২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

ঘণ্টায় ঘণ্টায় বাড়ছে পেঁয়াজের দাম

খুচরা বিক্রেতারা দোষ চাপালেন আড়তদারকে; পাইকারি বিক্রেতারা মুখ খুলতে নারাজ; আমদানি শুল্ক কমানোর আশ্বাস অর্থমন্ত্রীর
-

রাজধানীর মানিক নগরের ছয় তলা গলির সবুর মিয়া। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে স্থানীয় কাঁচাবাজারে গিয়ে সারির প্রথম দোকানির কাছ থেকে জানতে পারেন পেঁয়াজের কেজি ৯০ টাকা। হাঁটতে হাঁটতে তিনি সারির শেষ দোকানে গিয়ে জানতে পারেন ওই দোকানে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা। আর একটু পচন ধরেছে এমন পেঁয়াজের কেজি ৮০ টাকা। ঘুরে তিনি সারির ওই প্রথম দোকানে গিয়ে আবার জানতে চান পেঁয়াজের দাম। এবার দোকানি কেজি ১০০ টাকা চান। সবুর মিয়া জানতে চান ১০ মিনিট হলো না, এর মধ্যেই ১০ টাকা বেড়ে গেছে। দোকানির জবাবÑ দাম বেড়ে গেছে। এভাবেই ক্ষণে ক্ষণে বাড়ছে পেঁয়াজের দাম! আবার কোনো কোনো দোকানে ১১০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে পেঁয়াজ। অথচ এই পেঁয়াজ কিন্তু বাড়তি দামে আমদানি হয়নি! কিন্তু দোকানি বলছেন, পাইকারি বাজার থেকে তাদের বাড়তি দামে কিনতে হয়েছে। তবে ঢাকা ও ঢাকার আশপাশের এলাকার গুদামগুলোতে শত শত বস্তা পেঁয়াজ মজুদ করার অভিযোগ রয়েছে।
রাজধানীতে গত তিন দিনে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। সারা দেশেই এই অবস্থা। ভারত থেকে হঠাৎ পেঁয়াজ আসা বন্ধ হওয়ায় দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী ও আড়তদাররা। অনেকে এরই মধ্যে বস্তায় বস্তায় পেঁয়াজ গুদামে ঢুকিয়ে ফেলেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এ দিকে সাধারণ ক্রেতাদের অধিকার সংরক্ষণেও কারো কোনো উদ্যোগ নেই।
গতকাল বুধবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে পেঁয়াজের দাম যে যেভাবে পারছে নিচ্ছে। ১৪ সেপ্টেম্বর রাতে যে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬৫ টাকায় গতকাল তা বিক্রি হয়েছে ১০০-১১০ টাকায়। পেঁয়াজের এই বাড়তি দাম কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে গোপীবাগের খুচরা বিক্রেতা সেকেন্দার জানান, পাইকারি বাজার থেকে তাদের বেশি দামে কিনতে হয়েছে। যে কারণে তারাও বেশি দামে বিক্রি করছেন। সেকেন্দার জানান, গতকাল পাইকারি বাজার থেকেই তারা ৮৫ টাকায় পেঁয়াজ কিনেছেন। সেকেন্দারসহ রাজধানীর যেসব খুচরা বিক্রেতা রয়েছেন তারা সাধারণত মৌলভীবাজার, কাওরানবাজার ও যাত্রাবাড়ী অথবা টঙ্গীর পাইকারি বাজার থেকে পেঁয়াজ সংগ্রহ করে থাকেন। তারা যে দামে কেনেন তার চেয়ে হয়তো কেজিতে ৫-১০ টাকা বেশিতে বিক্রি করেন, এটাই তাদের লাভ। সেকেন্দার জানান, তাদের মতো খুচরা বিক্রেতাদের পেঁয়াজ গুদামজাত করা বা সিন্ডিকেট করে কোনো কিছুর দাম বাড়ানো-কমানো সম্ভব নয়। এটা বড় বড় ব্যবসায়ীরা করে থাকেন।
মানিকনগর বাজারের সবুজ নামের এক খুচরা ব্যবসায়ী জানান, তারা দিনে কেনেন, দিনে বিক্রি করেন। যে রেটে কেনেন তার চেয়ে কিছু বেশিতে বিক্রি করেন। ওটাই তাদের লাভ। তবে এখন মোবাইল ফোনের যুগে পাইকারি বাজারে দাম বেড়ে গেলে সেই সুযোগ কিছু সময়ের জন্য খুচরা বিক্রেতারাও নিয়ে নেন। কিন্তু তা বেশি সময়ের জন্য নয়।
এ দিকে ক্রেতারা বলছেন, যে পেঁয়াজ এখন বাড়তি দামে তাদের কিনতে হচ্ছে; তাতো ব্যবসায়ীরা বেশি দামে আমদানি করেননি। তাহলে এই পেঁয়াজ কেন বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে? রাজধানীর সেগুনবাগিচা এলাকার বাসিন্দা জাকির বলেন, গতবার প্রতি কেজি পেঁয়াজ ২৫০ টাকা দিয়েও কিনে খেতে হয়েছে। এবার হঠাৎ করেই ৫০ টাকার পেঁয়াজ ১০০ টাকা হয়ে গেলো! ভারত থেকে যেই গাড়ি আসা বন্ধ হয়ে গেলো অমনি পেঁয়াজের দাম বাড়িয়ে দিলেন ব্যবসায়ীরা। প্রশ্ন হচ্ছেÑ ওই পেঁয়াজতো তাদের বেশি দামে আমদানি করতে হয়নি। তাহলে আগে আমদানি করা পেঁয়াজ কেন বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে? শিপলু নামে অপর এক ক্রেতা বলেন, আগের রাতেও পেঁয়াজ ছিল ৮০ টাকা। গতকাল সকালেও যারা কিনেছেন তারা ৯০ টাকা দিয়েছেন। আর দুপুরের দিকে সেই পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ১০০-১১০ টাকায়। এভাবে ঘণ্টায় ঘণ্টায় কারা বাড়াচ্ছে পেঁয়াজের দাম। আর বাজার যাদের মনিটরিংয়ের কথা তারা কোথায়? তার দাবিÑ রাজধানী ও আশপাশের পাইকারি বাজারগুলোতে আড়তদারদের গুদামে অভিযান চালানো হোক। তাহলে পেঁয়াজের দাম কমে যাবে। মাহমুদা নামের এক গৃহিণী বলেন, দুপুরে বাংলাদেশ টেলিভিশনের খবরে দেখেছেন চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ পাইকারি আড়তে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকায় তাহলে ঢাকায় সেই পেঁয়াজ কেন ১০০ টাকা কেজি! এ ব্যাপারে রাজধানীর কাওরানবাজারসহ বেশ কয়েকটি বাজারের পাইকারি আড়তদারের সাথে কথা বলার চেষ্টা করা হলে তারা কেউ কথা বলতে রাজি হননি। একাধিক ভোক্তা বলেছেন, বাজারে পেঁয়াজের কোনো কমতি নেই। প্রতিটি দোকানেই পেঁয়াজ আছে। তাহলে সমস্যা কোথায়? বাড়তি দামে আমদানি করলে বাড়তি দামে তারা বিক্রি করতেন, মেনে নেয়া যেত। কিন্তু এখনতো মনে হয় ব্যবসায়ীরা সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে ফেলেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক টঙ্গীর এক আড়তদার বলেন, আড়তদাররা হাজার হাজার বস্তা পেঁয়াজ ইতোমধ্যেই মজুদ করে ফেলেছেন। এখানে দুই-একজন ব্যবসায়ী ভালো থাকার চেষ্টা করলেও তা সম্ভব নয়। হয়তো ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হবে, না হলে সবার সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে।
একাধিক সূত্র বলেছে, দ্বিগুণের বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করার সাথে আসলে অনেকে জড়িত। মাত্র দুই দিনের মাথায় ৩৫-৪০ টাকা দাম বেড়ে গেলো অথচ তা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কোনো মাথাব্যথা নেই; এটা বড় ধরণের প্রশ্ন। ব্যবসায়ীরা এমন কারসাজি করার সাহস কোথায় পান, সেটিও এখন ভোক্তাদের প্রশ্ন?
এ দিকে অনুমতি থাকা সত্ত্বেও ভারত যে পেঁয়াজ আটকে দিয়েছে সেই পেঁয়াজ নিয়ে আসার চেষ্টা চলছে বলে বেনাপোলের এক আমদানিকারক জানিয়েছেন। আমাদের শার্শা প্রতিনিধি জানান, বেনাপোলের রাহা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী রফিকুল ইসলাম নয়া দিগন্তকে বলেন, তাদের যে এলসি করা পেঁয়াজ আছে তা বাংলাদেশে পাঠানোর জন্য সেখানকার ব্যবসায়ীরা রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছে। কিন্তু সাড়া মেলেনি। এলসি করা পেঁয়াজের ট্রাকগুলো দেশে প্রবেশের পর হয়তো বাড়তি মূল্যে এলসি করবেন আমদানিকারকরা।
আমদানি শুল্ক কমানো বিবেচনায় : অর্থমন্ত্রী
পেঁয়াজ আমদানিতে ৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক কমানোর বিষয়টি বিবেচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি বলেন, আমাদের হাতে যেটা আছে যদি রাজস্ব খাতে কোনো কিছু করার থাকে অবশ্যই ছাড় দেয়া হবে। এ ক্ষেত্রে অতীতেও বিবেচনা করা হয়েছে, এখনো বিবেচনা করা হবে। অনলাইনে গতকাল সরকারি ক্রয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠক শেষে সংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকরা তাকে প্রশ্ন করেনÑ ভারত পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের খবরে দেশের বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে, এ পরিপ্রেক্ষিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এনবিআরকে চিঠি দিয়েছে পেঁয়াজের ওপর আমদানি শুল্ক ৫ শতাংশ কমানোর জন্য। তারপরও পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাচ্ছে, জনগণ দুর্ভোগে পড়ছেন। এই দুর্ভোগ লাঘবে কী পদক্ষেপ নেবেন জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমাদের জনগণের দুর্দশা বাড়ুক এটা আমরা চাই না। প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে আমরা কেউ এই প্রত্যাশা করি না।
ব্যবসায়ীদের অসৎ উদ্দেশ্যকে আপনি একজন ব্যবসায়ী হিসেবে কিভাবে দেখবেনÑ প্রশ্নের জবাবে মুস্তফা কামাল সাংবাদিকদের উদ্দেশে পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে বলেন, প্রথমতো আমি ব্যবসায়ী ছিলাম, তা আপনি কী করে জানলেন। আমি একজন চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট, পাশাপাশি একটি অডিটফার্মের মালিক। সেখানে কাজ করাকে কোন জাতের ব্যবসা বলবেন?
তিনি আরো বলেন, দ্বিতীয়ত. এই মুহূর্ত থেকে গত ১০ বছরে আমার কোনো ব্যবসা আপনার নজরে পড়েছে? এই তথ্য কোথায় পেলেন। আমি ব্যবসায়ী ছিলাম এখনো ব্যবসায়ী থাকতে পারি? আমি এখন মন্ত্রী, মন্ত্রী হলে ব্যবসা করতে পারে না। এটা ইল্লিগ্যাল। আর আমি ব্যবসা করিও না। ভালোভাবে আপনারা সবাই জানেন। আমি সব কিছু বিক্রি করে অনেক আগেই পরিষ্কার।
অসাধু ব্যবসায়ীদের জন্য কী ব্যবস্থা নেবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার একটু অংশ ছিল। যদি কোনো কারণে রাজস্ব বাড়িয়ে দেই, সে কারণে যদি দাম বাড়ে সেটার জন্য অর্থমন্ত্রণালয় দায়ি। আর বাকি অংশ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ। আমার মনে হয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে দেখাশুনা করছে। অতীতেও সমস্যা হয়েছিল পরে তা সমাধান হয়েছে। আর ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে আমার কিছু বলা লাগবে না। এখন যে আলোচনা হয়েছে তাই পরিষ্কার মেসেজ।
রফতানি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার আহ্বান : এ দিকে পেঁয়াজ রফতানির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার জন্য ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। ভারতীয় হাইকমিশনের মাধ্যমে এই অনুরোধ জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। গতকাল সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম এ কথা জানান। তিনি বলেন, কোনো পণ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়ার আগে বন্ধুপ্রতীম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে আগেভাগে জানানোর একটি অলিখিত সমঝোতা ভারতের সাথে আমাদের আছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বছর অক্টোবরে দিল্লি সফরকালে পেঁয়াজের মতো কোনো নিত্য ব্যবহার্য পণ্য রফতানি বন্ধের আগে বাংলাদেশকে আগে থেকে অবহিত করার অনুরোধ করেছিলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে পেঁয়াজ রফতানির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার জন্য ভারতকে আহ্বান জানিয়েছি। আশা করছি এর একটি ভালো ফলাফল পাব।’
ম্যাজিস্ট্রেট চলে যাওয়ার পরই বাড়ল দাম
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, রাজশাহী নগরীর বাজারে বর্তমানে প্রতি কেজি দেশী পেঁয়াজের দাম ৯০ থেকে ১০০ টাকা। আর ভারতীয় পেঁয়াজের দাম ৭০ থেকে ৮০ টাকা। গতকাল সকালে রাজশাহী জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত বাজারে ঢুকতেই দাম কিছুটা কমিয়ে দেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু আধা ঘণ্টা পর ম্যাজিস্ট্রেট চলে যাওয়ার সাথে সাথেই বেড়ে যায় পেঁয়াজের দাম। রাজশাহী নগরীর সাহেববাজারে এই দৃশ্য দেখা গেছে।
বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবু আসলাম ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাজমুল হোসাইন বাজারে ঢুকেন । তখন ব্যবসায়ীরা পেঁয়াজের দাম কমিয়ে দেন কেজিতে ২৫ থেকে ৩০ টাকা।
কিন্তু সাইফুল ইসলাম নামে এক ব্যবসায়ী অতিরিক্ত দামেই পেঁয়াজ বিক্রি করছিলেন। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাজমুল হোসাইন তাকে দুই হাজার টাকা জরিমানা করেন। এ সময় বাড়তি দাম না নেয়ার জন্য ব্যবসায়ীদের সতর্ক করা হয়। এরপর দুইজন ম্যাজিস্ট্রেট বাজার থেকে চলে যান। এরপরই আবারও দেশি পেঁয়াজ ৯০ থেকে ১০০ টাকা এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা যায়।
বগুড়ায় বাজার স্থিতিশীল
বগুড়া অফিস জানায়, ভারত সরকার নিয়মবহির্ভূতভাবে হঠাৎ করে পেঁয়াজ রফতানি বন্ধের কারইে বগুড়ায় পেঁয়াজের বাজার অস্থিতিশীল হওয়ার একদিন পরই কিছুটা স্থিতিশীল হয়েছে। বাংলাদেশ-ভারত মঙ্গলবার বগুড়ায় প্রতি কেজি পেঁয়াজ কেনাবেচা হয়েছে ১০০ টাকা পর্যন্ত। তবে দিল্লিতে বাংলাদেশ-ভারত দু’দেশের উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের পর পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাক ছেড়ে দেয়ার আশ^াস এবং জেলা প্রশাসনের তদারকির কারণে গতকাল বগুড়ায় পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি পেঁয়াজ কেনাবেচা হয় ৮০ থেকে ৯০ টাকা দরে। অবশ্য খুচরা বাজারে কোথাও কোথাও ১০০ টাকা কেজি দরেও বেচাকেনা হয়েছে। এ ছাড়া কোনো কোনো পাড়া-মহল্লায় খুচরা বিক্রেতারা ১২০ টাকা কেজিও বিক্রি করেছেন।
বগুড়া শহরের পাইকারি রাজাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন আড়তে অনেক পেঁয়াজ মজুদ রয়েছে। অথচ দাম চড়া। কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা জানান, দাম বাড়ার আতঙ্কে হঠাৎ করে চাহিদার অতিরিক্ত পেঁয়াজ কিনছেন ক্রেতারা। তাই দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে গতকাল আর বাড়েনি। বগুড়া রাজাবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও পেঁয়াজ আমদানিকারক পরিমল প্রসাদ জানান, স্থল বন্দরগুলোতে আটকে রাখা পেঁয়াজ বোঝাই ট্রাক ছেড়ে দেয়ার আশ^াস দিয়েছে ভারত সরকার। এ ছাড়া গত ১৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পেঁয়াজের জন্য যেসব এলসি করা হয়েছে তা রফতানির জন্য ভারত সরকারের সাথে দেনদরবার চলছে। আশা করছি সে পেঁয়াজও পাওয়া যাবে।
টিসিবির বিক্রি প্রভাব ফেলছে না
খুলনা ব্যুরো জানায়, খুলনা মহানগরীতে একদিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি ৪০ টাকা বেড়েছে। নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্য বিক্রির ট্রাকগুলোর সামনে সাধারণ মানুষের ভিড় বাড়ছে। তবে টিসিবির পেঁয়াজের দামে বাজারে কোনো প্রভাব ফেলছে না।
টিসিবি সূত্র জানায়, গত রোববার থেকে নগরীর ময়লাপোতা মোড়, ডিসি অফিস সংলগ্ন রোড, শিববাড়ি মোড়, বয়রা বাজার মোড়, দৌলতপুর নতুন রাস্তার মোড়ে ডিলাররা ট্রাকে পণ্য বিক্রি করছেন। সাধারণ মানুষ ভোর থেকে অপেক্ষা করছেন লাইনে দাঁড়িয়ে। সকাল ৯টা থেকে বিক্রি শুরু হচ্ছে। এসব পয়েন্টে টিসিবির পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৩০ টাকা। একজন ভোক্তা সর্বোচ্চ ২ কেজি করে এসব পণ্য কিনতে পারছেন।
এ দিকে নগরীর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, এক দিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজি ১০০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। দেশী পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা দরে। গত রোববার দাম ছিল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। অন্য দিকে আমদানিকৃত পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়।
ব্যবসায়ীরা জানান, পেঁয়াজ রফতানি বন্ধে ভারতের ঘোষণার পর থেকেই আড়তদার এবং আমদানিকারকরা ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়েছেন। তারা বাজারে পেঁয়াজ সরবরাহও কমিয়ে দিয়েছেন। ফলে পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতারাও দাম বাড়াতে বাধ্য হয়েছেন। কেসিসি পাইকারি কাঁচাবাজারের ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন বলেন, পেঁয়াজের দাম সে হারে বাড়েনি। খুচরা বিক্রেতারা কেন বাড়াচ্ছেন? আমরা এখনো পর্যন্ত এক দাঁড়ি (৫ কেজি) পেঁয়াজ বিক্রি করছি ১৮০ টাকা দরে। তাহলে খুচরা বাজারে সেই পেঁয়াজ কেন ১০০ টাকা কেজি বিক্রি হবে?
মূল্য নিয়ন্ত্রণে টাস্ক ফোর্স
সাতক্ষীরা সংবাদদাতা জানান, সাতক্ষীরায় পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে টাস্ক ফোর্স গঠন করা হয়েছে। গতকাল ভোমরা স্থলবন্দরে টাস্ক ফোর্সের অভিযানে পেঁয়াজ মজুদ রাখার অভিযোগে ছয়টি মামলায় পাঁচজন ব্যবসায়ীকে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়।
এ দিকে সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দর দিয়ে তৃতীয় দিনের মতো গতকাল ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ রয়েছে। বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের আগে এলসি করা দেড় শতাধিক পেঁয়াজের ট্রাক ভোমরা বন্দরে প্রবেশের অপেক্ষায় ভারতের ঘোজাডাঙ্গায় দাঁড়িয়ে রয়েছে বলে জানা গেছে। এ দিকে পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে জেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা দুপুরে শহরের সুলতানপুর বড় বাজারের ব্যবসায়ীদের সাথে মতবিনিময় করেছেন।
মতবিনিময়কালে ব্যবসায়ীরা বলেন, ভারত সরকার রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে শুনে ক্রেতারা একেকজন পাঁচ থেকে দশ কেজি করে পেঁয়াজ কিনছেন। অনেকে আরো বেশি নিচ্ছেন। এভাবে প্রয়োজনের অতিরিক্ত পেঁয়াজ ক্রয় করায় হঠাৎ বাজারে সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এ ছাড়া বন্দরের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী মূল্য বৃদ্ধির সুযোগ নিয়ে বেশি মুনাফা লাভের আশায় পেঁয়াজ মজুদ করে রেখেছেন। যে কারণে বাজারে কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টির ফলে মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। আশা করা যাচ্ছে আগামী ২-১দিনের মধ্যে পেঁয়াজের দামে কমে যাবে।
৪৫ হাজার টাকা জরিমানা
আমতলী (বরগুনা) সংবাদদাতা জানান, বরগুনার আমতলী উপজেলার পেঁয়াজের কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে অতিরিক্ত মূল্যে পেয়াঁজ বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। দেশী পেঁয়াজ প্রতি কেজি ১০০ এবং ভারতীয় পেঁয়াজ ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পেঁয়াজের বাজার অস্থির থাকায় ক্রেতাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। গতকাল দুপুরে পেঁয়াজের মূল্য নিয়ন্ত্রণে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর ও র্যাব-৮ এর যৌথ অভিযানে দুই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে ৪৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর বরগুনা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ সেলিম বলেন, বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করায় জরিমানা করা হয়েছে।
আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো: আসাদুজ্জামান বলেন, কৃত্রিম সঙ্কট সৃষ্টি করে বেশি দামে পেঁয়াজ বিক্রি করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।


আরো সংবাদ



premium cement