২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫
`

করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন দেড় লাখ মানুষ

-

দেশে প্রথম করোনা শনাক্ত হওয়ার পর পাঁচ মাসের বেশি সময় পার হয়ে গেছে। সরকারি হিসেবে এখন পর্যন্ত দেশে মোট শনাক্ত হয়েছেন দুই লাখ ৬০ হাজার ৫০৭ জন। অন্য দিকে এ সময়ে করোনা থেকে সুস্থ হয়েছেন এক লাখ ৫০ হাজার ৪৩৭ জন। শতকরা হারের হিসেবে যা ৫৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ। বিশ্বে করোনা থেকে সুস্থ হওয়ার তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ১৬তম। এক্ষেত্রে শীর্ষ পাঁচটি দেশ হলো যুক্তরাষ্ট্র, ব্রাজিল, ভারত, রাশিয়া ও দক্ষিণ আফ্রিকা। আক্রান্তের তালিকায়ও শীর্ষ পাঁচ দেশের অবস্থান একই রকম। কোভিড-১৯ সম্পর্কিত নিয়মিত স্বাস্থ্য বুলেটিন ও ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য বিশ্লেষণে এ তথ্য জানা গেছে।
গতকাল সোমবার দুপুর আড়াইটায় কোভিড-১৯ সম্পর্কিত নিয়মিত স্বাস্থ্য বুলেটিনে দেশের করোনা পরিস্থিতি সম্পর্কে সর্বশেষ তথ্য জানান স্বাস্থ্য অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা। তিনি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মারা গেছেন ৩৯ জন। এ নিয়ে করোনায় এখন পর্যন্ত ৩ হাজার ৪৩৮ জন মারা গেছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত হয়েছেন আরো দুই হাজার ৯০৭ জন। এ নিয়ে এখন পর্যন্ত দেশে মোট শনাক্ত হয়েছেন দুই লাখ ৬০ হাজার ৫০৭ জন। ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছেন এক ২ হাজার ৬৭ জন এবং এখন পর্যন্ত এক লাখ ৫০ হাজার ৪৩৭ জন সুস্থ হয়েছেন।
বুলেটিনে বলা হয়, করোনায় মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে ৩৫ জন পুরুষ এবং ৪ জন নারী। গত ২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছেন ৩১ জন এবং ৮ জন বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেছেন। এখন পর্যন্ত মারা যাওয়া ৩ হাজার ৪৩৮ জনের মধ্যে পুরুষ ২ হাজার ৭২১ জন এবং নারী করেছেন ৭১৭ জন।
২৪ ঘণ্টায় মৃত্যুবরণকারীদের বয়স বিশ্লেষণে দেখা যায়, ৮১-৯০ বছরের মধ্যে ৪ জন, ৭১-৮০ বছরের মধ্যে ৬ জন, ৬১-৭০ বছরের মধ্যে ১৩ জন, ৫১-৬০ বছরের মধ্যে ১০ জন, ৪১-৫০ বছরের মধ্যে ৩ জন, ৩১-৪০ বছরের মধ্যে একজন, ২১-৩০ বছর একজন এবং ০-১০ বছরের মধ্যে একজন রয়েছেন।
বিভাগ বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ঢাকা বিভাগে ১২ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৭ জন, খুলনা বিভাগে ৬ জন, রাজশাহী বিভাগে ৮ জন, ময়মনসিংহ বিভাগে ৩ জন, রংপুর বিভাগে একজন এবং বরিশাল বিভাগে ২ জন রয়েছেন।
উল্লেখ্য, গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনায় সংক্রমিত ব্যক্তি শনাক্তের ঘোষণা আসে। এর ১০ দিন পর ১৮ মার্চ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রথম একজনের মৃত্যু হয়।
রাজশাহী বিভাগে আরো পাঁচজনের মৃত্যু
রাজশাহী ব্যুরো জানায়, করোনাভাইরাসে রাজশাহী বিভাগে আরো পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। গত রোববার বিভাগের রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নাটোরে একজন করে এবং বগুড়ায় দুইজনের মৃত্যু হয়। গতকাল সোমবার দুপুরে বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. গোপেন্দ্রনাথ আচার্য্য সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান, বিভাগে এখন মৃতের সংখ্যা ১৯৮ জন। এর মধ্যে বগুড়ায় সর্বোচ্চ ১১৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ ছাড়া রাজশাহীতে ৩০ জন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে নয়জন, নওগাঁয় ১৪ জন, নাটোরে দুইজন, জয়পুরহাটে চারজন, সিরাজগঞ্জে ১১ জন এবং পাবনায় ৯ জন মারা গেছেন। রোববার বিভাগে নতুন ১৪৯ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে এবং ২৪৬ জন করোনা রোগী সুস্থ হয়েছেন।
চুয়াডাঙ্গায় উপসর্গ নিয়ে তিনজনের মৃত্যু
চুয়াডাঙ্গা সংবাদদাতা জানান, চুয়াডাঙ্গায় গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা উপসর্গ নিয়ে সেফাউর রহমান (৬২), ভৈরব মিয়া (৫০) ও মাওলানা জামাল উদ্দিন (৫৫) নামে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের ইয়োলো জোনে গত শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেফাউর রহমানের মৃত্যু হয়, রোববার সকাল ১০টার দিকে ভৈরব মিয়ার মৃত্যু হয় এবং সকাল ৭টার দিকে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে মাওলানা জামালউদ্দিনের মৃত্যু হয়। নিহত সেফাউর রহমান চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার ইসলামপাড়ার মৃত রাজু মিয়ার ছেলে, ভৈরব মিয়া পৌর এলাকার মুক্তিপাড়ার বাসিন্দা ও মাওলানা জামাল উদ্দিন দামুড়হুদা উপজেলার কালিয়াবকরি গ্রামের মো: ওয়াসিলের ছেলে।
এ দিকে চুয়াডাঙ্গায় ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেছে মহামারী করোনাভাইরাস। প্রতিদিন বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। শহর থেকে গ্রামে দ্রুতগতিতে ছড়াচ্ছে সংক্রমণ। আগে সংক্রমণের হার পৌর এলাকা বা শহরে বেশি থাকলেও এখন সেটা প্রত্যন্ত গ্রাম অঞ্চলে গিয়ে পৌঁছেছে। ফলে বেড়েছে গোষ্ঠী সংক্রমণ। গত ২৪ ঘণ্টায় ফলোআপ রিপোর্টসহ আরো ৪০ জনের শরীরে কোভিড-১৯ শনাক্ত হওয়ার খবরে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে জেলাবাসীর মধ্যে। রোববার রাত ১০টায় জেলা সিভিল সার্জন অফিসে ৭৬ জনের রিপোর্ট এসে পৌঁছায়। এর মধ্যে ৪০ জনের রিপোর্ট পজিটিভ দেখা গেছে। জেলায় এ পর্যন্ত মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৮৫৬ জন। চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা: এ এস এম মারুফ হাসান বলেন, জেলায় নতুন ৪০ জন করোনা শনাক্ত হয়েছেন। জেলায় মৃত্যুর হার কম থাকলেও ইতোমধ্যে ৮৫৬ জন করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। গতকাল জেলায় নতুন ১৬ জন সুস্থ হয়েছেন। এ নিয়ে মোট সুস্থতার সংখ্যা ৪২২ জন ও মৃত্যু ১৩ জন।
কুমেক হাসপাতালে উপসর্গ নিয়ে ৫ জনের মৃত্যু
কুমিল্লা সংবাদদাতা জানান, কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ (কুমেক) হাসপাতালে করোনা উপসর্গ নিয়ে আরো ৫ জন মারা গেছেন। তাদের মধ্যে চারজন পুরুষ ও একজন নারী। উপসর্গ নিয়ে মৃত ব্যক্তিরা হলেন, কুমিল্লার বরুড়া উপজেলার তাজুল ইসলাম (৬০), চৌদ্দগ্রামের মৃত আলী আহম্মেদের ছেলে নজরুল ইসলাম (৫৫), লালমাই উপজেলার মাসুদা বেগম (৮০), লাকসাম উপজেলার লাল মিয়া (৬৫) এবং সদর দক্ষিণ উপজেলার আবদুল করিম (৭০)। গতকাল সোমবার কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা: মো: মুজিবুর রহমান এসব তথ্য জানান। জেলা সিভিল সার্জন অফিসের সূত্রমতে, কুমিল্লা জেলায় এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন পাঁচ হাজার ৮৬৭ জন, সুস্থ হয়েছেন চার হাজার ৪১৪ জন এবং আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন ১৫০ জন। উল্লেখ্য, এ পর্যন্ত মেডিক্যালের করোনা ইউনিটে পজিটিভ ও উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন ৩২৪ জন।
উপসর্গ নিয়ে সামেক হাসপাতালে বৃদ্ধার মৃত্যু
সাতক্ষীরা সংবাদদাতা জানান, করোনার উপসর্গ নিয়ে সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ (সামেক) হাসপাতালে ফাতেমা খাতুন (৬১) নামের এক বৃদ্ধার মৃত্যু হয়েছে। তিনি সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার বাজারগ্রামের আফতাব আলীর স্ত্রী। সামেক হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা: রফিকুল ইসলাম জানান, জ¦র ও শ্বাসকষ্টসহ করোনার উপসর্গ নিয়ে গত ২৮ জুলাই বিকেলে সাতক্ষীরা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আইসোলেশনে ভর্তি হন বৃদ্ধা ফাতেমা খাতুন। পরদিন তার নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পিসিআর ল্যাবে পাঠানো হয়। এখনো তার নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পাওয়া যায়নি। এমতাবস্থায় সামেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গতকাল সোমবার সকাল ৭টার দিকে তিনি মারা যান। এ নিয়ে সাতক্ষীরায় করেনার উপসর্গ নিয়ে গতকাল সোমবার পর্যন্ত মারা গেছেন অন্তত ৫৭ জন। আর করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন আরো ২৩ জন।
বগুড়ায় করোনায় দু’জনের মৃত্যু
বগুড়া অফিস জানায়, বগুড়ায় গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরো ৬৬ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও ৫৪ জন সুস্থ এবং মারা গেছেন দুইজন। তবে তাদের পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি। সোমবার বগুড়া সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিক্যাল অফিসার ডা: ফারজানুল ইসলাম জানান, এ নিয়ে জেলায় মোট আক্রান্ত ৫ হাজার ৩০২ জন। এদের মধ্যে ৩ হাজার ৯৮৬ জন সুস্থ হয়েছেন। মারা গেছেন ১১৯ জন। মারা যাওয়া দুইজনের মধ্যে একজনের বাড়ি গাবতলী উপজেলায়, অপরজনের বাড়ি নওগাঁ জেলা বলে উল্লিখিত সূত্র নিশ্চিত করেছে।
নোয়াখালীতে করোনায় ২ জনের মৃত্যু
নোয়াখালী সংবাদদাতা জানান, নোয়াখালীতে ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে করোনা আক্রান্ত হয়ে চাটখিল ও সোনাইমুড়ী উপজেলায় ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হয়েছে ৮৫ জন ও সুস্থ হয়েছে ৮১ জন। এ নিয়ে নোয়াখালী জেলায় মোট আক্রান্তের সংখ্যা তিন হাজার ৫৭৬ জন, মারা গেছেন ৬৯ জন ও সুস্থ হয়েছেন দুই হাজার ৫১৮ জন। গতকাল সোমবার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা: মাসুম ইফতেখার।
চট্টগ্রামে দুইজনের মৃত্যু : বেড়েছে সংক্রমণ
চট্টগ্রাম ব্যুরো জানায়, চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আকস্মিকভাবে বেড়ে গেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের সাতটি ল্যাবে ৮৭৩ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৬০ জনের দেহে করোনা ভাইরাসের অস্তিত্ব শনাক্ত হয়। সংক্রমণের হার ১৮.৩২ শতাংশ। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সর্বশেষ রিপোর্টে এসব তথ্য জানানো হয়। রিপোর্টে আরো বলা হয়, একই সময়ে করোনা-আক্রান্ত দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। দু’জনই নগরীর বাসিন্দা। সুস্থ হয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন ৫৯ জন। ফলে করোনাকালে এ পর্যন্ত মারা গেছেন ২৪৫ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ৩ হাজার ১৯৬ জন। গত ২৪ ঘণ্টার ১৬০ জনসহ চট্টগ্রামে মোট করোনা সংক্রমণ হয়েছে ১৫ হাজার ২১৬ জনের শরীরে। নতুন আক্রান্তদের মধ্যে ১১৩ জন নগরীর ও ৪৭ জন বিভিন্ন উপজেলার বাসিন্দা।
তেঁতুলিয়ায় ৩ জন শনাক্ত
তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) সংবাদদাতা জানান, তেঁতুলিয়া উপজেলায় করোনাভাইরাসে হাসপাতালের এক ওয়ার্ডবয়সহ নতুন করে ৩ জন আক্রান্ত হয়েছে। এ নিয়ে তেঁতুলিয়ায় করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা দাঁড়াল ৩৬ জনে। উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের করোনা টিম লিডার মেডিক্যাল অফিসার ডা: এ এস এম মুশফিকুর রহমান বলেন, জনগণের চরম স্বাস্থ্য অসচেতনতার পাশাপাশি বাজার ও খাবার হোটেলে সামাজিক দূরত্ব না মেনে মাস্ক ছাড়া অবাধে চলাচল করছে। যে কারণে তেঁতুলিয়ায় করোনা পজিটিভ রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
সোনারগাঁওয়ে নারী পুলিশসহ ৪ জন আক্রান্ত
সোনারগাঁও (নারায়ণগঞ্জ) সংবাদদাতা জানান, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে থানা পুলিশের এক নারী সদস্যসহ নতুন করে আরো চারজন করোনায় আক্রান্ত হয়েছে। এদের মধ্যে ১ জন শিশু, ২ জন নারী ও ১ জন পুরুষ। বর্তমানে সোনারগাঁওয়ে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ৫১০ জন। একদিনে নতুন করে সুস্থ হয়েছেন আরো ৪ জন, মোট সুস্থ হয়েছেন ৪৬৩ জন, মোট মারা গেছেন ২০ জন। গতকাল সোমবার দুপুরে সোনারগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার পলাশ কুমার সাহা এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।


আরো সংবাদ



premium cement