২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫
`

উদ্বেগ কাটছে না শিক্ষার্থীদের

সিলেবাস বিষয়ে এনসিটিবির সভা আজ; পিইসি ও জেএসসির সিদ্ধান্ত আগামী সপ্তাহে; এইচএসসি পরীক্ষার সময়ও নির্ধারণ হয়নি
-

শিশুশ্রেণী থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত সব পর্যায়ের শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকরা এখন দিন কাটাচ্ছেন চরম উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায়। এক দিকে দীর্ঘ সময় ধরেই বন্ধ রয়েছে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, অন্য দিকে চলতি শিক্ষাবর্ষও প্রায় শেষের দিকে। নিয়মমতো অক্টোবর মাস থেকেই শুরু হয় বিদ্যালয় পর্যায়ে সব শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষার প্রস্তুতি। আর ডিসেম্বর মাসের আগেই শেষ করতে হয় পিইসি এবং জেএসসির মতো বড় দু’টি পাবলিক পরীক্ষা। সেই হিসেবে চলতি শিক্ষাবর্ষের আর মাত্র দুই মাস বাকি। ইতোমধ্যে পিইসি ও জেএসসি পরীক্ষা বাতিল এবং অন্যান্য শ্রেণীতে বার্ষিক পরীক্ষার পরিবর্তে অটো-পাসের বিষয়েও নানা ধরনের বক্তব্য আসছে। যদিও গতকাল মঙ্গলবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো: মাহবুব হোসেন পরীক্ষা বাতিলের এ ধরনের বক্তব্যকে গুজব বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
দেশের অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীদের উদ্বেগের কারণ হচ্ছে, প্রথমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে চলতি শিক্ষাবর্ষ আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি কিংবা মার্চ পর্যন্ত বর্ধিত করা হবে। এরপর বলা হয়েছে সিলেবাস কাটছাঁট করে স্বল্প পরিসরে হলেও ডিসেম্বরেই বার্ষিক পরীক্ষা নেয়া হবে। এখন আবার নতুন করে কেউ কেউ বলছেন বার্ষিক পরীক্ষাও নেয়া হবে না, বরং অটো-পাসের মাধ্যমে প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে ওপরের ক্লাসে প্রমোশন দেয়া হবে। অন্য দিকে এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষার সময়সূচিও এখনো নির্ধারণ হয়নি। আন্তঃশিক্ষা সমন্বয়ক বোর্ড থেকে শুধু জানানো হয়েছে যে, করোনা পরিস্থিতির উন্নতির পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ১৫ দিনের মধ্যেই এইসএসসি বা সমমানের পরীক্ষার সময়সূচি প্রকাশ করা হবে। স্বাস্থ্যবিধি মেনেই নেয়া হবে এই পরীক্ষা। অর্থাৎ প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মোট ৯টি শ্রেণীর বার্ষিক পরীক্ষা (পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণী বাদে এবং শিশু শ্রেণীসহ) এবং পিইসি ও জেএসসির মতো দুটি পাবলিক পরীক্ষা কিংবা এইচএসসি বা সমমানের কোনো পরীক্ষার বিষয়েই সুনির্দিষ্ট কোনো গাইডলাইন পাচ্ছে না শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা।
এ দিকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানায়, দেশের করোনা পরিস্থিতির সার্বিক বিবেচনায় সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরের মধ্যে স্কুল খোলা সম্ভব হলে সংক্ষিপ্ত সিলেবাসে পরীক্ষা নেয়া হবে। আর সেটা সম্ভব না হলে ‘অটো-পাস’ দেয়া হবে। উভয় ক্ষেত্রেই পাঠ্যবই বা সিলেবাসের যে অংশটুকু পড়ানো সম্ভব হবে না তার অত্যাবশ্যকীয় পাঠ পরের শ্রেণীতে যুক্ত করা হবে। শিক্ষার এই ‘রিকভারি প্ল্যান’ চূড়ান্ত করতে আজ বুধবার জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডে (এনসিটিবি) বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে বৈঠক ডাকা হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির কারণে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি), মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের ইবতেদায়ি শিক্ষা সমাপনী (ইইসি), জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষা নিয়েও এখন আবার নতুন করে ভাবছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
যদিও গত সপ্তাহে পিইসি এবং জেএসসি পরীক্ষার বিষয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে মুখ্যসচিব আহমদ কায়কাউসের উপস্থিতিতে শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিবের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে এ বিষয়ে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নেয়ার ইঙ্গিত মিলেছে। ওই সভার সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে উভয় মন্ত্রণালয়ে পৃথক দু’টি সারসংক্ষেপও তৈরি হচ্ছে। আগামী রোববার কিংবা সোমবারের মধ্যে এটি অনুমোদনের জন্য পাঠানো হতে পারে। দুই মন্ত্রণালয়ের নির্ভরযোগ্য সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
অন্য দিকে পরীক্ষা কেন্দ্রে স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করে সেপ্টেম্বর মাসের শেষ দিকে অথবা অক্টোবরের শুরুতে অনুষ্ঠিত হতে পারে এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে একটি রোডম্যাপ তৈরি করে বিভিন্ন প্রস্তুতিও শুরু করেছে শিক্ষা বোর্ডগুলো। করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে পরীক্ষা শুরু হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। কিন্তু তারপরেও এই ধাপের ১২ লাখ শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের উদ্বেগ কাটছে না।
এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো: মাহবুব হোসেন জানিয়েছেন, আমরা অনেকগুলো বিকল্প মাথায় নিয়েই ‘রিকভারি প্ল্যান’ নিয়ে কাজ করছি। যেহেতু এখনো করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি তাই কবে নাগাদ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলবে সেটি নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না, তাই আমাদের পক্ষেও অনেক কিছু সুনির্দিষ্ট করা সম্ভব হচ্ছে না।


আরো সংবাদ



premium cement