২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ১৭ রমজান ১৪৪৫
`

আগস্টের মধ্যভাগে ফের বন্যার শঙ্কা

রাজধানীর মিরপুরের দীঘিবাড়ি এলাকায় বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়া রাস্তায় চলছে নৌকা : নাসিম সিকদার -

আগামী ১৬ আগস্টের পর আবারো বন্যার পানি বাড়তে পারে। বিশেষ করে কুড়িগ্রামের চিলমারী, বগুড়ার সারিয়াকান্দি, গাইবান্ধার ফুলছড়ি, সিরাজগঞ্জের সদর ও কাজিপুর, জামালপুরের বাহাদুরাবাদ, টাঙ্গাইলের এলাসিন এবং মানিকগঞ্জের আরিচা পয়েন্টের পানি ওই সময়ে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। এ ছাড়া নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর পানি চলতি মাসের মধ্যভাগের পর বাড়তে পারে বলে শঙ্কা প্রকাশ করেছে বন্যা ও আবহাওয়া সংশ্লিষ্টরা। এ দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল আবারো ভাদ্র মাসের মাঝামাঝিতে পরবর্তী বন্যা নিয়ে সবাইকে সতর্ক করেছেন। এটি দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আশঙ্কাও তিনি প্রকাশ করেন। এর আগে দেশের ৩০টির বেশি জেলায় তিন দফা বন্যায় চরম দুর্ভোগে পড়ে লাখ লাখ মানুষ।
আবহাওয়া অধিদফতরের দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে বলা হয়, দেশের উত্তরাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি উন্নতি হতে হতে চলতি মাসের মাঝামাঝি সময়ে একেবারে স্বাভাবিক হয়ে আসতে পারে। তবে মাসের শেষ দিকে আবারো মৌসুমি বায়ুর কারণে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। ভারী বৃষ্টির কারণে উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদি বন্যা হতে পারে।
বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও পূর্বাভাস কেন্দ্রের একজন কর্মকর্তা জানান, মধ্য আগস্ট থেকে আবার পানি বাড়তে পারে। ফলে মাসের শেষে আবার একটি স্বল্পমেয়াদি বন্যার আশঙ্কা করছি আমরা। ১০ দিনের পূর্বাভাসে বলা হয়, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি আগামী ২৪ ঘণ্টায় কমতে পারে এবং তার পর বাড়া শুরু হতে পারে। গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি বাড়তে পারে। রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ পয়েন্ট, মুন্সীগঞ্জের ভাগ্যকুল পয়েন্ট এবং শরীয়তপুরের সুরেশ্বর পয়েন্টের পানি আগামী ৪৮ ঘণ্টায় কমতে পারে। এতে আগামী ৪৮ ঘণ্টায় এসব জেলার বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হতে পারে।
এ দিকে ঢাকার আশপাশের নদীগুলোর পানি স্থিতিশীল থাকতে পারে। আগামী ১৫ আগস্ট পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদীর পানি স্থিতিশীল থাকতে পারে এবং তার পর বাড়তে পারে। যার ফলে আগামী ৬ দিন এসব জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে। মিরপুর পয়েন্টের তুরাগ নদী এবং রেকাবি বাজার পয়েন্টে ধলেশ্বরী নদীর পানি আগামী ৫ দিন স্থিতিশীল থাকতে পারে। ঢাকার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি আগামী ৭ দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।
আবহাওয়াবিদ আবদুল মান্নান বলেন, এখন বৃষ্টি কমে এলেও মধ্যভাগ থেকে আবারো বাড়বে। প্রবল মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে এই বৃষ্টি হতে পারে। ভারী বৃষ্টির কারণে মাসের শেষ ভাগে বন্যার আশঙ্কা করা হয়েছে।
কুড়িগ্রামে পানি নামার সাথে ছড়াচ্ছে রোগবালাই
ইউএনবি জানায়, কুড়িগ্রামে বন্যা-পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়ছে। মানুষের পাশাপাশি গবাদিপশুও আক্রান্ত হচ্ছে। বন্যার ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে না উঠতে রোগব্যাধি নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটাছে বন্যার্তরা। ভুক্তভোগীরা জানান, হাতে টাকা পয়সা না থাকায় ঘরবাড়ি মেরামত, নলকূপ ও ল্যাট্রিন সংস্কার নিয়ে বিপাকে রয়েছেন তারা। এ অবস্থায় সরকারিভাবে সহযোগিতা করা হলেও তা অপ্রতুল। এখনো মানুষ ও গবাদিপশু খাদ্যসঙ্কটে ভুগছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্র জানায়, চলতি বন্যায় ৩ হাজার ৮৯২টি গরু লাম্পি স্কিন রোগসহ অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এ ছাড়া বন্যার আগে ২৬ হাজার ৩০০ গরুকে টিকা দেয়া হয়েছে। তবে এখনো সাড়ে চার শতাধিক চরে অসংখ্য গরু লাম্পি স্কিনসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত আছে বলে জনপ্রতিনিধিসহ ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অফিস সূত্র জানায়, চলতি বন্যায় জেলার ৯টি উপজেলার ৭৩টি ইউনিয়নের মধ্যে ৫৬টি ইউনিয়নের ৪৭৫টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দী হয়েছে। নদীভাঙন ও পানিবন্দী মানুষের সংখ্যা আড়াই লাখ। বন্যায় প্রায় ৬৩ হাজার বাড়িঘর পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছে শত শত গবাদিপশু। নলকূপ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৪২ হাজার ২৩৭টি। বন্যার পানিতে ডুবে শিশুসহ ২২ জন মারা গেছেন।
বন্যার পানি বিপদসীমার ওপর থেকে কমতে শুরু করার পর থেকে পানিবাহিত রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। চরাঞ্চলের মানুষদের হাত, পা ও আঙুল ফেটে যাচ্ছে। শরীরে নানান জটিল রোগ বাসা বাঁধছে। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বন্যার সময়ে ৮৫টি মেডিক্যাল টিম গঠনের কথা বললেও দুর্গম চরাঞ্চলে চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হাজার হাজার চরাঞ্চলবাসী। এ দিকে অর্থের অভাবে অনেকেই ভাঙা ঘরেই অবস্থান নিয়েছে।
উলিপুর উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নের ব্রহ্মপুত্র নদ পরিবেষ্টিত মশালের চরের ইউপি সদস্য সিদ্দিক আলী বলেন, ‘আমার ৯ নম্বর ওয়ার্ডে ২৫০টি পরিবার রয়েছে। প্রায় প্রতিটি বাড়িতে গরুর রোগ দেখা দিয়েছে।’ খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, বেশির ভাগ গরু লাম্পি স্কিন ডিজিজে আক্রান্ত হয়েছে। এ ছাড়াও বাড়ির নারী-পুরুষের হাত ও পায়ের চর্মরোগে এবং শিশুরা সর্দি, কাশি ও ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে।
এ ব্যাপারে জেলা অতিরিক্ত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা: মকবুল হোসেন জানান, লাম্পি স্কিন ডিজিজ মূলত ভাইরাল ডিজিজ। মশামাছি থেকে এটি ছড়িয়ে পরে। এতে গরু মারা যাওয়ার সম্ভাবনা কম। তবে চিকিৎসায় অবহেলা করলে মারাও যেতে পারে। তিনি বলেন, এখনো যেসব চর এলাকায় আমাদের লোকজন যেতে পারেনি। দ্রুত সেখানে ভ্যাকসিন নিয়ন্ত্রণ ও জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে।
সিভিল সার্জন ডা: হাবিবুর রহমান বলেন, এ পর্যন্ত ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়াসহ অন্যান্য রোগের সেভাবে প্রাদুর্ভাব দেখা যায়নি। তবে আমাদের আশঙ্কা রয়েছে যে বন্যা-পরবর্তীতে পানি নেমে যাওয়ার পর পানিবাহিত রোগগুলো বিস্তার লাভ করতে পারে। এ জন্য ৮৫টি মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত রয়েছে।


আরো সংবাদ



premium cement