বৈরুত বিস্ফোরণের পর রাসায়নিক পণ্য নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ
- নূরুল মোস্তফা কাজী চট্টগ্রাম ব্যুরো
- ১৩ আগস্ট ২০২০, ০০:০০
লেবাননের বৈরুতে ভয়াবহ বিস্ফোরণের পর চট্টগ্রাম বন্দর সংরক্ষিত এলাকায় আমদানিকৃত বিভিন্ন রাসায়নিক ও বিপজ্জনক পণ্যের বর্তমান অবস্থা জানতে নড়েচড়ে বসেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে দীর্ঘদিন বন্দরের শেডে পড়ে থাকা রাসায়নিক ও বিপজ্জনক পণ্য দ্রুত নিলামে তোলার জন্য কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি এ ধরনের পণ্যের সরেজমিন চিত্র এবং করণীয় নির্ধারণে সুপারিশ প্রণয়নে বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধি সমন্বয়ে ৬ সদস্যের কমিটিও করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ।
মাত্র ক’দিন আগে বন্দরের ৩নং শেডে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা এবং সেসময় বিকট শব্দে বিস্ফোরণের ঘটনার প্রকৃত কারণ এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে জানা না গেলেও বৈরুত বিস্ফোরণের পর বিষয়টি নতুন করে সামনে এসেছে। এর পাশাপাশি ইতঃপূর্বে বন্দরের এনসিটি ইয়ার্ডে আমদানিকৃত রাসায়নিক বোঝাই ড্রাম কনটেইনার থেকে কভার ভ্যানে তোলার সময় বিস্ফোরণ ঘটেছিল। এসব ঘটনা এখন ভাবিয়ে তুলেছে বন্দর কর্তৃপক্ষকে।
বন্দর সূত্র জানিয়েছে, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে এলসিএল কনটেইনারযোগে (একাধিক আমদানিকারকের) আমদানিকৃত রাসায়নিক ও বিপজ্জনক পণ্য নির্দিষ্ট সময়ে আমদানিকারক ডেলিভারি না নিলে ‘পি’ শেডে সংরক্ষণ করে রাখা হয়। এই শেডটিতে দুই দশকের বেশি সময় আগের পণ্যও এখন পর্যন্ত সংরক্ষিত রয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। বৈরুত বিস্ফোরণের পর বন্দরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ইতোমধ্যে শেডটি পরিদর্শন করেছেন। বন্দরের একাধিক সূত্র শেডটির ব্যবস্থাপনা আধুনিক নয় বলে জানালেও বন্দর কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, রাসায়নিক ও বিপজ্জনক আমদানি পণ্য নিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ বৈরুতের ঘটনার আগে থেকেই সব সময় সচেতন রয়েছে। সেখানে অত্যাধুনিক ফায়ার ফাইটিং সরঞ্জামাদি মজুদ রাখা হয়েছে।
আন্তর্জাতিক নৌ সংস্থা প্রণীত ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম ডেঞ্জারাস গুডস বা আইএমডিজি কোড ৯টি ক্যাটাগরির পণ্যকে বিপজ্জনক পণ্যের অন্তর্ভুক্ত করেছে। এর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের তরল ও কঠিন দাহ্য পদার্থ, বিস্ফোরক, বিপজ্জনক গ্যাস, রাসায়নিক, সার, বিষাক্ত, তেজস্ক্রিয় ও জারণ পদার্থ, বর্জ্য তেল অন্যতম। এসব পণ্য পরিবহন থেকে সংরক্ষণ পর্যন্ত সতর্কতা মেনে চলতে হয়।
এ দিকে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (হারবার ও মেরিন) কমডোর এম শফিউল বারীকে প্রধান করে পি শেডে রক্ষিত কেমিক্যাল ও হ্যাজার্ডস মালামালের বর্তমান অবস্থা সরেজমিন পরিদর্শন করে সুপারিশসহ প্রতিবেদন প্রদানের জন্য ৬ সদস্যের কমিটি করা হয়েছে। বন্দরের পরিচালক নিরাপত্তা ও পরিচালক পরিবহন, কাস্টম হাউজের প্রতিনিধি, পরিবেশ অধিদফতর চট্টগ্রামের একজন প্রতিনিধি এবং চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের রাসায়নিক পরীক্ষককে কমিটির সদস্য করা হয়েছে। কমিটির টার্মস অব রেফারেন্সে বলা হয়েছেÑ পি শেডে রক্ষিত কেমিক্যাল ও হ্যাজার্ডস মালামালের তালিকা প্রণয়ন, মালামালগুলো কতদিন ধরে রক্ষিত রয়েছে তার হিসাব নিরূপণ, নিলাম বা ধ্বংসযোগ্য মালামালের তালিকা প্রণয়ন, এসব মালামাল বন্দরে সংরক্ষণে নিরাপত্তা পর্যাপ্ত কি না এবং পর্যাপ্ত না হলে করণীয় সম্পর্কে সুপারিশ প্রদান, সংরক্ষিত মালামালে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর উপাদান আছে কি না চিহ্নিত করা, এ ধরনের পণ্য সংরক্ষণ ও ডেলিভারির সাথে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর বিদ্যমান আইন পর্যাপ্ত কি না, পর্যাপ্ত না হলে করণীয় সম্পর্কে সুপারিশ প্রদান এবং প্রাসঙ্গিক বিষয়ে সুপারিশ প্রদান।
চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো: ওমর ফারুক নয়া দিগন্তকে বলেন, আমদানিকৃত রাসায়নিক পদার্থ এবং বিপজ্জনক পণ্য নিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ সব সময়ই সজাগ। বৈরুতের ঘটনার পর আমরা আরো সতর্ক হয়েছি। আমদানি পণ্য যত কম সময় বন্দরে রাখা যায় এবং দীর্ঘদিন পড়ে থাকা রাসায়নিক পদার্থ কাস্টমস যাতে নিলামে তুলে বিক্রি করে সেজন্য ইতোমধ্যে কাস্টমস কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া পি শেডে রক্ষিত রাসায়নিক ও বিপজ্জনক পণ্য সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানতে বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের নিয়ে ৬ সদস্যের একটি কমিটি কাজ শুরু করেছে। এই কমিটি ৭ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দেবে বলে তিনি জানান।
আরো সংবাদ
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা
-
- ৫ঃ ৪০
- খেলা