২০ এপ্রিল ২০২৪, ০৭ বৈশাখ ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫
`

সমীক্ষা ছাড়াই প্রকল্প

প্রকল্প থেকে কাক্সিক্ষত ফলাফল অর্জন হচ্ছে না; প্রয়োজনীয়তা নির্ধারণ করা সম্ভব হচ্ছে না; প্রকল্পের ব্যয় প্রাক্কলন হচ্ছে অনুমানের ভিত্তিতে
-

সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ছাড়াই উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনার হিড়িক পড়েছে। দায়সারা সম্ভাব্যতা সমীক্ষায় প্রকল্পের প্রাক্কলন করে প্রকল্প অনুমোদন করিয়ে নেয়া হচ্ছে। ফলে দফায় দফায় সংশোধন করা হয় অনুমোদনের পর থেকে। অনেক ক্ষেত্রে প্রকল্পটি সমাপ্তির মুখও দেখে না। কিন্তু বিনিয়োগ প্রকল্প ২৫ কোটি টাকার বেশি হলেই সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু বেশির ভাগ প্রকল্পে তা মানা হচ্ছে না। কুমিল্লায় ৮৪.০৮ কিলোমিটার মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প, মাদরাসা শিক্ষকদের শিক্ষণ দক্ষতা বৃদ্ধির প্রশিক্ষণ, ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়কে আন্ডারপাস ও ইউলুপ নির্মাণ প্রকল্পগুলো সম্ভাব্যতা সমীক্ষা ছাড়াই প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছে। সমীক্ষা না করার কারণে প্রস্তাবনায় অনেক অসামঞ্জস্যতা ও ত্রুটি এবং অতি মাত্রায় ব্যয়ের লক্ষণ দেখা যায়। পর্যালোচনায় অনেক ধরনের অসামঞ্জস্যতা বেরিয়ে আসে বলে পরিকল্পনা কমিশনের সংশ্লিষ্টরা জানান।
প্রস্তাবনায় দেখা যায়, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে কুমিল্লার জেলা মহাসড়কে যথাযথ প্রশস্তকরণ ও উন্নয়নের জন্য ৯৮২ কোটি ৭২ লাখ টাকা ব্যয়ের একটি প্রকল্প প্রস্তাব করেছে। প্রকল্পটি তিন বছরে বাস্তবায়নের পরিকল্পনা। চলতি বছর অনুমোদন পেলে আগামী ২০২৩ সালে প্রকল্পটি সমাপ্ত করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। ৮৪.০৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য উল্লেখ করা হলেও প্রতিটি রাস্তার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থের বিষয়ে কোনো আলোকপাত করা হয়নি। প্রকল্পের জন্য ৮৩.৫৭ হেক্টর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব করা হয়েছে। অথচ ডিপিপিতে অন্তর্ভুক্ত সম্ভাব্যতা সমীক্ষায় ভূমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হবে না বলে উল্লেখ করা হয়েছে। সম্ভাব্যতা সমীক্ষাটি স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। সড়ক যথাযথমানে উন্নীতকরণের জন্য যে সমস্ত প্যারামিটার বিবেচনায় আনতে হয়, তার কোনো বিস্তারিত বিবরণ নেই। একই সাথে আর্থিক ও অনৈতিক বিশ্লেষণেরও কোনো উল্লেøখ করা হয়নি। ১.৭০ কিলোমিটার বাঁক সরলীকরণ ও প্রশ্বস্তকরণ করার জন্য ১ কোটি ৫৭ লাখ ৬৯ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। কিন্তু ১.৭০ কিলোমিটার সড়কে কতটি বাঁক সরলীকরণ করা হবে তা বিবরণ নেই ডিপিপিতে।
কুমিল্লা সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, ভুলবশত উল্লেখ করা হয়েছে। সড়কগুলো ৩.৭ মিটার থেকে সাড়ে ৫ মিটার প্রস্থে উন্নীত করা প্রয়োজন বিধায় ভূমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হবে।
অন্য দিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম জাতীয় মহাসড়কে তিনটি আন্ডারপাস ও পদুয়া বাজার ইন্টারসেকশনে দু’টি ইউলুপ নির্মাণ হবে। যার ব্যয় ধরা হয়েছে ৬১২ কোটি ৩ লাখ টাকা। যেখানে ২৫ কোটি টাকার বেশি খরচের প্রকল্প হবে, সেখানে প্রস্তাবনার আগেই ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি বা সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করা বাধ্যতামূলক। কিন্তু এই প্রকল্পে এটা না করেই প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। এই প্রকল্পে ১.৬৩ হেক্টর জমি অধিগ্রহণের জন্য ৬৭ কোটি ৫৮ লাখ ৩৫ হাজার টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। স্থান আবার সঠিকভাবে পরিদর্শন করে স্বয়ংসম্পূর্ণ সম্ভাব্যতা সমীক্ষা করার জন্য কমিশন থেকে বলা হয়েছে। প্রকল্পে কোভিড-১৯ পরিস্থিতির পরও কেন বৈদেশিক প্রশিক্ষণ খাতটি রাখা হয়েছে। সম্ভাব্যতা যাচাই করেই ব্যয়ের যৌক্তিকতা নির্ধারণ করতে হবে।
টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট এসডিজির অর্জনের নিমিত্তে মাদরাসা শিক্ষকগণের শিক্ষণ দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে। যার খরচ ধরা হয়েছে ৪৯ কোটি ৭৫ লাখ ৭৮ হাজার টাকা। তিন বছরের এই প্রকল্পেও সম্ভাব্যতা যাচাই না করেই প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনের কাছে পাঠানো হয়েছে। অনেক অসম্পূর্ণতা দিয়েই প্রকল্প প্রণয়ন করা হয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের আর্থসামাজিক অবকাঠামো বিভাগের সদস্য (সচিব) আবুল কালাম আজাদ সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) নিয়ে সচিবদের সাথে পর্যালোচনা সভায় জানান, ফিজিবিলিটি স্টাডি বা সম্ভাব্যতা সমীক্ষা না করে বা সঠিকভাবে স্টাডি না করে প্রকল্প প্রণয়ন করার কারণে প্রকল্পের উদ্দেশ্য অনুযায়ী কাক্সিক্ষত ফল পাওয়া যায় না। আর এই স্টাডি না করার কারণে প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে সমস্যা চিহ্নিহ্নতকরণ, প্রয়োজনীয়তা যাচাই, আর্থিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষণ না করা বা কারিগরি দিক যথাযথভাবে বিবেচনায় আসে না। ফলে ব্যয়ের ক্ষেত্রে ওভার এস্টিমেট বা অবাস্তব ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়।


আরো সংবাদ



premium cement