২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

পেঁয়াজে অস্থিরতার মধ্যেই মণপ্রতি ২০০ টাকা বাড়ল ভোজ্যতেলের দাম

-

সঙ্ঘবদ্ধ সিন্ডিকেট পেঁয়াজের বাজার অস্থির করে তোলার পর এবার মণপ্রতি প্রায় ২০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে ভোজ্যতেলের দাম। ফলে চাল, পেঁয়াজের পর ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধিতে নাভিশ্বাস উঠছে সাধারণ মানুষের।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চট্টগ্রাম খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে গতকাল বৃহস্পতিবার প্রতি মণ সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছিল ৩৪০০ টাকা দরে, যা এর আগের দিন ছিল ৩২৯০ টাকা। প্রতি মণ সুপার পাম তেল বিক্রি হচ্ছিল ৩২০০ টাকা দরে, যা এর আগের দিন বিক্রি হয় ৩ হাজার টাকা দরে। প্রতি মণ পাম তেল বিক্রি হয় ২৯৯০ থেকে ৩ হাজার টাকা দরে, যা এর আগের দিন ছিল ২৮৭০ টাকা।
এ দিকে, ভারতের পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের ঘোষণায় সিন্ডিকেটের কারসাজিতে অস্থির হয়ে উঠা পেঁয়াজের বাজার এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। বরং অভিযোগ উঠেছে, ভারত থেকে আগের ঋণপত্র খোলা পেঁয়াজ আসার খবরে গত বুধবার পাইকারিতে পেঁয়াজ প্রতি কেজি ৫৫ টাকায় নেমে এলেও সরকারের নমনীয় অবস্থানের সুযোগ নিয়ে গতকাল আবারো বেড়েছে কেজি প্রতি ১০ টাকা। আগের কেনা পেঁয়াজ গতকালও প্রায় দ্বিগুণ দামে ৬৫ টাকা কেজি দরে পাইকারিতে বিক্রি হচ্ছিল খাতুনগঞ্জে। খুচরা বাজারেও এর প্রভাব ছিল সমানতালে। প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছিল ৭০-৭৫ টাকা কেজি দরে।
তবে পেঁয়াজ আমদানির জন্য বিকল্প দেশের দিকে ঝুঁকছেন ব্যবসায়ীরা। ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের পর এরই মধ্যে চীন, মিসর, পাকিস্তান, মিয়ানমারসহ সাতটি দেশ থেকে প্রায় ৩০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতিপত্র ইস্যু করেছে চট্টগ্রামস্থ কৃষি বিভাগের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ কেন্দ্র। তবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভারতের রফতানি বন্ধের পরিপ্রেক্ষিতে পেঁয়াজের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় অন্য রফতানিকারক দেশগুলোর ব্যবসায়ীরাও সুযোগ নিচ্ছেন। হঠাৎ চাহিদার কারণে টনপ্রতি ১০০ ডলার দাম বাড়ানো হয়েছে বলে দাবি আমদানিকারকদের। অবশ্য ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের ঘোষণা দেয়ার পর পরই চট্টগ্রামের অনেক মৌসুমি আমদানিকারক সংশ্লিষ্ট দফতরের অনুমতি নিয়ে পরের দিনই পেঁয়াজ আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলা শুরু করে। এ ধরনের এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে নয়া দিগন্তকে বলেন, চীন থেকে প্রতি টন ৪২৫ ডলার মূল্যে পেঁয়াজ আমদানির ঋণপত্র খোলা হয়েছে। সেই হিসাবে প্রতি কেজি পেঁয়াজের আমদানি মূল্য পড়ে ৩৫ টাকার কাছাকাছি। ঋণপত্র খোলা এসব পেঁয়াজ দেশে পৌঁছতে এই মাস গড়িয়ে যাবে মন্তব্য করে ওই ব্যবসায়ী জানান, এই সময়ের মধ্যে সিন্ডিকেট মানুষকে জিম্মি করে নিজেদের পকেট পুরবে। একাধিক খুচরা ব্যবসায়ী এ প্রতিবেদককে অভিযোগ করে বলেন, সরকারের নমনীয়তার সুযোগ নিয়েছে পাইকাররা। বাজার স্থিতিশীল হতে এক মাস লাগবে বাণিজ্য মন্ত্রীর এমন ঘোষণায় গতকাল আবারো কেজি প্রতি ১০ টাকা বাড়িয়ে পেঁয়াজ পাইকারিতে ৬৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হচ্ছে বলে তাদের অভিযোগ। সরকার কঠোর হলে দাম বাড়াতে পারত না বলেও তাদের দাবি।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধ করলেও বর্তমানে যে পেঁয়াজ বাজারে রয়েছে তা আগের মূল্যে কেনা। এ ক্ষেত্রে দাম বাড়ানোর কোনো যৌক্তিক কারণ না থাকলেও নিত্য এই পণ্যটি এখন সাধারণ ক্রয়ক্ষমতার বাইরে। পাশাপাশি গত কোরবানির পর থেকে সব ধরনের চাল বস্তাপ্রতি ২০০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি এবং সর্বশেষ গতকাল পাইকারিতে সব ধরনের ভোজ্যতেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় নাভিশ্বাস উঠেছে করোনায় কর্মহীন ও আয়বঞ্চিত বা আয় সীমিত হওয়া মানুষের।
প্রসঙ্গত চলতি মাসের গোড়ার দিকে হঠাৎ করে চট্টগ্রামে পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। কেজি প্রতি ২০ টাকারও বেশি দাম বেড়ে যায়। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে ৪০ টাকায় নেমে আসে প্রতি কেজি পেঁয়াজ। গত ১৪ সেপ্টেম্বর রাতেও প্রতি কেজি পেঁয়াজ খুচরা দোকানে ৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। কিন্তু পর দিনই পাল্টে যায় চিত্র।


আরো সংবাদ



premium cement