমর ফারুক, মাওলানা আশরাফ আলী নিজামপুরী, মাওলানা ইয়াহইয়া, মাওলানা আহমদ দিদার ও মাওলানা শোয়াইব।


আরো সংবাদ



premium cement
আল-আকসায় কোনো ধরণের সহিংসতা ছাড়াই অনুষ্ঠিত হলো তৃতীয় জুমআর জামাত ‘পেশাগত স্বার্থে সাংবাদিকদের ঐক্যবব্ধ হতে হবে’ গাজাবাসীর প্রধান কথা- ‘আমাদের খাবার চাই’ অধিকার প্রতিষ্ঠায় দেশপ্রেমিক জনতার ঐক্যের বিকল্প নেই : ডা: শফিকুর রহমান সোনাগাজীতে জামাতে নামাজ পড়ে বাইসাইকেল পুরস্কার পেল ২২ কিশোর গফরগাঁওয়ে পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু দ্রব্যমূল্য ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ দিশেহারা : আমিনুল লিবিয়ায় নিয়ে সালথার যুবককে নির্যাতনের ঘটনায় মামলা, গ্রেফতার ১ মনুষ্য চামড়ায় তৈরি বইয়ের মলাট সরানো হলো হার্ভাড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আওয়ামী লীগকে বর্জন করতে হবে : ডা: ইরান আমরা একটা পরাধীন জাতিতে পরিণত হয়েছি : মেজর হাফিজ

সকল